নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নে চলার মত কতটুকু পথবাকি,জানি না। শুধু জানি পথচলছি,,আর আশে-পাশের সবদেখছি,,কিছু অচেনা চেহারা আপনহচ্ছে,,শত চির-পরিচিত মুখের আদলবদলে যাচ্ছে। আমি শুধু দেখেইচলেছি,,বদলাচ্ছিও.......এই বদলের জন্য কি আমি দায়ী??নাকি সময়?? নাকি ঐ পরিচিতমুখগুলি??

ইচ্ছের নীল রং

somoyer sathe jara bodle jay tara manush na tara wheather

ইচ্ছের নীল রং › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওরা ৩ জন

০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:৪৬

লেখাটা আমার না। আমার ফেবু ফ্রেন্ডের। তার লেখা গুলুর প্রতি আমার দুর্বলতা আছে।
লেখা কার্টেসিঃআদি কুন্তল
.........

প্রত্যেক মানুষই আলাদা আলাদা গল্প। আমি যাদের কথা বলবো তাদেরও আলাদা আলাদা গল্প। কিন্তু একটা সময় সব এসে এক হয়ে যায়। গল্পটি তিন বয়সের তিনজন মেয়ের। পিয়ালি, প্রাপ্তি,পুপি।তিনজন ই একটা মেসে থাকে। কিভাবে যেন এক রুমেই পরেছে সিট। পিয়ালি:মধ্যবয়স্কা। গার্মেন্টস এ কাজ করে।
প্রাপ্তি:বয়স পঁয়ত্রিশ ছুঁই ছুঁই। বিবাহিতা।শিক্ষিত। জব করে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে।
পুপি:তরুণী। সবে ভার্সিটির গন্ডিতে পা রেখেছে। চঞ্চল। টিউশনি করে সাথে পার্ট টাইম জব খুঁজছে।
এদের গল্প গুলো বড় দূরের কাহিনী। হৃদয় বিনিময়ের দূরহ কথা।
-পিয়ালি খালা
-কিরে?
-পুপি আসে নাই এখনো।
-নাহ। ফোন করেছিল। কি যেন কাজ আছে। আসতে রাত হবে।
-মেয়েটা বড্ড খাটছে।তুমিও। ওভার ডিউটি না করলে চলে না?
-শোনো মেয়ের কথা। সময় কাটে না বলে করিরে। আর তুই ও তো অনেক পরিশ্রম করিস।
-আরে বাদ দাও তো। খেতে দাও। কি রান্না করেছো?
-এখন হালকা নাস্তা কর। পুপি আসুক। এক সাথে খাবো।
-আচ্ছা। পেঁপে মেখে দাও টক দিয়ে।
-আচ্ছা, তুই হাতমুখ ধুয়ে নে।
হাতমুখ ধুয়ে খালার মাখানো পেঁপে নিয়ে বসলাম। উফ!খালা যে কি কি ভাবে নাস্তা
বানায়। শুধু খেতেই ইচ্ছে করে। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হচ্ছে। পুপি এসে গেছে। পেঁপের বাটি লুকিয়ে দরজা খুললাম। খালা ওয়াশরুমে গেছে।
পুপি ঘরে ঢুকেই নাক টানলো।
-প্রাপ্তি আপু,তুমি কিছু খাচ্ছিলে?
-না তো
-সত্যি বলো
-না
-আমি পেঁপে মাখানোর ঘ্রাণ পাচ্ছি।
বলতে বলতে ঘর খুঁজতে ঝাপিয়ে পড়লো।খুঁজে বের করে খেতে বসলো। আমি চিল্লিয়ে উঠলাম। খালাও চলে এসেছে।
-কি রে?কি হলো তোর?
-দেখো না, সব পেঁপে খেয়ে ফেললো
-হুহ। আমি না আসলে তো তুমি সব খেয়ে ফেলতা।
-আচ্ছা, আচ্ছা ঝগড়া করিস না। জানিস তোদের...
