নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনকে সাজাতে চাই সুন্দর বাগিচায়... তাই করি যা মনে চায়... live it love it ENJOY it!!
আজকে কি হইসে তোর? চিৎকার শুনে বাস্তবে ফিরে এলাম যেন।
মানে?
প্রসেসরের মোড কি দিয়ে আসছস ভালো করে দেখ! হিমেল চিৎকার দিল!
তাড়াতাড়ি গীটার আনপ্লাগড করে প্রসেসরের মোড চেক করতে থাকলাম! হায় ভুল মোড সিলেক্ট করে রেখেছিলাম! এবং আমি দিব্যি বাজিয়ে যাচ্ছি, সাউন্ড শুনেও বুঝতে পারছিলাম না!
মন পড়ে রয় কই? পেছন থেকে উকি দিল জনি। কই শব্দের উপর বিশেষ ভাবে জোড় দিল!
মন পড়ে রয় গীটারের তারে! টিটকারী দিয়ে বললাম!
কাম অন! চেচালো তুহিন। একটু পরে সবাই এসে এই অবস্থা দেখলে? এতক্ষণে সাউন্ড পর্যন্ত ঠিক মত আনতে পারলাম না!
চেচাবি না খবরদার! বাজাস তো ড্রাম খালি, টিউনিঙ্গের ঝামেলা নেই!
ওয়ান, টু, থ্রী, চেক!
ড্রামসের দুই রাউন্ড পর আমি Entry করবো। ওকে?
ঠিক আছে তাই সই!
তুহিন বিট দিল… ওয়ান, টু, থ্রী! গো!
আজ বৃহঃস্পতিবার। এই দিনটা মিউজিক ক্লাবের জন্য অনেক স্পেশাল! কারণ হচ্ছে মাসের প্রথম বৃহঃস্পতিবারে আমরা গোল হয়ে বসে গান করি। ভার্সিটির সব স্টুডেন্ট এদিন গান শোনার জন্য এলাউড! বিকেল থেকে শুরু করি। প্রায় রাত ৮ টা পর্যন্ত চলে। আমি ক্লাব সেক্রেটারী হবার পরেই এই প্রস্তাবটা তুলি। যদিও প্রথম দিকে অনেক ঝড় বয়ে গেছে আমাদের উপর! কোন টিচারই পার্মিশন দিবে না! অনেক ঝামেলা করে রাজি করিয়েছি আমরা। অবশ্য প্রত্যেক নতুন কিছু শুরুর সময়েই এমন ঝামেলা সহ্য করতে হয়।
মিউজিক ক্লাবে এদিন যে গান শুধু শুনবে সবাই এমন না। প্রত্যেকেরই ঢোকার সময় টোকেন নিয়ে ঢোকে। পরে লটারী করে এক বা দুজনকে ডাকা হয় স্ট্যেজে গান গাওয়ার জন্য। যত বেসুরো গলাই হোক না কেন গান গাইতেই হবে। এতে আরো অনেক বেশি মজা হয়।
তো আমরা সবার আসার আগেই প্রেকটিসে বসেছিলাম। তখনি এমন ঝামেলাটা হল!
তো অন্য সব বৃহঃস্পতিবারের মত আজও পুরো হাউস ফুল অবস্থা! কানায় কানায় পূর্ণ। প্রথমে অন্যদের গান গাওয়ার সুযোগ দিলাম। স্বীকার করতেই হবে, আমাদের ভার্সিটিতে অনেক ভালো ভালো মিউজেসিয়ান আছে। প্রথমে দেশাত্ববোধক দিয়ে শুরু হল, আসতে আসতে তাহসান, আর্টসেল, আরো অনেকের গান করল। আমি স্টেজের সামনে ঘুরছিলাম। কোক খাচ্ছি আর দেখছি আসে পাশের অবস্থা। এমন সময় তাদের দেখলাম।
আরে সাগর ভাইয়া! তানিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসল কেয়া। আপনাদের গান শেষ হয়ে গেছে নাকি?
