![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাংস্কৃতিক কর্মী শিল্প তৈরি করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন..... তবে শিল্পীর শিল্প তৈরি হওয়া চাই-ই-চাই.......সাংস্কৃতিক কর্মীর মূল কাজ শিল্পীর তৈরি শিল্পকর্ম এবং জনগনের মধ্যে মেল বন্ধন অর্থাৎ সহজ ভাষায় বললে, সেতু তৈরি করা..... আর এই সেতু তৈরির কাজ সাংস্কৃতিক কর্মীর করা চাই ই-চাই....এখানে ফাঁকিবাজির সুযোগ নাই.....সুযোগ নাই শিল্পীর মতো ব্যক্তি কেন্দ্রিক চিন্তা করার..... সাংস্কৃতিক কর্মীকে তাই মাঝে মাঝে শিল্পীর চাইতে সংগঠকের ভুমিকায় বেশি অবতীর্ণ হন...... এতে দোষের কিছু দেখি না....সব ঠিকঠাক থাকলে সাংস্কৃতিক কর্মী নামক শব্দের উৎপত্তি ঘটতো না..... সবাই শিল্প চর্চাই করতো.....শিল্প চর্চা করতে এসে কেউ বিপ্লবের কথা বলতো না..... যেহেতু বিপ্লব একটি কঠিন সত্য...... বিপ্লব দীর্ঘজিবী হোক.....\\\\\\\\\\\\\\\\n(১৪ মার্চ ২০১৫, পল্টন ...........)
সদ্য জন্ম নেয়া অনন্যার গুটি গুটি হাত গুলো ছুয়ে দেখে রাইসুল ইসলামের চোখ দিয়ে গড়গড় করে পানি ঝরে পড়লো। অনন্যার নাম রাইসুল ইসলাম অনেক আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন। যেদিন সন্ধ্যায় অনন্যার মার সাথে রাইসুল তার নানান স্বপ্নের কথা বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয, পলাশী মোড় আর আজিমপুরের পথ ধরে হাটতে হাটতে। সেই অনেকগুলো স্বপনের মধ্যে অনন্যার নাম রাখাটাও একটি স্বপ্নের কথা ছিলো। অনন্যাকে ঘিরে অগণিত স্বপ্ন বোনা হলেও অনন্যার জন্মের মধ্য দিয়ে আজ যেনো তার স্বপ্ন ভাঙার যাত্রা শুরু হলো। অনন্যার হাত, মুখ, ঠোট, মোটা মোটা পা সবটাই যেনো তার মায়ের প্রতিচ্ছবি। মা মেয়ের এতো মিল দেখে রাইসুল ইসলামে মনের মধ্যে অজানা আতঙ্কের হু হু বাতাস বয়ে যায়। সে ভাবতে থাকে মায়ের মতো দুঃখ আর অভিমানে ভরা জীবন যেনো না হয় অনন্যার। তবুও বাস্তবতা সম্পুর্ন ভিন্ন হওয়ায় রাইসুল একা মেয়ে নিয়ে কোথায় দাঁড়াবেন তা তাকে ত্রমাগত ভাবিয়ে তোলে। অনন্যার মায়ের সাথে দু’বছরের প্রেম, তারপর বিয়ে তারপর তিন বছরের সংসার। এই পাঁচ বছরে রাইসুল যেমন অনন্যার মা শুক্লা থেকে পেয়েছে সমুদ্রসম ভালোবাসা। ঠিক তেমনি সমাজ বিরুদ্ধ কাজ করাতে হারিয়েছে মা, বাবা আত্মীয় স্বজন। কারণ হিসেবে সবাই দাঁড় করিয়েছিলো, ভিন্ন ধর্ম, রাইসুলের সাথে প্রেম হবার আগে শুক্লার ডিভোর্স, এবং রাইসুল থেকে শুক্লার বয়সের জৈষ্ঠতা। সবটাই ছিলো সমাজের চিরাচরিত রীতিনীতি বহির্ভুত। কিন্তু এসব কোন কিছুকেই তোয়াক্কা না করে সামনের দিনগুলোতে হাজারটা স্বপ্ন পুরনের দিকেই তারা অবিরাম ছুটে চলছিলো। কিন্তু অনন্যাকে জন্ম দিতে গিয়ে শুক্লার অপ্রত্যাশীত মৃত্যু রাইসুলকে ভেঙে চুরমার করে দেয়।
