নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগিং জগতে প্রথম ঢুকলাম...

জীবনের পথে চলা নবীন এক পথিক...

রাফীদ চৌধুরী

জীবনকে সাজাতে চাই সুন্দর বাগিচায়... তাই করি যা মনে চায়... live it love it ENJOY it!!

রাফীদ চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কসমিক সিম্ফোনি... (সায়েন্স-ফিকশান) পর্ব-১৭

২৯ শে জুন, ২০১৭ রাত ১২:০৯



মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছে জিম। কোন অনুভূতি তাকে স্পর্শ করতে পারছে না। এমনকি একটা আংগুল নাড়াবার ক্ষমতাও রইছে না তার মাঝে। আশেপাশে অনেকেই তাকে ঘিরে আছে বুঝতে পারছে সে। কিন্তু কাউকে দেখতে পাচ্ছে না, কিছুই শুনতে পারছে না। এ যেন এক কালিগোলা নিস্তব্ধতার মাঝে আটকা পরে আছে সে অনন্তকাল ধরে।

সময়ের কোন হিসেব সে জানে না। কতক্ষণ ধরে সে এখানে এভাবে পাক খাচ্ছে বুঝতে পারছে না। নিজেকে ছুয়ে দেখতেও পারছে না। যেন তার অস্তিত্ব আছে, কিন্তু তার শরীর আর তার মাঝে নেই। চিৎকার করার চেষ্টা করল সে। কিন্তু শব্দ তৈরি হবার মত কোন কিছুই আর তার মাঝে নেই... কোথায় সে শেষবারের মত ছিল তাও মনে করতে পারছে না সে। কেমন শিরশির করা এক অনুভূতি… যেন কেউ তার অণু পরমাণু পর্যন্ত বিশ্লেষণ করে যাচ্ছে।

মৃদু ফিসফিস শব্দ শোনা গেল। কেউ খুশিতে উল্লাস করছে… আনন্দ! কি আনন্দ! কত জ্ঞান, কত স্মৃতি! তার হাতটা খুলে ফেলে দেই? কিংবা নাকটা খুলে মুখের জায়গায় লাগিয়ে দেই? কিংবা চুলের জায়গায় কাটাওয়ালা শলা বসিয়ে দিব?
ফিসফিসটাকে পাত্তা দিল না জিম, তার শরীর কোনকিছুই অনুভব করতে পারছে না। শুধু মৃদু শিরশির অনুভূতি, আর অসীম শূন্যতা… ঘুম ধরছে তার... অনন্তকালের জন্যে ঘুম।

পঞ্চম মাত্রার একটা অংশ জুরে দিই? দেখি তৃতীয় মাত্রার প্রানী কি প্রতিক্রিয়া দেখায়? ধ্বংস হয়ে যাবে সাথে সাথে? নাকি পঞ্চম মাত্রার মাঝে স্থান পাবে? যাই ঘটুক জ্ঞান লাভ করা যাবে, নতুন কিছু জানা যাবে!

ঘুমে তলিয়ে গেল জিম। কিছুই মনে করতে পারছে না… বনবন করে ঘুরতে লাগলো তার চারপাশ...


****

ধীরে ধীরে চোখ খুলল জিম, উজ্জ্বল আলো হঠাৎ সইতে পারছে না তার চোখ। পিটপিট করলো কিছুক্ষণ। ধবধবে সাদা একটা রুমের মাঝে অবস্থান করছে সে।

একটা স্লিপিং ক্যাপসুলে শুয়ে আছে সে। মাথার সামনের ডিসপ্লেটা নানারকম গুরুত্বপূর্ণ শরীরবৃত্তীয় ইনফরমেশন দেখাচ্ছে। কোথা থেকে যেন মিষ্টি একটা গন্ধ ভেসে আসছে ক্যাপসুলটার ভেতরে।

উঠে বসল জিম, কতক্ষণ এখানে আছে বলতে পারে না। ধীরে ধীরে তার স্মৃতি ফিরে আসছে। অনেক দুর্বল লাগছে তার। মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে যেন ঘুমিয়ে ছিল।

একটা পিরিয়ডিক বীপ-বীপ যান্ত্রিক শব্দ শুনতে পারছে সে। সামনের কোয়ান্টাম কম্পিউটারে তার হৃদস্পন্দন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পুরো ঘরটা উজ্জ্বল সাদা রঙের প্রাধান্য রয়েছে, এমনকি তার শরীরেও সাদা একটা স্যুট পরনে।

দরজার সামনে দাড়ালে হালকা শব্দ করে খুলে গেল সেটা। পাশের রুমে দেখতে পেল তার মিশনের পোশাকটা রাখা আছে। ধুলোবালির কোন ছিটেফোটা নেই। একপাশে তার ক্রায়ো ব্লাস্টারটা রাখা।

মনে করার চেষ্টা করল জিম। ক্রায়ো ব্লাস্টারটা হারিয়েছিল সোলারেক্সের পাওয়ার ইউনিটে… একগাদা তারে আছড়ে পরেছিল, হারিয়ে গিয়েছিল ব্লাস্টারটা…

