নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বজ্রবিদ্যুৎ-ভর্তি খাতা

ইচ্ছে হলো একধরণের পদ্য লেখা,শব্দে-সুরে ইচ্ছেমতো বাঁচতে শেখা

রক্তপলাশ

এই যে আমি জন্মেছি,আর কোনওদিন জন্মাব না,এই জেনে দু-চারটে লাইন লিখে রাখা------।।

রক্তপলাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবুল হাসানের সাতটি অপ্রকাশিত এবং একটি এশিয়াজয়ী কবিতা

০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:০৫









আবুল হাসানের চ্যাংটা বয়সে লেখা চল্লিশটা অপ্রকাশিত কবিতার মধ্যি থেকে আমার ভালো লাগার সাতটা কবিতা।সাথে হাসানের সেই এশিয়া জয়ী কবিতাটা ‍:-----------------------------------------



প্রাককথন :-



আবুল হাসান আমাকে একটি ডাইরি দিয়ে বললেন - শেহাব এই ডাইরিটা তোমার কাছে রেখে দাও।এখানে আমার লিখা বেশ কিছু কবিতা আছে।এগুলি কাঁচা বয়সের লিখা।তুমি এই ডাইরির কবিতা গুলি কোনো পত্রপত্রিকায় ছাপবেনা অথবা এসব কবিতা দিয়ে কোনো বইও বের করো না।যেহেতু এগুলি কাঁচা বয়সের লিখা , তাই আমি চাই না এ কবিতাগুলি কোথাও প্রকাশিত হোক।

-------শেহাবউদ্দিন ‍আহমদ।।



‘শিকারী লোকটা’ শিরোনামধারী কবিতাটির জন্য আবুল হাসান সমগ্র এশিয়াভিত্তিক এক প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন। পরে ওই কবিতাটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত সমগ্র পৃথিবীর প্রতিনিধিত্বশীল কবিদের কবিতা-সঙ্কলনে অন্তর্ভুক্ত হয়।কলকাতা থেকে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ‘পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতা’ (১৯৭০) শীর্ষক ওই গ্রন্থে তদানীন্তন পাকিস্তানের একমাত্র প্রতিনিধি আবুল হাসানের কবিতা স্থান পায় !



অপ্রকাশিত প্রিয় সাত:-





“রূপের অরূপ”



জেনেছি মানুষ তার উর্বশীরে ভিন্ন রূপে দেখে

যাত্রা হোক,হোক না সে নাটকীয় প্রেমের কথিকা

অনেক স্নেহের ভিড়ে প্রজাপতি ফুলারতি শেখে

বলাকারা প্রদ্যুতে শিখে নেয় গানের লিপিকা।



ভেবেছি করুণা নেই,বৃদ্ধ এক জনক ভঙ্গিতে

শুধুই ভক্তিমালা টিপে টিপে তিষ্ট ক্ষণকাল।

তবুও করুণ রসে কোন এক প্রেমের সঙ্গীতে

ভীরু মন ভীড় করে ‘ডুয়েটের’ প্রবল আকাল!



মৌমাছি মন তবু কথা শেখে ঋতুর আভায়

বয়সী প্রীতির ভার সংস্পর্শে যদিও তা মানে

অন্য রূপে,অন্য রঙে অন্য কোন সঘন শাখায়

প্রীতির পাখিরা সব করুণার গান বয়ে আনে।

এবং মেনেছি শেষে আমাদের সাহসের নীড়

জ্যোৎস্নার রাত্রির হলে ভেঙে দেয় পিপাসার মীড়।







“নদীর বুকের সব ঢেউ”



আমাকে নদীর নেশা দিয়েছিল

শাহেরা খাতুন

কামরাঙা বনের সবুজে

শ্বেত আর লাল স্রোতে

আমাকে সে দিয়েছিল প্রীতির আগুন।



পদ্মার তীরে আজো আমার প্রবাসে

মাঝির পালের গায়ে তার কথা আজো যেন হাসে।

কোন এক মেঘ মেঘ ঝাপসা আকাশে

সে আমার সূর্য হয়েছিল

বলয়ের স্নেহ দিয়েছিল;



