নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিরোনামহীন....

আমার স্বপ্নের কথা বলতে চাই

পথেরদাবী

সাংস্কৃতিক কর্মী শিল্প তৈরি করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন..... তবে শিল্পীর শিল্প তৈরি হওয়া চাই-ই-চাই.......সাংস্কৃতিক কর্মীর মূল কাজ শিল্পীর তৈরি শিল্পকর্ম এবং জনগনের মধ্যে মেল বন্ধন অর্থাৎ সহজ ভাষায় বললে, সেতু তৈরি করা..... আর এই সেতু তৈরির কাজ সাংস্কৃতিক কর্মীর করা চাই ই-চাই....এখানে ফাঁকিবাজির সুযোগ নাই.....সুযোগ নাই শিল্পীর মতো ব্যক্তি কেন্দ্রিক চিন্তা করার..... সাংস্কৃতিক কর্মীকে তাই মাঝে মাঝে শিল্পীর চাইতে সংগঠকের ভুমিকায় বেশি অবতীর্ণ হন...... এতে দোষের কিছু দেখি না....সব ঠিকঠাক থাকলে সাংস্কৃতিক কর্মী নামক শব্দের উৎপত্তি ঘটতো না..... সবাই শিল্প চর্চাই করতো.....শিল্প চর্চা করতে এসে কেউ বিপ্লবের কথা বলতো না..... যেহেতু বিপ্লব একটি কঠিন সত্য...... বিপ্লব দীর্ঘজিবী হোক.....\\\\\\\\\\\\\\\\n(১৪ মার্চ ২০১৫, পল্টন ...........)

পথেরদাবী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"কি করছি আমি অথবা আমরা..."

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৬

সকাল সকাল একজন অচেনা লোক মেজাজটা খারাপ করে দিয়েছে। চা খেতে ফকিরাপুল পানির ট্যাংকির সামনে গেলাম। যে বেঞ্চিতে বসলাম ঠিক তার উল্টো দিকের আরেকটা বেঞ্চিতে বসা ছিলো লোকটা। জানতে চাইলো এলিট ফ্যাশনটা কই? জানিনা জানিয়ে বললাম ঠিকানা কি দিয়েছে। জানালেন, বায়িং হাউজে চাকরির জন্য এসেছে। ঠিকানা দিয়েছে এখানেরই। বললাম ছোট ছোট কাগজে বিজ্ঞাপন যে দেয়, সেসব দেখে এসেছেন? উত্তরে, হ্যাঁ। শুনে এক কথায় জানিয়ে দিলাম 'ভুয়া'। চোখে মুখে কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে চুপ করে রইলো। পরে জানলাম তার সম্পর্কে। বরিশাল সদর থেকে এসেছেন। সদ্য ডিগ্রি পাশ। হতদরিদ্র ঘরের ছেলে। চাকরি খুঁজছেন।



তার সাথে অনেক কথা। আমার কাছে চাকরি চাইলো। জানালাম নাই কোন চাকরি। বাড়ি যান। দোকান দেন একটা বিড়ি সিগারেটের। আর কিইবা বলার আছে আমার? আমার মেজাজ খারাপ হয়েছে এই কারনে যে, লোকটা আমার মন খারাপ করে মেজাজ খারাপ করে দিয়েছে। আমি সারাদিন সুখ খূঁজে বেড়াই। কিন্তু রাস্তায বের হলে এসব মানুষের সাথেই আমার দেখা হয়, তারপর মন খারাপ, সবশেষে মেজাজা খারাপ হয়। প্রায় প্রতিদিনই দেখা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ভিক্ষা করা বৃদ্ধা দাদুটার সাথে। পুরো আমার দাদির মতো চেহারা। আমরা কদিন আগে 'আর্ট সামিট'র রংয়ের কাজে ব্যবহৃত কয়েকটা পুরোনো বালতি দিযেছিলাম তাকে । যেহেতু আমার হাত দিয়ে দিয়েছি। তাই আমাকে দেখলেই গায়ে হাত বুলায়। তার যতো দুঃখের কথা আছে আমাকে শোনায় তিনি। কিন্তু আমিতো সুখের কথা শুনতে চাই। চিকিৎসার টাকা নাই তার। স্বামী সন্তান নাই। রায়েরবাজারে একটা বস্তি ঘরে থাকে। দিন হলে ভিক্ষা করে। ছোট্ট সুমন দেখলেই সেও গায়ে হাত দিবে। জড়িয়ে ধরে পেটে চুমু দিবে। আমাদের সবার সাথে সে একই কাজ করে। আমিতো বুঝি এটা তার পাবলিক রিলেশন। না হয় টাকা জুটবে কি করে।



