নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিরোনামহীন....

আমার স্বপ্নের কথা বলতে চাই

পথেরদাবী

সাংস্কৃতিক কর্মী শিল্প তৈরি করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন..... তবে শিল্পীর শিল্প তৈরি হওয়া চাই-ই-চাই.......সাংস্কৃতিক কর্মীর মূল কাজ শিল্পীর তৈরি শিল্পকর্ম এবং জনগনের মধ্যে মেল বন্ধন অর্থাৎ সহজ ভাষায় বললে, সেতু তৈরি করা..... আর এই সেতু তৈরির কাজ সাংস্কৃতিক কর্মীর করা চাই ই-চাই....এখানে ফাঁকিবাজির সুযোগ নাই.....সুযোগ নাই শিল্পীর মতো ব্যক্তি কেন্দ্রিক চিন্তা করার..... সাংস্কৃতিক কর্মীকে তাই মাঝে মাঝে শিল্পীর চাইতে সংগঠকের ভুমিকায় বেশি অবতীর্ণ হন...... এতে দোষের কিছু দেখি না....সব ঠিকঠাক থাকলে সাংস্কৃতিক কর্মী নামক শব্দের উৎপত্তি ঘটতো না..... সবাই শিল্প চর্চাই করতো.....শিল্প চর্চা করতে এসে কেউ বিপ্লবের কথা বলতো না..... যেহেতু বিপ্লব একটি কঠিন সত্য...... বিপ্লব দীর্ঘজিবী হোক.....\\\\\\\\\\\\\\\\n(১৪ মার্চ ২০১৫, পল্টন ...........)

পথেরদাবী › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্টপ জেনোসাইডের রাজনৈতিক বাস্তবতা

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:১১

জহির রায়হান নিয়ে কথা বলতে হলে তার রাজনৈতিক চিন্তা, সমাজ চিন্তা এবং দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ এর কোনোটাকে বাদ দিয়ে আলোচনা করা যায় না। জহির রায়হান এমনই একজন পরিচালক ছিলেন যার বিকল্প গত তেতাল্লিশ বছরেও কেউ তৈরি হয়নি। তার নির্মিত ‘স্টপ জেনোসাইড’ সারাবিশ্বে সেসময় ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলো। গোটা পৃথিবী এই একটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জেনেছিলো কত নৃশংসতম বর্বরতা চলেছিলো আমাদের উপর। কিন্তু তার বাইরেও এই চলচ্চিত্র আমাদের দেখিয়েছে একটি ডকুমেন্টারি কি করে একটি প্রবন্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি হয়তো ফরাসী ‘নিউ ওয়েভ’ আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত গদারের উত্তসরী। গদার এমন এক পরিচালক ছিলেন যিনি প্রবন্ধ বলার জন্য চলচ্চিত্রকে বেছে নিয়েছিলেন। আর শুরতেই বেছে নিয়েছিলেন ডকুমেন্টারিকে। জহির রায়হানও তাই। স্টপ জেনোসাইডকে পাকিস্তানি বর্বরতার আংশিক দলিল বললেও ভুল হবে না। এই চলচ্চিত্রের একটি উল্লেখ্যযোগ্য দিক হচ্ছে এর ধারা বর্ণনা। আলমগীর কবিরের অসাধরণ ধারা বর্ণনা শুনলে মনে হবে কোন প্রবন্ধ পড়ছি। আমাদের দেশের কোন ডকুমেন্টারির ধারাভাষ্য এতো প্রানবন্ত এমন আর দ্বিতীয়টি দেখা যায়নি আজ পর্যন্ত। শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে যেসব সংঘ প্রতি মুহুর্তে গালভরা কথা বলছে তিনি তাদের ছেড়ে কথা বলেননি। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন ক্ষমতাধর দেশগুলোর তাবেদারি করাই এর কাজ। বাংলাদেশের এই স্বাধীনতা যুদ্ধকে জহির রায়হান বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা বলে চিহ্নিত করতে চাননি। সারা বিশ্বে চলমান সকল মুক্তির সংগ্রামের সাথে এই যুদ্ধকে তুলনা করেছেন। তুলনা করেছেন ফরাসী বিপ্লব থেকে শুরু করে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সাথে। তিনি বলতে চেয়েছেন শোষিত মানুষের মুক্তির সংগ্রাম কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন নয়। তাইতো চলচ্চিত্রটি শুরু হয়েছে সোভিয়েত বিপ্লবের নায়ক কমরেড লেনিনের উক্তি দিয়ে। আর পেছনে বেজেছে আন্তর্জাতিক কমিউনিষ্ট সঙ্গীত যাকে আমরা ‘কমিউনিষ্ট ইন্টারন্যাশনাল’ নামে জানি। তিনি বিশ্ববাসির কাছে এই বার্তাটাই পৌছাতে চেয়েছিলেন যে, ইয়াহীয়া যে গনহত্যা চালিয়েছে তা হিটলার বা মুসলীনিকেও হার মানিয়েছে।