সেদিন সন্ধ্যায় অনন্যার জন্ম আর শুক্লার মৃত্যু এই দুই খবর পেয়ে রাইসুল আর শুক্লার পরিবারের সবাই হাসপাতাল আসে। অনন্যার দায়িত্ব নেবার জন্য সকলের মায় কান্না রাইসুলকে মোটেও বিচলিত করে না। কারণ শুক্লার কাছ থেকে গত পাঁচ বছরে সে শিখে গেছে যেখান থেকে একবার মুখ ফিরিয়ে নিতে হয় সেখানে আর কখনো ফিরে তাকাতে নেই। তাই অনেকটা বাংলা চলচ্চিত্রের আদর্শ বাবার মতোই অনন্যাকে নিয়ে দু’দিন পর হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় ওঠে রাইসুল। রাইসুলের বাসায় অনন্যাকে দেখতে তার পরিবারের অনেকেই আসতে চাইলেও সে বাধ সাধে। একমাত্র রাইসুল আর শুক্লার অত্যন্ত কাছের মানুষ তিতিকেই আসার অনুমতি দেয়া হয়। তিন মাস আগে তিতি তার দ্বিতীয় সন্তান জন্ম দেয়াতে অনন্যার বুকের দুধের অভাব হয় না। এভাবে পরম মমতায় অনন্যাকে দুটি বছর তিতি বড় করে তোলে। তিতির স্বামী অত্যন্ত ভালো মানুষ হওয়াতে এ বিষয় নিয়ে কোন কথা না বললেও সেই সব লোকজন যারা শুক্লা আর রাইসুলের সম্পর্ক নিয়ে নানান কথা তুলেছিলো সেসব দিনগুলোতে তারা কিন্তু আজও একই ধরনের কুরুচিপুর্ণ কথা রটিযে যাচ্ছে। কিন্তু এবারও রাইসল এসব বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। কারন তিনি জানতেন এ পৃথিবী মানুষ নিজেই নিজের একান্তু আপনজন। যা তাকে শুক্লা শিখিয়েছিলো।
অনন্যা যতই বড় হচ্ছে রাইসুলে চিন্তা আরো বেড়ে যাচ্ছে। কারণ সাংবাদিকতা আর কয়েকটা বই অনুবাদ করে এখন কোনো একভাবে চললেও অন্যন্যাকে একটি ভালো স্কুলে ভর্তি করানো তার জন্য ভিষণ ব্যয় সাপেক্ষ হয়ে যাবে। এমন চিন্তা করতে করতে এক সময় তাকে পাড়ার একটি প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই অনন্য গো ধরে বসে সে আর স্কুলে যাবে না। কারণ হিসেবে যেটা জানা যায় তা হলো, শিক্ষকরা নাকি পান চিবুতে চিবুতে ক্লাস নেয়। অনন্যা বাড়ির কাজ জমা দেয়নি বলে শিক্ষক তাকে ভিষন মেরেছে আর বকা দেবার সময় শিক্ষকের পানের রস মুখ থেকে বের হয়ে অনন্যার সারা শরীর ভিজিয়ে দিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, যে বিল্ডিংয়ে তাদের ক্লাস নেয়া হয় সেটা প্রায় ভেঙে পড়বে পড়বে অবস্থা। বিদ্যুৎ চলে গেলে পুরো স্কুল অন্ধকার হয়ে যায়। আর সেই অন্ধকারে কে যেনো প্রতিদিন তার বুকে আর শরীরের বিভিন্ন স্থানে চাপ দেয়। অনন্যা মনে করে সেই স্কুলে ভুত আছে। ভুতের কথা বিশ্বাস না করলেও রাইসুল সাহেব ঠিকই বুঝতে পেরেছেন ভুতটি স্কুলের কেউ হবেন। এবং মনোস্থির করে ফেলেছেন মেয়েকে আর এক