নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগিং জগতে প্রথম ঢুকলাম...

জীবনের পথে চলা নবীন এক পথিক...

রাফীদ চৌধুরী

জীবনকে সাজাতে চাই সুন্দর বাগিচায়... তাই করি যা মনে চায়... live it love it ENJOY it!!

রাফীদ চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কসমিক সিম্ফোনি... (সায়েন্স-ফিকশান) পর্ব-২০

১১ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:৩৪



গ্যালাক্সির অন্যপ্রান্তের ঘটনা। ইগল নেবুলার উজ্জ্বল বাহুগুলো থেকে প্রায় দশ আলোক বর্ষ দূরে একটি আইসোলেটেড সোলার সিস্টেমে কিছু মানুষ বসবাস করতে শুরু করেছে। প্রায় কয়েকশো বছর বেন্ডিট আর স্পেস আর্মাডাদের রাজত্ব গুড়িয়ে দিয়ে গড়ে উঠেছে নতুন এক সভ্যতা। পৃথিবী, বিজ্ঞান পরিষদের ধরাছোয়ার অনেক দূরে। শান্তি কামি এক জনগোষ্ঠি সৌরজগতটির চতুর্থ গ্রহটি বেছে নিয়েছে
বসবাসের জন্যে। নীলচে ধুসর এই গ্রহের আকৃতি প্রায় নেপচুনের মত বিশাল। গ্রহটির দশ শতাংশ পর্যন্ত মানুষ জয় করতে পারে নি।

বিপদসংকুল বৈরী এক পরিবেশে প্রত্যেক মুহূর্ত যেন উৎ পেতে আছে মৃত্যুর ছায়া। বিরাট দৈত্যাকার সব প্রাণীদের আনাগোনা চারদিকে। মাঝ রাতে শোনা যায় অদ্ভুত সব গর্জন। কেউ কেউ সাহস করে উপত্যকা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল নিচের দিকে। তাদের অনেকেই আর ফিরে আসে নি। যারা ফিরে এসেছে তারা বর্ননা করেছে অতিকায় এক প্রজাতির ড্রাগনের। লম্বায় তারা দেড়শো ফিটের উপরে, গাঢ় নীল বর্ণের শরীরে অদ্ভূত ছোপ ছোপ দাগ তাদের, সেখান থেকে কষ বেয়ে পরছে। সেই কষ এতই বিশাক্ত যে গাছপালা পর্যন্ত মরে যায়। বিশাল গলা উচু করে যখন তেড়ে আসে দানবগুলো তখন অতি সাহসি লোকেরও আত্মা উড়ে যায়। লোকে এদের নাম দিয়েছে মৃত্যু দানো।

তারপরও এখানে কেন থাকে লোকজন? অদৃশ্য এক বাধনে আটকে পরেছে তারা। আর এখানেই সোলারেক্সের হতভাগ্য অভিযাত্রিদের ঠাই হয়েছে মাথা গোজার। বিজ্ঞান একাডেমি তাদের মারার জন্যে উঠে পরে লেগেছে বোঝার পর থেকেই তারা গ্যালাক্সির আউটার পেরিফেরিতে যাযাবরের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে। সোলারেক্স ধ্বংসের পরে তাদের সিগনাল ইন্টারসেপট করে একটা বাণিজ্যিক জাহাজ। সেটা তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহ ঘুরে তারা শেষ পর্যন্ত হাজির হয়েছে নানতাহু নামের এই গ্রহটিতে।

লিও, হালকা করে ডাকল জেনা। একচালা ঘরের একটা থামে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। সামনের খালি উঠানমত শক্ত মাটিতে

আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল লিও, জেনার ডাকে ফিরে তাকালো।

কি ভাবছো এভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে?

কিছু না, মৃদু হাসল লিও। আজকের মিশনটার কথা চিন্তা করছিলাম আর কি।

এটা যে সত্য না বুঝতে পারলো জেনা। সোলারেক্সের ট্রেজেডির পর কেমন গুটিয়ে গেছে লিও। বিশেষ করে জিম এর মৃত্যুকে সে কোনভাবেই মানতে পারছে না। দলপতি হয়ে তার মিশনটা এভাবে ধ্বংস হয়েছে এর জন্যে নিজেকেই পুরোপুরি দুশছে সে। সবই বুঝতে পারে জেনা। কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলে নি তাকে।

কি হবে আজকে?

