নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিরোনামহীন....

আমার স্বপ্নের কথা বলতে চাই

পথেরদাবী

সাংস্কৃতিক কর্মী শিল্প তৈরি করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন..... তবে শিল্পীর শিল্প তৈরি হওয়া চাই-ই-চাই.......সাংস্কৃতিক কর্মীর মূল কাজ শিল্পীর তৈরি শিল্পকর্ম এবং জনগনের মধ্যে মেল বন্ধন অর্থাৎ সহজ ভাষায় বললে, সেতু তৈরি করা..... আর এই সেতু তৈরির কাজ সাংস্কৃতিক কর্মীর করা চাই ই-চাই....এখানে ফাঁকিবাজির সুযোগ নাই.....সুযোগ নাই শিল্পীর মতো ব্যক্তি কেন্দ্রিক চিন্তা করার..... সাংস্কৃতিক কর্মীকে তাই মাঝে মাঝে শিল্পীর চাইতে সংগঠকের ভুমিকায় বেশি অবতীর্ণ হন...... এতে দোষের কিছু দেখি না....সব ঠিকঠাক থাকলে সাংস্কৃতিক কর্মী নামক শব্দের উৎপত্তি ঘটতো না..... সবাই শিল্প চর্চাই করতো.....শিল্প চর্চা করতে এসে কেউ বিপ্লবের কথা বলতো না..... যেহেতু বিপ্লব একটি কঠিন সত্য...... বিপ্লব দীর্ঘজিবী হোক.....\\\\\\\\\\\\\\\\n(১৪ মার্চ ২০১৫, পল্টন ...........)

পথেরদাবী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"একজন খুনি রফিকুল আর বেঁচে যাওয়া নাজমুলের গল্প অথবা দুটো চিঠি...."(প্রথম পর্ব)

২৩ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:২৫

১.
হয় ঢাকা ছাড়তে হবে কিছুদিনের জন্য, না হয় থাপড়াইতে হবে। এতে যদি একটা লোকও পাশে না থাকে সমস্যা নাই.। পৃথিবীর নিকৃষ্ট মানুষ হিসেবে যদি পরিচিত হই কোন আফসোস থাকবে না। ইনফেক্ট আমি একদমই ভালো মানুষ না। এতো এতো ভালো মানুষের ভিড়ে একজন খারাপ মানুষ হলে সমস্যা নাই। আমি নাজমুইল্লারে মারবোই। তার সাথে জোট বাঁধা শুয়োরের বাচ্চাগুলারেও। এইভাবে রফিকুল মনে মনে বলছিলো তার ক্ষোভের কথা। কিন্তু রফিকুল বুঝতে পারছে না, কবে এবং কখন কিভাবে এই থাপ্পড়গুলো সে দিবে। তার ক্ষোভ পুষে রাখতে রাখতে এতোটাই ক্ষিপ্ত যে একখন অনেকেই তাকে পাগলা কত্তা বলে। কিন্তু পাগলা কুত্তা বলুক আর যাই বলুক এতে তার কিছু আসে যায় না। তার একটাই কথা, বিনা দোষে তাকে কেনো দোষী করা হলো। এবং এর উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত রফিকুলের এই ক্ষোভ দমবার নয়। যা সে পুষে আসছে বছরের পর বছর। সে এক প্রকার প্রতিজ্ঞা করে আছে, থাপ্পড় সে মারবেই নাজমুল গংদের। এসব ভাবতে ভাবতে রফিকুল দেখে একটা নিঃসঙ্গ কাক কার্ণিশে বসে আছে। যেনো বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছে কাকটি। কাকটার কয়েকটা পালক এরই মধ্যে ঝরে পড়েছে। গত সন্ধ্যার তুমুল ঝড়ে তার শরীর আর শরীর নেই। বিদ্ধস্ত শরীর নিয়ে এক পলকে চেয়ে আছে সামনে দিকে। রফিকুল নিজেকে সেই কাক মনে করে। রফিকুলের মেয়ে অনন্যা বারান্দায় এসে বাবার হাত ধরে। তিনি ক্ষাণিকটা সময়ের জন্য সব ক্ষোভ ভুলে যান।

২.
দু'দিন পর রফিকুলে মাথা আবারো ভিষণ রকমের খারাপ হয়ে ওঠে। মুলতো খারাপ হবার কারণ একটা ছুরি। যে ছুরিটা সে আর তার মেয়ে খুব শখ করে কিনেছিলো ফল কাটবে বলে। বাবা মেয়ের সংসার। তেমন বেশি কিছু নেই তাদের। তাই সংসারের প্রয়োজনে নতুন কিছু কিনলেই এক ধরনের উচ্ছাস কাজ করে তাদের মধ্যে। অনন্যা বাসায় নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছে। রফিকুলও অফিস যাবে বিকেল করে। খালি বাসায় হঠাৎ ডাইনিং টেবিলে ছুরিটা পড়ে থাকতে দেখে রফিকুলের এক ধরনের এটা ধরে দেখতে ইচ্ছা হয়। সে টেবিলের কাছে যায়।আবার যায় না। এক প্রকার উন্মাদনা কাজ করছে তার মধ্যে। সে বুঝতে পারছে না ছুরি দেখে হাত কাঁপার কি আছে? কিন্তু হঠাৎ সে আবিস্কার করে এই ছুরিই যেনো খুঁজছিলো গত ২৭ বছর ধরে। কাকে যেনো মারার জন্য এমন ছুরি তার প্রয়োজন ছিলো খুব। কিন্তু সে পায়নি। আজ ছুরিটা পেয়ে তার মনে হতে থাকলো, ছুরিটা দিয়ে মাত্র একটি আপেল কাটা হয়েছে। কাজেই ধার থাকতে থাকতে এর সঠিক ব্যবহার না করলে তার ব্যর্থতা ভরা জীবনের ষোল কলা পূর্ণ হবে। তাই সে আর দেরি করতে চায় না। সে ছুরিটা নেয় আর আলমারিতে খুব যত্ন করে লুকিয়ে রাখা লিস্টাটা বের করে। সবার প্রথমে দেখে নাজমুল নামটা। এবং সেখানে এদলা থুতু ছেটায় এবং বলে ওঠে, ফাইনালি আই এম কামিং।

