নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

sorry vai

প্লাবণ ইমদাদ

I am totally Liquid.......

প্লাবণ ইমদাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গুজবঃ একটি মনোসামাজিক ব্যাধি

২৭ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৬

কানের খবর না নিয়েই চিলের পিছে দৌড়ানো মানবজাতির বহুকালের অভ্যেস।এমন দৌড়ে যে কেবল পন্ডশ্রমই হয় তা না, লেগে যেতে পারে যুদ্ধ মহাযুদ্ধও। আর এটা বুঝেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে গুজবের অস্ত্রকে অন্যতম অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ইাতহাসের অন্যতম সেরা খলনায়ক হিটলার। এতে এমনই মধুর সন্ধান তিনি পেয়েছিলেন যে এর সফলতম ব্যাবহার ঘটাতে গড়ে তুলেছিলেন স্বয়ং গুজব মন্ত্রনালয় (মিনিস্ট্রি অব প্রোপাগান্ডা) আর যার গুরুদায়িত্বে ছিলেন ডঃ জোসেফ গোবেলস এর মত ঝানু স্কলারদেরকে ! আর এমন মনোসামাজিক অস্ত্রকে মোকাবিলা করতে কম ঘাম ঝরাতে হয়নি মিত্রপক্ষকেও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাই নিউইয়র্ক শহরে গড়ে তোলে গুজব গবেষনাগার আর ভয়েস অব আমেরিকা মত গুজব প্রতিরোধক গণমাধ্যম। এ ইতিহাসের আরও আগেই সমাজ মনোবিজ্ঞানী আর সমাজবিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়বন্তুতে পরিণত হয় গুজব। এবার দেখে আসা যাক গুজবের সেই গবেষণালব্দ নানা দিক।



গুজব কি

মনোবিজ্ঞানী ন্যাপ খুব সুন্দরভাবে গুজবকে সংজ্ঞায়ন করেছেন। তার মতে গুজব এমন একটি আংশিক অথবা সম্পূর্ণ বিকৃত বা মিথ্যা ব্যাপার, ঘটনা বা অবস্থার ক্রমশ বিকৃত বর্ণনা যা মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে এবং যা অবচেতনভাবে ব্যাক্তি ও সমাজের সুপ্ত বাসনার প্রতিফলন ঘটায়। গুজবে তাল তিল হতে পারে আবার তিলও পরিণত হতে পারে তালে। সেটা নির্ভর করে ঘটনার ধরণ আর ব্যাক্তি ও সমাজের আশা আকাংখার উপর।



প্রকারভেদ

ন্যাপ গুজবের মোট চারটি ধরনের কথা বলেছেন। প্রথম শ্রেণীর গুজব হল এমন যা মানুষের সুপ্ত ভীতির ফলে সৃষ্টি হয়। যেমন, ধরুন কিছুদিন ধরে শোনা যাচ্ছে যে পৃথিবী ধ্বংস হবে। তো এই অবস্থায় কোন এলাকায় হঠাত তীব্র বায়ুপ্রবাহ শুরু হল এবং মানুষজন দিঙবিদ্বিক ছুটাছুটি শুরু করলো এবং এতে কিছু লোক ভয়ে মূর্ছা গেল। দ্বিতীয় শ্রেণীর গুজব হলো এমন যেখানে মানুষের দীর্ঘ প্রত্যাশিত কোন ব্যাপারের প্রতিফলন ঘটে। যেমন ওসামা বিন লাদেন মারা যাবার আগে অনেকবার যুক্তরাষ্ট্রের জনগনের মধ্যে বিন লাদেনের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। তৃতীয় শ্রেণীর গুজব ঘটে কাউকে হেয় করতে বা কোন সম্পর্কে ফাটল ধরানোর উদ্দেশ্যে। যেমন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওমাবা মুসলিম ধর্মাবলম্বী বলে অনেক গুজব ছড়ানো হয় বিপরীত নির্বাচনী শিবির থেকে । আর সর্বশেষ ধরনের গুজব হলো কারো সম্পর্কে ইতিবাচকভাবে গুজব রটানো। যেমন, কোন মগাস্টার বা জনপ্রিয় ব্যাক্তির আধ্যাত্নিক ক্ষমতা থাকার গুজব।



