![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমরা প্রতিদিনকার জীবন যাপনে জানা ,অজানার মধ্যে নানান রকম ছোট বড় গুনাহ বা পাপ কাজ করে থাকি ।
কখনো অলসতায়,অবহেলায় কিংবা খেয়াল বসে,কখনো বা জেনেও উদাসীনিতায় অনেক পাপ করে ফেলি,যে ছোট একটি গুনাহ বা পাপ কাজ আমাদের সারা জীবনের আমল বা আমাদের সুন্দর জীবন নষ্ট করে দিতে পারে । যার কারনে কাল কেয়ামতের ময়দানে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে । আল্লাহ্র সেই কঠিন শাস্তি থেকে যেন মুক্তি পাই। আসুন আজ গুনাহ বা পাপ নিয়ে আলোচনা করি, প্রতিকারের বিষয় গুলি জানি,মানি ও পালন করি ।
০১। “দুনিয়া চার প্রকার লোকের জন্যঃ-
[ক] সেই বান্দার জন্য যাকে আল্লাহ মাল ও জ্ঞান দান করেছেন সুতরাং সে এতে তার প্রভূকে ভয় করছে, তার আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখছে এবং তার ব্যাপারে আল্লাহর হক কি তা জানছে, এ হল সর্বোত্তম অবস্থানে।
[খ] সেই বান্দা যাকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন কিন্তু মাল দেননি, সে হল সঠিক নিয়তের লোক, সে বলে, যদি আমার টাকা পয়সা থাকতো তাহলে উমুক ব্যাক্তির মত কাজ করতাম। সে তার নিয়ত অনুযায়ী সওয়াব পাবে। এদের দুজনের নেকী সমান হবে।
[গ] আর সেই বান্দা যাকে আল্লাহ টাকা পয়সা দিয়েছেন কিন্তু জ্ঞান দান করেননি। সে না জেনেই তার টাকা পয়সা খরচ করছে। এতে সে আল্লাহকে ভয় করে না, আত্মীয়তা রক্ষা করে না এবং এতে আল্লাহর হকও সে জানে না। সে হল সর্ব নিকৃষ্ট অবস্থানে।
[ঘ] আর সেই বান্দা যাকে আল্লাহ মালও দেননি জ্ঞানও দেননি, সে বলে আমার টাকা পয়সা থাকলে উমুকের মতই [খারাপ কাজ] করতাম। সে তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিদান পাবে। এরা দুজনই গুনাহর দিক থেকে সমান।
০২ঃ- গুনাহ বা পাপ সাধারণত তিন প্রকারের হয়ে থাকেঃ-
(ক) আল্লাহ তা’আলা বান্দার উপর যে সকল ইবাদাত ফরয করেছেন সে গুলোকে ছেড়ে দেয়া।
যেমন নামায, রোজা, যাকাত ইত্যাদি। সালাত আদায় না করা কবীরা গুনাহ অনুরূপভাবে সওম এবং যাকাত আদায় না করাও কবীরা গুনাহ। এ ধরনের গুনাহ হতে মাফ পাওয়ার জন্য করণীয় হল, যে সকল ইবাদাত ছুটে গিয়েছে তা শরীয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী পরে আদায় করে নেয়া। আর যদি পরে আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে যে ক্ষেত্রে তার বিকল্প আছে, যেমন রোজার ক্ষেত্রে ফিদয়া, তা আদায় করা। আর যদি তাও সম্ভব না হয়, কিংবা যে ক্ষেত্রে কোন বিকল্প নেই, তবে তার জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতে হবে এবং আল্লাহর নিকট হতে তাওবার মাধ্যমে মাফ করিয়ে নিতে হবে।
(খ) আল্লাহর হক ও নির্দেশ অমান্য করে গুনাহসমুহে লিপ্ত হওয়া।
যেমন: মদ পান করা, গান বাজনা করা, সুদ খাওয়া ইত্যাদি। এ ধরনের গুনাহের কারণে অবশ্যই লজ্জিত হতে হবে এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, এ ধরনের গুনাহ ও অপরাধ আর কখনো করবে না।
(গ) আল্লাহর বান্দা তথা মানুষের অধিকার লংঘনজনিত পাপ ও গুনাহ। এ ধরনের গুনাহ সবচেয়ে কঠিন ও মারাত্মক।
-----এ ধরনের গুনাহ আবার কয়েক ধরনের হতে পারে-যেমন,
##- ধন সম্পদের সাথে সম্পর্কিত অধিকার লংঘনঃ-
এ বিষয়ে করণীয় হল যে লোকের কাছ থেকে কর্জ নিয়েছেন অথবা যার হক্ব নষ্ট করেছেন কিংবা যার ক্ষতি করেছন, আপনাকে অবশ্যই তার পাওনা পরিশোধ করতে হবে এবং তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যদি পরিশোধ বা ফেরত দেয়া সম্ভব না হয়, হয়ত যে সম্পদটি আপনি নষ্ট করেছিলেন তা এখন আর আপনার নিকট অবশিষ্ট নাই, কিংবা আপনি নি:স্ব হয়ে গিয়েছেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত লোকটির নিকট হতে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তার থেকে অনুমতি নিয়ে তা মাফ করে নিতে হবে। আর যদি এ রকম হয় যে, লোকটি মারা গিয়েছে অথবা অনুপস্থিত। যার কারণে ক্ষতিপূরণ দেয়া কিংবা মাফ করিয়ে নেওয়া এর কোনটিই সম্ভব নয় তাহলে তার পক্ষ হতে তা দান করে দিতে হবে। আর যদি তাও সম্ভব না হয়, তবে তাকে অবশ্যই বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে, আল্লাহর দরবারে বেশী বেশী তাওবা ও কান্নাকাটি করতে হবে যাতে আল্লাহ কিয়ামত দিবসে লোকটিকে তার উপর রাজি করিয়ে দেন।
