![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বান্দা তার কৃত পাপের কারণে রিযক থেকে বঞ্চিত (মাহরুম) হয় ।
বিপদ-আপদের মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মোচন হয়ঃ
> অভাব ও মুসিবতে ধৈর্য ধারণ করা:
সবর বা ধৈর্য ধারণ করা আকীদার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
জীবনে বিপদ-মুসিবত নেমে আসলে অস্থিরতা প্রকাশ করা যাবে না।
বরং ধৈর্য ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি আল্লাহর নিকট প্রতিদান পাওয়ার আশা করতে হবে।
ইমাম আহমদ রহঃ বলেন,
“আল্লাহ তায়ালা কুরআনে নব্বই স্থানে সবর সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।”
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
الصبر ضياء
“সবর হল জ্যোতি।” (মুসনাদ আহমদ ও মুসলিম)
উমর রা. বলেন,
“সবরকে আমরা আমাদের জীবন-জীবিকার সর্বোত্তম মাধ্যম হিসেবে পেয়েছি।” (বুখারী)
আলী রা. বলেন, “ঈমানের ক্ষেত্রে সবরের উদাহরণ হল দেহের মধ্যে মাথার মত।” এরপর আওয়াজ উঁচু করে বললেন, “যার ধৈর্য নাই তার ঈমান নাই।”
আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَا أَعْطَى اللَّهُ أَحَدًا مِنْ عَطَاءٍ أَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ
“আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যের চেয়ে উৎকৃষ্ট এবং ব্যাপকতর দান কাউকে দেননি।” (সুনান আবু দাঊদ, অনুচ্ছেদ: নিষ্কলুষ থাকা। সহীহ)
সবরের প্রকারভেদ: সবর তিন প্রকার:
১) আল্লাহর আদেশের উপর সবর করা।
২) আল্লাহর নিষেধের উপর সবর করা।
৩) বিপদাপদে সবর করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَمَنْ يُؤْمِنْ بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُ
“আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন বিপদ আসে না। আর যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে তিনি তাঁর অন্তরকে সঠিক পথের সন্ধান দেন।” (সূরা তাগাবুনঃ ১১)
আলকামা বলেন, “আল্লাহ তায়ালা ‘যার অন্তরকে সঠিক পথের সন্ধান দেন’ সে হল ঐ ব্যক্তি যে বিপদে পড়লে বিশ্বাস করে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। ফলে বিপদে পড়েও সে খুশি থাকে এবং সহজভাবে তাকে গ্রহণ করে।”
অন্য মুফাসসিরগণ উক্ত আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন,
“যে ব্যক্তি বিপদে পড়লে বিশ্বাস রাখে যে এটা আল্লাহর ফায়সালা মোতাবেক এসেছে। ফলে সে সবর করার পাশাপাশি পরকালে এর প্রতিদান পাওয়ার আশা রাখে এবং আল্লাহর ফয়সালার নিকট আত্মসমর্পণ করে আল্লাহ তায়ালা তার অন্তরকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন, আর দুনিয়ার যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তার বিনিময়ে তিনি তার অন্তরে হেদায়াত এবং সত্যিকার মজবুত একীন দান করেন। যা নিয়েছেন তার বিনিময় দান করবেন।”
মুমিনের ধৈর্যের প্রয়োজন জীবনের নানান বিপদ-মুসিবত, কষ্ট ও জটিলতার সামনে। সে বিশ্বাস করে যত সংকটই আসুক না কেন সব আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। ফলে সে তা হালকা ভাবে মেনে নেয়। বিপদে পড়েও খুশি থাকে। এ ক্ষেত্রে ক্ষোভ, হতাশা ও অস্থিরতা প্রকাশ করে না। নিজের ভাষা ও আচরণকে সংযত রাখে। কারণ, সে আল্লাহর প্রতি গভীরভাবে বিশ্বাসী। সে তকদীরকে বিশ্বাস করে। তকদীরকে বিশ্বাস করা ঈমানের ছয়টি রোকনের একটি।
তাকীরের উপর ঈমান রাখলে তার অনেক সুফল পাওয়া যায়। তন্মধ্যে একটি হল, বিপদে ধৈর্য ধারণ। সুতরাং কোন ব্যক্তি বিপদে সবর না করলে তার অর্থ হল, তার কাছে ঈমানের এই গুরুত্বপূর্ণ খুঁটিটি অনুপস্থিত। অথবা থাকলেও তা খুব নড়বড়ে। ফলে সে বিপদ মূহুর্তে রাগে-ক্ষোভে ধৈর্যহীন হয়ে পড়ে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খবর দিয়েছেন যে, এটা এমন এক কুফুরী মূলক কাজ যা আকীদার মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করে।
