নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগিং জগতে প্রথম ঢুকলাম...

জীবনের পথে চলা নবীন এক পথিক...

রাফীদ চৌধুরী

জীবনকে সাজাতে চাই সুন্দর বাগিচায়... তাই করি যা মনে চায়... live it love it ENJOY it!!

রাফীদ চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কসমিক সিম্ফোনি... (সায়েন্স-ফিকশান) পর্ব-২৪

৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:৩৭



জিম! আমাদের বাচাও জিম! আমাদের মেরে ফেলবে! জিম!

ইরার চিৎকার শুনে ফিরে তাকালো জিম। ভয়ার্ত চোখে চারদিকে তাকিয়ে আছে সে। আশেপাশে তাকাচ্ছে কিন্তু কাউকে দেখতে পাচ্ছে না।

জিম! আবার ডাকল ইরা, কোথায় তুমি! গলা কাপছে তার, লম্বা সোনালী চুলগুলো লেপ্টে আছে তার গালের সাথে। এদিকে ওদিকে ফিরে তাকাচ্ছে, চোখে আতঙ্ক ভর করেছে তার।

হাহা! নিষ্ঠুর হাসি শোনা গেল পেছন থেকে। ছায়া থেকে কিরু২ বের হয়ে এলো। তুমি কি ভাবছ জিম তোমাকে বাচাতে আসবে? তোমাকে? বোকা মেয়ে! তোমাকে কেউ বাচাতে আসবে না।

উপর থেকে লালচে এলার্মের আলোটা থেকে থেকে জ্বলছে, তার মাঝে জিম দেখতে পেল মাটিতে পরে আছে ইরা, তার মাথায় ব্লাস্টার ধরে আছে কিরু২, ট্রিগারে আঙ্গুল চাপা।

ইরা! বুক থেকে গভীর হতাশা বের হয়ে আসল জিমের। চিৎকার করে তার নাম ডাকতে থাকল জিম, কিন্তু ইরা তার কথা শুনতে পারছে বলে মনে হচ্ছে না।

তোমার জিম আর কোন দিনও ফিরে আসবে না! কঠিনভাবে হাসছে কিরু২। সে তোমাকে বাচতে দেবে না! কখনোই না!

জিম! ভেঙ্গে পরল ইরা। তুমি আসবে বলেছিলে… দু চোখদিয়ে পানি ঝরে পরছে তার। তুমি আমাকে বাচাবে বলেছিলে!

জিম ছুটে ইরার দিকে যেতে চাইল, কিন্তু অদৃশ্য কোন দেয়াল যেন ইরা আর তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।

হেসে চলছে কিরু২, তার বিদঘুটে হাসির শব্দ বেড়েই চলছে। ভয়ঙ্কর শোনাচ্ছে তার হাসিটা। ব্লাস্টারটা সোলারেক্সের পেনেলের দিকে ঠেকালো এক মুহুর্তের জন্যে, এরপর ট্রিগার চেপে দিল। বিষ্ফোরণের ধাক্কায় সোলারেক্সের গ্লাস উইন্ডো ভেঙ্গে উন্মুক্ত মহাকাশে মিলিয়ে গেল।

মাথার উপর কর্কশ শব্দের সতর্ক সংকেত বেজে চলছে, লাল আলোটা তীব্রতর হতে লাগল।

ইরা শেষ মুহুর্তের জন্যে জিমের দিকে হাত বারিয়ে দিল, চোখে অজস্র আকুতি, পরক্ষণে ফাকা গ্লাসউইন্ডো দিয়ে মহাকাশে হারিয়ে গেল।
কর্কশ সাইরেনটা বেজেই চলছে…

জিম!!

চোখ খুলতে চারদিকে মানুষের ঘেরা মুখ অনুভব করতে পারল জিম। সবাই তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। মাথার উপর একটা এলার্ম সারাক্ষণ বেজেই চলছে। কোনভাবে চেয়ারে সোজা হয়ে বসল।

তোমার হঠাৎ কি হয়েছে? তার দিকে ঝুকে এলো চিফ, তুমি জার্ম নিস্কাশনের দরজা আজকে পার হও নি?