দ্রুত পোশাক পরে নিল জিম। এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পালাতে হবে। লিও, ইরারা কোথায় আছে ভেবে বেকুল হয়ে উঠল সে। কিরু২ তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তার বাকি টিমের সবার সাথেই করবে…

আশেপাশে জনমানবের কোন চিহ্ন দেখতে পেল না সে। অত্যাধুনিক এক সাবস্টেশন... কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই! লম্বা করিডোর দিয়ে হাটতে থাকল। উপরের উজ্জ্বল সাদা আলোতে চারদিক ঝলমল করছে। একটা কম্পিউটার টার্মিনাল দেখতে পেয়ে থামল। হাইপার ওয়েভে যোগাযোগ করে বুঝতে পারলো গ্যালাক্সির পেরিফেরির একদম শেষপ্রান্তে পৌছে গেছে কোনভাবে। মিল্কি ওয়ের পারসেওস (Perseus) বাহুর একপ্রান্তে আছে সে। এখন পর্যন্ত মানুষ এতদূর ভ্রমণ করতে পারে নি। পৃথিবী থেকে চৌদ্দশো আলোকবর্ষ আর সবচেয়ে কাছের মানুষের অনুসন্ধানকৃত ও বসবাসকারি গ্রহ থেকে দুইশো বাষট্রি এস্ট্রনমিকাল ইউনিট দূরে সে।

চোখে অন্ধকার দেখল জিম। মানব সভ্যতা থেকে এত দূরে সে কিভাবে এসে পরল বুঝল না, আরো আশ্চর্যের ব্যাপার এই সাবস্টেশনটা কিভাবে এতদূরে চলে আসলো? এর মানুষেরা সব কোথায় গেল? এখান থেকে যোগাযোগের মাধ্যম কি তাও বুঝতে পারছে না সে।
হঠাৎ তার পেছনে শব্দ হতে ক্ষিপ্রতার সাথে ঘুরে দাড়ালো জিম। হাতে ক্রায়োব্লাস্টার তুলে সতর্কতার সাথে শব্দটার দিকে আগাতে থাকল। আবারো শব্দটা শুনতে পেলো, একটা দরজার পেছন থেকে আসছে শব্দটা।

ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেলল দরজাটা। ওপাশ থেকে ধাতব একটা হাত নড়তে দেখলো। আলো ফেলতে দেখতে পেল একটা ড্রয়েড তারের জঞ্জালের মাঝে আটকে আছে।

মারবেন না, দোহাই আপনার! চিৎকার করতে গিয়ে থেমে গেল ড্রয়েডটা। হলুদ চোখগুলো তার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। ওহ বাচা গেল! স্বস্থির স্বরে বললো ড্রয়েডটা! কতোদিন পর একটা মুখ দেখলাম! কতোদিন পর! বিশ্বাস করবেন না মাস্টার কতটা খুশি হয়েছি আপনাকে এখানে দেখতে পেয়ে! হাত দিয়ে মোটা একটা পাইপ সরানোর বৃথা চেষ্টা করলো ড্রয়েড। ভালো মতো আটকে গেছে জঞ্জালের মাঝে।

তুমি এই সাবস্টেশনের ড্রয়েড? বাকিরা সবাই কোথায়?

একসময় ছিলাম মাস্টার, ভীত গলায় বলল ড্রয়েডটা। অনেকে ছিল এখানে! আমরা আইরান সিস্টেমে রেঞ্জারশীপদের পরিচালনা করতাম। কিন্তু হঠাৎ করে, কি জেনো হলো!!

কি হলো? আগ্রহ পেল জিম।

মাফ করুন মাস্টার, আমার মেমোরি প্লেটটার কিছু এড্রেস নষ্ট হয়ে গেছে। আমি ঐসব স্মৃতি মনে করতে পারি না। ড্রয়েডটার স্বর আরো ভীত হয়ে গেল।

কিভাবে নষ্ট হয়ে গেল?

জানি না মাস্টার, তৈরির সময় থেকেই আমার সার্কিটে কোন গন্ডগোল ছিল, আমাকে কোন মিশনে নিতে দেয় নি তারা… আমাকে রিজার্ভেশন ইউনিটে ফেলে রাখা হতো। ম্যালো খুব খারাপ ছিল, সে অনেক গোলমাল করেছে! নিজের কপোট্রনে হাত দিয়ে আঘাত করতে লাগল ড্রয়েডটা।

ম্যালো? সে কে? এখানে কি হয়েছে?

