![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রগতিশীল বিজ্ঞানমনস্ক এবং মুক্তচিন্তার অধিকারী
প্রসজ্ঞ পোস্ট নারী নিয়ে ইরান,ইসলাম এবং মুসলমান এক্সট্রিমিস্টদের বর্বরতা।
প্রথমেই বলা বাহুল্য,
ইরান কী মানুষকে বোঝাতে চায় ইসলাম মানে বর্বর ধর্ম ??
ইরান কী বুঝাতে চায় নারীরা হচ্ছে শুধুমাত্র চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ?
ইরান পৃথিবীর অন্য সকল মুসলমানদের কী মেসেজ দিতে চায়?
আমার একটি প্রশ্ন ইসলামের কোথায় এমন কী কোন কথা লেখা আছে যে কোন মানুষ পর্দা না করলে তাকে হত্যা করতে হবে বা করা যাবে কিংবা তাকে গ্রেফতার করা যাবে তাকে বন্দী করা যাবে ?
কোনো কিতাবে কী এমন কোনো কথা লেখা আছে যে পর্দা না করলে কাউকে নির্মম শাস্তি দেওয়া যাবে?
প্রশ্ন গুলো রেখে ইরানের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আসি। বিগত কয়েক দিন ধরে ইরানে চলা আন্দোলনে প্রায় ২০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।এই সাধারণ মানুষের সাথে যা হচ্ছে সেটা মূলত একটা গণহত্যা। যেখানে নারী, পুরুষ ও শিশু থেকে শুরু করে অসংখ্য মানুষ নিখোঁজ, মা আন্দোলনে যোগ দিয়েছে বলে মেয়েকে মায়ের লাশের সামনে নিজের চুল কেটে হিজাব ফেলে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, যেখানে আন্দোলনে অংশ নেয়ার জন্য সতের বছর বয়সী নিকা সাকারামি, ষোল বছরের সেরিনা এসমেইলজাদেহকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলার পরে শরীর থেঁতলে দেওয়া হয়, মেয়ে মাসা আমিনীকে মরালিটি পুলিশ মেরে ফেলেছে বলে বাপকে স্টেটমেন্ট দিতে হয়, যে ইমাম জানাজা পড়াতে এসেছে তাকে মেয়ের লাশ কাঁধে নিয়ে বিদায় করে দিতে হয়- সেটা একটা গণ আন্দোলন। এই গণ আন্দোলনকে রুখতে যা যা করা প্রয়োজন তা ই দৃঢ়ভাবে করে যাচ্ছে ইরানের এই চরমবাদ সরকার।
এখন প্রতিদিন উনিশ ঘন্টা করে ইরানের ইন্টারনেট অফ করে রাখতে এই সরকার দুই দশমিক এক মিলিয়ন ইউএস ডলার খরচ করছে।চলমান আন্দোলন সবচেয়ে বেশি মানুষের মনোযোগ ধরেছিল প্রদর্শনী। পরিতাপের বিষয় সরকার সব ধরণের মিটিং, প্রদর্শনী ব্যান করে দিয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য।
কেমন অসভ্য হলে এটা করা যায় ভাবেন!
বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশে আমরা খুব অল্প অল্প খবর পাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে মেয়েদের এই হিজাব পরতে বাধ্য করার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটা একটা মেকি আন্দোলন। কিন্তু ইতিমধ্যেই কয়েকশো মানুষের রক্তমাখা এই আন্দোলন একটা ভয়ংকর চরমবাদ সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন। যে সমাজ মেয়েদের বাধ্য করে তাদের চাপিয়ে দেয়া কর্তৃত্বে, এই আন্দোলন সেই চাপিয়ে দেয়া কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে আন্দোলন।এই আন্দোলনকে মেকি হিজাবের আন্দোলন বললে ভুল হবে,এই আন্দোলন ইরানের প্রতিটি মেয়ের কয়েকশত দিনের চরমবাদের বিরুদ্ধে মনের গহীন ছোট ছোট জনে থাকা ক্ষোভের এক বিশাল বিস্ফোরণ।
এই আন্দোলন মূলত মেয়েদের ওপর কর্তৃত্ব দেখাবার অসুস্থ মানসিকতার বিরুদ্ধের আন্দোলন।বলাবাহূল্য সৌদি আরব হজ্জ্ব করতে মেয়েদের যে অভিভাবক নিয়ে যেতে হয় সেই সিস্টেম তুলে দিচ্ছে।কেন হঠাৎ করে আপনাদের পূন্যস্থানের কর্তারা এমন অপূন্য সিদ্ধান্ত নিল?