অন্য সব দিনের মতই আর কি! একটু এগুলো লিও। একটা ভালো শিকার জুটে গেলে সারা সপ্তাহ আর চিন্তা করতে হতো না।

আমি আসবো? মৃদু কণ্ঠে বলল জেনা। যদিও জানে জবাবটা কি হবে।

ওদের আইন তো জানো, কাষ্ঠ হাসল লিও। মেয়েরা শিকারে অংশ নেয় না। ওদের আইন মানতে হবে।

হু, আড়চোখে তাকালো লিওর দিকে। অনেক পরিবর্তন এসেছে তার মাঝে। আগের চঞ্চল লিডার আর নেই সে। লম্বা চুল তার কাধ পর্যন্ত পড়ছে, সাথে হালকা দাড়িতে চেনাই যাচ্ছে না লিওকে। ফেশিয়াল রিকগনিশন করা না পর্যন্ত বিজ্ঞান একাডেমির কেউ চিনতে পারবে না তাকে। এখানকার ঢোলা আলখাল্লায় দারুণ মানিয়েছে তাকে। মনে হয় কল্পনার কোন ইয়ন, যার ক্ষমতার সমকক্ষ নয় কেউই, কিন্তু কথায় হবে সে প্রচন্ড বিনয়ি… একজন সত্যিকারের ইয়ন!

হের লিও, পেছন থেকে একটা ভারি গলা শোনা গেল। একজন বলিষ্ঠ স্থানিয় বাসিন্দাকে দেখা গেল। তার শরীরেও একই ধরনের আলখাল্লা পড়নে। কিন্তু তারটা হলুদ রঙের। মাথাটা পুরোপুরি কামানো সুঠাম দেহের অধিকারী একজন নিরহংকার মানুষ।

সময় হয়ে গেছে। আপনি তৈরি? জেনার দিকে চোখ পড়তে মাটির দিকে চোখ নামিয়ে নিল। এখানকার মানুষেরা অপরিচিত নারীদের সাথে কথা বলা বিব্রতকর বলে মনে করে।

হ্যা আমি তৈরি নুহা। চলো যাওয়া যাক! হাল্কা জেনার দিকে হেসে পথ বাড়ল লিও।

সাবধাণে থেকো, আনমনে বিড়বিড় করলো জেনা। চোখ তার হাতের দিকে, যেখানে ট্রিনিটি উজ্জ্বল আভা হয়ে জ্বলছে।


*******

নানতাহু গ্রহের সর্দার একজন বয়স্ক ভদ্রলোক, প্রায় একশোর মত বয়স। তিনিই অভিযাত্রিদের এই গ্রহে আশ্রয় দিয়েছেন। মাঝে মাঝেই লিও তার বাসায় গিয়ে আলাপ করে, এখানকার জীবন সম্পর্কে ধারণা নেয়। সর্দারও তার সহচার্য খুশি মনেই নিয়েছেন। তার বাসাটা অন্য সবার কুড়ের চেয়ে একটু উপরে টিলামতো জায়গায়। চারদিকে মশালের আলোয় আলোকিত। স্থানিয় কাঠের শক্ত বেড়ার মাঝে দিয়ে মশাল উজ্জ্বল আলোকিত হয়ে আছে। শুধুমাত্র তার বাসাতেই দুটো গৃহস্থলির কাজকর্মে পারদর্শি পুরোনো ড্রয়েড আছে। তো শিকারে যাবার আগে তার বাসার সামনে জমায়ত হল ছোট্র একটা গ্রুপ। সবচেয়ে সাহসি ও দক্ষ মানুষেরাই যায় শিকার করতে। তাদের মাঝে লিওও আছে।