##- মানুষের জীবনের সাথে সম্পর্কিত, যেমন হত্যা করা বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট করাঃ-
তাহলে আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি অথবা তার অবিভাবককে ক্বিসাস বা প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ দিতে হবে অথবা তারা আপনাকে ক্ষমা করে দিবে এবং কোনো বদলা নেবে না মর্মে একটি সমঝোতায় পৌঁছতে হবে। আর যদি তাও সম্ভব না হয়, তবে অবশ্যই আল্লাহর দরবারে বেশী বেশী তাওবা ও কান্নাকাটি করতে হবে, যাতে আল্লাহ কিয়ামত দিবসে লোকটিকে আপনার উপর রাজি করিয়ে দেন।
##- মানুষের সম্ভ্রম হরণ করাঃ- যেমন গীবত করা, কারো বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া অথবা গালি দেয়া ইত্যাদি। তখন আপনার করণীয় হল, যার বিপক্ষে এ সকল কথা বলেছিলেন, তার নিকট গিয়ে নিজেকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করা এবং বলা যে ভাই আমি মিথ্যুক, আমি আপনার বিরুদ্ধে যে সব অপবাদ বা বদনাম করেছি তা ঠিক নয় আমি মিথ্যা বলেছি। আর যদি ঝগড়া বিবাদ বা নতুন কোন ফাসাদ কিংবা লোকটির ক্রোধ আরো প্রকট আকার ধারণ করার সম্ভাবনা না থাকে, তবে তার নিকট সব কিছু প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। অন্যথায় আল্লাহর নিকট অধিক হারে তাওবা করতে হবে যাতে আল্লাহ তাকে তার উপর রাজি করিয়ে দেন। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে হবে, আল্লাহ যেন লোকটির জন্য এর বিপরীতে তার জন্য অশেষ কল্যাণ নিহিত রাখে এবং এভাবে তার জন্য বেশী বেশী দু’আ করবে।
##- ইজ্জত হরণ: যেমন কারো অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের ইজ্জত হরণ অথবা সন্তান-সন্তুতির অধিকার নষ্ট বা খিয়ানত করা। এ বিষয়ে করণীয় হল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অধিকার ফেরত দেয়া এবং তাওবা করা।
০৩:- গুনাহ বা পাপের কদর্যতা ও ভয়াবহতা বা পরিনতি অনুভব করা:
আমাদের মনে রাখতে হবে, পাপ মানুষের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতের জন্যই ক্ষতিকর। পাপের কারণে মানুষ দুনিয়াতে লাঞ্ছনা-বঞ্চনা, অপমান- অপদস্থের শিকার হয়। দুনিয়ার জীবনে তার অশান্তির অন্ত থাকে না। অনেক সময় দুনিয়ার জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। ফলে দুনিয়াতেও গুনাহের কারণে তাকে নানাবিধ শাস্তি ও আজাব-গজবের মুখোমুখি হতে হয় এবং আখেরাতে তো তার জন্য রয়েছে অবর্ণনীয়- সীমাহীন দুর্ভোগ। এ ছাড়া গুনাহ কেবল মানুষের আত্মার জন্যই ক্ষতিকর নয় বরং আত্মা ও দেহ দুটির জন্যই ক্ষতিকর।
গুনাহ মানুষের জন্য কঠিন এক ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনে। গুনাহ মানুষের আত্মার জন্য এমন ক্ষতিকর যেমনিভাবে বিষ দেহের জন্য ক্ষতিকর।
পাপ বা গুনাহের কয়েকটি ক্ষতিকর দিক ও ভয়াবহ পরিণতি নিম্নে আলোচনা করা হল।
যাতে আমরা এগুলো জেনে গুনাহ হতে বিরত থাকতে সচেষ্ট হই। এবং সুন্দর জীবন গড়তে পারি ।
(ক)- ইলম তথা দ্বীনি জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হওয়া:
ইলম হল নূর বা আলো যা আল্লাহ তা’আলা মানুষের অন্তরে স্থাপন করেন। আর গুনাহ হল, অন্ধকার, যা ইলমের নুর বা আলোকে নিভিয়ে দেয়। ফলে, ইলম ও গুনাহ এক সাথে এক পাত্রে সহাবস্থান করতে পারে না। তাই গুনাহের কারণে বান্দা দীনি ইলম হতে বঞ্চিত হয়।
(খ)- রিযিক থেকে বঞ্চিত হওয়া:
গুনাহের কারণে বান্দা রিযিক হতে বঞ্চিত হয়। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, إن العبد ليحرم الزرق بالذنب يصيبه “বান্দা গুনাহের লিপ্ত হওয়ার কারণে রিযিক হতে বঞ্চিত হয়”।[11]
(গ)- গুনাহ ও পাপাচার মানুষের দেহ এবং আত্মাকে দুর্বল করে দেয়:
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন- নিশ্চয় নেক আমলের কারণে মানুষের চেহারা উজ্জল হয়, অন্তর আলোকিত হয়, রিযিক বৃদ্ধি পায় ও আয় রোজগারে বরকত হয়, দেহের শক্তি বৃদ্ধি পায়, মানুষের অন্তরে অপরের প্রতি মহব্বত বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে খারাপ কাজে মানুষের চেহারা কুৎসিত হয়, অন্তর অন্ধকার হয়, দেহ দুর্বল হয়, রিযিকে সংকীর্ণতা দেখা দেয় এবং মানুষের অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা জন্মায়। ফলে তাকে কেউ ভালো চোখে দেখে না।