মেয়েদের অসংখ্য আন্দোলনের পরে ড্রাইভিং ব্যান তুলে দিয়েছে।সৌদির মেয়েরা অনায়াসে ফুটবল না সব ধরনের খেলায় অংশগ্রহন করতেছে।
সব কিছুর উপরে যে আরও অনেক প্রশ্ন ও রয়ে যায়।এই যেমন, আপনি কি জানেন শুধুমাত্র ড্রাইভিংয়ের জন্য আন্দোলন করে কয়জন মেয়েকে বিভিন্ন মেয়াদে জেলে থাকতে হয়েছে? কয়জনকে মারা যেতে হয়েছে? আপনি কি জানেন শুধুমাত্র মাথার চুল দেখা যাওয়ায় কয়জনকে স্কুলঘরে জীবন্ত পুড়তে হয়েছে?
আপনি জানেন না। একটা মানুষকে শুধুমাত্র তার লিঙ্গ দিয়ে বিবেচনা করে আপনি তাকে ঘরে আটকিতে রাখতে চান এটা আপনার কোন ধরনের সভ্যতা।আপনি ইরানের মেয়েদের আন্দোলনে পশ্চিমা মদদ দেখতে পান ভালো কথা, কিন্তু তাদের মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকার দেখতে পাননা কেন?
আপনি জানেন না আপনি মেয়েদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে নিয়ে তামাশা করে আপনার মায়ের এবং বোনের এবং কন্যার অধিকার নিয়ে তামাশা করছেন। আপনি কথায় কথায় আমার ধর্মে এই বলা হয়েছে , আমার ধর্মে এই বলা হয়েছে বলে মুখে ফেনা তুলেন। আমি যদি বলি ধর্ম আগে না মানুষ আগে, তাহলে তার উত্তর দিবেন কী? আপনি আপনারা বারবার ইসলামের দোহাই দিচ্ছেন, আপনারা ইসলামের দোহাই দিচ্ছেন না বরং ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করে কর্তৃত্ববাদ কায়েম করতেছেন। মুখে গলা ফাটা চিৎকার দিয়ে ত বলেন ইসলামে নারীদের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছি। তা ই যদি হয়ে থাকে তাহলে সেই সর্বোচ্চ সম্মানধারী নারীকে আপনি তুচ্ছ জিনিসের অযুহাতে নির্মমভাবে কীভাবে হত্যা করতে পারেন।
একজন নারীকে শুধু নারীর চোখে না দেখে তাকে আপনার মা,বোন,স্ত্রী ,দাদী,নানী,মামী,ফুফু,খালা,বান্ধবীর চোখে দেখুন। একজন নারীকে শুধু নারীর চোখে না দেখে তাকে একজন মানুষ হিসেবে দেখুন। একজন নারীকে শুধুমাত্র নারীর চোখে না দেখে তাকে ও স্রষ্টার সৃষ্টি হিসেবে দেখুন।
পরিশেষে নারী নিয়ে ইরান,ইসলাম এবং মুসলমান এক্সট্রিমিস্টদের বর্বরতা নিপাত যাক, পৃথিবীর সকল নারী স্বাধীনভাবে বেঁচে থাক।
©somewhere in net ltd.