তাহু জনপদের যোদ্ধারা বিশাল বর্শাকৃতির একপ্রকার অস্ত্র হাতে সজ্জ্বিত হয়ে আছে। এসব অস্ত্রের নাম অ্যাসেগাই। অবিকল দেখতে আদিম আমলের বর্ষার মতো। কিন্তু এদের মাথায় একটা করে জেমস স্টোন বসানো। জেমস স্টোন থেকে ছোট ছোট নীলাভ আলোক রশ্মি বেরিয়ে আসে। এই জেমস স্টোনগুলো এখানকার প্রধান খনিজ সম্পদ, হৃদ, খালবিল, বড় পাথরের নিচে এসব প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। আরেকটা জিনিস এখানকার অন্যতম প্রধান খনিজ সম্পদ, তা হচ্ছে খনিজ তেল।

সামনে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ ভাষণ দিলেন সর্দার রামেদিস। যোদ্ধাদের উদবুদ্ধ করে তুললেন। এরপর যোদ্ধাদের প্রধানের হাতে একটা রত্নখচিত আসেগাই তুলে দিলেন। মশালের আলোতে ঝলমল করে উঠল সেটা।

আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো। দল বেধে অভিযাত্রীরা উপত্যকা বেয়ে নিচের দিকে নামতে শুরু করলো। দলটিতে বিশজনের মত যোদ্ধা আছে, এদের মাঝে কিছু মানুষ মশাল ধরে আছে। পাহাড়ের শেষ সীমানায় কাঠের বেড়া টপকানোর পর দড়জাটা লেগে গেল। ঘন জংগলের মাঝে প্রবেশ করলো দলটি। পেছনে পরে রইলো নিরাপদ তাহু গ্রাম।

ঘন জঙ্গলের মাঝে দিয়ে হাটছে অভিযাত্রিরা। দূরের একটা খরস্রোতা নদী থেকে পানির কুলকুল ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। যতোটা সম্ভব কম শব্দ করে চলা সম্ভব চেষ্টা করছে তারা। মশালগুলো নিভিয়ে ফেলা হয়েছে। তাদের প্রধান লক্ষ্য টাতারা নামের প্রাণী শিকার করা। টাতারা রা কাদামাখা জমিতেই বিচরণ করতে পছন্দ করে। নদীর পাশে ঘেসো বালিয়ারিতে দলবেধে থাকে। নুহা হঠাৎ হাত দিয়ে ইশারা করলো, একটা টাতারা দলকে দেখতে পেয়েছে তারা।

ঘাসের মাঝে বুক হেটে অতি সপর্ণে ঘিরে ফেলল তারা। রাতের বেলা এই প্রাণিরা ঠিকমত দেখতে পারে না। কিন্তু এদের শ্রবণ শক্তি অসাধারণ। কিন্তু তাহু যোদ্ধারাও জানে কিভাবে এগুতে হবে। কোন শব্দ হলো না। চারদিকের ঘেরাওটা ক্রমে ছোট হতে থাকল। দেখা গেল একটা পাথরের ঢিবির পাশে দশ বারোটার মত টাতারা বসে আছে। দলের প্রধানটা মাথা উচু করে কিছু শোনার চেষ্টা করলো।

একটু অপেক্ষা করলো তারা, এরপর নীল রশ্মিতে আলোকিত হয়ে উঠল রাতের আকাশ। চিৎকার করে ছুট লাগালো টাতারার দল। আগে থেকেই তারা টার্গেট করে রেখেছিল প্রাণিগুলোকে। তাদের দিকে ছুটে গেল আলোক রশ্মি। লিওর হাত থেকে ইবোনির তীক্ষ্ণ আলোক রশ্মি ছুটে গেল একটা টাতারার দিকে। মোক্ষম আঘাত, কাদার দলা ছড়িয়ে মাটিতে মুখ থুবড়ে পরল সেটা।

দেখা গেল ৩ টে প্রাণিকে ফেলতে পেরেছে তারা। একটা ফেলেছে লিও আর বাকি ২ টা তাহু যোদ্ধারা। যা ভেবেছিল তার থেকে অনেক কম। যোদ্ধা প্রধান কুটের ভ্রু কুঞ্চিত হল। আনাড়ির মত শুকনো ডালে পা পারেছিল এক তরুণের, তাতেই প্রাণিগুলো আগেই বিপদ সম্পর্কে টের পেয়ে গেছে।