(ঘ)- আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য হতে পাপী ব্যক্তি বঞ্চিত হয়:
যদিও গুনাহের কারণে দুনিয়াতে তাকে কোন শাস্তি নাও দেয়া হয়, কিন্তু সে আল্লাহর বিশেষ ইবাদাত বন্দেগী হতে বঞ্চিত হবে। গুনাহকে ঘৃণা করা বা খারাপ জানার অনুভূতি হারিয়ে ফেলে। ফলে গুনাহের কাজে সে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং গুনাহ করতে কোন প্রকার কুন্ঠাবোধ করে না। এমনকি সমস্ত মানুষও যদি তাকে দেখে ফেলে বা তার সমালোচনা করে, তারপরও সে কোন অপরাধ বা অন্যায় করতে লজ্জাবোধ বা খারাপ মনে করে না। এ ধরনের মানুষকে আল্লাহ ক্ষমা করেন না এবং তাদের তওবার দরজাও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তারা বেঈমান হয়ে দুনিয়া থেকে চির বিদায় নেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
كل أمتي معافى إلا المجاهرين وإن من الإجهار أن الله سترعلى العبد ثم يصبح يفضح نفسه ويقول يا فلان عملت اليوم كذا وكذا وكذا فيهتك نفسه يستره ربه, رواه البخاري والمسلم
‘‘আমার সকল উম্মতকে ক্ষমা করা হবে একমাত্র প্রকাশ্য পাপী ছাড়া। আর প্রকাশ্যে পাপ করা হল, আল্লাহ কোন বান্দার অপকর্মকে গোপন রাখল কিন্তু লোকটি তার নিজের অপকর্ম প্রকাশ করে নিজেকে অপমান করে এবং বলে থাকে, হে ভাই! আমি আজ অমুক অমুক কাজ করেছি - ইত্যাদি। এভাবে সে তার নিজের গোপনীয়তা প্রকাশ করে অথচ আল্লাহ তার গুনাহকে গোপন রাখে”।[12]
(ঊ)- গুনাহ করাকে হালকাভাবে দেখা:
বান্দা গুনাহ করতে করতে গুনাহ করা তার জন্য সহজ হয়ে যায়, অন্তরে সে গুনাহকে ছোট মনে করতে থাকে। আর এটাই হল ধ্বংসের নিদর্শন। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন-
أن المؤمن يرى ذنوبه كانه في أصل جبل يخاف أن يقع عليه وأن الفاجر يرى ذنوبه كذباب رفع على أنف فقال به هكذا فطار – ذكر البخاري في الصحيح
“একজন মুমিন সে গুনাহকে এমন ভাবে ভয় করে যে, সে যেন একটি পাহাড়ের নিচে আছে আর আশংকা করছে যে পাহাড়টি তার উপর ভেঙ্গে পড়বে। পক্ষান্তরে একজন বদকার ব্যক্তি সে তার গুনাহকে মনে করে তার নাকের উপর একটি মাছি বসে আছে হাত নাড়া দিল আর সে চলে গেল”।[13]
(চ)-গুনাহ লাঞ্ছনা ও অপমানের কারণ হয়:
কারণ হল, সকল প্রকার ইজ্জত একমাত্র আল্লাহ আনুগত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আর আল্লাহর আনুগত্যের বাহিরে যা কিছু করা হবে, তাই অপমান অপদস্থের কারণ হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
﴿ مَن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡعِزَّةَ فَلِلَّهِ ٱلۡعِزَّةُ جَمِيعًاۚ١٠ ﴾ [فاطر: ١٠]
‘‘কেউ ইজ্জতের আশা করলে মনে রাখতে হবে যে, সমস্ত ইজ্জত আল্লাহই জন্য”।[14]
অর্থাৎ, ইজ্জত আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই তালাশ করা উচিত, কারণ সে আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া কোথাও ইজ্জত খুঁজে পাবে না।
(ছ)- গুনাহ মানুষের জ্ঞান বুদ্ধিকে ধ্বংস করে দেয়:
মানুষের জ্ঞান বুদ্ধির জন্য একটি আলো বা নূর থাকে আর গুনাহ ঐ নূর বা আলোকে নিভেয়ে দেয়, ফলে গুনাহের কারণে মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি ধ্বংস হয়।
(জ)- গুনাহ গুনাহকারীর অন্তরকে কাবু করে ফেলে এবং সে ধীরে ধীরে অলসদের অর্ন্তভুক্ত হয়।
যেমন, আল্লাহ তা’আলা বলেন-
﴿ كَلَّاۖ بَلۡۜ رَانَ عَلَىٰ قُلُوبِهِم مَّا كَانُواْ يَكۡسِبُونَ ١٤ ﴾ [المطففين: ١٤]
অর্থাৎ ‘‘কখনো না, বরং তারা যা করে তাই তাদের হৃদয়ে মরিচা ধরিয়ে দিয়েছেন”।[15]
এ আয়াত সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম বলেন, বার বার গুনাহ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
عن أبي هريرة - رضِي الله عنه - قال: قال رسول الله - صلَّى الله عليه وسلَّم -: إنَّ المؤمن إذا أذنَبَ كانت نكتة سوداء في قَلبِه، فإنْ تاب ونزَع واستَغفَر صقل قلبه، وإنْ زاد زادتْ حتى يعلو قلبه ذاك الرين الذي ذكر الله - عزَّ وجلَّ - في القُرآن: ﴿كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ﴾ [المطففين: ১৪].