হঠাৎ দেখি খালা পরে যাচ্ছে। লাফ দিয়েযেয়ে ধরে ফেললাম। দাঁত লেগে গেছে। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পুপিকে বললাম,'কনিষ্ঠ আঙুলের মাথায় চাপ দিয়ে ধর'।
চিল্লাচিল্লি তে অন্য ঘরের মেয়েরাও ছুটে এসেছে। একজন এসে চোখে মুখে পানি
ছিটিয়ে দিলো।কিছুক্ষন পর জ্ঞান ফিরলো খালার। ধীরে ধীরে সবাইকে বিদায় করে রুম লাগিয়ে দিলাম। খালা চিঁ
চিঁ করে বললো,
-পানি খাবো।
পানি দিলো পুপি।একটু পর ধাতস্ত হয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো খালা। খালাকে বললাম,'কান্না করছো কেন'?
খালা বললো-
'তখন আমার বয়স কম। সবে নাইনে পড়ি। দেখতেও সুন্দর ছিলাম।বেণী ঝুলিয়ে স্কুলে যেতাম। ছাত্রীও খারাপ ছিলাম না। একদিন চোখে পরে গেলাম চেয়ারম্যানের মাস্তান ছেলের। প্রতিদিন স্কুলের কাছে দাঁড়িয়ে থাকতো। বাবা ছিল আমার চাষাভুষো। এই করে করে এসএসসিও দিয়ে ফেললাম। রেজাল্ট বের হলো। ফার্স্ট ডিভিশনেই পাশ করলাম। কলেজেও ভরতি হলাম। একদিন সঞ্জু এসে বলল,'ওই পিয়ালি, তোকে আমি বহুত পেয়ার করি। বাজানরে আইজকা তোর বাড়িত পাঠাবো। 'কি যে আনন্দ হলো। আসলে আমিও সঞ্জুর উপর দূর্বল হয়ে পরেছিলাম।বিকেলে এসেছিল ও ওর বাবাকে নিয়ে। বিয়েও হয়ে যায় ওর সাথেই। প্রথম তিনমাস ভালবাসার অভাব ছিল না। তারপর কমতে শুরু করলো। তার কারন আমি শ্বশুরের বিরোধিতা শুরু করেছিলাম।চেয়ারম্যান হয়ে যা ইচ্ছা তাই করতো আমার শ্বশুর।কাজেই একটু একটু করে লাগতে লাগতে সেটা বিরাট আকার নিলো। সঞ্জু
ছিল বাপভক্ত। কাজেই আমাকে আর ওর ভাল লাগতো না। ধীরে ধীরে আমার উপর অত্যাচার শুরু হলো। আমার কলেজ বন্ধ হলো। একদিন খেয়াল করলাম আমি প্রেগন্যান্ট। সঞ্জুকে বললাম,সঞ্জু বিরস মুখে বললো নিজেই খেতে পারি না আবার আরেকটা। বাচ্চা তুই নষ্ট করে ফেল।গিয়ে ধরলাম শ্বশুরকে। সে বললো কুলটা মেয়েমানুষ। কার বা কার সন্তান আমাদের বংশে আনবি। নষ্ট করে ফেল।
মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।অনেকভাবে চেষ্টা করেছিলাম বাচ্চা কে বাচানোর। কিন্তু বাধ্য হয়েই এবোরশন করতে হয়। তারপর আর ওরা নেয়নি আমাকে। একসময় বাবার কাছেও বোঝা
হয়ে গেলাম।তখন পাশের বাড়ির সালেহার আম্মার সাথে ঢাকা চলে আসি। প্রথম প্রথম মানুষের বাড়ি কাজ করতাম।সেখানেও শকুনের মত থাবা বিছিয়ে আছে সাহেবরা। পরে গার্মেন্টস এ ঢুকি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত। '
খালা চুপ করার পর ঘরে নেমে এলো অটুট নিস্তব্ধতা। খেয়ালই করি নি কখন যে আমি কথা বলতে শুরু করেছি।