সে আমাকে ‘মলুয়ার’ গাথা বলেছিল

ভাটিয়ালি মাঝিদের মতো।

আজো সেই শাহেরা খাতুন

দ্যুতির চেতন হয়ে বারবার ফিরে ফিরে আসে

তারপর বেদনায় আমার স্মৃতির তীরে ভাসে।



ঝোড়ো রাতে সাথীহারা বেদনা বিলাসে

প্রীতিতে নুইয়ে পড়া চোখ মেলে নতুন আসে

সে আমাকে বলেছিল,

এই রাত,কী গভীর!

এই রাতে একলাই যাবে?

এই ঝোড়ো রাতে??

(আমি তার চোখের সাহস!)

বোললাম

আমি এই ঝড়েরই মতোন

চাওয়া পাওয়া কিছু নয়

শুধু চলা নিঃসীম ‘নীলের’ উদগারে!

কী সে ‘নীল’?

কেন নীল?

ব্যথা তব দিয়েছে কি কেউ?

আমি শুধু প্রত্যুত্তরে

নীরব নদীর সব ঢেউ!







“আহা কবে যে !”



আমি আর কী শোনাবো বলো?

আমি শুধু আমার বাঁধন কেটে

অক্ষর বানাতে পারি,

এবং শুধু পারি কথা সাজাতে

আর কিছু নয়----।

আমি কি দেখাতে পারি আর?

শুধু আত্মার উর্বরতা

তোমার রক্তের বীজ দিয়ে ফসল ফলাবে

বলে,তোমাকে চেয়েছিল

এবং চেয়েছিল,কেননা,

চত্বরে সাজাবে কিংশুকের পরিক্রমা!



অথচ তুমি তো এখনো কিছুই

হতে পারলে না

আমি কবে যে তোমার মুখের যাদু পাবো

কবে যে ‍আমার রেণুতে রেণুতে

তোমার মুখের রস ছড়াবো।



আহা কবে যে-------।





“খবর”



জানো আমি ওখানেও পায়ের চিহ্ন রেখেছি

একটুকরো ঋণের ভারে আমি যে আচ্ছন্ন,

পাওনাদারের আড়ত থেকে পালিয়ে এসে

তোমার কাছে একটু আশ্রয় পাবো বলে

একটু স্নেহ পাবো বলে,

আমার সমর্পণের ইচ্ছাটা প্রবল হয়ে আমাকে তাড়া করে।



কিন্তু আহা ঠুংরী তালের আসর যে

তুমি ভেঙে দাও,দরদের শেষ চিহ্ন

বন্ধু,তোমার হাতের কাঠিন্যে মুছে যায়!



নীল আকাশের এক ঠুকরো বুকও

আমাকে একমুঠো আলোর দক্ষিণা দিল না

দিল না,যা নিয়ে আমি এই নির্জনতায়

পাওনাদারের রাঙা চোখ এড়াতে পারি।



এবং জানো,আমার পাওনাদারের আড়ত

কত নীতি ‍আর ভুয়ো দর্শনের বাহুল্যে ফাঁপা?







“উপাখ্যান”



তুমি একমুঠো শিউলি নিয়ে এলে।

(অনেক কোরে যা এতোদিন সযত্নে তাজা রেখেছিলে)

এবং আমার চোখে চোখ রেখে বোললে

‘তোমার মেঘলা আকাশে

এক ঝলক রোদ উপহার দিলাম।’

আরো অনেক কিছু ইনিয়েবিনিয়ে

বোললে পাশের বাড়ির ছেলেটার কথা

তার বোনের কথা

ছেলেটা নাকি টিউশনি করে

বোনের পড়ার খরচা চালায়।

এবং বুড়ো মায়ের পাকা চুলে

ছেলেটাও মাঝে মাঝে বয়সের কড়িকাঠ গোনে।

আর বোললে

মন্নানের কথা

যে সারাদিন ‘কামলা’ খাটে

শুধু সন্তানসম্ভবা বউটাকে

একটু সুস্থ নিরাপদ রাখার জন্যে।

(তোমার কথার লাবণ্য আমাকে

মাঝে মাঝে খুব লোভী কোরে তুললো।)

