নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাহাদাত নোমান

পথিক নোমান

পথিক নোমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে থাকে জলের মাঝে

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ ভোর ৪:০০

মধ্যরাত। তলাবিহীন মানুষগুলো ঘুমুচ্ছে ফুটপাতে। ডাস্টবিনে খাবার খুঁজতে থাকা কুকুরটি চেঁচাতে গিয়ে হঠা‍‍‍ত থেমে গেলো। মিছিল শেষে বাড়ী ফিরছে অবন্ত। মাথায় জমে থাকা কবিতাগুলি মগজে সাঁতার কাটতে থাকে। কখনো কখনো নতুন কবিতার জন্ম হয়। সে প্রায়ই ভাবে, মাইন্ড রাইটার নামে যদি কিছু থাকতো বেশ সুবিধা হতো। তারপর নিজেকেই ধিক্কার দেয়, কৃষকের ফষল ক'টা ভাগ হবে তা না ভেবে প্রযুক্তি ভাবনা মানায় না। ওভার ব্রিজে উঠতে স্বয়ংক্রিয় সিঁড়ি দেওয়া হয় এদেশে। তারই পাশে পড়ে থাকা তলাবিহীন মানুষটা দেখে দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসে। রাতগভীরে সে আবার কুকুরের খাবারে ভাগ বসায়।

"বাসায় কেনো এলিরে হতভাগা? বাইরে রাত কাটালেই তো পারতি! তোর জন্য রাতে দু-দন্ড শান্তিতে ঘুমুতে পারিনা। প্রেসারটা বেড়ে আমার মরনের দশা।"

মায়ের বকুনি রোজ রাতেই তাকে শুনতে হয়। এটা সে পূর্ন মনযোগ দিয়েই শোনে। আবার খাবার শেষে মাকে সরি বলে।

আজ ঘটি-বাটি গোছাতে গোছাতে মাকে খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে। তবে তা মানসিক। মা'র দিকে তাকিয়ে অবন্ত বলে, "কি করবো মা, মাথায় প্রগতির ঝড় জমা রেখে আমি তো ঘুমুতে পারি না।" মা তাতে আরো বিরক্ত হয়ে বললেন "তবে বেরিয়ে যা, কাল সকালে এসে ঘুমিয়ে নিস।"

কিছু বলেনা অবন্ত। রাতে ঘুমুতে যাবার আগে মায়ের কপারে চুমু দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। মায়ের ক্লান্তি তাতে কিছুটা দুর হয়।

মিছিল-মিটিং নিয়ে ব্যাস্ত থাকা এই সন্তানের মা সারাদিন দুশ্চিন্তার মধ্যেই থাকেন। এ দুশ্চিন্তার মাঝে একটা সুবুদ্ধি মাথায় এসেছে। ছেলেকে ডাক্তারী পড়ানোর মতলব যদি মাথায় ঢোকানো যায়, তবে তাতে কিছুটা ঘরমুখো হবে। এখানে পড়ার চাপ বেশি তাই চাইলেই বেরুতে পারবেনা।

সময়টা বেশ উত্তাল। পাকিস্তানের ইমরান খান উষ্কে দিলো বাংলার জনগনকে। উত্তেজিত জনতা সিদ্ধান্ত নিলো পাকিস্তানি পন্য বর্জনের। অবন্তও তাই করলো। আন্দোলন চলছে। সফল কতটুকু হবে তা নিয়ে কারো ধারনা নেই। অবন্তেরও নেই। তবু দিনরাত আন্দোলনের ময়দান কামড়ে ধরে পড়ে থাকে। রাজনৈতিক নেতাদের সুদৃষ্টি পাবার আশায় নয়। এ ফাঁকে যদি মানুষকে বোঝানো যায়, দেশী পন্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে, পন্যের মান বাড়াতে হবে। তাহলে এদেশের কামার, মজুর, কৃষক সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে। অাধপেটো খেয়ে এরাই দেশের কলকাঠি চালায়।এদরে মূল্য না দেওয়া মানে নিজের বাবার বুকে লাথি মারা।

সব বিগড়ে দিলো শ্রাবনী। শ্রাবনী যতটা না বাস্তব তার চেয়েও বেশী অবন্তের কল্পে। পাঁচ বছরেও কোনো খোঁজ মেলেনি তার। সেই পুরোনো মোবাইল নম্বরে তাকে আজো খুঁজে ফেরে অবন্ত। বন্ধ নম্বরে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়না। অবন্তের তবু বিশ্বাস করতে ভালো লাগে, এই নম্বরেই শ্রাবনীর কন্ঠ ভেষে আসবে। বিশ্বাসের ফল হাতে নাতে পেলো আজ। বেশ খানিক্ষন আলাপ হলো তার সাথে। আনন্দে কেঁদে উঠেনি অবন্ত। যেনো নিত্তদিনের চলার বন্ধুর সাথেই আলাপ হলো। কোথায় আছো, কেমন আছো, কি করছো এইসব অপ্রয়োজনীয় অথচ গুরুত্বপূর্ন আলাপ সমূহ। তাতেই অবন্তের মাথায় চড়ে জেঁকে বসে শ্রাবনী। নতুন প্রেমে পড়া আনাড়ী প্রেমিকদের মতো সারাক্ষনই মেয়েটাকে নিয়ে ভাবে সে।

শ্রাবনীর সাথে আলাপ হলো বটে, কিন্তু হারানো ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া গেলো না। এমনকি ভালোবাসার মানুষটিকেও। তবু তাতে অবন্তের উটকো বিশ্বাস ভাঙ্গেনা। শুধু সে'ই ভেঙ্গে পড়ে। তার বেয়াড়া মগজ ভেবে চলে, "কিইবা চেয়েছিলুম তোমার কাছে হে, এ দীর্ঘ বিপ্লবী চেতনায় ক'টা শীতল দীর্ঘশ্বাস'ই তো! তবু করুনা চাইনি কভুৃ। আজো এলেনা ফিরে...!"