অর্থ: যখন কোন মু’মিন গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে তারপর সে যখন তাওবা করে এবং গুনাহ থেকে বিরত থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায় তখন তার অন্তর পরিস্কার হয়ে যায়। আর যখন মু’মিন আবারো গুনাহ করে তখন অন্তরের কালো দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে মু’মিনের অন্তরে আল্লাহর কুরআনে বর্ণিত ‘রাইন’ তথা মরিচা প্রভাব বিস্তার করে। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘কক্ষনো না, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে জং ধরিয়ে দিয়েছে।’’[16] (সূরা মুতাফফিফীন, আয়াত: ১৪)
(ঝ)- গুনাহ অভিশাপকে টেনে আনে:
গুনাহ বান্দাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভিশাপের অর্ন্তভুক্ত করে। কারণ, তিনি গুনাহগার ও পাপীদের উপর অভিশাপ দিয়েছেন। যেমন - সুদগ্রহীতা, দাতা, লেখক ও সাক্ষী সকলের উপর অভিশাপ করেছেন। এমনি ভাবে চোরের উপর অভিশাপ করেছেন। গাইরুল্লাহর নামে জাবেহকারী, ছবি অংকনকারী, মদ্যপানকারী সহ বিভিন্ন গুনাহের উপর তিনি অভিশাপ করেন।
(ঞ)-গুনাহ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার ফেরেশতাদের দু’আ হতে বঞ্চিত হওয়ার কারণ।
কেননা আল্লাহ তার নবীকে নর-নারী সকলের জন্য দু’আ করার আদেশ দিয়েছেন।
ইবনুল কাইয়্যেম রহমতুল্লাহ আলাইহে তার লিখা [الداء والدواء] ‘রোগ ও চিকিৎসা’ এবং [الفوائد] ‘আল-ফাওয়াইদ’ নামক গ্রন্থে পাপের অনেক ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে রয়েছে:
# জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হওয়া, # অন্তরে একাকিত্ব অনুভব করা, # কাজকর্ম কঠিন হয়ে যাওয়া, # শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া,
# আল্লাহর আনুগত্য থেকে বঞ্চিত হওয়া, # রুজি রোজগারের বরকত কমে যাওয়া,# কাজ কর্মে সমন্বয় না হওয়া,
# গুনাহর কাজে অভ্যস্থ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
# এছাড়াও আল্লাহর ব্যাপারে পাপীর অন্তরে অনাসক্তি সৃষ্টি হয় এবং লোকজন তাকে অশ্রদ্ধা করে।
# জীবজন্তু ও পশু পাখি তাকে অভিশাপ দেয়। # পাপী ব্যক্তি সর্বদা অপমানিত হতে থাকে। # পাপীর অন্তরে মোহর পড়ে যায়।
# পাপী ব্যক্তি লানতের মাঝে পড়ে এবং পাপীর দু’আ আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। # জলে ও স্থলে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়।
# পাপীর আত্মমর্যাদাবোধ কমে যায়। লজ্জা চলে যায়, ফলে সে যা ইচ্ছা তাই করে। # নিয়ামত হতে বঞ্চিত হয়।
# আল্লাহর আজাব ও বিপর্যয় নেমে আসে। # পাপীর অন্তরে সর্বদা ভয় ও আতঙ্ক নেমে আসে এবং সে শয়তানের দোসরে পরিণত হয়।
# তার জীবন সমাপ্ত হয় মন্দের উপর এবং ঈমান হারা হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়। # পরকালীন আজাবে নিপতিত হয়।
এছাড়া গুনাহ বা পাপের কারনে আমাদের জীবনে পাপের এই ক্ষতি ও বিপর্যয় যদি বান্দা জানতে পারে,
তাহলে সে পাপ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকবে। নিম্নে তার আলোচনা করা হলঃ-
কিছু কিছু লোক এক পাপ ছেড়ে আরেক পাপ করতে শুরু করে তার কিছু কারণ হল:
** মনে করে যে, এর পাপ কিছুটা হালকা।
** মন পাপের দিকে বেশী আকৃষ্ট হয় এবং এর দিকে ঝোঁক খুবই প্রবল থাকে।
** অন্যটির তুলনায় এ পাপ করার জন্য পারিপার্শ্বিক অবস্থা সহজ ও সহায়ক হয়, অন্য পাপের জন্য অনেক কিছু জোগাড় করা লাগে।
** তার সঙ্গী সাথীরা এ পাপের সাথে জড়িত, তাদেরকে ত্যাগ করা কঠিন বলে মনে হয়।
** কোন কোন ব্যক্তির নিকট বিশেষ পাপ তার তার সঙ্গী সাথীদের মাঝে মান সম্মানের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
এজন্য সে চিন্তা করে যেন তার অবস্থান সে ধরে রাখে এবং এ পাপ অব্যাহত রাখে, যেমনটি ঘটে বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রধানদের বেলায়।