কিছু বুঝতে পারল না জিম কিছুক্ষণের জন্যে। সোলারেক্সের ভূতুরে লালচে আলো আর ইরার আর্তচিৎকারের স্মৃতি এখনো মনের মাঝে ভাসছে তার। তারপর মনে পরল সবকিছু, নিজের অফিসরুমে ঘুমিয়ে পরেছিল সে।

জিম! আবার ঝাকি দিল তাকে চিফ। কি হয়েছে তোমার! মেডিকেল চেক আপ মনে হচ্ছে লাগবে তোমার।

কিছু হয়নি আমার চিফ। কাষ্ঠ হাসল জিম। আমি ঠিকই আছি।

তাহলে হঠাৎ করে তোমার রূমে ভাইরাস আক্রমণ করল কিভাবে? তুমি কি জার্ম ওয়াশ নাও নি আসার সময়?

আস্তে আস্তে অনেক কিছু পরিষ্কার হলো জিমের, মাথার উপর এলার্মটা ভাইরাস ডিটেকশন সেন্সর থেকে আসছে। তারমানে এই রূমে ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে কোন কারণে। কিন্তু সে তো এই নিউক্লিয়ার রিয়েক্টরে ঢুকার আগে জার্ম নিস্কাশনের দরজা পার হয়েই এসেছে। তার কাছ থেকে তো ভাইরাস ছড়ায় নি।

অদ্ভুত চোখে তার দিকে তাকালো চিফ। তুমি আজকে বাসায় চলে যাও, রেস্ট নিয়ে পরের দিন থেকে কাজ শুরু কর।

কথা না বাড়িয়ে অফিস থেকে বের হয়ে এলো জিম। বুকের মাঝে কিসে আঘাত করছে যেন তার। একটা স্বপ্ন, স্বপ্নটা তাকে নাড়িয়ে দিতে থাকল। ইরা… তাকে বাচাবার জন্যে বারবার আকুতি করছিল… জিম কিচ্ছু করতে পারে নি তার জন্যে…

প্রচন্ড বেদনাবোধে আক্রান্ত হলো জিম। দিশেহারা হয়ে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করল আশেপাশে, এরপর বাড়ির পথ ধরল।

****

হাইপার ডাইভ! দাত মুখ খিচে চিৎকার দিল ফ্লেন! হাইপার ডাইভের প্যানেলটা কোথায়!! এটা তো এখানেই থাকার কথা! ঠোট কামড়ে ধরেছে সে, হাত শক্তভাবে নেভিগেশন হুইলে বসানো।

আমি কি জানি হতচ্ছাড়া! সমান তেজে চিৎকার করে উঠল ক্লব। আমি কি জীবনে ট্রুপারশীপ চালিয়েছি? ডেকের আয়নিক ক্যাননগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে সে। এটা পাইরেটদের শীপ ইডিয়ট! এখানে তোদের বড়লোকদের হাইপারডাইভের প্যানেল থাকবে না!

অবশ্যই থাকবে! উল্টোদিকে নেভিগেশন হুইলটা মুচরাতে মুচরাতে বলল ফ্লেন! স্পেসের দোহাই, এখানে হাইপার ডাইভের ইগনেশন আছে কিন্তু প্যানেল থাকবে না? কালো একটা গিয়ার দেখিয়ে বলল সে। একে বেকে কাটিয়ে নিচ্ছে শীপটাকে। পেছন থেকে ফুলঝরির মত লেসার ছুটে আসছে তাদের দিকে।

হয়তো ছিল এককালে! পেছনের দিকে ফিরে চেচালো রুনিন, এটা পাইরেটদের শীপ নরকের কীট, হয়তো ছিল এখন খুলে ফেলে দিয়েছে, তাদের শীপে তারা যা কিছু করে রাখতে পারে… পেছনে সেও কতগুলো আয়নিক ক্যাননের গোলা ফায়ার করে চলছে।

তাদের প্ল্যানটা ঠিক ছিল, কিন্তু শুধুমাত্র একটা আর্মাডার শীপ ভেবে নেয়া ছাড়া! তারা ভেবে নিয়েছে আরমাডারা একটা ট্রুপারশীপ দিয়েই ট্রান্সপোর্টশীপটায় আক্রমণ করেছে, কিন্তু দেখা গেল তাদের ধারণা সত্যি নয়!

এখন তাদের পেছনে তিনটা ট্রুপারশীপ তাড়া করছে!