চাতকের মতো তার চোখ দেখে খুব মায়া হয়। আসলে মায়ার চেয়ে করুনাই হয়। সব ছেড়ে সব ছেয়ে তাকে হতভাগাই বলা চলে।

"তবু আমরা মায়ের কথা বলবো, মাটির কথা বলেবা, আমরা মানুষের কথা বলবো। কৃষকের এক এক ফোঁটা ঘামের মুল্য আমরা দেবো। খাদ্য গুদাম করে নায্যহীন দামে বিক্রি করার অধিকার আমরা কাওকে দেয়নি। হে বিপ্লবী বন্ধুরা, এসাে বিদ্রোহ করি। এসো বজ্র হাতে বিদ্ধ করি সকল অন্যায়কে, অসুন্দরকে।"

কাষ্ঠমঞ্চে দাঁড়িয়ে কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে যাচ্ছে অবন্ত। লোকজন উত্তেজিত। মুহুর্মুহু শ্লোগান চলছে। দেখে যেনো মনে হয় রাজনৈতিক নেতার অবির্ভাব ঘটেছে। তলাবিহীন মানুষগুলো তার বক্তব্য শুনছেনা। তারা কুকুর ও কাকের খাবারে ভাগ বসাতে ব্যাস্ত। মঞ্চের সামনে জমায়েত হওয়া মানুষগুলোর চোখে মুখে বিপ্লবের গন্ধ! বক্তৃতা শেষ হতেই অবন্ত মঞ্চের আড়ালে এসে সিগারেট ধরায়। চোখেমুখে বিরক্ত নিয়ে ভাবে, "সব শালারাই রাত পোহলে ভুলে যাবে সব। এমপি'কে গা দেখাতে হাঙ্গামার শেষ নেই। ভন্ডদের সাথে সব পরিশ্রমই পন্ড।" তবু সে নিরাশ হয় না। যদি দু-একটা উঠে আসে এরই মাঝ হতে! তবে একটা মস্তিষ্কই একটা বিপ্লব ঘটাতে পারে।

দু-দিন হলো শ্রাবনীর কোনো খোঁজ নেই। মোবাইল নম্বরে যতবারই পেতে চায়, ততবারই পাওয়া যায়না। এমনিতেই অবন্ত ভীষন আত্মসম্মান নিয়ে চলে। শ্রাবনীর এহেন অবেহেলায় সে ভীষন অপমানিত বোধ করে। এটা তার জন্য অস্বস্তিকর।তবু তাকে খুঁজে পেতে বারবার চেষ্টা করে। পায়না। রাগে, ক্ষোভে, অপমানে আরো একবার হৃদপিন্ডে নিকোটিন জমা হয়। জল কনারা যখন তখন এখন আর চোখ বেয়ে ঝরে পড়েনা্। অবন্ত খুব চায় এ মেয়েটাকে ভুলে যেতে। কিন্তু পারেনা। শুধু ভালোবাসে বলে।

মধ্যরাত। অবন্ত রেল রাইন ধরে একা একা হাঁটছে। হতে জ্বলন্ত সিগারেট। গন্তব্য কোথায় তা বোঝা গেলো না। মতিগতি দেখে মনে হয় না যে আজ বাড়ি ফিরবে। সামনে ছুটে আসা ট্রেনের আলোতেই দেখা যায়, তার চোখ হতে ঝরতে থাকা পানি চিকচিক করছে। অকারনে মোবাইলটা বেজে উঠলো। ওপাশ থেকে কথা বললো বন্ধু আহসান হাবীব। বললো, "দোস্ত কাল বিকেলে মিছিল বের করতে হবে। নির্মল'দা খুন হয়েছেন। সবাইকে খবর দিতে হবে। দ্রুত অফিসে চলে আয়।" যথার্থ শান্ত ভাবে ফোন কেটে দেয় অবন্ত। এরপর এক বুক দীর্ঘশ্বাষ নিয়ে, শুন্যদৃষ্টি ফেলে রাতের আকাশে। রাতের আঁধার চিরে শুধু ট্রেনের হুইসেল শোনা যায়, আর কিছুই না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:১২

সংগ্রামী বালক বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন।শুভ কামনা রইলো।

২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:২০

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


ভাল লাগল।

৩| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৫৭

পথিক নোমান বলেছেন: সংগ্রামি ভাই কৃতজ্ঞতা জানবেন।

৪| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৫৭

পথিক নোমান বলেছেন: কান্ডারী ভাই, আপনার ভালো লাগাতে আমার ভালো লেগেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.