কিভাবে ছড়ায়

বিখ্যাত জামার্ন মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম স্টার্ন ১৯০২ সালে গুজবের উপর একটি আলোচিত এক্সপেরিমেন্ট চালান। তিনি কিছু লোককে সারিবদ্ধভাবে দাড় করিয়ে প্রথমজনের কানে কানে একটি গল্প বলেন যা ঐ ব্যাক্তি তার পরবর্তীজনকে বলেন। এভাবে দেখা যায় যে শেষ ব্যাক্তিতে গিয়ে গল্পের আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে যা মূল গল্পের চেয়ে আকারে সংক্ষিপ্ত ও বিকৃত। এরপর আরও গবেষণার পর গুজব ছড়ানোর তিনটি পর্যায় পাওয়া যায়। গুজবের প্রাথমিক পর্যায়টি হলো লেভেলিং। এ পর্যায়ে কোন ঘটনার শ্রোতা ও বাহকগণ একটি ঘটনা শোনার পর সেটার বিভিন্ন দিক ছেটে ফেলতে থাকেন। অর্থ্যাত মূল ঘটনার আকার ক্রমশ ছোট হতে থাকে। যেমন, কেউ একজন দেখলো রাস্তার মোড়ে করিম একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় অন্যায়কারী তাকে চড় মেরেছে। এখন এই ঘটনাটি ছড়াতে থাকলো কেবল এই আকারে যে অমুক ব্যাক্তি করিমকে চড় মেরেছে। গুজবের পরের পর্যায়টি হলো শার্পেনিং। এটা হলো ঘটনাটির সব দিক বাদ দিয়ে ঘটনার কেবল একটি দিককে বড় করে তোলা। যেমন, সেই ঘটনাটাতেই কয়েকজনের মুখে ছড়াতে ছড়াতে কাহিনী এমন হলো যে শেনা গেলো করিমকে মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছে। আর শেষ পর্যায়টি হলো এসিমিলেশন। এ পর্যায়ে জনতা তাদের ব্যাক্তিগত ও সামাজিক অবদমিত বাসনাকে আরোপ করে সন্তুষ্টি লাভ করতে থাকে। যেমন, ঘটনা শেষে গিয়ে এমন দাড়ালো যে করিম একটি মেয়েকে উত্যক্ত করার জন্য তাকে পাবলিক গণপিটুনী দিয়েছে।যেন করিম গণপিটুনী খেলে জনতা বড়ই আনন্দিত হতো। ১৯৪৭ সালে আলপোর্ট ও পোস্টম্যান কর্তৃক চালিত এক পরীক্ষণে পাওয়া যায় কোন ঘটনা ৫ থেকে ৬ জন ব্যাক্তি অতিক্রম করলে তার প্রায় ৭০ ভাগ বিস্তারিত বিবরণ খসে পড়ে!

গুজব পিতা হিটলার

ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা বেশী সফল ও ব্যাপকভাবে গুজবকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করতে পেরেছিলেন এডলফ হিটলার। তার রাজনৈতিক উত্থান থেকে শুরু করে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের নৃশংশতা পর্যন্ত পুরো সময়ই তিনি ছিলেন গুজব রথের সারথি। গুজবের শক্তি সম্পর্কে ধারনা থেকেই ১৯৩৩ সালে গড়ে তোলেন মিনিস্ট্রি অব পাবলিক এনলাইটমেন্ট এন্ড প্রোপাগান্ডা যার দায়িত্ব দিয়েছিলেন ততকালীন স্বনামধন্য কিছু স্কলারদের এবং যার প্রারম্ভিক বাজেট ছিল ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ১৯৪৪ সালে এসে দাড়ায় ১৮৪ মিলিয়ন ডলারে, যেখানে ২০০০ কর্মী ১৭ টি বিভাগের অধীনে নিরলসভাবে গুজব ছড়িয়েছেন পুরো মহাযুদ্ধকালীন সময় জুড়ে। আর গুজবের মাধ্যম হিসেবে তারা সফলভাবে ব্যাবহার করেছেন চলচ্চিত্র, ভিজু্য়াল আর্ট, নাটক, সংগীত ইত্যাদি। আর হিটলারের ক্রমাগত এ গুজব যন্ত্রনায় অতিষ্ট হয়ে মিত্রবাহিনীও গড়ে তোলেন পাল্টা প্রোপাগান্ডা প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা। এ ধরনের পারস্পারিক প্রোপাগান্ডার প্রতিযোগীতাকে সাইকোলজিক্যাল ওয়ার বলা হয়ে থাকে। এমন যুদ্ধাবস্থা কেবল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেই নয়, বরং স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়, ইরাক যুদ্ধ, আফগান যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধসহ সব সংকটকালেই সৃষ্টি হয়েছে।

আর প্রাগঐতিহাসিক কাল থেকে আজ অব্দি মানুষ তবুও চিলের পিছেই দৌড়াচ্ছে কানের খবর না নিয়েই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.