ট্রান্সপোর্ট শীপটার উলটো পাশে আরো দুটি ট্রুপারশীপ নিয়ে পাইরেটরা যে অপেক্ষা করছিল তা চিন্তাও করতে পারে নি ফ্লেন। পাগলের মত জাহাজটার নিয়ন্ত্রণ রাখতে চেষ্টা করছে সে।

সার্বি! চিৎকার দিল সে। কন্ট্রোল হুইলটা ধর!

আমি কেন! একচোখে ভ্রু নাচালো সার্বি, তুমি কোথায় যাচ্ছ?

কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কেবিন থেকে বেড় হয়ে এল ফ্লেন, হাইপার ডাইভের ইগনিশন গিয়ারটা থেকে যে সকল তার বের হয়েছে তা অনুসরণ করে চলতে থাকল।

কোন দুঃখে, মাথা চাপড়াচ্ছে ক্লব, স্পেসের অতর্কিত উঠে আসা উল্কাদের দোহাই, কেন আমরা এই নির্বোধের কথা শুনে পাইরেটদের ট্রুপারশীপ দখল করতে এসেছি! এখন মরবো সবাই!

চুপ কর! ধমক লাগালো ফ্লেন, মনে মনে দ্রুত হিশেব করছে, সেন্ট্রাল কম্পিউটার ছাড়া নিজে নিজে চতুর্থমাত্রার ট্রেজেক্টরি হিশাব করার চেষ্টা করছে সে। চোখের সামনে দিয়ে নীল রঙের ধাধানো লেজার চলে গেল, অল্পের জন্যে শীপটার সাথে ছোয়া লাগল না।

আর দেরি করলো না ফ্লেন, নেভিগেশন কেবিনটাতে ঢুকে পরল। সবাই শক্ত হয়ে বস! আমরা হাইপার ডাইভ দিচ্ছি! কালো লিভারটা নিচের দিকে নামিয়ে দিল সে।

কিছুক্ষণ কিছুই ঘটল না, এরপর থরথর করে কেপে উঠল প্রাচীন ট্রুপারশীপটা। আশেপাশের সবকিছু ঝাপসা হয়ে গেল চতুর্থমাত্রায় প্রবেশ করল তারা। ফ্লেনের মুখে হালকা হাসি ফুটে উঠতে উঠতেই সেটা মিলিয়ে গেল।

হঠাৎ তীব্র আলোর ঝলকানিতে চোখ ধাধিয়ে গেল তাদের। গ্লা্সউইন্ডো ভেদ করে তাদের শরীর পুরিয়ে দিতে থাকল যেন আগুনের হল্কায় চামড়া জ্বলে যাচ্ছে। কোনভাবে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে পেল জিনিসটাকে ফ্লেন, তাতে তার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল।

তারা যেখানে হাইপার ডাইভ থেকে বের হতে চেয়েছিল তার বহু আগেই তৃতীয় মাত্রায় বেরিয়ে গেছে শীপটা। তাদের চোখের সামনে জ্বলছে এই কন্সটেলেশনের সবচেয়ে কুক্ষ্যেত তারকা রেইজেল দ্য ব্লু হাইপার জায়ান্ট!

***

সন্ধ্যা বেলায় ম্যালোকে নিয়ে বের হলো জিম, তার বাড়ির কাছেই এক ড্রয়েড স্পেশালিস্ট আছে দেখে এসেছে, এখন তার কাছে নিয়ে যাচ্ছে তাকে।

যদি ম্যালোকে সহ্য করতে হয় তাহলে তাকে ঠিক করা ছাড়া বিকল্প নেই।

মাস্টার স্যার আমরা কোথায় যাচ্ছি? ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে থাকল ম্যালো।

একটু পরেই দেখতে পাবে, দড়জা খুলে একটা ছোট দোকানে ঢুকে পরল সে। পুরো দোকানটা জঞ্জালে ভরা, মাথার উপর কতগুলো তাকে ভারি বস্তায় ঠাসা, বোটকা দুর্গন্ধ আসছে তা থেকে। ডেস্কের নিচে এক ছোকড়া পিছু ফিরে কাজ করছে, হাতে একটা ময়লা ন্যাকড়া।

কি চাই? পেছনে থেকেই বলল সে।

দোকানে কেউ নেই? আমি এই ড্রয়েডটার মেমোরি ঠিক করাতে চাচ্ছি, তোমার মালিক কখন আসবে?