মশালধারিদের কয়েকজন টুকরো করতে বসে গেল। বাকিরা অন্য টাতারাদের খোজার জন্যে ট্রেক করতে পথ ধরলো। দিশেহারা হয়ে এদিক সেদিক ছুটে বেড়াচ্ছে প্রাণিরা। তাদের পায়ের ছাপ দেখে দেখে এগুচ্ছে অভিযাত্রির দল। ঝোপঝারের ভাঙ্গা ট্রেক ধরে ধীরে ধীরে এগুতে থাকল। তাড়াহুড়ো করলে আবারো দেখে ফেলতে পারে প্রাণিরা তখন আবারো পালাতে পারে।

হের আপনার অস্ত্রটা তো দারুণ! ফিসফিস করে বলল তরুণ এক যোদ্ধা। চকচক করছে তার চোখগুলো। বিজ্ঞান পরিষদের উন্নত অস্ত্রের কথা শুনেছি বটে কিন্তু প্রথম নিজের চোখে দেখলাম।

হাসলো লিও। আসলেও এখনকার অস্ত্রের তুলনা হয় না।

কোন স্টোন আছে এর মাঝে? আকবেরি, লোটে নাকি এম্বার স্টোন?

এটি একটি এটমিক ব্লাস্টার, এটাতে কোন স্টোনের প্রয়োজন হয় না। মৃদু হেসে তরুণটিকে আরো হতবাগ হতে দিল লিও।

ও! বিস্ময়ের সীমা রইলো না তরুণটির। আর ওটাও কি একই রকম? পিঠের উপর ঝোলানো আইভোরিকে দেখালো সে।

ওটা আরো দুরের লক্ষ্যের জন্যে। এটার নাম আইভোরি। পিঠ থেকে নামিয়ে লক অফ করতেই মৃদু গুঞ্জন করে অটো লোড হলো অস্ত্রটা। এটার রশ্মি লাল রঙের।

মুগ্ধ হয়ে আইভোরির দিকে তাকিয়ে আছে তরুণ যোদ্ধাটি। হের আমার নাম হিতান। আপনার সাথে পরিচিত হয়ে নিজেকে গর্বিত বোধ করছি।

হাসল লিও। সহজ সরল তাহু তরুণটিকে পছন্দ হলো তার।

তোমরা কেন আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করো না?

আমাদের অ্যাসেগাই থাকতে আর কিছুর প্রয়োজন হয় না। গর্বের সাথে তার বল্লমটি বাগিয়ে ধরলো হিতান। এখানে আকি স্টোন, লোটে স্টোনের স্বর্গরাজ্য বলতে পারেন। এগুলোর চালনার কারিগর আছে আমাদের, বিদ্যেটুকু তারা জানে। কাউকে অবশ্য জানায় না তারা। নিজেদের পন্ডিত ভাবে, একটু হাসল হিতান। কিন্তু তাদের বিদ্যেটা কি তা আমি জেনে ফেলেছি।

কিভাবে জানলে। কৌতুহল হল লিওর।

আমি হের আগে ছিলাম একজন পন্ডিতের সহকারি। জ্বলন্ত চুল্লির আগুন জ্বালানো, পরিচালনা করাই ছিল আমার কাজ। ওখানে থাকতে আমি দেখেছি, কিভাবে জেমস স্টোনগুলোর আকরিক থেকে খাটি পাথরে পরিণত করা হয়। খনিজ তেলের সংস্পর্শে তাদের উত্তেজক জ্বালানীতে পরিণত পরা হয়।

হঠাৎ ভাবনা এলো লিওর মাথায়, তাহলে হিতান কেন যোদ্ধা হতে গেল? জিজ্ঞেস করতে যাবে এমন সময় নুহা সংকেত দিল থামবার।
সবাই ঘাসের মাঝে ডুব দিল, সামনে কিছু একটা হয়েছে। ঘন জঙ্গলটা এত ঘন হয়েছে এখানে যে দুই ফুট সামনে কি আছে আচ করা যাচ্ছে না। এতক্ষণ জীব জন্তুর হালকা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল কিন্তু এখন একদম নিঝুম হয়ে আছে গোটা বন।