কেয়া মেয়েটা ভালই। চটপট করে কথা বলে, সব সময় তানিয়ার সাথেই ঘুরে। তারা চার বান্ধবী এক সাথে থাকে, তার মাঝে কেয়াকেই কিছুটা চিনি। মাঝে মাঝে ব্যান্ডের খবর জিজ্ঞেস করে।
এখনো তো শুরুই করি নি! হেসে বললাম। ভালো! তোমরা এসেছো দেখে ভালো লাগল! কথাটা বললাম তানিয়ার দিকে তাকিয়ে।
মাথা নুইয়ে হাসল সে। সেদিনের পর থেকে এত ভয় পায়না সে কেন যেন। আগে কখনো চোখাচোখি হলে যেমন করে কুকড়ে যেন, এখন এতটা হয় না তবে অস্বস্থি বোধ করে।
তানিয়াটাতো আসতেই চাচ্ছিলো না! অনেক বুঝিয়ে নিয়ে আসলাম। ইশ আমিও যদি গান জানতাম!
চেষ্টা করো… তুমিও পারবে। তানিয়ার দিকে ফিরলাম। আসতে চাচ্ছিলে না? কথার মাঝে একটু অভিমান ঝরে পড়ল।
না… আসলে… দেরি হয়ে গেলে… বাসায় যেতে হবে যে …
ওহ এই কথা? আমিওতো যাবো ভয় কিসের?
আরো অস্বস্থিতে পরে গেল সে। মাথা নিচু করে রইল। আমি হেসে ফেললাম! আচ্ছা তাহলে ঘুরে দেখ তোমরা!
জ্বী ভাইয়া!
হেসে নিজেদের পারফর্মেন্সের জন্য তৈরী হলাম। শুরু করলাম সফট গান দিয়ে… আসতে আসতে তা রক পর্যায়ে চলে গেল।
শুরু হল Brian Adams এর Cloud number 9 দিয়ে। গানটা আমার অনেক প্রিয়!
and the moon is out and the stars are bright
and whatever comes s'gonna be alright
cause tonight you will be mine - up on cloud number nine
আড়চোখে লক্ষ করলাম তানিয়াকে। নিজের অজান্তেই ধীরে ধীরে এদিক ওদিক দুলতে দুলতে হাতে আলতো করে তালি দিচ্ছে। মুচকি হাসলাম আমি।
এর পর তাহসানের বিন্দু আমি হলো। গান গাইলো হিমেল, আমি বসে বসে রিদম দিলাম এ, ই, ফ শার্প থেকে ডি… ভালো গান গায় হিমেল! আমাদের সেকেন্ড ভোকাল।
এরপর আরো গান হলো। শেষে চাইতে পারো দিয়ে শেষ করলাম। তুমুল হাততালি পরল। নাহ এরকম রিয়েকশ্যন আসলে ভালো লাগে। হাসিতে মুখ ভরে গেল আমার। দেখলাম তানিয়াও হালকা হাসছে। চোখাচোখি হতেই অন্যদিকে তাকালো যেন আমাকে কোনদিন দেখেছে বলে মনে পড়ে না! হাসলাম আমি।
ওকে ওকে! মাইকোফোন নিয়ে দাড়ালাম! থ্যাংক ইউ তোমাদের সবাইকে। এখানে আসার জন্য। এমন দর্শক পেলে কার না ভালো লাগে! সবাই হই হই করে উঠল! তো! আমার তো ইচ্ছে ছিলো আজকে সারা রাত এখানেই কাটিয়ে দিব! কিন্তু কি আর করা! একটু পর যদি দীপণ স্যার আর রজব মামা লাঠি হাতে ছুটে আসে এত চেচামেচির জন্য তাহলেও অবাক হব না! সো নতুন যারা আছো, যাদের আগ্রহ আছে, রেজিস্ট্রেশন করতে পারো, বাম পাশের বুথ থেকে। আশা করি তোমাদের সময় অনেক ভালো কাটবে এই ক্লাবে… আর… এখন, আমাকে সরে দাড়াতে হবে… না আমি থাকব, তবে গীটারে… গান গাইবে… তোমাদের একজন! ইটস গেস্ট টাইম! কে আজকের গেস্ট বেড় করবে আমাদের মিউজিক পারে না কিন্তু ভাব দেখায় এমন বন্ধু… শোভন!
হাসির রোল আর করতালি শোনা গেল শোভনের জন্য!
লটারীর একটা কাগজ তুলল শোভন। আজকের মোস্ট আনলাকি ও অনার্ড গেস্ট, তানিয়া শারমিন!! কোথায় তানিয়া চলে আসো স্টেজে!