০৪ঃ- তিন- তাড়াতাড়ি তাওবা করা:
যার জন্য তাওবার প্রয়োজন সে যেন তাড়াতাড়ি তাওবা করে। কারণ তাওবা করতে দেরী করাটাই পাপ।
০৫ঃ- আল্লাহর হক আদায় করা:-
আল্লাহর হক যা ছুটে গেছে তা যথাসম্ভব আদায় করা। যেমন যাকাত দেয়া যা সে পূর্বে দেয়নি। কেননা এতে আবার দরিদ্র লোকজনের অধিকারও রয়েছে।
০৬ঃ-- পাপের স্থানকে ত্যাগ করা:-
কারণ যেখানে পাপ করছে, যদি সেখানে অবস্থান করে, আবার সে পাপে জড়িয়ে পড়ার আশংকা থাকে।
০৭ঃ- খারাপ সাথী ত্যাগ করা:
যারা পাপ কাজে সহযোগিতা করে তাদেরকে পরিত্যাগ করা। তাদের সঙ্গ ত্যাগ করতে না পারলে আবারও সে পাপে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
﴿ ٱلۡأَخِلَّآءُ يَوۡمَئِذِۢ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ إِلَّا ٱلۡمُتَّقِينَ ٦٧ ﴾ [الزخرف: ٦٧]
“আন্তরিক বন্ধুরাই সেদিন একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে, মুত্তাকীরা ছাড়া”।[8]
খারাপ সাথীরা একে অপরকে কিয়ামতের দিন অভিশাপ দিবে। এজন্য হে তাওবাকারী, আপনাকে এদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে ও এদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে, যদি আপনি তাদেরকে দাওয়াত দিতে অপারগ হন। শয়তান যেন আপনার ঘাড়ে আবার সওয়ার হবার সুযোগ না পায় এবং আপনাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে আবার কুপথে নিয়ে না যায়। আর আপনি তো জানেন যে, আপনি দুর্বল তাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবেন না। এ ধরনের অনেক ঘটনা রয়েছে যে, অনেক লোকই তার পুরাতন বন্ধু বান্ধবের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার পর আবার পাপে জড়িয়ে পড়েছে।
০৮ঃ- নিজের কাছে রক্ষিত হারাম জিনিসকে নষ্ট করে ফেলা:-
যেমন মাদক দ্রব্য, বাদ্যযন্ত্র, যেমন একতারা, হারমনিয়াম, অথবা ছবি, ব্লু ফ্লিম, অশ্লীল নভেল নাটক। এগুলো নষ্ট করে ফেলতে হবে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। তাওবাকারীকে সঠিক পথে দৃঢ়ভাবে থাকার জন্য অবশ্যই সব জাহেলিয়াতের জিনিস থেকে মুক্ত হতে হবে। এ ধরনের অনেক ঘটনা রয়েছে, যাতে দেখা যায়, এসব হারাম জিনিসই তাওবাকারীর পূর্বের অবস্থানে ফিরে যাবার পিছনে প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এর দ্বারাই সে পথভ্রষ্ট হয়েছে। আমরা আল্লাহর নিকট সঠিক পথে টিকে থাকার জন্য তাওফীক কামনা করছি।
০৯ঃ- ভাল সঙ্গী-সাথী গ্রহণ করা:-
ভাল সঙ্গী-সাথী গ্রহণ করতে হবে, যারা তাকে দ্বীনের ব্যাপারে সহায়তা করবে এবং এরা হবে খারাপ সঙ্গী সাথীর বিকল্প। আর চেষ্টা করতে হবে বিভিন্ন ধর্মীয় ও ইলমী আলোচনায় বসার জন্য। নিজেকে সব সময় এমন কাজে মশগুল রাখতে হবে যাতে কল্যাণ রয়েছে, যেন শয়তান তাকে পূর্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেবার সুযোগ না পায়।
১০ঃ- হারাম বর্জন করে হালাল ভক্ষণ করা:
নিজ শরীরের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে যাকে সে হারাম দিয়ে প্রতিপালন করেছে। একে আল্লাহর আনুগত্যের কাজে লাগাতে হবে এবং হালাল রুজি খেতে হবে যেন শরীরে আবার পবিত্র রক্ত-মাংস সৃষ্টি হয়।
১১ঃ-- গরগরা তথা মৃত্যুক্ষণ আসার পূর্বে তাওবা করা:
তাওবা দম আটকে যাওয়া বা ফুরিয়ে যাবার [মৃত্যুর পূর্বক্ষণে শ্বাসকষ্ট শুরু হবার] পূর্বে এবং পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবার পূর্বে হতে হবে। গরগরার অর্থ হল কণ্ঠনালী হতে এমন শব্দ বের হওয়া যা মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে হয়ে থাকে। এর উদ্দেশ্য হল কিয়ামতের পূর্বেই তাওবা করতে হবে তা ছোট কিয়ামত হোক [মৃত্যু] বা বড় কিয়ামতই হোক [পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া]। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, من تاب إلى الله قبل أن يغرغر قبل الله منه “যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট তাওবা করবে গরগরা উঠার পূর্বে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন”।[9]
১২ঃ- সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হওয়ার পূর্বে তাওবা করা:
কারণ, হাদীসে বর্ণিত রাসূল সা. বলেন, من تاب قبل أن تطلع الشمس من مغربها تاب الله عليه “যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উঠার পূর্বে তাওবা করবে, আল্লাহ তা’আলা তার তাওবা কবুল করবেন”।[10]
## গুনাহ করার পর তাওবার সুযোগঃ
গুনাহ যত ছোট হোক না কেন, তাকে ছোট মনে করা যাবে না। যদি কোন কারণে আপনার থেকে -ছোট হোক বা বড় হোক- কোন গুনাহ প্রকাশ পায় আপনি সাথে সাথে সে গুনাহ থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দরবারে খালেস তাওবা করে নেবেন। অন্যথায় ছোট গুনাহও যখন বার বার করা হয়ে থাকে তখন তা আর ছোট থাকে না, তখন তা কবীরা গুনাহে পরিণত হয় এবং তা আপনার জন্য খারাপ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। আপনি জেনে রাখুন [আল্লাহ আপনার প্রতি ও আমার প্রতি দয়া করুন] পরাক্রমশালী আল্লাহ তার বান্দাদের নিষ্ঠার সাথে তাওবা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا ٨ ﴾ [التحريم: ٨]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট নিষ্ঠার সাথে তাওবা কর [প্রত্যাবর্তন কর]।[17] ’’ আমরা যখন কোন গুনাহ করি, কিরামান কাতিবীন [ফেরেশতা] সাথে সাথে আমাদের গুনাহ লেখেন না। তারা আমাদের কারো গুনাহ্ লিখার পূর্বে আমাদেরকে তাওবা করার জন্য অনেক সুযোগ দেন। যখন বান্দা গুনাহ করার পর তাওবা করে, তখন তার গুনাহ সাথে সাথে ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যখন সে তাওবা না করে, তখন তার গুনাহ লিপিবদ্ধ করা হয়। নিশ্চয় মুমিন বান্দা যখন কোন অপরাধ করে, তাকে সময় দেয়া হয়। তার গুনাহ লিখা হয় না। যখন সে তাওবা করে, তখন তার গুনাহ লিখা হয় না, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যদি ক্ষমা না চায়, তখন একটি গুনাহ লিখা হয়। আর একজন মুমিন বান্দা যখন বিশ বছর পরও তার গুনাহের কথা স্মরণ করে তার রবের নিকট ক্ষমা চায়, তখন তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর গুনাহ করার পর ব্যক্তি অনেক সময় তার অপরাধ ভুলে থাকে। আল্লাহ বান্দার গুনাহগুলো মাফ করার জন্য অপেক্ষা করেন এবং তিনি তার হাতকে বাড়িয়ে দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
إن الله ـ تعالى ـ يبسط يدهُ بالتوبة لمسيء الليل إلى النهار ولمسيء النهار إلى الليل حتى تطلع الشمس من مغربها ".
“একজন বান্দা রাতে যে সব অপরাধ করে, তা ক্ষমা করার জন্য আাল্লাহ তা’আলা সারা হাত পেতে রাখে, আর দিনের বেলা যে সব অপরাধ করে, তা ক্ষমা করার জন্য সারা রাত হাত পেতে দেয়। এটি ততদিন পর্যন্ত চলতে থাকবে, যেদিন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে”।[18]
পাপ বা গুনাহকে তুচ্ছ মনে করার পরিণতিঃ
বর্তমান যুগের সমস্যা হল, অনেক মানুষই আল্লাহকে ভয় করে না, তারা রাতদিন বিভিন্ন রকমের গুনাহ করে চলেছে। এদের কেউ কেউ আবার গুনাহকে তুচ্ছজ্ঞান করে। এজন্য দেখবেন এদের কেউ কেউ সগীরা গুনাহকে খুবই তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে থাকে। যেমন বলে, একবার খারাপ কিছু দেখলে অথবা কোন বেগানা মহিলার সাথে করমর্দন করলে কি-ই বা ক্ষতি হবে?
