নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগিং জগতে প্রথম ঢুকলাম...

জীবনের পথে চলা নবীন এক পথিক...

রাফীদ চৌধুরী

জীবনকে সাজাতে চাই সুন্দর বাগিচায়... তাই করি যা মনে চায়... live it love it ENJOY it!!

রাফীদ চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনমনে...(৭)

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:২৭

কিছুদিন পর… ডিভাইস ২ ক্লাশ থেকে বের হলাম, সামনে দেখি উদাস হয়ে তানিয়া দাঁড়িয়ে আছে। করিডোরে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে আনমনে। কিছুদিন ধরে তার দেখা পাওয়া যাচ্ছে না কেন যেন। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতে যাব এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠল।



আব্বু ফোন দিয়েছে, তাই তাকে আর জিজ্ঞেস করা হল না। উদাস মনে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকা তানিয়াকে দূর থেকেই বিদায় জানালাম আমি।



নিউ ইস্কাটন রোড। ওপ্সনিন ফার্মা লিমিটেডের মেইন অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার আব্বুর অফিস। হঠাৎ ফোন করে আব্বু তার অফিসে আসতে বলল। কারণটা বুঝতে পারছি না।



লিফট দিয়ে উঠার সময় দেখা হল জলিল আংকেলের সাথে। আমাদের এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অব মার্কেটিং। আব্বু নাকি ওয়েট করছেন আমার জন্য।



ভয়ে ভয়ে ভেতরে ঢুকলাম। টেবিলের অপর প্রান্তে বসে আছে আব্বু।

হঠাৎ কি কারণে…

সাগর… বসো। কিছু কথা বলার আছে তোমার…

আমি আরো আড়ষ্ট হয়ে গেলাম… বলো? একটা চেয়ার টেনে সামনে বসলাম।



তোমাকে, ভার্সিটি পড়া অবস্থাতেই এখানে কোন কাজ দেবার পক্ষে আমি কখনোই ছিলাম না… গম্ভীর ভংগিতে বললেন তিনি। আমার কথা হচ্ছে সবার আগে পড়া… পড়ার বয়সে পড়াশোনা করাই উচিৎ, অন্যকিছু এর মাঝে ঢুকানো মোটেও উচিৎ না।

অন্যকিছু কি…?



বলছি… হাত দিয়ে মাছি তাড়ালো যেন। আমার আর তোমার আম্মুর কখনো ইচ্ছে ছিল না কোন ডিগ্রী নেবার আগেই তোমাকে এই কোম্পানীর কোন পোস্টে নেওয়া। কিন্তু ঘটনা অন্যরকম দাড়াচ্ছে…



সোজা তাকালো আমার দিকে। সাগর, আমি অনেক অসুস্থ্য। এখানে ঠিকমত সব সময় মনোযোগ দিতে পারছিলাম না গত কিছুদিন ধরে। বিজনেস পলিসি রক্ষা করা অনেক কঠিন। আমার বিরুদ্ধে দল গঠন করার মতোও চক্রান্ত চলছে… এখন



অবাক হয়ে গেলাম। আমার আব্বু বিশ বছর ধরে এখানে আছে… সাধারণ পোস্টে জয়েন করে আজ এখানে উঠেছে… কোনদিন শুনি নি কেউ আব্বুর বিরুদ্ধে দল গড়ার সাহস পেয়েছে।



তাই… আমি এখনি তোমাকে এখানে একটা পোস্ট দিতে চাই… আমি থাকা অবস্থাতেই। এতে তারা এত সাহস দেখাতে পারবে না। আর যদি তারা আমাকে সরিয়েই ফেলতে পারে… যদি… ততোদিনে তুমি অনেক উপরের পোস্টে উঠে যাবে। তোমাকে তারা কাবু করতে পারবে না… আর এখনি যদি না করো… তাহলে পরে হয়তো এমন সুযোগ এই ফার্মায় নাও পেতে পারো তুমি…



মাথা ঝোকালাম আমি। কি বলবো বুঝতে পারছি না। হ্যা আমিও চাইতাম এক সময় ভার্সিটিতে যাব, জব করবো, সন্ধ্যার পর রাতে গীটারের আসর বসাবো বন্ধুদের নিয়ে… কিন্তু এসব সব ছেলেমানুষি চিন্তা ভাবনা। আসলে এরকম কিছু হতে যাচ্ছে দেখে ভেবে পাচ্ছি না কি করার।



তো… তুমি এক সপ্তাহের মাঝে এখানে জয়েন করবে… আরো গম্ভীর শোনালো তার গলা। আমি ঠিক করে রাখছি সব কিছু। জলিল সাহেবের আন্ডারে থাকবে তুমি। উনি হবেন তোমার সুপারভাইজর। সো তার সাথে কথা বলে নিও যাবার সময়।