অত্যন্ত সতর্কতার সাথে আগে বারতে থাকল অভিযাত্রিরা। এই দুর্গম গ্রহে প্রকৃতির হাতের দাশ এখানকার জনমানবগুলো। হাতে আইভোরি তুলে নিল লিও। চোখ তার সামনের দিকে।

হঠাৎ নিঃশব্দতা খান খান হয়ে গেল একটি টাতারার আর্তনাদে। পাহাড়ের মাঝে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে এল মূমুর্ষু চিৎকার। যেন জ্যান্ত টাতারাটিকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলা হয়েছে। পেছনে শোনা গেল চাপা গর্জন!

সর্বোনাশ! মৃত্যু দানো! ভিষণ ভয় পেয়ে গেল তাহুরা। নিশ্চিৎভাবে মৃত্যুদানো। ফিসফিস করে উঠল তারা। চলুন ফিরে যাই।

মৃত্যু দানো না ছাই! রেগে গেল কুট। হয়তো খাড়ি থেকে পরে গেছে। ৩ টে মাত্র টাতারা নিয়ে সর্দারের সামনে মুখ দেখাবে কি করে? তার
বিশস্থ সাহসী যোদ্ধাদল এক টাতারার আর্তচিৎকারে কাবু হয়ে ফিরে এসেছে? সামনে বাড়ো সবাই! প্রচন্ড ধমক লাগালো সে।

তার কথায় কাজ হলো। ব্যাজার মুখে সামনে বাড়লো যোদ্ধারা। কিন্তু চোখমুখ থেকে ভয় কাটছে না।

আরো আধ ঘন্টা সামনে এগুনোর পর প্রমাণ মিললো। কোন টাতারা খাড়ি থেকে নিচে পড়ে যায় নি। বরং নদীর তীরে পাথরের স্লাইটের উপর উলটে পরে আছে। মাথা থেকে অর্ধেকের দেখা মিলল কেবল, বাকি অর্ধেক কেউ চিড়ে ফালাফালা করে ফেলেছে।

মৃত্যুদানো! কোকাতে থাকল বর্বর তাহুরা। টাতারার মৃতদেহের কাছে ঝুকল লিও। ধর থেকে পেটের দিকের হাড়-মাংশ সব তীক্ষ্ণভাবে কেটে আলাদা করে ফেলা হয়েছে। যেই কাজটা করেছে বলার অপেক্ষা রাখে না সে কতটা শক্তিধর…

চাপা গর্জন কানে আসতে পিঠের শিরদাড়া কেপে উঠল লিওর। বুঝতে পারলো কি ঘটতে যাচ্ছে, ইবোনির দিকে হাত বাড়াতে গিয়েও সময় পেলো না আর, ছিটকে উড়ে গিয়ে আছড়ে পরল নদির মাঝে পাথরের আস্তরণে।

কঠিন পাথরের মাঝে ঠুকে গেল তার মাথা। কিছুক্ষণ যেন ভারি গুঞ্জন শুনতে পেল মাথার ভেতর। ঝাপসা চোখে যা দেখলো তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হল তার। রক্তাক্ত চোখে বিশাল এক চোখা মুখ তাকিয়ে আছে তার দিকে। হা করা মুখটার ভেতর দেখা যাচ্ছে তীক্ষ্ণ দাতের সারি। হতভাগা টাতারার এ দশা কিভাবে হয়েছে বুঝতে বেগ পেতে হলো না।

এই সেই অতিকায় ড্রাগন, যার স্থানিয় নাম দিয়েছে মৃত্যুদানো। বিশাল মাথাটা বের করে খাড়ির পাশে টাতারার পরে থাকা বাকি অংশ খেতে শুরু করলো। শরীরটা তখনো ঘন জঙ্গলের আড়ালে রয়েছে।