আমি হকচকিয়ে গেলাম! তানিয়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। ভিড়ের মাঝে মিশে যেতে চাইছে কিন্তু কেয়া ঠেলে পাঠালো সামনে! পিছে তাকিয়ে ভয়ার্ত চোখে দেখল তাকে। শোভনের দিকে তাকালাম। তার চোখ টিপা দেখে নিমেষেই সব পরিষ্কার হয়ে গেল!
মোটেও এটা লটারী ছিল না! শোভনের কাজ! মনে মনে তারিফ করলাম তাকে! এমনভাবে কাজটা করল যেন কেউ বুঝতেও পারল না। নাহ কাল তাকে আবার সিঙ্গারা খাওয়ানো যায়!
আসতে করে স্টেজে আসল তানিয়া। চারদিকে ফিসফাস শুরু হয়ে গেছে। রাহা চেচিয়ে উঠল সবার মাঝে থেকে, কবে থেকে ফার্স্ট ইয়ারের গুলো গেস্ট হউয়ার রেউয়াজ চালু হয়েছে? যত্তসব!
কটমট করে তাকালাম তার দিকে। এই মেয়েটা আমাদের ব্যাচের… কিন্তু অন্য সেকশানে। ধনীর ঘরের মেয়ে হিসেবে আলাদা একটা বড়াই আছে তার মাঝে। সাথে কিছু চেলা ঘুরে তার সাথে… নিজেকে মনে হয় মহারাণী মনে করে! প্রথম দিকে আমার সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করছিল, পাত্তা না পেয়ে এখন আমার পিছনে উঠে পরে লেগেছে!
এমন কোথাও বলা আছে যে ফার্স্ট ইয়ারেরা লটারি জিতলেও গাইতে পারবে না?!! চিৎকার জুড়ালো শোভন!
চল যাই! উঠে দাড়ালো রাহা আর তার দল। মিউজিক ক্লাব যে এত নিচে নেমে গেছে আজ বুঝতে পারলাম… গটগট করে চলে গেল তারা।
তানিয়ার দিকে তাকালাম, সে কিছু বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে! হতবিহ্ববলের মত আমার দিকে তাকালো।
ডোন্ট ওরি! নরম সুরে বললাম। কিচ্ছু হবে না! কি গাইবে তুমি? আমার কিছু রবীন্দ্রসংগীত ফিংগার স্টাইলে তোলা আছে…
তার দরকার হবে না… হালকা পায়ে এসে মাইক টা হাতে নিল… চোখ বন্ধ করে বড় করে শ্বাস নিল… এর পর শুরু করল!
অন্ধকারে… বসত করে… যায়না দেখা… দেয়াল চিরে
দুরের ওই নিল আসমান… একটিবার করে… হৃদয়পথে… দু পা চলে…
তার সুরেলা গলা সারা হলরুমে ছড়িয়ে পড়ল… প্রত্যেকটা স্কেলে সে পারফেক্টভাবে যাচ্ছে! যখন পিচে উঠতে হচ্ছে তখন উঠছে… বোঝা যায় অনেক যত্ন করে তৈরি করা এই গলা…
এই গানটা আমি তুলেছিলাম… সাসপেনশনের ই তে… কিন্তু ওর পিচ দেখে আন্তাজ করলাম সে হয়তো এ তে নিয়ে গেছে গানটাকে… এ প্রোগ্রেসনের একটা হালকা প্লাকিং বাজালাম। তার সুরেলা গলার পেছনে বাজতে থাকল গীটারের প্লাকিং…
গান শেষ হবার পর কেউ কথা বলল না কিছুক্ষণ! তারপর উল্লাসে ফেটে পড়ল সবাই! চিৎকার করে তাকে চিয়ার করছে। প্রথমে অবাক হয়ে গেল তানিয়া! এরপর আসতে করে তার মুখে হাসি ফুটে উঠল। ক্রমে তা বিকাশিত হয়ে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে পৌছে গেল। এই প্রথম আমার দিকে হাসিমুখে তাকালো। আমিও হাসি ফেরত দিলাম। সে অন্য দিকে তাকালো না, বরং হাসি দিল! তার হাসির মাঝে আটকে গেলাম আমি!
©somewhere in net ltd.