মালিক? কাষ্ঠ হাসি হেসে পেছনে থেকে ফিরল ছেলেটা, বড়বড় বাদামি চুল চোখগুলো ঢেকে রাখছে। আপাতত আমাকেই পাবে।

মেমোরি? ভয়ার্ত আর্তনাদ শোনা গেল ম্যালোর গলা থেকে, মাস্টার স্যার দোহাই লাগে আমার মেমোরি নষ্ট করবেন না! আমার কপোট্রন ঠিক আছে…

এটাই তাহলে সমস্যা? একটা মনোপড হাতে নিয়ে ম্যালোর দিকে ইশারা করলো ছেলেটা। কথা বলে বেশি?

মাস্টার আমি আপনার সেবায় নিয়োজিত! তাড়স্বরে চেচাচ্ছে ড্রয়েডটা। আপনাকে প্রত্যেকদিন সকালে আবহাওয়া, রেডিয়েশন সম্পর্কে জানিয়ে দেই আমি, খাবার তৈরি করে দেই তারপরও আমাকে কেন মেরে ফেলছেন…

তোমাকে কেউ মেরে ফেলছে না, বিরক্ত গলায় বলল জিম। তোমার মেমোরি ঠিক করে দিবে।

তুমি ড্রয়েড মেকানিক? অবাক চোখে তাকালো জিম। কিশোর একটা ছেলে, স্কুল পড়ুয়া বলেও চালিয়ে দেয়া যাবে।

বড় কাউকেই খুজছ তাই তো? কাষ্ঠ হাসি দিল ছেলেটা। ভাবছ আমি কি পারব নাকি?

না মানে… ড্রয়েডটার মেমোরিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, একই কথা প্রতিদিন বলতে থাকে, বুদ্ধিমত্তার খুবই অভাব আছে এর মাঝে, শেষবার আমাকে বলেছিল এর মেমোরির এড্রেসপ্লেটটার হেক্সাডেসিমেল কোডগুলো বদলে যাওয়ায় সে অনেক কিছুই মনে করতে পারছে না…

দেখতে পারি ড্রয়েডটাকে? হাত বাড়ালো ছেলেটা। ম্যালো মুখ খুলে মাস্টার বলতে যাবে তার আগেই তার কিল সুইচটা টিপে দিল ছেলেটা। ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পরে গেল ম্যালো।

কয়েকটা ড্রাইভার দিয়ে দক্ষ হাতে কপোট্রন খুলে ফেলল ছেলেটা, কানে বিশাল মিউজিক প্যাচ লাগিয়ে রেখেছে। আনমনে দোকানটা দেখতে লাগল জিম। বড়বড় লোকাল রকস্টারের হলোগ্রাফিক ডিসপ্লে আটকানো দরজার উপরে, হয়তো ছেলেটা এদের ফ্যান। ডেক্সটার উল্টোপাশের দরজা দিয়ে অন্ধকার একটি ঘর দেখা যাচ্ছে, সেখানেই হয়তো ছেলেটা থাকে।

তুমি কি একাই এখানে থাকো?

হিলিক্স কন্সটেলেশনের এজাক্স গ্রহাণপুঞ্জে সবাই একা থাকে, জ্ঞানি মানুষের মত এক চোখ তুলে জবাব দিল ছেলেটা, একটা ড্রাইভার ঘুরিয়ে সার্কিটবোর্ডটা খুলে এনেছে সে। অদ্ভুত! তৃতীয় শ্রেণীর ড্রয়েডের সার্কিটবোর্ড আগে কখনো দেখি নি। আনমনে শীষ দিয়ে উঠল। কোয়ান্টাম কেপাসিটরের কোন ব্যাপারই নেই… শুধুমাত্র কিছু গেইটের কারসাজি… ইন্টারেস্টিং। এড্রেস প্লেটটা পালটে দিয়ে আবার ম্যালোকে জুরে দিল সে। আশা করি এখন সে ভদ্র ড্রয়েডের মতই ব্যবহার করবে… বুট আপ করলো ম্যালোকে।

ম্যালোর হলুদ চোখদুটো ড্যাবড্যাব করে জ্বলে উঠেই নিবে গেল, থেকে থেকে কাপছে।

কি হলো? ঝুকে এল জিম, ঠিক হয় নি?