মুহুর্তের জন্যও ওই স্কুলে রাখবেন না। অনেক খোঁজ খবর নিয়ে তিনি অনন্যাকে এবার একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করাবেন বলে ঠিক করেন। স্কুলটি বেশ নাম করা । সে সুবাদে তিনি গেলেন ভর্তির ব্যাপারে কথা বলতে। কিন্তু গিয়ে যা শুনলেন তাতে তার মাথার উপর যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। স্কুলটির সুনাম আর দুর দুরান্ত থেকে আসা অভিজাত পরিবারের সন্তানদের এখানে লেখাপড়া শেখা সব মিলিয়ে এটা হয়ে গেছে একটি আভিজাত্য প্রকাশের অন্যতম নিদর্শন। তাই খরচ প্রাইমারি স্কুল থেকে কয়েক’শ গুন বেশি। তবু মেয়ের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে রাইসুল অনন্যাকে এখানে ভর্তি করিয়ে দিলো। মাসে আট হাজার টাকা বেতনে মেয়েকে ভর্তি করিয়ে মাস শেষে রাইসুলের হাতে অল্প কিছু টাকাই থাকে। তাই আরো বেশি বেশি অনুবাদ, বাংলাবাজারে বইয়ের প্রুফ দেখা, বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থার কপি রাইটিং, ছদ্দ নামে নাটকের স্ক্রিপ্ট ইত্যাদি কাজ করা তিনি বাড়িয়ে দেন।
মেয়েকে কিন্ডারগার্টেনে পড়ানো অবস্থায় রাইসুল ইসলামের জীবনে দ্বিতীয় এক নারীর আগমন ঘটে। যে ছিলো অনন্যার স্কুল শিক্ষিকা। অনন্যাকে স্কুলে আনা নেয় করতে করতে সে নারীর সাথে রাইসুল সাহেবের সখ্যতা গড়ে ওঠে। অনন্যাদের বাসার কাছেই সেই শিক্ষিকা থাকতেন বলে অনেক সময় রাইসুল সাহেবের আর স্কুলে যেতে হতো না। তিনিই অনন্যাকে বাড়ি পৌছে দিতেন। রাইসুল সাহেব আর সেই শিক্ষিকার সখ্যতা এমন পর্যায়ে পৌছায় যে সখ্যতা এক সময় বিছানা পর্যন্ত গড়ায়। এভাবে চলতে থাকে মাস ছ’য়েক। অনন্যা তার নিজ ঘরে পুতুল নিয়ে খেলা করলেও তার বাবা সেই নারীকে নিয়ে প্রায় বিকেলেই এক বিষ্ময়কর খেলায় মেতে থাকতেন। সাংবাদিক রাইসুল সাহেবের কাছে ব্যাপারটি বিষ্ময়কর ছিলো এই কারণে যে দীর্ঘ ৭ বছর পর তিনি কোন নারীর শরীরের স্পর্শ পেলেন। এতোদিন যেনো সব ভুলে ছিলেন। তেমনি এক শীতের বিকেলে ঘটে গেলো এক অদ্ভুত ঘটনা। অনন্যা গো ধরে বসলো আজ সে বাবার ঘরে খেলবে। তাই রাইসুল সাহেব আর সে নারীর অনন্যার ঘর ছাড়া কোন উপায় ছিলো না বিষ্ময়কর সেই খেলায় মত্ত হবার জন্য্। খেলতে খেলতে তারা এতোটাই উত্তেজিত হয়ে উঠলো যে হঠাৎ কাঁচ ভাঙার শব্দ পেলেন। রাইসুল সাহেব হতচকিত হয়ে উঠে দেখলেন নারীর পায়ে লেগে অনন্যার খাটের পাশের কর্ণার টেবিলে রাখা শুক্লার ছবিটা পড়ে ভেঙে গেছে। আর তাতেই রাইসুল ইসলাম ভিষন রকমের রাগে গরগর করতে থাকলেন। এবং অনন্যার শিক্ষিকাকে চলে যেতে বললেন। সেই রাতে রাইসুল সাহেব তার ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে উপলব্ধি করলেন অনন্যার শিক্ষিকার সাথে তিনি বিগত ছয় মাস যে কাজগুলো করলেন তা শুধুমাত্র তার যৌন বাসনা পুরণ এবং একটি নারী সংগ লাভ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ আজ শুক্লার ছবি ভেঙে যাওয়াতে তিনি যে কষ্ট পেয়েছেন এবং শুক্লার যে সব স্মৃতি তার সমামনে এতোদিন পর আবার চলে এসেছে তাতে তিনি পরিস্কার হয়ে গেলেন যে শুক্লা ব্যাতিত অন্য কোন নারীর কাছে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। শুধু মাত্র যৌন বাসনা পুরণ করা ছাড়া। তাতেও তার আপত্তি ছিলো না। কিন্তু তিনি বুঝতে পেরেছিলেন অনন্যার অবিবাহিত শিক্ষিকা তার প্রেমে সত্যিকার অর্থেই পড়েছেন। এবং তাতে তিনি মনে করেন যে অনন্যার শিক্ষিকাকে ঠকানো হচ্ছে। এইসব কথা সে নারী সেই ঘটনার তিনদিন পর যখন রাইসুল সাহেবরে মুখে শুনে তখন নীরবে চোখের পানি ফেলে চলে যায় এবং নিজেকে প্রতারিত ভেবে আর কখনো রাইসুল সাহেবের সামনে আসে না। মনে মনে ভিষন ঘৃণাও সেদিন বোধ করেছিলো অনন্যার স্কুলের সাতাশ বছর বয়সী শ্যাম বর্ণের সে নারী।
এমন নানা ঘটনার মধ্যদিয়ে রাইসুল সাহেব অনন্যার স্কুল জীবন শেষ করান। এর মধ্যে অবশ্য অনন্যা কিন্ডারগার্টেন ছেড়ে দেশের সেরা স্কুলে ভর্তি হয়। ততদিনে সে বাবার আর্থিক অসচ্ছলতার বিষয়টি বুঝে ফেলে এবং স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত বৃত্তি নিয়েই লেখাপড়া চালিয়ে যায়। কলেজ পর্ব শেষ হলে অনন্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য তৈরি হতে থাকে। অবশেষে ভর্তি পরিক্ষার দিন আসে এবং বাবা মেয়ে খুব সকালে বাসা থেকে বের হয় পরিক্ষা দেয়ার জন্য। সময় মতো পৌছে যায় অনন্যা। অনন্যাকে পরিক্ষার হলে পৌছে দিয়ে রাইসুল ইসলাম তার চিরোচেনা ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখা শুরু করে। রোকেয়া হল, জগন্নাৎ হল, পলাসী, শহীদ মিনার, টিএসসি। ছবির হাট, চারুকলা। কোন কিছু বাদ দেয়নি সেদিন। আর দশটা মানুষের মতো তারও তখন স্মৃতি মনে পড়ে যায়। সংগঠন, মিছিল, টিয়ার শেল, পোস্টার, পার্টির গ্রুপিং, ভাঙন, গান, আড্ডা আর লুকিয়ে লুকিয়ে সমাজ বহির্ভুত সবচেয়ে কঠিন প্রেমের কথাগুলো তার মনে পড়ে যায়।
সেদিন পরিক্ষা শেষ করে বাবা মেয়ে নীলক্ষেতের তেহারী খেয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এবঙ সারা রাত ভর্তি পরীক্ষার ফলের চিন্তায় অনন্যার ঘুম হয় না। অবশ্য এখন আর আগের মতো সময় লাগে না পরিক্ষার ফল পেতে। এক রাতের মধ্যেই ফল হয়ে যায়। তাই পরদিন সকাল বেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েভ সাইটে নিজের নাম খুঁজতে বসে অনন্যা আর তার বাবা। কিন্তু