রফিকুল গত সাতাশ বছর নিয়ম করে নাজমুলের কর্মস্থল এবং বাসার ঠিকানা খুঁজে রেখেছে। বাসা বা চাকরি যেটাই বদলাক না কেনো তার খবর রফিকুলের কাছে ঠিক ঠিক পৌছে যায়। এই সাতাশ বছরে নাজমুল মোট পাঁচটি চাকরি ছেড়েছে। তার সেই দালাল কিসিমের কিছু না বোঝা হাবাগোবা চেহারা এখনো ঠিক একই রকম। নাজমুলের সাথে কোন প্রতিষ্ঠানেরই কখনো বিরোধ চলতো না। কেবল মাত্র অন্যত্র ভালো বেতনের সন্ধান পেলেই নাজমুল চাকরি ছেড়ে যেতো। তো নাজমুলের চরিত্রের আরো গভীর বর্ণনা করতে একটা ছোট্ট গল্প না টানলেই নয়। বহুবছর আগে রফিকুল তার এক আদিবাসি বন্ধুর সাথে খাগড়াছড়ি যায় একটা অফিসের কাজে। বন্ধুটির বাড়ি খাগড়াছড়িতে হওয়ায় হোটেল বা সার্কিট হাউজে ওঠার দরকার পড়েনি তাদের। তো পাইচিং বহু মাসপর বাড়ি যাওয়াতে তার বাড়িতে থাকা কুকুরটি খুশিতে গদগদ হয়ে ওঠে। প্রভুভক্তি কাকে বলে তা রফিকুল সেদিন দেখে। দু’হাত উপরে তুলে পাইচিংকে আগলে ধরতে চায়। জিহ্বা দিয়ে চেটে পুটে একাকার। আবার কখনো মাটিতে শুয়ে নানান কসরত। এভাবে দেখেতে দেখতে মিনিট পাঁচেক। একসময় রফিকুলের মনে হয় পশু বলেই দৃশ্যটি দেখতে ভালো লাগছে। কিন্তু মানুষ এমন করলে কেমন লাগতো? রফিকুলের মেজাজ খারাপ হতে থাকে। সে ভাবে মানুষ হলে এক থাপ্পড় দিয়ে মাটিতে শুইয়ে দিতাম। কিন্তু পরোক্ষনেই তার সেই নাজমুলের কথা মনে পড়ে যায় এবং রফিকুল ভাবে মানবকুলেও এমন প্রভুভক্ত কুকুর সমেত কর্মচারি আছে। যারা মালিকের পা সব সময় চাটতে থাকে। আসলে গল্পের প্রয়োজনে নাজমুলের চরিত্র বর্ণনা করতে রফিকুল এর চাইতে আর কোন ভালো উদাহরণ দিতে পারেনি। তাই এখানে রফিকুলকে একা দোষ দেয়া ঠিক নয়। কারণ গল্পকার নিজেও আর কোন উৎকৃষ্ট তুলনা খুঁজে পাচ্ছিলো না। গল্পে ফিরে যাই।

৩.
রফিকুল আজ বেশ সকাল সকাল উঠেছে। আজই সে নাজমুলের উপর প্রতিশোধ নিবে বলে মনস্থির করেছে। রফিকুল ঠিক করেছে নাজমুলকে তার বাসার সামনেই ধরবে আজ। তাই বাসার সামনে চলে যায়। ঠিক সাড়ে আটটা বাজতেই রফিকুল দেখে নাজমুল তার আলিশান এপার্টমেন্ট থেকে বের হয়। কিন্তু যা দেখে সে আশাহত হয় তাহলো, গাড়ি। নাজমুলের চুলে মোটামুটি ভালোই পাক ধরেছে। কিন্তু আগের মতোই হালকা পাতলা গড়নের। রফিকুল এতো দিন এতো কিছু নিয়ম করে খোঁজ খবর রাখলেও সে এটা খেয়াল করেনি যে ২৭ বছর আগের মতো নাজমুল এখন আর টিফিন ক্যারিয়ার হাতে নিয়ে হাটতে হাটতে মোহাম্মদপুর থেকে অফিস করতে আসে না। গত সাতাশ বছের তার বেতন বেড়েছে প্রায় নয়গুন। কি করবে এখন রফিকুল তাই ভাবতে থাকে। (চলবে)

(২২ মে ২০১৫, পল্টন)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.