আমি মাস্টার, আমি ম্যালো! উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার হলুদাভ সেন্সরগুলো। ম্যালো, ম্যালফাংশন্ড ড্রয়েড! তারা আমাকে এই নামেই ডাকে, মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল ড্রয়েডটা।

জিম তাকালো ম্যালোর দিকে। সাদা রঙের তৃতীয় শেণীর এক ড্রয়েড, কোন কমান্ডারের ব্যক্তিগত সহকারি হিসেবে হয়তো কাজ করতো।

মাস্টার স্যার, আমাকে রিজার্ভেশন রুমে আটকে রাখা হয়েছিল, নিজেকে রিচার্জের জন্যে পাওয়ার ইউনিটের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন হঠাৎ সাবস্টেশনটা একদিকে কাত হয়ে পরে, এসব আমার উপর আটকে যায়! তখন থেকে আমি এখানে আটকে আছি। মানুষ আর কর্মক্ষম সব রবোট বাতাসে মিলিয়ে গেছে, শুধু আমি ম্যালফাংশন্ড ড্রয়েড এখানে রয়ে গেছি! কতবার চিৎকার করলাম, কেউ শোনে না…
ঠিক আছে, উঠে দাড়ালো জিম। আশেপাশে কি কি আছে খুজতে শুরু করল।

মাস্টার স্যার! আপনি কোথায় যাচ্ছেন? আর্তনাদ করে উঠল ম্যালো। আমাকে নিয়ে যান!

তোমাকে আমি কোথায় নিয়ে যাবো? বিরক্ত হল জিম, তৃতীয় শেনীর ড্রয়েডের আমার এমুহুর্তে কোন প্রয়োজন নেই...

দয়া করুন মাস্টার, আমি এ জায়গায় আরো থাকলে শর্টসার্কিট হয়েই মরে যাবো! কাপোট্রনের ভেতর এই নিস্তব্ধতা আর প্রসেস করতে পারছে না! তাছাড়া আমি জানি রেঞ্জারশীপগুলো কোনদিকে আছে! ওগুলো এখনো আছে! ওগুলো নিয়ে আমরা কোথাও চলে যেতে পারবো!

ভেবে দেখলো জিম, প্রস্তাবটা খারাপ নয়। মেটালিক পাইপ ব্লাস্টার দিয়ে উড়িয়ে দিল। জঞ্জালের ফাক দিয়ে বের হয়ে আসলো ম্যালো।
মাস্টার স্যার! আপনি আমার জীবন বাচালেন! ম্যালো সারাজীবন আপনার আদেশ পালন করে যাবে স্যার! আপনি যেদিকে যাবেন ম্যালো সেদিকেই যাবে! আক্ষরিক অর্থে তার পেছন পেছন হাটতে থাকলো ম্যালো।

হয়েছে থামো! ধমকে উঠল জিম। রেঞ্জারশীপের হ্যাঙ্গারের দিকে নিয়ে চল।
মাথা ঝাকালো ম্যালো, দ্রুতগতিতে ছুটতে শুরু করলো সে একটা করিডোর ধরে। আর যাই হোক দ্রুততার সাথে ছুটতে পারে এই ড্রয়েডটা! মাথায় যদিও তার বুদ্ধি বিশেষ কিছু নেই!

করিডোর আর কেবল লিফটে ঘুরপাক খেতে খেতে তারা শেষ পর্যন্ত পৌছাতে পারলো হ্যাঙ্গারের মাঝে। স্পেস পেট্রোলের জন্যে কতগুলো ইন্টার প্ল্যানেট রেঞ্জারশীপ সারিবদ্ধভাবে রাখা আছে। একটা বেছে নিয়ে উঠে পরল জিম, সাথে ম্যালো।

মাস্টার স্যার! আমরা কোথায় যাচ্ছি? আগ্রহের চোটে তার হলুদাভ চোখগুলো চকচক করছে। আপাতত কাছের কোন গ্রহে… যেখানে অন্তত মানুষের দেখা পাওয়া যাবে। ককপিটে চালকের আসনে বসে পরল সে। সেফটি বেল্টটা বেধে চার্ট দেখে কোর্স সেট করলো নভো্যানটার। হিক্টর কন্সটেলেশনের দিকে কোর্স ঠিক করল।

কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল জনমানবহীন সাবস্টেশন থেকে মহাকাশে বের হয়ে এসেছে একটা রেঞ্জারশীপ। হাইপার ডাইভ দিয়ে মুহুর্তের মাঝে অদৃশ্য হয়ে গেল।

আগের পর্ব

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৯:১৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বেশ লাগল!!!

মানুষ তাঁর কল্পনাকে ছাড়িয়ে যাক..

+++

২৯ শে জুন, ২০১৭ রাত ১০:১৬

রাফীদ চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ ভালো লেগেছে বলে। আশা করি বাকি পর্বগুলোও পড়বেন! :)

২| ৩০ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৯:৩৪

পাভেল রহমান সোহাগ বলেছেন: দারুন!খুব ভালো লেগেছে।

৩০ শে জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৩

রাফীদ চৌধুরী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে! :)

৩| ৩০ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:১৫

আলভী রহমান শোভন বলেছেন: আপনার লেখা সায়েন্স ফিকশন গুলো দারুন লাগে। লিখতে থাকুন এমন ভালো ভালো লেখা। অনেক অনেক শুভ কামনা। :)

৩০ শে জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৬

রাফীদ চৌধুরী বলেছেন: আশা করি বাকি পর্বগুলোও পড়বেন। আপনার জন্যেও শুভ কামনা রইল! :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.