অনেকেই আগ্রহ ভরে হারাম জিনিস যেমন পত্র-পত্রিকার খারাপ দৃশ্য বা টিভি সিরিয়াল বা সিনেমার দিকে নজর দেয়, এমনকি এদের কেউ কেউ যখন জানতে পারে যে এটি হারাম, তখন খুবই রসিকতা করে প্রশ্ন করে, এতে কতটুকু গুনাহ রয়েছে? এটি কি কবীরা গুনাহ না সগীরা গুনাহ? আপনি যখন এটির বাস্তব অবস্থা জানবেন তখন তুলনা করে দেখুন নিম্নোক্ত দুটি বর্ণনার সাথে যা ইমাম বুখারী উলে¬খ করেছেন ।
এক: আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
]إنكم لتعملون أعمالاً هي أدق في أعينكم من الشعر، كنا نعدها على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم من الموبقات[ والموبقات هي المهلكات.
তোমরা এমন সব কাজ কর যা তোমাদের দৃষ্টিতে চুলের চেয়েও সূক্ষ্ম। কিন্তু আমরা রাসূলুল্লাহর যুগে এগুলোকে মনে করতাম ধ্বংসকারী।
দুই: ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
أن المؤمن يرى ذنبه كالجبل فوقه يخاف أن يقع عليه، والمنافق يرى ذنبه كذباب مر على أنفه فاطاره
“একজন মুমিন গুনাহকে এভাবে দেখে থাকে যে, সে যেন এক পাহাড়ের নিচে বসে আছে যা তার মাথার উপর ভেঙ্গে পড়বে। পক্ষান্তরে পাপী তার গুনাহকে দেখে যেন মাছি তার নাকের ডগায় বসেছে, তাকে এভাবে তাড়িয়ে দেয়”।[20]
এরা কি বিষয়টির বিপদ উপলব্ধি করতে পারবে যখন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদীস পাঠ করবে;
"إيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ فَإنَّمَا مَثَلُ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ كَمَثَلِ قَوْمٍ نَزَلُوا بِبَطْنِ وَادٍ فَجَاءَ ذَا بِعُودٍ وَجَاءَ ذَا بِعُودٍ حَتَّى حَمَلُوا مَا أنْضَجُوا بِهِ خُبْزَهُمْ وَإنَّ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ مَتَى يَأخُذُ بِهَا صَاحِبُهَا تُهْلِكُهُ" وَفِي رِوَايَةٍ: "إيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ فَإنَّهُنَّ يَجْتَمِعْنَ عَلَى الرَّجُـلِ حَتَّى يُهْلِكَنَّهُ"
“তোমরা নগণ্য ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান হও! নগণ্য ছোট ছোট গুনাহগুলোর উদাহরণ হল ঐ লোকদের মত যারা কোন মাঠে বা প্রান্তরে গিয়ে অবস্থান করল এবং তাদের প্রত্যেকেই কিছু কিছু করে লাকড়ি [জ্বালানি কাঠ] সংগ্রহ করে নিয়ে এলো। শেষ পর্যন্ত এতটা লাকড়ি তারা সংগ্রহ করল যা দিয়ে তাদের খাবার পাকানো হল। নিশ্চয় নগণ্য ছোট ছোট গুনাহতে লিপ্ত থাকা ব্যক্তিদেরকে যখন সেই নগণ্য ছোট ছোট গুনাহগুলো গ্রাস করবে [পাকড়াও করবে] তখন তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে।” অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, “তোমরা নগণ্য ছোট ছোট গুনা থেকে সাবধান হও; কেননা সেগুলো মানুষের কাঁধে জমা হতে থাকে অতঃপর তাকে ধ্বংস করে দেয়”।[21]
স্কলারগণ উলে¬খ করেছেন: যখন সগীরা গুনাহর সাথে লজ্জাশরম কমে যাবে, কোন কিছুতে ভ্রƒক্ষেপ করবে না, খোদাভীতি থাকবে না এবং আল্লাহর ব্যাপারে ভক্তি হবে না তখন একে কবীরা গুনাহতে পরিণত করবে। এজন্যই বলা হয়েছে যে, لا صغيرة مع الاصرار، ولا كبيرة مع الاستغفار “ক্রমাগত পাপ করলে তা আর সগীরা থাকে না এবং ক্ষমা প্রার্থনা করলে, তা আর কবীরা থাকে না”। অর্থাৎ, ক্রমাগতভাবে সগীরা গুনাহ করতে থাকলে তা কবীরা গুনাহে পরিণত হয় এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকলে কবীরা গুনাহ আর গুনাহ থাকে না, বরং তা মাফ হয়ে যায়। যার এ অবস্থা তাকে আমরা বলি, গুনাহ ছোট আপনি এদিকে দৃষ্টি দিবেন না, বরং আপনি দৃষ্টি দিবেন এদিকে যে, আপনি কার অবাধ্যতা করছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ إِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةً أَوۡ ظَلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ ذَكَرُواْ ٱللَّهَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ لِذُنُوبِهِمۡ وَمَن يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ إِلَّا ٱللَّهُ وَلَمۡ يُصِرُّواْ عَلَىٰ مَا فَعَلُواْ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ١٣٥ ﴾ [ال عمران: ١٣٥]
“আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করে বসে অথবা যুলম করে নিজেদের প্রতি, সাথে সাথে আল্লাহকে স্মরণ করে ও নিজদের পাপের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবে? আর তারা যে পাপ করেছে জেনে শুনে তা চালিয়ে যাওয়ার জেদ করে না।”
এ কথাগুলো দ্বারা অবশ্যই উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ সত্যবাদীগণ, যারা অনুভব করছেন তাদের গুনাহের ব্যাপারটি। তারা নয় যারা তাদের গোমরাহীতে অনড়, তাদের বাতিল অবস্থার প্রতি অবিচল। এটি তাদের জন্য যারা বিশ্বাস করে মহান আল্লাহর এ বাণীকে:
﴿ ۞نَبِّئۡ عِبَادِيٓ أَنِّيٓ أَنَا ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٤٩ ﴾ [الحجر: ٤٩]
“আমার বান্দাদের জানিয়ে দাও যে, নিশ্চয় আমিই একমাত্র ক্ষমাকারী দয়ালু”।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إن الله ـ تعالى ـ يبسط يدهُ بالتوبة لمسيء الليل إلى النهار ولمسيء النهار إلى الليل حتى تطلع الشمس من مغربها ".