আমি কিন্তু একটা কথাও বোলতে পারলাম না

যেহেতু চেতনার নতুন মাটিতে

আমি একটা মৃত্যুর আবর্জনা দেখতে পাচ্ছিলাম।







“অকথিত”



সচেতন সমুদ্রের মতো

সে আমাকে কাছে ডেকে নিয়েছিল

গাঙচিল হয়ে নরম বুকের ‘ওম’ দিয়েছিল।

মৃদু মৃদু ভাষা নিয়ে অতলান্ত গভীর দু’চোখে

প্রশান্তি সে এনেছিল একদিন।

নিবিড় কথার রাগে ‍বাহুলতা একান্ত রঙিন।

আমি তো লিখিনি তার ভালোবাসা

বলিনি কেমন কোরে চোখে চোখে

ভাবের বন্যায় হাঁস হতো দূরের আকাশে!

(সে যে কিংশুক বহ্নি হয়ে জ্বলে শুধু

আমার মানসে,সাজানো স্মৃতির মতো!)

সে আমাকে কাছে ডেকে,বসন্তের হাওয়ার মতোন

আঙুরের ঘ্রাণ দিয়েছিল;

আমি যে তা বলিনি কখনো!







“চিঠি”



তুই লিখেছিস:

বড় টানাপোড়েন

হালের গরু বেচে দিযে

মামলা চালিয়েছি

রানুর টাইফয়েড

রশীদ ডাক্তার আকাশের চাঁদ

রোগের চেয়ে টাকা চেনে ভালো।

তাই বিশু কবিরাজ আর তার পথ্যি

নিম পাতার চচ্চড়ি-চিরতার পানি।

ভিটেমাটির মিথ্যে কোন্দলে

দারোগার বনেদীগিরি

চাদ্দিক অবিশ্বাস্যরকমের জুগুপ্সা।



ইস্কুলটার ত্রিশঙ্কু অবস্থা

ছাত্র নেই

পয়সা নেই

শত্রুপক্ষ হায়েনার রূপ নিচ্ছে।

আর প্রতিবেশীর যুবতী মেয়েটার এখন অমাবস্যা

যেহেতু বুড়ো বাপ,বুড়ো পৃথিবীকে সেলাম জানিয়েছে।



অনেক বড় করে লিখেছিস।

ইনিয়েবিনিয়ে অসুখ-বিসুখ

আর দলাদলির কড়চা।

তা লতায় কি একটুও রস নেই?



আমি কেমন আছি

জানতে চেয়েছিস।

পনেরোয় আমি গাঁয়ের ছেলে

কাচা আমের কৌমার্যে

ঝিঁঝির ডাকে

বৃষ্টির উদাস আকাশে

আর বিলের জলে ‘পোলোর’ নৃত্যে

স্বপ্ন দেখতাম-------



এখন এই চল্লিশে ‍আমার

এক গাদা ফাইলের রক্তচোখে

পন্ডিত মশায়ের লকলকে বেতও মনে পড়ে না।

খাদ্য ঘাটতির সমস্যা

চাকরির দরখাস্ত

আর পাশে ক্যালেন্ডারের উদ্ভিন্নযৌবনা জাপানী মেয়েটার

গায়ে শুধু দশখানা দশ টাকার নোট

আমাকে ওদের থেকে আড়াল করে রাখে।

কেননা ঘরে চারটে উৎসুক মুখ।

আজ কয় তারিখ?