কোথাও অনন্যার নাম পাওয়া যায় না। অনন্যার ভিষন মন খারাপ হয়। কারণ সে জানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পক্ষে পড়া সম্ভব না। মেয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তাকে সান্তনা দিতে থাকেন রাইসুল। কিন্তু তাতেও অনন্যার মন ভালো হয় না। কিন্তু কিছু একটা করতে হবে এই ভেবেই বাবাকে বলে ওঠে সে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম তুলবে এবং বাংলায় পড়বে। সে অনুযায়ি একটা মহিলা কলেজে দু’মাস পর অনন্যা ভর্তি হয়ে যায়। অনন্যার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে তার সেই তিতি খালা খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন। তিনি চা্চ্ছিলেন অনন্যা যেনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় এবং টাকার ব্যবস্থা তিনি করবেন। কিন্তু জীবনের নানান উত্থান পতন গেলেও রাইসুল সাহেব কখনো তিতির কাছ থেকে টাকা নেননি। তাই আজও নিবেন না। এই বিষয় নিয়ে মান অভিমানের ফলে রাইসুল সাহেবের সাথে তিতির যোগাযোগ প্রায় বন্ধ থাকে টানা দুই বছরের বেশি সময় ধরে। কথা হয় সেদিন যেদিন আর কিছুই থাকে রাইসুল ইসলামের জীবনে।
এভাবে এগিয়ে চলে রাইসুল আর অনন্যার গল্প। ভালোই কাটতে থাকে অনন্যার দিনগুলো। সাহিত্যের নানা বিষয়ের সাথে তার পরিচয় হতে থাকে। মনের মধ্যে কেমন যেনো নতুন দোলা সে অনুভব করে। বাবা ছাড়াও অন্য কোন পুরুষের অভাব সে বোধ করতে থাকে সে। যখন দেখে ক্লাস শেষে বান্ধুবিরা তাদের প্রেমিকের সাথে ঘুরতে যাচ্ছে আর সে যা্চ্ছে বাসা অথবা টিউশনিতে। এভাবে মন খারাপ করা এক বিকেলে প্রতিদিনকার মতো অনন্যা তার ছাত্রের বাসায় যায় পড়াতে। সেদিন ছাত্র পড়ানো শেষ করে অনন্যা যখন বাড়ি ফিরবে তখন ছাত্রের বাবা অনন্যাকে মাসের টাকাটা নিয়ে যাবার জন্য তার ঘরে ডেকে পাঠায়। অনন্যা সেই লোককে আঙ্কেল বলে ডাকলেও সব সময় একটু অস্বস্তি বোধ করতো তার সামনে দাঁড়াতে। তার দৃষ্টি খুবই সন্দেহজনক ছিলো। যা অনন্যাকে ভিতো করে তুলতো। অনন্যা লোকটির শোবার ঘরে গেলে সে একটু আদুরে আদুরে কন্ঠে অনন্যাকে বলে যে তার আন্টি আজ বাসায় নাই। কারণ আন্টির বাবা অসুস্থ। তার ছেলেটা একা। অনন্যা চাইলে আজ রাতে তার বাসায থাকতে পারে। এই বলে অনন্যার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললো এখানে তোমার মাসিক বেতন থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি আছে। এই বলেই অনন্যার হাত চেপে ধরে। অনন্যা হতচোকিত হয়ে পড়ে এবং তার আর কিছু বোঝার বাকি থাকে না। এক ঝাপ্টা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দ্রুত সে ঘর থেকে বের