![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রগতিশীল বিজ্ঞানমনস্ক এবং মুক্তচিন্তার অধিকারী
বাংলাদেশ আর আমেরিকার সম্পর্ক এখন তলানিতে। তা নিয়ে আমি যা বলছি এতদিন ধরে অনেকে নাকি এখানে আমাকে দুইটা ভিন্ন ধারণা দিতে দেখছেন। তাদের মতে আমি সিচুয়েশনটা নিয়ে একটা ডাইকোটমি সৃষ্টি করেছি, কিন্তু আসলে তা না। আমেরিকা নিয়ে আমি কিছু ব্যাখ্যা দিচ্ছি।
আমেরিকাতে আছে লিবারেল ডেমোক্রেসি। আমরা যারা আমেরিকান প্রবাসী তারা এই লিবারেল ডেমোক্রেসি দারুণ ভাবে উপভোগ করছি, কর্মজীবনে উন্নতি করছি, ছেলেমেয়ের জন্ম দিয়ে সবাই ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছি।
কিন্তু আমেরিকা অন্য দেশের, বিশেষ করে থার্ড ওয়ার্ল্ডে ডেমোক্রেসি স্টাবলিসমেন্ট করার ঠিকেদারি নেয় নাই। তারা অন্যদেশের ডেমোক্রেসি, অটোক্রেসি, রাজতন্ত্র, স্বৈরাতন্ত্র নিয়ে বিচলিত নয়। আমেরিকা এপার্টহাইড ইজরায়েলের পরম বন্ধু, স্বৈরাচারী সিসির সাপোর্টার, গণতান্ত্রিক ইরানের মোসাদ্দেককে তারা হটিয়েছে, খাসোগজি হত্যার আদেশকারী মোহাম্মদ বিন সালমানকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে রেখে আদেশ পালনকারীদের প্রায় সকলকে ম্যাগনিৎস্কি এক্ট এর আওতায় এনেছে।
সবখানে আমেরিকা নিজের স্বার্থ দেখছে। অন্যের স্বার্থ রক্ষায় আমেরিকা নিজেদের ট্যাক্স পেয়ারদের ডলার খরচ করবে কেন? তাই যতক্ষণ না নিজ স্বার্থে আঘাত না লাগছে বা প্রয়োজন না হচ্ছে ততক্ষণ যে কোনো দেশের সরকার যা কিছু করতে পারে। আমেরিকা বিচলিত নয়। খুব বেশি হলে কিছু সস্তা আর সুন্দর বাণী ছেড়ে দিয়ে নিজেদের গুটিয়ে রাখবে।
আমেরিকার মূল ফরেন পলিসিও নিজ স্বার্থ রক্ষাকে কেন্দ্র করে। নিজের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন মেটাতে যেহেতু বাইরের বিশ্বের উপর তাঁকে নির্ভর করতে হয়, তাই বহির্বিশ্বকে কন্ট্রোল করা তার অতীব প্রয়োজন। সেখানে আমেরিকা একটা স্ট্র্যাটেজি সেট করে রেখেছে, যার দরুণ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সে মিলিটারি বেইস , তার মতো কিছু পশ্চিমা দেশের সাথে এক্সটেনসিভ নেটওয়ার্ক, সামরিক আর ইন্টালিজেন্স চুক্তি করে রেখেছে। ইটস এ প্রাইভেট ক্লাব।
কিন্তু একই সাথে আমেরিকা একটা দাতা দেশ। আমেরিকা সবচেয়ে বেশি এইড বিশ্ববাসীকে দান করে। এসবের বেশিরভাগেরই কোনো পূর্বশর্ত নাই। গেলো ৬ দশকে, সারা বিশ্বে রিসার্চ-ডেভেলপমেন্ট-টেকনোলজিক্যাল অবদানে আমেরিকার ধারেকাছে আর কেউ নাই। পড়ালেখার জন্য তাদের দুয়ার সারা বিশ্ববাসীর জন্য খোলা। ক্ষমতার দিক দিয়ে চীন আমরিকার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও আমেরিকাতে বহির্বিশ্ব থেকে পড়তে আসা স্টুডেন্টদের মাঝে চীনের স্টুডেন্ট সবচেয়ে বেশী। ইজরায়েলের পাগলা সাপোর্টার হলেও তারা ফিলিস্তিনি স্টুডেন্টদের স্কলারশীপ দিয়ে আমেরিকায় পড়ার সুযোগ দেই। কভিডে খোদ বাংলাদেশকে তাদের মজুদ টিকা বিনা মূল্যে দান করেছে। রাশিয়া আর চীন এসব করে না। তারা সবকিছুর মূল্য অনুযায়ী প্রতিদান চায়, আর আমেরিকা প্রচুর ক্ষেত্রে গুডউইল প্রদান করে।
আপনার মনে এখন প্রশ্ন তাহলে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতে আমেরিকা কী গুডউইল প্রদান করছে, নাকি কোন স্বার্থ আছে? আমার মতে অবশ্যই স্বার্থ আছে। তাহলে কী সেই স্বার্থ?