'আমি ছোটবেলা থেকে মানুষ হয়েছি আদরে আদরে। বাবা ছিল সরকারি চাকুরে। মা গৃহিণী। আমরা তিন বোন ছিলাম।আমি মেঝ। সবসময় যা চাইতাম পেতাম।এভাবে বড় হচ্ছিলাম। স্কুল, কলেজের গন্ডি পেরিয়ে ভার্সিটি তে উঠলাম। বড় আপার বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট বোন ইন্টারে। বাবা আমার বিয়ের জন্য চাপ দিতে লাগলো। তখন অনার্স থার্ড ইয়ার। বাবার কথা ভেবে রাজিও হলাম। বিয়ের পর সুখেই কাটছিল। অনার্স শেষ করে মাস্টার্স এ ভরতি হলাম। শাশুড়ি চাপ দিতে লাগলো বাচ্চা নেয়ার জন্য। আমিও পিল খাওয়া বাদ দিলাম। কিন্তু হলো না। পরে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে ধরা পরলো আমি কখনো মা ই হতে পারবো না। তারপর থেকে সব পাল্টে গেল।এহসান ঠিক মতো কথা বলতো না ।শাশুড়ি কথায় কথায় খোটা দিত। তিষ্টুতে না পারে বাবার বাড়ি চলে আসলাম। যেই বাড়ির আদরের মেয়ে ছিলাম, সেখানেও
খোঁচা খেতাম।শেষে এক ক্লাসমেট কে বলে টিউশনি যোগাড় করলাম। কষ্টে মাস্টার্স শেষ করলাম। রেজাল্ট ভাল হওয়ায় সেই সহপাঠিনীর চেষ্টায় তার বাবার কোম্পানিতেই জব পেয়ে গেলাম। এইতো এখন বেশ আছি। '
খানিককাল চুপ করে থেকে পুপি বলা শুরু করলো,
'আমার খুব ছোটবেলাতেই মা মারা যায়। বাবা ছিল ব্যবসায়ী। মাঝে মাঝে তার সাথে দেখা হতো। মা মারা যাবার পর বাবা আবার বিয়ে করে। সারাদিন মা কি যন্ত্রনাই যে দিতো। মারতো। বাবা কে বললে বাবা চুপ করে থাকতো। বাড়ির সব কাজ করেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতাম। পড়তে দেখলে মা আরো বেশি মারতো। খেতে দিত না। ঘুমাতাম স্টোর রুমে। এভাবে
এসএসসি পাশ করি। তারপর কলেজে ভরতিও হই। কিন্তু তাতে মায়ের অত্যাচার আরো বেরে যায়। একদিন হঠাৎ মা বলে বসলো,তুই তো এই বাপের সন্তান না। কেন শুধু শুধু থাকিস এখানে। চমকে গেলাম। বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করে মামার কাছে গেলাম। মামা কে জিজ্ঞেস করলাম। মামা বললো হ্যা। তোর মায়ের বিয়ের আগেই তুই চলে আসিস। সেই ছেলেটি তোর মাকে অস্বীকার করলে তোর মা আত্মহত্যা করতে যায়। তখন সিরাজুলকে বলে তোর মাকে বিয়ে দেই। সিরাজুল আমার বন্ধু ছিল। আমার কথা ফেলতে পারে নি। শুনে আমার মাথা ঘুরে গেল । বাড়িতে এসে জিনিসপত্র গুছিয়ে আমার কলেজের ইতিহাস স্যারের বাসায় গেলাম। যেয়ে স্যারকে সব বললাম। স্যারের কাছে থেকে, স্যারের সাহায্যে এত দূর এসেছি আমি। '
ঘরের মাঝে পিনপতন নিরবতা ।এতটা নিস্তব্ধতার মাঝেও তিন অসম বয়সী নারী পরস্পরের হাত
শক্ত করে ধরে আছে ।এটি বিশ্বাস, ভালবাসা, ভরসার হাত। তিন জন মানুষের কাছে আসার সেতু।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.