চলচ্চিত্রটির এমন আরো অনেক দিক তুলে ধরা যাবে। কিন্তু কেনো স্টপ জেনোসাইড আমাদের কাছে আজো গুরুত্বপূর্ন তার একটু অনুসন্ধান আমাদের দরকার। আমারা যারা তরুন পরিচালক তাদের সামনে যখন আইজেনস্টাইন, গদার, ত্রুফ, মৃনাল সেন, ঋত্তিক ঘটক বা সত্যজিৎরা অনুকরনীয় হয়ে ওঠেন তখন এদেশের দিকে তাকালে আমার দৃষ্টিতে একমাত্র জহির রায়হানের নামই আসে। একজন পরিচালক কতটুকু প্রো-পিপল চিন্তা করলে এধরনের একটি চলচ্চিত্র বানাতে পারেন। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে এমন একটি চলচ্চিত্র বানাতে যেমন দেশের প্রতি ভালাবাসা লাগে ঠিক তেমনি লাগে তীক্ষ্ন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। আর সৎ সাহসের কথা না হয় নাই বললাম। যাকে আমার হিম্মত বলি। বর্তমানে সেই হিম্মওয়ালা মানুষের খুব অভাব এদেশে। তারপরও এই মুহুর্তে একজন জহির রায়হানের খুব দরকার। একগুচ্ছ জহির রায়হানের খুব বেশি দরকার। যারা রাষ্ট্রের গনতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র, লুটপাট, গুম খুন, বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড ইত্যাদির বিরুদ্ধে তাদের চলচ্চিত্র দিয়ে কথা বলবেন। কিন্তু আফসোসের বিষয় আমাদের তরুন থেকে বৃদ্ধ, সাবাই রাষ্ট্রযন্ত্র অথবা বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের তাবেদারিতে ব্যাস্ত।



আমার দৃষ্টিতে রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের বাইরে আরেকটা গ্রুপ আছে যারা চাইলেই অশিক্ষিত জাতিকে দিক নির্দেশনা দিতে পারে। সচেতন করে তুলতে পারে। পারে নাগরিক হিসেবে তার কি কি দায়িত্ব তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে। তারা হলো সাংস্কৃতিক কর্মীরা। রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের ব্যর্থতা জাতির সামনে তুলে ধরার কাজ এই লোকগুলোরই করার কথা। কিন্তু আমাদের দেশে তা না হয়ে, হয় উল্টোটা। আফ্রিকায় যখন দুই রাজনৈতিক দল ‘জেএলপি’ আর পিএনপি’ আমাদের দেশের বড় দুই দলের মতো সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করতো, দেশকে একদম রসাতলে নিয়ে যাচ্ছিলো ঠিক সেই সময় গানে গানে প্রতিবাদ করার জন্য “রেগে” গানের সুত্রপাত হয়। বব মার্লে, জন লেনন, পিট সিগার, বব ডিলান, জর্জ হ্যারিসন, কবির সুমন এদের প্রত্যেকের গানের ঢং আলাদা আলাদা। কিন্তু ভাষা একটাই মনে হয়েছে। প্রো পিপোল ছিলেন তারা।



তাই আমরা যারা চলচ্চিত্র দিয়ে একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটাতে চাই তাদের আজ জোট বাঁধার সময় এসেছে। প্রতিটি পরিচালককে তার সৃষ্ট শিল্পকর্মটির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তা নাহলে এই মুক্তবাজারে শুধূ আদর্শ দিয়ে টিকে থাকাটা খুব কঠিন। এ কথাও ঠিক যে, শিল্পী খুবই ব্যাক্তিক চিন্তা করেন। নিজেকে নিয়েই থাকেন। কিন্তু তার ব্যাক্তিক চিন্তার ভেতর যতদিন না মানুষের কথা আসবে ততদিন আমরা তাকে কি করে শিল্পী বলি? শিল্পীর চিন্তাতো ইউনিভার্সাল হবার কথা। অনেক বিশাল হবার কথা। হবার কথা বৃত্তের বাইরে। হয়তো ভালো গায়ক, নায়ক বা পরিচালক হতে পারেন তিনি কিন্তু যিনি বৃত্তের বাইরে চিন্তা করতে পারেননা তিনি কি করে একজন শিল্পী দাবিদার হতে পারেন? শিল্পটি শিল্প হয়ে ওঠা খুবই দরকার। এটাও এক ধরনের যুদ্ধ। তবে প্রো-পিপল যেকোন কাজই শিল্পের মর্যাদা পেয়েছে। নিজস্ব যায়গা করে নিয়েছে। এর একটাই কারণ তা হলো সংগ্রাম করার সৎ সাহস। তাই স্টপ জেনোসাইডের সেই বীর মুক্তিযোদ্ধার মতো বলতে চাই, ‘আমাদের আছে প্রবল আত্মিক সাহস। আমাদের যুদ্ধ করতেই হবে। যুদ্ধ আমারা করবোই। বিজয় নিশ্চই ছিনিয়ে আনবোই।’

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৩২

আফসানা যাহিন চৌধুরী বলেছেন: ভীষণ ভালো লাগল... :)
জহির রায়হানের উপন্যাসগুলোতেও একেবারে কঠোর কিছু সত্যের প্রকাশ থাকে সাদামাট ভাবে- ডালভাতের মত..! শুধু একজন মানূষ কিংবা একদল মানুষের ব্যাক্তিজীবন-সমাজজীবন একাকার দেখাতেও জহির রায়হান অসম্ভব তুখোড়!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.