ধরেন স্বার্থটা হচ্ছে আমেরিকা বাংলাদেশ থেকে একটা ম্যাঙ্গ ফ্লেভার্ড ললিপপ চাচ্ছে। এই ললিপটা ট্যানজীবল কিংবা ইনট্যানজীবল কিছু একটা। ট্যানজীবল মনে হচ্ছে তেমন একটা বস্তু যা আপনি ধরতে বা ছুতে পারবেন, যেমন ভূখণ্ডের কোনো জায়গা যা তারা নিজেদের খুশি মতন ব্যবহার করতে পারবে, ধরেন ভারতের বাইরে থেকে ভারত আর চীনের উপর ইন্টালিজেন্স গ্যাদারিং বা অন্য কিছু । আর ইন -ট্যানজীবল হচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে, অর্থাৎ কোন পলিসি বা কোন ধরনের সাপোর্ট, যেমন জাতিসংঘের আমেরিকার আনীত সব রেজ্যুলুশনে চোখ বন্ধ করে আমেরিকার পক্ষে “হা” ভোট, আর চীন আর রাশিয়ার বিরুদ্ধে “না” ভোট। যেহেতু আমি শিওর না, আমেরিকার স্বার্থটা এক্স্যাক্টলি কী তাই আমি বলছি আমেরিকা বাংলাদেশ থেকে ললিপপ চায়।
এখন শেখ হাসিনা কিছুতেই এই ললিপপ দিতে রাজি নয়, কারণ রাশিয়া অথৈব চীন কিংবা ভারতের কারণে এই ললিপপ দিলে তার নিজের অস্তিত্ব থাকবে না। তখন আমেরিকা বলল, না দিলেও তোমার অস্তিত্ব থাকবে না। আর অস্তিত্বের উপর চাপ বাড়াতে সে কয়েকটা কাজ বেছে নিয়েছে।
প্রথম কাজ হলো অভ্যন্তরীণ ভাবে তাঁকে যারা ক্ষমনতায়ন করে রেখেছে তাদের পাশ থেকে সরানো। যাতে আমেরিকার কোনো ডলার খরচ হবে না। নিয়েছে ভিসা নীতি আর ব্যক্তি মানুষের উপর স্যাংকশান ইত্যাদি। যেহেতু হাসিনার ক্ষমতার লাঠিয়াল হচ্ছে মিলিটারি, র্যাব, পুলিশ, বিচারপতি, বিচারক, বড় বড় ব্যবসায়ী ইত্যাদি, অতএব বেছে বেছে এদের ভিসা বাতিল করে প্রেশার সৃষ্টি করেছে যাতে তারা হাসিনা থেকে সরে যায়। এরপর হুমকি দিচ্ছে ট্রেইড এ তারা যেসব সুযোগ সুবিধা বাংলাদেশকে দিত তা হ্রাস করার। মানি লন্ডারিং এর দোষীদের চিহ্নিত করে বিচারে আনা ইত্যাদি।
একই সাথে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর। বাংলাদেশে ফ্রি এন্ড ফেয়ার অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন দিতেই হবে বলে আমেরিকা গো ধরেছে। গেলো দুইবারের মিড নাইট নির্বাচনে আমেরিকা মোটামুটি চুপ থাকলেও এবার বলছে সেই ধারার পুনরাবৃত্তি করা যাবে না। আর ফ্রি এন্ড ফেয়ার নির্বাচন হলে হাসিনা আউট হয়ে যাবে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ করে। সেক্ষেত্রে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ললিপপ বিএনপি থেকে আদায় করার প্রেসার আসবে।
আর তাই আমি কিছুদিন পর পর জানতে চাই, আমেরিকা কী বিএনপি এর সাথে সিরিয়াস কোনো আলোচনায় বসেছে কিনা। জানা দরকার আমেরিকা হাসিনাকে হটাতে কতটা সিরিয়াস। আমেরিকা তার যে কোনো পলিসির জন্য নিজেদের ধরে দেয় টাইমলাইন অনুযায়ী চলে, এবার আপনার নিজের টাইমলাইন কী তাতে আমেরিকার কিছু আসে যায় না। দরকার হলে আমেরিকা টাইমলাইন ২-৪ বছর পিছিয়েও দিতে পারে। মাঠের অবস্থা বুঝে সে নিজের পলিসি পরিবর্তন করে।
বটম লাইন, আমেরিকা নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য শেখ হাসিনার উপর প্রেসার সৃষ্টি করেছে, আর নির্বাচন হচ্ছে তার প্রেসার কুকার।
©somewhere in net ltd.