তুমি কখন এসব প্ল্যান করলে? অবাক হয়ে গেলাম।



বেশি দিন ধরে না। আমি নিজেও জানতাম না। আর… উঠে যেতে যেতে বলল। পড়াশোনার কোন ক্ষতি করো না। এটা আমার অনুরোধ। অন্যদের চেয়ে তোমাকে এখন অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। অফিস সামলাতে হবে, পড়াশোনা ভালোভাবে করতে হবে…আর মিউজিক নিয়ে থাকলে সেটার জন্য আলাদা সময় বের করে নিতে হবে। সো তোমাকে এখন থেকেই পারফেক্ট হতে হবে…



জ্বী আচ্ছা! কি বলবো বুঝে উঠতে পারছি না। চিন্তা ভাবনা গুছিয়ে উঠতে থাকলাম। লেজারের অ্যালবামের কাজ প্লাস ভার্সিটির অ্যাসাইনমেন্ট আর ল্যাবগুলার প্যারা তার সাথে এখন অপ্সনিন ফার্মার মতো বিরাট কোম্পানীর বিজনেস অ্যাডভারটাইজমেন্টও দেখে রাখা… কেন যেন মনে পরল পারবো, আমাকে পারতে হবে… যদি সে পাশে থাকে…



আর কাল সকালে তোমাকে বরিশাল যেতে হবে… আমাদের ফ্যাক্টরি ভিজিটে। সো তৈরি হয়ে থেকো।

কী? চেচিয়ে উঠলাম। আমার অ্যাসাইনমেন্ট আছে… আর…

ওসব তোমার চিন্তা। হালকা হাসি ফুটে উঠল আব্বুর মুখে। কিভাবে সব সামলাবে তুমিই ঠিক করো!

গজরাতে গজরাতে রুম থেকে বের হলাম। এখন কি করি!



উপর তলায় আমার ডিপার্টমেন্ট। এখানে মার্কেটিং পলিসি দেখা হয়। হিউজ কাজ। ন্যাশনাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল বায়ারদেরও হ্যান্ডেল করে এখানে। আমার পোস্ট আর রুম দেখালাম। জলিল আংকেল আমার রুমে নিয়ে গেলেন। কাচের পার্টিশান দেওয়া একটা লম্বা ঘর। ছয়জনের যায়গা হবে। সবার যায়গা আলাদা করে ভাগ করে দেওয়া আছে। অফিস ডেক্স, পিসি, হাইস্পীড ইন্টারনেট, ল্যান্ডফোন সবই আছে। কেন যেন ভালো লাগল সব কিছু। আংকেল আমাকে ইমিডিয়েট সিনিয়ার রাসেল ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।



রাসেল! আমাদের স্যারের ছেলে… এখন তোমার আন্ডারে… হেসে হেসে বললেন তিনি। দেখো যেন কোন গন্ডগোল না পাকায়!

আমি থাকতে তা কখনো হবে না! হেসে উত্তর দিল রাসেল ভাই।

পরে রাসেল ভাই আর আমি আড্ডা দিতে থাকলাম। স্বভাবতই গীটার ভার্সিটি এসব নিয়ে কথা শুরু হল।

গার্লফ্রেন্ড আছে? চোখ নাচাল ভাইয়া।

কী?

নাই তাহলে?

আসলে…মানে…

ডোন্ট ওরি স্যারকে আমি কিছু বলবো না। হেসে ফেলল সে।

নাহ… সেটা না… মানে… আসলে।



ওহ বুঝছি, অন গোয়িং। ভালো ভালো। এখন তো আরো ভালো! ভার্সিটিতেই চাকরি! মাসে মাসে যখন স্যালারী পাবে, গাড়ি ড্রাইভ করে যাবে… মেয়েরা না পটে কোথায় যাবে? আবার হিট রকস্টারও তুমি! তোমার তো মিয়া পোয়া বারো অবস্থা!

আমাকে স্যালারী দিবে…?

বোকা নাকি? কাজ করবে স্যালারী পাবে না? আরো অনেক সুযোগ পাবে…



এতখনে হাসি ফুটে উঠল আমার। নাহ, রাসেল ভাই যা বলেছেন ঠিক! ধন্যবাদ আব্বুকে সঠিক ডিসিশান নেবার জন্যে! যদিও এখন থেকে অন্যদের থেকে তিন গুন বেশি কাজ করতে হবে আমাকে…







বাসায় যেয়ে ধপাস করে বিছানায় পরলাম, মাথাটা পুরো ঘোলাটে হয়ে গেছে। সাথি ছুটে এল! কনগ্রেটস বিগ ব্রাদার! আমাকে ট্রিট দিবে কবে? স্যালারির প্রথম টাকা দিয়ে কিন্তু লেগো বারবী কিনে দিতে হবে… মাস্ট!!



আচ্ছা দিব। মলিন হাসি দিলাম।

প্রমিস করো!!

আচ্ছা বাবা প্রমিস! তোমাকে নিয়ে যাব। নিজে পছন্দ করে কিনবে, ওকে?