হয়ে আসে এবং ক্লাস ফাইভে পড়ুযা ছাত্রটি বুঝতে পারে না টিচার কেনো এতো দ্রুতো বের হয়ে যাচ্ছেন। চোখের পানি মুছতে মুছতে অনন্যা সেদিন বাড়ি ফিরে বিকেল বেলা ঘটে যাওয়া ঘটনাকে ভুলতে চেষ্টা করে। এবং একই সাথে তার মনে পড়ে যায় প্রাইমারি স্কুলে বিদ্যুৎ চলে গেলে তার বুকে আর শরীরের অন্যান্য স্থাকে হঠাৎ চাপ দেওয়ার কথা। এবং সে ওটা বুঝতে পারে যে এটা কোন ভুতের হাত ছিলো না। ছিলো বয়স্ক কোন বৃদ্ধের।
এ ঘটনার মাস খানেক পর অনন্যার জীবন অনেকটা স্বাভাবিক হয। সে নিজে নিজেই স্বাভাবিক করে নেয়। বাবাকেও এ বিষয়ে কিছু বলে না। এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন কোন একভাবে তার পরিচয় হয় সৌমিক নামে এক ছেলের সাথে। কিভাবে পরিচয় হয় তা সকলের কাছে অজানাই থেকে যায়। সৌমিকের কথা বলার ভংগি, হাটা চলা, সৌন্দর্য অনন্যাকে অনেক বেশি সৌমিকের কাছাকাছি নিয়ে যায়। সে যেনো এমন পুরুষ এর আগে দেখেনি। আসলেই দেখেনি। কারণ জন্ম নেয়ার পর থেকে এক বাবা রাইসুল ইসলাম ছাড়া অন্য কোন পুরুষকে অনন্যা এতো কাছ থেকে দেখেনি। সৌমিক তাকে গান শোনায়, কবিতা শোনায়, ঘুরতে নিয়ে যায়। আর সব সময় কি যেনো বলবে বলবে বলে আর বলে না। অনন্যাও দিন গুনতে থাকে। অনন্যা ভাবে সৌমিক হয়তো সেই কথা বলবে যে কথা সব নারীই একজন পুরুষ থেকে শুনতে চায়। অনন্যা ভাবতে থাকে কথাটা আগে সৌমিকই বলুক। তাই সে অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে। অবশেষে সেদিন আসে। সৌমিককে আজ বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে। একটু পরপর ফোনে কাদের সাথে যেনো কথা বলছে আর অনন্যাকে এসে বলছে আজ তোমাকে বলবোই।
সারাদিন ঘুরে ফিরে সন্ধ্যা নামলে সৌমিক আর অনন্যা ছবির হাট যায়। সেখানে চা খায়। গল্প করে। কিন্তু আজ আর সৌমিকের গল্পে মন নেই। তবুও অনন্যা কথা বলতেই থাকে। আর কিছু সময় পর পর সৌমিককে প্রশ্ন করে কি কখা বলো না কেনো? সৌমিক বলে একটু পর। একটু পর একটু পর বলতে বলতে রাত নয়টা বেজে যায়। অনন্যা বাড়ি ফেরার কথা বলে। সে বলে যে তার বাবা চিন্তা করছে। সে এই নিয়ে তিনবার মিথ্যা বলেছে তার বাবাকে। তার উঠতে হবে। সৌমিক বলে যে সে তাকে পৌছে দিবে। এভাবে রাত যখন এগারোটা তখন সৌমিক অনন্যাকে উঠতে বলে বাড়ি ফেরারা জন্য। অনন্যাকে খুবই চিন্তিত দেখায়, কারণ আজ ভিষন দেরি হয়ে গেছে। আবার অপেক্ষায় আছে সৌমিকের কথা শোনার জন্য। সৌমিক এ কথা ও কথা বলতে বলতে এগুতে থাকে। আস্তে্ আস্তে উদ্যানের খুব ভিতর দিয়ে হাটা ধরে। অনন্যা বলে ওঠে ওদিক দিযে কই যাও? সৌমিক উত্তরে জানায় এদিক দিয়ে নাকি সোজা পথ। বিশ্বাস বুকে নিয়ে হাটতে হাটতে অনন্যা বুঝতে