দাড়াও, অবাক হয়ে ম্যালোর দিকে ঝুকল ছেলেটা, অদ্ভুত! এমনটা আগে কখনো দেখি নি! মেমোরি এড্রেসটা…

কি হয়েছে? উত্তেজিত হয়ে উঠল জিম, ম্যালোর হলুদ চোখদুটো জ্বলছে নিভছে, তার কপোট্রন এদিক ওদিক থেকে থেকে নড়ছে।

মেমোরি প্লেটটা… নতুন যেটা দিলাম বদলে… সেটার এড্রেসগুলোও পালটে গেছে… আগেরটার মত… কি অদ্ভূত! আবার ম্যালোর কপোট্রন খুলে ফেলল সে। ভেতর থেকে মেমোরি এড্রেসটা বের করে আনল, আগের পুরোনো মেমোরি এড্রেসটার সাথে মিলিয়ে দেখল।
দেখো! উত্তেজনায় কাপতে থাকল ছেলেটা। নতুন মেমোরি এড্রেসটাও পালটে গেছে, একেবারে পুরোনোটার মত!

এটা কিভাবে সম্ভব! হতবাগ হয়ে গেল জিম। নতুন এড্রেসটাও কিভাবে পালটে গেল?

জানি না, অদ্ভূত স্বরে বলল ছেলেটা। তবে এই ড্রয়েডটার এই এড্রেসটাতে একটা ম্যাসেজ রাখা আছে… দাঁড়াও, আমি বের করে আনছি…

একটা হলোগ্রাফিক ডিসপ্লে ম্যালোর নষ্ট মেমোরির চিপের সাথে সংযোগ করল সে। ডিসপ্লেটা কাস্ট করে দিল উজ্জ্বল পর্দার দিকে।

হাল্কা একটা অবয়ব দেখা গেল হলোগ্রাফিক স্ক্রীনে,ধীরে ধীরে ঘুরে দাড়ালো লোকটা। তুষাঢ় সাদা একটা স্যুট তার পরনে। কাধ পর্যন্ত ধুসর সাদা চুল নেমে গেছে তার। মাথায় একটা হ্যাড-কেপ পরনে। গাঢ় ধুসর উজ্জ্বল নিষ্ঠুর চোখগুলো যেন তার ভেতর পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছে।

জিম! পাথরের মত শক্ত তার মুখমন্ডল। তোমাকে অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। পৃথিবীর সার্থে, মানবজাতির স্বার্থে। তোমার উপর অর্পিত দ্বায়িত্ব তোমাকে পালন করতে হবে।

ঢোক গিলল কিশোর ছেলেটা, এই লোকটা কে? হাত কাপতে থাকল তার… তু…তুমি কি চেন তাকে?

অদ্ভূত চোখে তার দিকে তাকালো জিম… কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।

হ্যা তোমাকেই বলছি, মৃদু হাসি খেলে উঠল হলোগ্রাফিক স্ক্রীনটাতে। তুমি জিম, সোলারেক্স মিশনের হতভাগ্য এক অভিযাত্রী, কসমিক এনটিটিরা তোমাকে ধরে নিয়ে যায়, তুমি জেগে উঠেছ একটা পরিত্যাক্ত সাবস্টেশনে পারসেউস বাহুতে। ম্যালো নামক এক তৃতীয় শ্রেনির ড্রয়েড তোমার সাথে এখানে নিয়ে এসেছে…

তুমি এসব কিভাবে জানো? গর্জে উঠল জিম! তুমিই বিজ্ঞান একাডেমির লোক? তুমিই কি আমাদের শেষ করার জন্যে এসেছ? বৃথা চিৎকার করল হলোগ্রাফিক স্ক্রীনের দিকে, জানে হলোগ্রাফিক স্ক্রীনের বার্তাটা আগেই রেকর্ড করা, তার কথা শুনতে পাবে না লোকটা।

কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে লোকটা মাথা নাড়ল, যেন তার কথা সে শুনতে পেয়েছে।

আমি সব জানি, গর্বভরে বলল লোকটা। দুপাশে হাতদুটো হালকা বাড়ালো। আমার কাছ থেকে কেউ কিছু লুকাতে পারে না। বিশ্বাস করতে পারো আমি তোমাদের ধ্বংসের কারণ নই, বরং নতুন বিশ্বের সূচনা সৃষ্টির পথ তৈরি করতে এসেছি আমি। কঠোর হয়ে গেল তার চেহাড়া।