ঠিক আছে! খুশি হল সে। চলো খাবে।

পরে… এখন না…

ঠিক আছে! বিদায় নিল সে।



কি করব বুঝতে পারছি না। রেসপনসিবিলিটি দেখে ভয়ও লাগছে। খোলা জানালা দিয়ে ঠান্ডা হিমেল হাওয়া বয়ে গেল। ঝড় আসার পূর্বাভাস… না জানি জীবন যুদ্ধেও কোন ঝড় চলে আসে…



তানিয়ার কথা মনে পড়ছে ভীষণ! সকালের মনমরা চেহারা ভুলতে পারছি না। কিছু কি হয়েছে? আমাকে কি অ্যাভয়েড করছে?



কিছু একটা করতে হবে। কাল এমনি বরিশাল যাচ্ছি। শোভন কে ফোন দিলাম, তানিয়ার নাম্বার ম্যানেজ করতে হবে।



তানিয়ার নাম্বার পাওয়া গেল না তার কাছে কিন্তু কেয়ার নাম্বার পাওয়া গেল… অগ্যতা তাকেই ফোন দিলাম।



ওপাশে সাত-আট রিং হবার পর ফোন ধরল কেয়া। কে?

কেয়া আমি, সাগর। কি খবর?



সাগর? আরেহ সাগর ভাইয়া! খুশি ভাব চলে এল তার গলার মাঝে। কেমন আছেন? হঠাৎ করে আমার নাম্বার খুজে পেলেন কই?!



এই তো পেলাম আর কি! আচ্ছা, তানিয়ার নাম্বারটা দেওয়া যাবে? অস্বস্থির সাথে বললাম।



তানিয়া…? ইতস্তত করতে থাকল কেয়া। ভাইয়া, তানিয়া নাম্বারটা দিতে মানা করেছে যে! কাল ওকে জিজ্ঞেস করে আমি দিব আপনাকে কেমন? আর এখন এই টাইমে তানিয়া ঘুমিয়ে পরবে বোধহয়, এমনিও তাকে পেতেন না।



ঘড়ি দেখলাম। সোয়া দশটা বাজে! এখনি ঘুমিয়ে পরে? অবাক হলাম। নাকি কেয়া মিথ্যা বলল?

আচ্ছা তাহলে… হতাশার দীর্ঘশ্বাস পরল। কাল বলে লাভ নেই… আমি একটু বাইরে যাচ্ছিলাম…

ভাইয়া… কেয়ার কথায় দুঃচিন্তার আভাস পাওয়া গেল।

আপনাদের ব্যাচের রাহাকে চেনেন?

হ্যা চিনি! কেন কি হয়েছে? মনটা কু ডাক দিল।

রাহা আপুর সাথে কি আপনার কোন সমস্যা ছিল কখনো, ভাইয়া?

কেন? কি হয়েছে রাহাকে নিয়ে? গলার স্বর বেরে গেল আমার।



তানিয়া… রাহা আপু তাকে দেখতে পারে না। সেদিন রাহা আপু অনেক খারাপ বিহ্যাভ করেছে তানিয়ার সাথে…তানিয়াটা কিচ্ছু বলে নি… ধরে এল কেয়ার গলা। সেদিন…



রাহা… দাত কড়মড় করে উঠল। এই বেয়ারা মেয়েটা!



তারপরও সে থামে নি। কাল লাইব্রেরীতে তানিয়াকে একা তিন ঘন্টা আটকে রেখেছিল তারা। সাথে তার বান্ধবীরাও ছিল। মানলাম সে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে কিন্তু… তাই বলে… তাকে কেন দেখতে পারে না? আমাদের এত মেয়ে থাকতে তার মন সোজা মেয়েটাকে ইচ্ছে মত অপমান করছে… সারাটা দিন তানিয়া কেদেছে…

ভাইয়া, আপনার জন্য কি সে এমন করছে…



রাগে আমার চোখ লাল হয়ে গেল। আমার উপরের রাগ রাহা তানিয়ার উপর ঝারছে… এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল সে…

ভাইয়া, তানিয়াকে বলবেন না আমি বলেছি এটা। সে খুব রাগ করবে…



ঠিক আছে। থ্যাংকস কেয়া… তানিয়াকে দেখে রেখো কিছুদিন…কেমন? নিজেও ভালো থেকো… এদের মাঝে ঝগড়া করতে যেও না। তানিয়াকে বলো… বলো আমি কিছুদিন আসব না ভার্সিটিতে… আর কি বলব বুঝে উঠতে পারলাম না… তাকে বলো ভালো থাকতে… বাই…



ফোন রেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম। বুঝতে পেরেছি বড় ঝামেলা শুরু হতে যাচ্ছে। আকাশের দিকে তাকালাম আমি। মাঝে মাঝে মেঘ ডেকে উঠছে। হঠাৎ আশেপাশেই কোখাও বিজলি পড়ল। জানালা খুলে দিগন্ত পানে তাকিয়ে রইলাম আনমনে…

আগের পর্ব



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.