সাঈদ বিন জুবাইর রা. বলেন,
“যে ব্যক্তি ঈমান আনে আল্লাহ তার অন্তরকে হেদায়াত দেন। ” এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, অর্থাৎ সে কোন ক্ষয়-ক্ষতি ও বিপদের সম্মুখীন হলে বলে ‘ইন্নাল্লিাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেঊন’ অর্থাৎ আমরা আল্লাহর জন্যই আর তাঁর নিকটই ফিরে যাব। (সূরা বাকারাঃ ১৫৬)
উক্ত আয়াতে প্রমাণিত হয় যে, আমল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত।
আরও প্রমাণিত হয় যে, ধৈর্য ধরলে অন্তরের হেদায়াত অর্জিত হয়।
>> জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধৈর্যের প্রয়োজনঃ
প্রতিটি পদক্ষেপে মুমিনের ধৈর্যের প্রয়োজন। আল্লাহর নির্দেশের সামনে ধৈর্যের প্রয়োজন। আল্লাহর পথে দাওয়াতের ক্ষেত্রে ধৈর্যের প্রয়োজন। কারণ, এ পথে নামলে নানা ধরণের কষ্ট ও বিপদের মুখোমুখি হতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ… وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللَّهِ
“তোমার প্রভুর পথে আহবান কর হেকমত এবং ভাল কথার মাধ্যমে। আর সর্বোত্তম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। তোমার প্রভু তো সব চেয়ে বেশি জানেন, কে তাঁর পথ থেকে বিপথে গেছে আর তিনিই সব চেয়ে বেশি জানেন কারা সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন।…আর ধৈর্য ধর। ধৈর্য ধর কেবল আল্লাহর উপর।” (সূরা নাহল: ১২৫-১২৭)
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে গেলেও চরম ধৈর্যের পরিচয় দেয়া প্রয়োজন। কারণ, এ পথে মানুষের পক্ষ থেকে নান ধরণের যাতনার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন আল্লাহ তায়ালা লোকমান সম্পর্কে বলেন, (তিনি তার সন্তানকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন:
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
“হে বৎস, নামায প্রতিষ্ঠা কর, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ কর। আর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্য ধারণ কর। বিপদে ধৈর্য ধরণ করা তো বিশাল সংকল্পের ব্যাপার।” (সূরা লোকমান: ১৭)
>> বিপদ-আপদের মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মোচন হয়ঃ
আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে বিভিন্ন বালা-মুসিবত দেন এক মহান উদ্দেশ্যে। তা হল এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দার গুনাহ মোচন করে থাকেন।
যেমন আনাস রা. বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
إِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الْخَيْرَ عَجَّلَ لَهُ الْعُقُوبَةَ فِي الدُّنْيَا وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الشَّرَّ أَمْسَكَ عَنْهُ بِذَنْبِهِ حَتَّى يُوَافِيَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“আল্লাহ যখন কোন বান্দার কল্যাণ চান তখন দুনিয়াতেই তাকে শাস্তি দেন। কিন্তু বান্দার অকল্যাণ চাইলে তিনি তার গুনাহের শাস্তি থেকে বিরত রেখে কিয়ামতের দিন তার যথার্থ প্রাপ্য দেন।
ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন, বিপদ-মুসিবত হল নেয়ামত। কারণ এতে গুনাহ মাফ হয়। বিপদে ধৈর্য ধারণ করলে তার প্রতিদান পাওয়া যায়। বিপদে পড়লে আল্লাহর কাছে আরও বেশি রোনাজারি করতে হয়। তার নিকট আরও বেশি ধর্না দিতে হয়। আল্লাহর নিকট নিজের অভাব ও অসাহয়ত্তের কথা তুলে ধরার প্রয়োজন হয়। সৃষ্টি জীব থেকে বিমুখ হয়ে এক আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হয়।…বিপদের মধ্যে এ রকম অনেক বড় বড় কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