তোমাকে অগ্রদূতকে খুজে বের করতে হবে… প্রফিসিতে এটাই বলা আছে। তুমিই একমাত্র পারবে তাকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে, যেমন তুমি তাকে নিয়ে এসেছিলে পবিত্রভূমিতে… অথবা তুমিই হবে ধ্বংসের কারণ।

কি বলছ এসব! চিৎকার করে উঠল জিম! হাত মুঠো হয়ে গেল তার। কে তুমি! কি চাও আমার কাছে! আড়চোখে দেখল ছেলেটা মেঝের এক কোণে পরে রয়েছে, নিজের হাটু জরিয়ে কাপছে, কোনভাবেই থামনে পারছে না।

বন্ধ করো! কাপা কাপা গলায় বলল সে। দোহাই বন্ধ কর!

নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে জানো, লোকটার গলা যেন বরফের ফাটলের শব্দের মত গভীর। নিজেকে চেন, তোমার মাঝেই রয়েছে সেই অদ্ভূত ক্ষমতা! তুমি খুজে বের করতে পারবে অগ্রদূতকে, এই বিশ্বকে নিয়ে যেতে পারবে অন্ধকার থেকে আলোর পথে।

ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল তার কণ্ঠস্বর, উজ্জ্বল সাদা আলো বিচ্চুরিত হতে থাকল হলোগ্রাফিক স্ক্রীন থেকে, উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে আলোর তীব্রতা…

না! ঠান্ডা একটা স্রোত নেমে গেল জিমের মাঝে দিয়ে। আবার কখনো এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখবে কল্পনা করতে পারে নি কখনো।
মৃদু গুঞ্জন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, তার কানের মাঝে যেন ভারি কিছু ক্রমাগত নারিয়ে দিচ্ছে। দুহাতে কান চেপে ধরল জিম, চোখ বন্ধ করলো, কিন্তু সাদা আলোর বিচ্ছুরণ একটুও কমল না। চিৎকার করে মেঝেতে পরে গেল জিম। তার আগেই জ্ঞান ফেলেছে।

আগের পর্ব

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৩৫

কিশোর মাইনু বলেছেন:

৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:০৭

রাফীদ চৌধুরী বলেছেন: :| :|

২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫৮

নীল আকাশ বলেছেন: এক টানা সব পর্ব পড়লাম । এখানে এসে ঠেকে গেলাম। বাকি পর্ব কই ? অপেক্ষায় থাকলাম ।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০১

রাফীদ চৌধুরী বলেছেন: কিছুদিন ধরে লিখা জমে আছে, সময় হয়ে উঠছে না। তাছাড়া রেসপন্স তেমন পাইনা আর এখন তাই লিখার আগ্রহও তেমন হয়ে উঠে না। কিছুদিনের মাঝেই পোস্ট দিব আশা করি। মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ! :)

৩| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৫

নীল আকাশ বলেছেন: কিছুদিন নয় তাড়াতাড়ি দিন। অর্ধেক কোনো কিছু পড়ে বসে থাকবো নাকি ? সায়েন্স ফিকশন লেখা সবাই লিখতে পারে না। আপনি লেখা প্লিজ বন্ধ করবেন না। আর কেউ না পড়ুক আমি পড়বো। কথা দিলাম।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৩৯

রাফীদ চৌধুরী বলেছেন: এই বইটার আরো ১৫ অধ্যায়ের মত এখনো বাকি আছে। তাও আবার প্রথম বইটার। ইচ্ছে আছে আরো দুইটা বই এই ইউনিভার্স নিয়ে লিখার। আরো জটিল করে তোলা হবে প্লট, সবই মাথায় আছে কিন্তু লিখার সময় আর পাচ্ছি না। আপনার কথা রেখে এই সপ্তাহের মাঝেই আরেকটা পর্ব নিয়ে হাজির হব! সাথেই থাকবেন আশা করছি :)

৪| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৫২

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:১১

রাফীদ চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ! আশা করি সব পর্বই পড়বেন! :)

৫| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:১৩

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: পড়ার ইচ্ছা আছে ... দেখা যাক । :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.