পারে যে উদ্যানের এমন এক জায়গায় এসে পড়েছে যে এটা খুবই গহীন আর অনিরাপদ জায়গা। সে আবার প্রশ্ন করে। সৌমিক কথা বলে না। সৌমিকের নিরবতা দেখে অনন্যা আজ রাতে সেদিনের সে পড়ন্ত বিকেলে তার ছাত্রের বাসার থেকেও অসহায় বোধ করতে থকে। এবং বলে ওঠে আমি বাড়ি যাবো। সৌমিক সে সময় ভয়ংকর এক দৃষ্টি দিয়ে বলে, আজ রাত বাড়ি যাবার নয়। এ কথা শেষ হতে না হতেই কে যেনো তাকে পেছন থেকে জাপটে ধরে। আর মুখ চেপে ধরে। এরপর গুনে গুনে এগারো জন। অনন্যা জবাই করা গুরুর মতো শব্দ করতে থাকে। কিন্তু তাতে তারা শান্ত হয় না। তাদের মনে এতোটুকুও মায়া হয় না। আর তাদের প্রত্যেকের মুখ থেকে মদের উৎকট গন্ধ বেরুচ্ছিলো। সবার শেষে থাকে সৌমিক। সৌমিক যখন অনন্যার উপর প্যান্টের হুক খুলে অর্ধ নগ্ন অবস্থায় তখনো অনন্যার মুখ চেপে ধরে আছে তাদের মধ্যে কেউ একজন। অনন্যার চোখ বেয়ে শুধু অঝরে পানি ঝরে পড়ছে। আর তার মায়ের ছবিটা মনে পড়ছে। কেনো যেনো আজ শুধু তার মাকেই দেখতে মন চাইছে। অনেক্ষণ মুখ চেপে ধরে রাখতে রাখতে অনেকটা ক্লান্ত হয়েই হাত সরিয়ে ফেলে তাদের মধ্যে থাকা অন্যতম কোন একজন মাতাল ধর্ষক। আর তখন অনন্যার বুকে ফোড়ার মতো সদ্য বেড়ে ওঠা স্তনগুলোর ডান পাশে একটা দানবীয় কামড় বসিয়ে দেয় সৌমিক। আর তখন অনন্যা “মাগো” বলে চিৎকার করে ওঠে। এই প্রথম সে “মা” বলে ডাক দেয়। মা বলে ডাক দেয়ার পর আর কখনোই সে কিছু বলতে পারে না। দানবগুলো যাবার আগে অনন্যার মাথা ইট দিয়ে থেতলে দিয়ে যায় এই ভেবে যে যেনো আর বেঁচে ফিরে আসতে না পারে। ভোরে ফজরের আজানের সাথে হালকা রোদ এসে অনন্যার মুখের উপর পড়ে। নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে তাকে ঘিরে থাকে মসজিদে যাওয়া মানুষগুলো। আর তারা আরো দেখে সম্পূর্ন নগ্ন অবস্থায় পড়ে থাকা দেহটির চারপাশ জুড়ে পড়ে আছে তার জামা। সাদা ব্রেসিয়ারটায় লাল রক্ত জমাট বেধে কালো বর্ণ ধারণ করেছে। আর কোমরের নিচ থেকে পা পর্যন্ত গড়িয়ে পড়া রক্ত সবুজ ঘাসকে কালচে করে তুলেছে। সারা রাত খোঁজাখুজির পর অনন্যার বাবা পুলিশের থেকে খবর পায় যে তার বর্ণনা করা মেয়েটির মতো একটি দেহ পাওযা গেছে। হাসপাতাল এসে যেনো একটু দেখে যায়। হাসপাতাল এসে সে অনন্যাকে খুজেঁ পায় এবং এতটুকু ভেঙে না পড়ে রাইসুল ইসলাম সান্তনা পায় যে তার মেয়ে এখনো জীবিত। তাই থানা পুলিশের আগে মেয়েকে দেশের সবচেছে দামি হাসপাতালটাতে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য। এরই মধ্যে মিডিয়া, পুলিশ, মানবাধিকার সংস্থা এ বিষয় নিয়ে বেশ তোড়জোড় শুরু করে দেয়।