ওহ! না,এখনো অনেক বাকি।





****এশিয়া জয়ী কবিতা:-****





“শিকারী লোকটা”



মাছের আঁশটে মাখা রেকসিনের থলে,ফ্লাস্কে দুধ,দগ্ধ শ্যাওলার মতো

ছাইরঙা শার্ট পরে লোকটা আসে রোজই বিকেলে এই পুকুরে

ছিপ ফেলে বসে থাকে মাছের সন্ধানে আর যখন একটি মৃত

সুন্দরীর গোর দেয়া হলো,হায় ভগবান,যখন সুন্দরী মৃত

মাতৃত্ব লাভের আগে------তবু এই পুকুরের জল নাট্যশালা এর অনেক

সুন্দরী

জানি অন্তরঙ্গ,ফ্রিস্টাইল নৃত্যে মৃত্যুকেও নগ্ন দেখে ফেলে-

-যেমন সুইমিং পুল,আলোড়ন তুলে সুন্দরীরা সেখানে সাঁতার

কাটে মিনিড্রেসে

তাদের কেউ বা শেষে ফ্রাই হয়ে চলে যায়

ডাইনিং টেবিলে কোনো আবাসিক রাতের হোটেলে!

তবু যখন একটি মৃত সুন্দরীরে গোর দেয়া হলো,যখন সুন্দরী মৃত

মাতৃত্ব লাভের আগে,হায় ভগবান চকচকে নেইলপালিশে তার

দু:খগুলি

কেমন তাকিয়েছিল,সিগ্রেট পাইপ কারো ঠুকরে খাবে সুস্বাদু সর্বাঙ্গ

এই ক্ষোভে!-------আর এতো আঘুটে কাহিনী,বরং মাছকে দেই

প্রস্তাবনা

চন্দ্রসভ্যতার এক অতুল বক্তৃতা হবে আমার বাড়িতে,লেমন স্কোয়াশে

শেষে

শ্যাম্পেন,হুইস্কি হবেই,তুমি এলে সোনায় সোহাগা হয় বরং হে

মাছ!

ছিপ ফেলে বসে থাকে,লোকটা এমন যেন অনন্তকালের কোনো

মৎস্য শিকারী

মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া ঝিমুনো চুল,মোটা কার্ডিয়ান গায়ে,তাকে দেখে

স্বপ্নগ্রণ্থে চক্ষু রাখা সমুদ্র পারের কেসিনোর লোকটার কথা মনে পড়ে

আর পোর্ট সিলোনের রাত:নাবিকের নগ্ন ছিপে উঠে আসে ক্লেদভর্তি

নোনা মেয়েমানুষের

মাছের মেরুপ্রন পল্লী যেখানে সহজ শারীরিক জ্যাজেই মুর্চ্ছনাপ্রাপ্ত

ঘুম পাড়ে,ঘুম যায়-ঘেয়ো রক্তে--------লোহিত শয়নে।

লোকটা আসে রোজই এই পার্কের পুকুরে,ছিপ ফেলে বসে থাকে,

ভাবে

পিতৃত্ব লাভের আগে প্রতিটি পুরুষ একবার নিজেরই শিশুর রক্তে হেসে ওঠে

আর পিতৃত্ব লাভের আগে প্রতিটি পুরুষ একবার নিজের ছায়ায় বসে কাঁদে,

কিন্তু ঘুম,হাস্যেলাস্যে মৃত্যুরে ডরি না,মুহূর্তকে চাঁটি মারি তবে,

যখন একটি মৃত সুন্দরীর গোর দেয়া হলো হায় ভগবান,যখন সুন্দরী ‍মৃত



মাতৃত্ব লাভের আগে------ফ্লাস্কে দুধ-------রেকসিনের থলে

ছিপ হাতে কোনোদিন আর সে এলো না ফিরে পার্কের পুকুরে----।।



সূত্র:-



** “মেঘের আকাশ আলোর সূর্য”-আবুল হাসানের অপ্রকাশিত কবিতাবলী।।ভূমিকা-সম্পাদনা:-আবদুল মান্নান সৈয়দ,সংগ্রাহক ও সংরক্ষক:-শেহাবউদ্দিন আহমদ ।।

** আবুল হাসান রচনাসমগ্র।।

** ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:৩৮

বোকামানুষ বলেছেন: ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য

১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৪৭

রক্তপলাশ বলেছেন: শুভকামনা------

২| ১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:২৬

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
প্লাস দাগাইলাম।

১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৪৭

রক্তপলাশ বলেছেন: শুভকামনা------

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.