![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লগইন করেই দেখি তোমার বারান্দা। টিপটিপ বৃাষ্টতে পা বাড়িয়ে একটা ইজিচেয়ারে বসে আকাশ দেখছ। পাকা চুল আর সাদা শাড়িতে তোমাকে একেবারে গল্পের ঠাকুম্মা লাগছে। আমি একটা পক মারতেই ফোকলা দাতে তুমি হেসে উঠলে আমার দিকে চেয়ে। তখন ওয়েবক্যামের জানলায় তোমার একটুকরো আকাশ আবারও মনে করিয়ে দিলো আমরা একদিন ভালবাসতাম পরস্পরকে। তোমার এ্ই ফোকলা দাতের ধারে যেদিন আমার আঙুল ফুলিয়ে দিয়েছিলে চল্লিশ বছর আগের একদিনে, সেদিন বিকেলেই তোমাকে টিএসি তে বসে খুলে দিয়েছিলাম একাউন্ট এই ফেসবুকে। পেছনে যাই একটু মাউসে স্ক্রল করে। তোমার প্রথম প্রোফাইল পিকচার সেই বিকেলেরই। একটা সবুজ ফতোয়া আর লাল টিপে তোমার চল্লিশ বছর আগের সেই হাসি আজও কি বেমালুম আমাকে টেনে নিয়ে যায় কুড়ির দিনগুলোতে। একবার আয়নায় চোখ ফেলি নিজের ছায়ায় আবার ওয়েবক্যামের চোখে তোমার ঝুম বৃষ্টি বারান্দায়। সময় আমাদের কি না বদলে দিয়েছে নির্মমতায়। আমাদের এ নিঃসঙ ষাটের কোঠায় আজ কুচকানো চামড়ার ভাড়ে কত এলোমেলো সময় ছড়িয়ে। আজ কপালের জ্যামিতি কেবল উসকিয়ে দেয় টলোমলো অশ্রুকে। মাউস নিয়ে যায় এবার তোমার ছত্রিশ বছরের অক্ষত এক স্ট্যাটাসে, আমি পাইলাম, ইহাকে পাইলাম। কত কমেন্ট তার নীচে। কেউ বলে গুপ্তধন পেলে, কেউ বলে মনের মানুষ। আর আমি হাসি। ছয় বছর লেগে গেলো তোমার আমাকে পেতে! আমি তো তোমাকে সেই কালিমন্দিরের ঘাটে মাঘি পূর্ণিমার সেই সন্ধ্যায়ই পেয়েছিলাম। তুমি বুঝনি এতটা দিন। আমি অপেক্ষায় ছিলাম। তাই অভিমান করে কমেন্ট করলাম, নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে। তারপর তোমার অখন্ড নিস্তব্দতা আর আমার লুকিয়ে কবিতা লিখে ছদ্মনামে ফেসবুকে চালান। আর ওগুলো প্রবল আগ্রহে পড়তে, কিন্তু কমেন্ট বা লাইক করতে না। মৃদু চোট লাগতো, যে চোট আরও বাড়িয়ে দিতো আমার কবিতার ভার। উপরে কোণার দিকে তাকিয়ে দেখি তোমার খালি বারান্দা, তুমি উঠে গেছ। যেভাবে খালি করে গিয়েছিলে আমার সোনালী যৌবনের বারান্দাটা। ষাটের কোটায় পৌছেও যেখানে ঘু ঘু চড়ে। এরপর তুমি অফলাইন।
মাউসটা এবার আটকে গেলো ২০২৪ সনের কোন এক হেমন্তদিনে। আমার আর কমলের শেষ আলিঙ্গনের ফটো। ওর কালো ফ্রেমে বাধা অভিমানী চোখে আমায় শেষ আলিঙ্গন। তারপর চল্লিশেই মরে ভূত। সালা বড় স্বার্থপর ব্যাটা। সেই বিকেলের পর আর কোন ছবি নেই। নীচে ছুটলাম। আমাদের সেই অবুঝ দিনগুলোর ছবির মেলায়। বিহবল জোস্নায় পানরত নিমগ্ন আড্ডা, গিটারের তারে আঙুলের আদর, ঘাসের বিছানায় অলস বিকেল, সিগারেটের ছাইয়ে এ্যাশট্রেময় খন্ড জীবন। দারুন গাইতো কমল। ওর গলায় রাফি আর মান্না দে, এখনও কিছু আপলোডেড আছে। নাহ, ওদিকে হাত বাড়ালাম না আর। মিছে এতটাদিন পর চোখের জলকে উসকে না দেয়াই ভাল। বড় অভিমান হয় কমলের উপর। অভিমানটাকে গলে পড়তে না দিই টলমলো অশ্রুতে।
একটা নোটিফিকেশন এলো। মৃন্ময় ট্যাগড ইউ.....। ও কিছু একটা ও কোন লেখা নিশ্চয় ট্যাগ করেছে আমকে। চল্লিশ বছর ধরেই করছে। ওর সব লেখা। যেদিন থেকে অনলাইন এ লিখে । আজ ও নামকরা লেখক। নামী কাগজে ওর লেখা বেরোয়, বইমেলায় মানুষ অপেক্ষা করে ওর লেখার জন্য। এরপরও আমাকে ট্যাগ করতে ভুলেনা। পাগল একটা। কুকড়ানো চুলে, ক্যামেরা হতে সেই মৃন্ময়ের এখন বিশাল সাদা গোফ। অথচ এই গোফ নিয়ে ওর কি বিদ্বেস ছিল একসময়। ও বলতো গোফ নাকি রাখে ফজিল লোকেরা। ওর গোফ রাখার আগে যেন ওর মরণ হয়। না, ও মরেনি, গোফ রেখেই বেচে আছে একের পর এক গোফময় ফটোগ্রাফি শেয়ার দিয়ে দিয়ে।
বাপ্পি স্ট্যাটাস দিয়েই যাচ্ছে একের পর এক। টপিক সেই রাজনীতি। রাজনীতিও আগের মতই আছে, বাপ্পির স্ট্যাটাসও। ছেলেটা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতে দেখতে বুড়ো হয়ে গেলো, ফেসবুকে গলা ফাটিয়ে কাটিয়ে দিলো চল্লিশ বছর। নাহ, দেশটার কিছুই হলোনা। যেই লাউ সেই কদু, আমরা কেবল বুড়ো আদু ।
সবিতার নাতনী ব্যারিস্টার হয়েছে, শফিকের প্যারালাইসিস, রাজুর গিটে ব্যাথা, মিতা সদ্য বিধবা, শরিফ হজ্জে যাচ্ছে, রাজন ভাই শেষকালে দেশে থিতু হতে চাচ্ছেন, শাহাদাতের আরো একটা দাতভাঙা কলাম, বিপাশার আটান্নতম জন্মদিন, জাহিদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী, ফারহান আসক্ত ছেলের শোকে উন্মাদ, সেলিমের পেনশনের টাকায় গাড়ি কেনা........ স্টেটাসে স্টেটাসে আজও ভরপুর ফেসবুক। সেই যৌবন থেকে আজ অব্দি। হঠাত একটা রবিউলের পত্রিকার পাতা শেয়ার, বার্ধক্যজনিত কারনে প্রবীন সাংবাদিক মোন্তাসীর বাবুর মৃত্যু। মুনতাসীর, আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহযোদ্ধা, আমার দ্রোহের ফুলকিওলা।
একটা ছোট্ট দীর্শ্বাস অতপর লগ আউট।
©somewhere in net ltd.