ঘটনার তিন দিনপর সব ব্যস্ততাকে পেছন ফেলে অনন্যা না ফেরার দেশে চলে যায়। রাইসুল ইসলাম তাতেও বিচলিত হন না। মুর্তির মতো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। এবং লাশ বের করার প্রস্তুতি নেন। একই সাথে এক প্রকার স্বস্তির নিঃশ্বাস নেন এই ভেবে যে, গত তিন দিনে পত্রপত্রিকায় যে সব রগরগা খবর বেরিয়েছে তাতে তার মেয়ের আরো কয়েক দফা ধর্ষণ হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় বেঁচে থাকলে আদলতের কাটগড়া, হাসপাতাল, পাড়া মহল্লা, আত্মীয় স্বজনের কাছে অনন্যাকে আরো বহুবার ধর্ষিত হতে হতো। এমন সময় হাসপাতাল কতৃপক্ষ তাকে জানায় যে গত তিন দিনে তার বিল হয়েছে ৫ লাখ বিশ হাজার ৭ শ ছাপান্ন টাকা। এই টাকা পরিশোধ না করলে তারা লাশ দিবে না। এরপরও রাইসুল ইসলাম বিচলিত হন না। যেনো তিনি মেনেই নিয়েছেন ‘এই জল্লাদ খানাই আমার দেশ’। এই প্রথম তিনি তার সবচেয়ে আপনজন, বন্ধু তিতির কাছে টাকা চায়। এবং তিতি কোন কথা না বলে লাশ বের করার জন্য কানাডা থেকে টাকা পাঠায়। হ্যা তিতি এখন কানাডা থাকে, অনন্যা যে বছর কলেজে ওঠে সেবছর তিতি স্বপরিবারে কানাডা চলে যায়। এবং যাবার পর এই প্রথম অনন্যার মৃত্যুর খবর পেয়ে তিতি এক সপ্তাহ পর দেশে ফেরে এবং রাইসুলকে নিয়ে অনন্যার কবরের কাছে যান। মাটি চাপা দেবার পর অনন্যার কবরের কাছে এটাই রাইসুলের প্রথমবার আসা। তিতি অনন্যার কবরের কাছে এসে অঝরে কাঁদতে থাকেন। এবং দুরে দাঁড়িয়ে রাইসুল মনে মনে ভাবতে থাকে সেই দিনটির কথা। যেদিন সদ্য জন্ম নেয়া অনন্যার গুটি গুটি হাতগুলো ধরে সে নেড়েচেড়ে দেখছিলো। এবং আরো ভাবছিলো যে সেদিন শুক্লার সাথে অনন্যার চেহারার অবিকল মিল খুঁজে পাওয়ায় শুক্লার মতো অনন্যার জীবনও কি এমন দুঃখের হবে কিনা এমন যে ভাবনা সে ভেবেছিলো তার পুরোটাই সত্য হলো এবং আরো বাজে ভাবে সত্য হলো। সেসময় কবরস্থানে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে দুরে লালচে আকাশে অনন্যা আর শুক্লার মুখ ভেসে উঠতে দেখে রাইসুল। রাইসুল আরো দেখে মা মেয়ের অবিকল গজো দাঁতের সেই মিষ্টি হাসি। আর তখনই অনন্যার মৃত্যুর পর এই প্রথমবারের মতো রাইসুল চিৎকার করে ‘শুক্লা’ বলে কেঁদে ওঠে। আর তখন তিতি পেছন ফিরে দেখে রাইসুল মাথু নিচু করে মাটিতে বসে পড়েছে।
(১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, পল্টন)
২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১২
পথেরদাবী বলেছেন: ঠিক বলেছেন। আমারও তাই মনে হয়েছে। আমি একদম নতুন নতুন লিখছি। আপনার কথা মাথায় থাকলো। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২৭
জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
ভাল লিখেছেন ৷ তবে দ্রুত টেনেছেন ৷