বিপদে পড়লে যদি গুনাহ মোচন হয়, পাপরাশী ঝরে যায় তবে এটা তো বিশাল এক নেয়ামত। সাধারণভাবে বালা-মসিবত আল্লাহর রহমত ও নেয়ামত লাভের মাধ্যম। তবে কোন ব্যক্তি যদি এ বিপদের কারণে এর থেকে আগের থেকে আরও বড় গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ে তবে তা দ্বীনের ক্ষেত্রে তার জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, কিছু মানুষ আছে যারা দারিদ্রতায় পড়লে বা অসুস্থ হলে তাদের মধ্যে মুনাফেকি, ধৈর্য হীনতা, মনোরোগ, স্পষ্ট কুফুরী ইত্যাদি নানান সমস্যা সৃষ্টি হয়। এমনকি অনেকে কিছু ফরয কাজ ছেড়ে দেয়। অনেকে বিভিন্ন হারাম কাজে লিপ্ত হয়। ফলে দ্বীনের ক্ষেত্রে তার বড় ক্ষতি হয়ে যায়। সুতরাং এ রকম ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিপদ না হওয়াই কল্যাণকর। মুসীবতের কারণে নয় বরং মুসীবতে পড়ে তার মধ্যে যে সমস্যা সৃষ্টি তার কারণে বিপদ না আসাই তার জন্য কল্যাণকর।
পক্ষান্তরে বিপদ-মুসীবত যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে ধৈর্য ও আনুগত্য সৃষ্টি করে তবে এই মুসীবত তার জন্য দ্বীনের ক্ষেত্রে বিশাল নেয়ামতে পরিণত হয়….।”
আল্লাহর কুদরত অসীম, তিনি বান্দাদের বিভিন্ন মুসিবত দ্বারা পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেন, যাতে রয়েছে অনেক হিকমত, যা একমাত্র তিনিই জানেন, এর মাধ্যমে তিনি বান্দাদের সত্যিকার তাওবা পরীক্ষা করেন, তাদের পাপ মোচন করেন ইত্যাদি। মুমিনদের কর্তব্য এ ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করা ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা। আর এ মুসিবতের মধেও আল্লাহর অনুগ্রহ দেখা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
إن عظم الجزاء مع عظم البلاء، وإن الله تعالى إذا أحب قوما ابتلاهم، فمن رضي فله الرضا، ومن سخط فله السخط. رواه الترمذي وقال حديث حسن.
বড় মুসিবতের সাথে প্রতিদান বড়ই প্রদান করা হয়। আর আল্লাহ যখন কোন কওমকে ভালবাসেন, তিনি তাদেরকে পরীক্ষা করেন। যে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে, তার জন্য সন্তুষ্টি, আর যে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে, তার জন্য অসন্তুষ্টি। {তিরমিযি, তিনি হাদিসটি হাসান বলেছেন।}
আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আর ভাল ও মন্দ দ্বারা আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে। সূরা আম্বিয়া : (৩৫)
আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।
সূরা বাকারা : (১৫৫-১৫৬)
মানুষ কি মনে করে যে, আমরা ঈমান এনেছি’বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি। ফলে আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন, কারা মিথ্যাবাদী। সূরা আনকাবুত : (২-৩)
অতএব, আমাদের উচিত ভাল-মন্দ আল্লাহর তাকদীরের উপর ধৈর্য ধারণ করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা। অধিকন্তু এটা ঈমানের ছয়টি রুকনেরও অন্তর্ভুক্ত। যেমন হাদিসে জিবরিলে এসেছে :
ঈমান হচ্ছে, তোমার বিশ্বাস স্থাপন করা আল্লাহর উপর, তার ফেরেশতাদের উপর, তার কিতাবসমূহের উপর, তার রাসূলদের উপর, কিয়ামত দিবসের উপর এবং বিশ্বাস স্থাপন করা ভাল-মন্দ তাকদীরের উপর। {মুসলিম}
‘
মুমিনের বিষয়টি আশ্চর্য জনক, তার প্রত্যেকটি বিষয় কল্যাণকর, এটা মুমিন ব্যতীত অন্য কারো ভাগ্যে নেই, যদি তাকে কল্যাণ স্পর্শ করে, আল্লাহর শোকর আদায় করে, এটা তার জন্য কল্যাণকর, আর যদি তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করে, ধৈর্য ধারণ করে, এটাও তার জন্য কল্যাণকর।’
মুসলিম : (৫৩২২)
>> অল্পে তুষ্ট থাকা
©somewhere in net ltd.