“একজন বান্দা রাতে যে সব অপরাধ করে, তা ক্ষমা করার জন্য আাল্লাহ তা’আলা সারা হাত বাড়িয়ে রাখেন, আর দিনের বেলা যে সব অপরাধ করে, তা ক্ষমা করার জন্য সারা রাত হাত বাড়িয়ে দেন। এটি ঐ দিন পর্যন্ত চলতে থাকবে, যেদিন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে”। তেমনি যারা ঈমান রাখে এ বাণীর উপর:
﴿ وَأَنَّ عَذَابِي هُوَ ٱلۡعَذَابُ ٱلۡأَلِيمُ ٥٠ ﴾ [الحجر: ٥٠]
“আর নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হল যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি”।[22]
হে আল্লাহ্ আমাদের সকলকে গুনা বা পাপ থেকে দূরে রাখুন, শয়তানের সকল বদ নজর বা খারাপ কাজের উসিলা থেকে দূরে রাখুন।
আপনার বিধান মতে সুন্দর পথে পরিচালিত করুন ।
আল্লাহ্ নিশ্চয়ই আপনিই একমাত্র রক্ষাকর্তা,সারা পৃথিবী,আসমান ও বিচার দিনের মালিক, আপনি ক্ষমাশীল, ও দয়াবান ।
বিভিন্ন হাদিস থেকে সংগৃহিত >
ভুল হলে মাফ করবেন, আপনাদের সহযোগিতা ও ভাল পরামর্শ ,উৎসাহ সব সময় কামনা করি ।
আল্লাহ্ সবার মঙ্গল করুন । আমিন ।
২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০০
আর বি এম টুটুল বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই, ছোট আকারে না দিয়ে এক সাথে দিলাম এই জন্য যে সব বিষয় এক সাথে পাবে , বুঝতে সহজ হবে , কারন আজ লিখলাম কাল তো লিখার সুযোগ নাও পেতে পারি । ভাই খুশী হলাম আপনার পরামর্শে, আল্লাহ্ আপনার মঙ্গল করুন ।
৩| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৮:৪৪
shibleemehdi বলেছেন: আস্সালামু আলাইকুম্, হাদিসটি শুনেছিলাম এবং এটা খুঁজছিলাম - আপনার এই লেখায় পেলাম:
"ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন- নিশ্চয় নেক আমলের কারণে মানুষের চেহারা উজ্জল হয়, অন্তর আলোকিত হয়, রিযিক বৃদ্ধি পায় ও আয় রোজগারে বরকত হয়, দেহের শক্তি বৃদ্ধি পায়, মানুষের অন্তরে অপরের প্রতি মহব্বত বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে খারাপ কাজে মানুষের চেহারা কুৎসিত হয়, অন্তর অন্ধকার হয়, দেহ দুর্বল হয়, রিযিকে সংকীর্ণতা দেখা দেয় এবং মানুষের অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা জন্মায়। ফলে তাকে কেউ ভালো চোখে দেখে না।"
দয়া করে এটার রেফারেন্স নম্বার কি আপনার পক্ষে দেয়া সম্ভব হবে ভাই?
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৩৯
মহা সমন্বয় বলেছেন: বর্তমান সময়ে পাপ থেকে বেঁচে থাকা আসলেই অনেক কঠিন। মহান আল্লাহ নিজ গুনে ক্ষমা না করলে আর উপায় নাই।
আমরা মানুষ জাতির মন আসলেই কুলশতায় পূর্ন- এদের মনে এক আর কথায় কাজে আরেক, এরা বিভেদ সৃষ্টি করে। মানুষ জাতি শুধু ভং ধরা, সং সাজা আর অভিনয় করা এগুলো খুব ভালমত রপ্ত করেছে।
মহান স্রষ্টা মানব জাতির মন যে কি দিয়ে তৈরী করেছে এর সঠিক কর্ম পদ্ধতিই বা কি আজ পর্যন্ত গবেষণা করে কোন কুল কিনারা পাইনি।
আল্লাহ্র কঠিন শাস্তি থেকে যেন মুক্তি পাই। - আমিন
সুন্দর পোষ্ট হয়েছে, পর্ব আকারে ছোট ছোট করে প্রকাশ করলে ভাল হত কিছু কিছু করে পড়লে মনে থাকে।
ধন্যবাদ।