এদের দেখলেই আমার মন খারাপ হয় । এবং এই মন খারাপ হয় বলেই মেজাজ খারাপ হয়। সকালের অচেনা লোকটা বলছিলো আমার মামা চাচা নাই ভাই। আমি চাকরি কি করে পাবো? যেনো আমাকেই উদ্দেশ্য করে বলা। আমার মামা আছে, চাচা আছে আর বাবা এখনো বেঁচে আছেন। আছে নিজের তৈরি করা বন্ধু বান্ধব। আমিও হয়তো কারো মামা চাচা হয়ে উঠছি। কেনো এরা অপ্রিয় সত্যগুলোর মুখোমুখি দাঁড় করায় বুঝি না। সুমন এভাবেই জড়িয়ে ধরবে। টাকা নিবে। আরো বড়ো হবে। একটু ভালো মানুষি থাকলে গাড়ির হেলপার, তারপর গাড়ির চালক হবে। অথবা চা দোকানদার হবে। আর তা না হলে ছিনতাইকারি। ছিনতাইকারি হলেই বা ক্ষতি কি? সিস্টেমেটিক ওয়েতে যে ভাবে সর্বস্ব কেড়ে নেয়া হচ্ছে প্রতিদিন, তাতে নিয়মের বাইরে গিয়ে কেড়ে নেয়া ছাড়া উপায় কি তা আমার জানা নাই।



সেনাবাহিনীকে তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। শিক্ষা ব্যবসা সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা এখন। অন্যদের মতো তারাও এটা আঁচ করতে পেরছে। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষাও এখন মানুষের নাগালের বাইরে। যেসব স্কুল কলেজের প্রশংসায় আমরা পঞ্চমুখ সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমাদের কি শিক্ষা দেয় তা তো আমার নিজের জিবন থেকে নেয়া। স্কুলের নামের ক্ষমতার জোরে শিক্ষকদের দেখেছি নকল সরবরাহ করতে। কদিন আগে এমনই এক চিত্র টিভি নিউজে দেখলাম জেএসসি পরিক্ষায়। এরাই দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেতাব লাগায়। শুধু তারাই লাগায় না, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়া 'অধিকাংশ' ছেলে মেয়েরাও সেই 'সুপেরিওরিটি' কমপ্লেক্সে ভোগে। অথচ আমি জানি এসব প্রতিষ্ঠান কি পয়দা করে, আর কি শিক্ষা দেয়। এবং এই শিক্ষা শুধু মাত্র কাদের গন্ডিতে সীমিত। সুমনদের জায়গা নেই এসব দেশ সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তাহলে ভালো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কাদের জন্য?



বড় বড় প্রতিষ্ঠানে অচেনা লোকটার জায়গা নাই। সরকার খালি পাশ করায়। দেখায় আমার কতো শিক্ষিতো। কাকে দেখায়? এতো বেকার ঘুরছে কেনো রাস্তায়? বলে যোগ্যতা নাই। অবশ্যই আছে। কার কিসে যোগ্যতা এটা নির্ধারণ করবে একটা গণ কল্যান মুখি শিক্ষ ব্যবস্থা। শিক্ষা ব্যবস্থা তো সেভাবেই গড়ে উঠবে। লেখাপড়া শেষে চাকরির নিশ্চয়তা থাকতে হবে। কিন্তু তাতো হয়নি এতো দিনেও। লেখালেখি করতে চাওয়া ছেলেকে যদি কম্পিউটার ইনঞ্জিনিয়ার বানাতে চাওয়া হয় তবে কি হয় তার ভোক্তভুগিতো আমি নিজেই। আমার না হয় সেই 'ব্যাকাপ' ছিলো। এবং সেই ব্যকাপই বা কি করে এলো এটাও প্রশ্নের উর্ধে নয়। কিন্তু যাদের নাই? তারা কি করবে। এর কারনেই কি গণহারে বিবিএ পড়ে আর বেকার ঘুরে বেড়ায়? আমাদের যে কোন কিছুই হয় না তার একটা ছোট্ট উদাহরণ হতে পারে, রাস্তা পারাপার নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ের হাস্যকর ঘটনাগুলো। যত্রতত্র রাস্তা পার হওয়া ঠকাতে সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু লাইন ধরে ফুট ওভার ব্রিজে ওঠা কতোটা হাস্যকর হতে পারে। একটা শহরে যেখানে আড়াই কোটি লোকের বসতি, মানুষের তুলনায় ব্রিজ নাই ব্রিজ নাই বললেই চলে। সেখানে সিস্টেম চুদিয়ে লাভ নেই। গোড়ায় গলদ শব্দটাতো আর এমনি এমনি আবিস্কার হয়নি।



সব ভাঙতে ভাঙতে এতোটাই অধঃপতনে নেমেছি আমরা, তাই এসব দেখতে ভালো লাগেনা বলেই মেকি সুখ খুঁজি। আর অমনি এসব অচেনা লোক সামনে চলে আসে। মেজাজটা খারাপ করে। তবে একটা বিষয় আশ্চর্যজনক। ভিক্ষুক দাদু, সুমন, চা দোকানদার সাইদ ভাই অথবা পরোটা বিক্রেতা বাবুল এরা আমার চোখ পড়তে পারে। আমাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? এতো শুকিয়ে গেছো কেনো? আমি তো আর বলতে পারি না তাদের, আগের মতো স্বপ্ন দেখি না। স্বপ্ন দেখাইও না। আগুন আর জ্বালাই নাই। ভীত ভিষণ। তাই এসব মানুষ আমাকে প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড় করায়। ভাবায়; কি করছো? আমি শুধু ভাবি। আসলেই তো কি করছি আমি অথবা আমরা?



(২৮ নভেম্বর ২০১৪, পল্টন)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.