ড্রাগনটা হয়তো কিছু করতো না কিন্তু সব নষ্ট হয়ে গেল হিতানের জন্যে। কিছু বোঝার আগেই তার হাতের অ্যাসীগাই থেকে নীল আলোর ঝলক ছুটে গেল ড্রাগনটার দিকে, পেট বরাবর আঘাত করলো সেটা। তীক্ষ্ণ আর্তচিৎকার করে উঠল দানবটা, পরক্ষণে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় ছুটে গেল তাহুদের দিকে।

কিছু বোঝার আগেই লেজের বারিতে তাহু যোদ্ধারা ছিটকে পড়ল এদিক সেদিক। চিৎকার, আর্তনাদ আর মুহুর্মূহু অ্যাসেগাই থেকে নির্গত রশ্মি রাতের আকাশকে ভারি করে তুলল। নদীর মাঝ থেকে অসহায় চোখে দেখল লিও কিভাবে বিশাল প্রাণীটা তাহুদের আক্রমন করে যাচ্ছে…

আর সহ্য হলো না তার। আইভোরি বের করে ধীরে লক্ষ্য স্থির করলো সে। অপেক্ষাকৃত ভোল্টেজ বাড়িয়ে টিপে দিল ট্রিগার।
প্রচন্ড গর্জন বেরুলো ড্রাগনটির গলা চিরে। অ্যাসেগাই এর আলোর ঝলকে দেখতে পেল গলার কাছটা ফেড়ে গেছে ড্রাগনের। নীলাভ কষ বেয়ে পড়ছে সেখান থেকে। হিতানই কোনভাবে ছিল ড্রাগনটির সবচেয়ে কাছে, কিছু বোঝার আগেই তার গায়ে ঝরনার মত ড্রাগনের কষ ছড়িয়ে পরলো। পরক্ষনেই মাটিতে লুটিয়ে পরলো সে।

লিও কিছু বুঝে উঠার আগেই ড্রাগনটা তাড়া করলো তার দিকে। পেছনে সবার অ্যাসেগাই এর খোচা পাত্তাও দিচ্ছে না, চার পায়ে দৌড়ানো শুরু করলো লিওর দিকে। কোনভাবে উঠে দাঁড়িয়ে উল্টোদিকে ছুট লাগালো লিও। একবার পিছনে তাকিয়ে দেখলো জ্বলজ্বল চোখে হিংস্র ভঙ্গিতে তার পেছনে ছুটে আসছে সেটা।

দানবটার পায়ের আঘাতে লিওর চারদিকে রিভার বেসিনের পাথরগুলো উড়ে পরছে। একটা পাথরের চাকতি পিঠে পরতে মুখ থুবড়ে পরে গেল লিও। ভোতা একটা ব্যাথা ছড়িয়ে পরলো তার বা কাধে। কোনমতে চিৎ হয়ে ইবোনি হাতে আনলো সে, দানবটার অতিকায় ছায়া তাকে পুরোপুরি ঢেকে দিয়েছে, এখনি তার দিকে মুখটা বাড়াবে এমন সময় টিপে দিল সে ট্রিগার। ড্রাগনের চোয়ালের নিচ থেকে খুলি ছিদ্র করে রশ্মিটা ছুটে গেল আকাশের দিকে।

ঘড়ঘড় আওয়াজ করে মুখ থুবড়ে পরতে লাগলো সেটা। মুখ থেকে ফোয়ারার মত কষ বের হচ্ছে। শেষ চেষ্টায় একদিকে কাত হয়ে সরে পরলো লিও, কিন্তু পিঠের যেখানে চোট খেয়েছে সেখানেই এক পাথড় বিধে গেল।

চোখে ঝাপসা দেখল লিও কিছুক্ষণ, তারপর জ্ঞান হারিয়ে পরে রইল নিঝুম বনের মাঝে।

রিভার বেসিনের পাথুড়ে নদীর মাঝে পাশাপাশি পরে রইলো লিও আর সাথে মৃত্যুদানোর নিশ্চল মরদেহ।


আগের পর্ব

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুলাই, ২০১৭ ভোর ৬:২৪

মোশাররফ হোসেন সৈকত বলেছেন: শেষ?

১২ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:০১

রাফীদ চৌধুরী বলেছেন: নাহ এখনো আরো বাকি আছে। ৩৫ পর্বের মত হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.