নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ার আগ্রহ আছে আমার। সেটা থেকেই মাঝে মাঝে লিখতে ইচ্ছা করে। যদিও আমি ভাল লিখি না তবে চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নাই।

রাফিদ হাসান পলাশ

মানুষের জ্ঞানের পেয়ালা কখনো সম্পূর্ণ নয় আর একেবারে শূণ্যও নয়। তাই তৃষ্ণা মেটানোর সাধনায় ক্লান্তির অবকাশ নেই।

রাফিদ হাসান পলাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনাহুত

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৩৮


একটা অস্ফুট আওয়াজ আছে বাতাসের। কানের কাছে তার এসে মনের কথা বলে যায়। সবসময় সে কি বলছে বোঝা যায় না। মাঝে মাঝে শোনাও যায় না। অনেকে আমাকে বলেছে এসব শুনতে নাকি সেরকম মন থাকতে হয়, সেই শব্দ শোনার কান থাকতে হয়। এসব মিথ্যা মনগড়া কথা, মানুষেরই তৈরি। এসব কথা আমিও একসময় বিশ্বাস করতাম আর ভাবতাম-যারা প্রকৃতির ভাষাকে বুঝতে পারে, তারা কতই না অনুভূতিপ্রবণ, অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ। কিন্তু আজ কেন যেন মনে হল প্রকৃতি সবার সাথেই কথা বলে। কেবল অন্য সব কথা আর চিন্তার কোলাহলে সেই মৃদু সুললিত ধ্বনি হারিয়ে যায় ; আর তাকে খুজে পাওয়ার চেষ্টা যেন হাজারো নক্ষত্রের আকাশে কোন এক নাম না জানা নক্ষত্রকে খুজে ফেরার মত।
আরো হাজার বছর আগে এই বাতাসের ডাকে অনেক জোর ছিল। মানুষের জীবন ছিল অনেক সহজ সরল, মনের ছবি চোখে যে হ্রদ হয়ে ভেসে উঠত তার জল ছিল স্বচ্ছ, নির্মল, নিষ্কলুষ। ঠিক আমার গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়ার মত। তার বুকে প্রাণের স্পন্দন শোনা যেত। বর্ষায় সেই করতোয়া দক্ষ মাঝিকেও দিশাহারা করে দিত। আজ সেই করতোয়ার তীরে দাড়িয়েই আমি বাতাসের সুরে কান পেতে আছি। কিন্তু আমার সামনে সেদিনের করতোয়া আর নেই। যে আছে সে শীর্ণ কোন জোলা হবে, তাকে করতোয়া বলা যায় না।
আমার বাড়ি করতোয়ার তীরে; কিন্তু জন্মের পর থেকেই আমি শহরে বড় হয়েছি। কালেভদ্রে গ্রামে যেতাম একটু বিশ্রাম নিব বলে, একটু আকাশটা দেখব বলে। সন্ধ্যের বাতাসে ভেজা ঘাসের গন্ধ শুকে যখন মুঠোভর্তি জোনাকি হাতে হাটু মুড়ে বসব, পরিষ্কার মেঘমুক্ত আকাশে তারার মেলায় হারিয়ে যেতে মন চাইবে। বাতাস ভারি করে রাখা ঝিঝির ডাক চিরে ভেসে আসবে অল্পদূরে কোন গৃহস্থের বাড়ি থেকে ক্লান্ত গবাদি পশুর ডাক। আস্তে আস্তে সব বাতি নিভে যাবে, ঘরে ঘরে নেমে আসবে শুনশান নীরবতা। বুকে আমার নেমে আসবে অপূর্ব শান্তির ছায়া আর আমি ভাবব- এই মুহুর্তগুলো যদি চিরকাল স্থায়ী হত!!
কিন্তু হয়না। কিছুই তো আর চিরস্থায়ী হয় না। সেই করতোয়া যেমন আজ নেই, আকাশ ভরা তারাও আজ দেখা যায় না। গ্রামের নির্মল বাতাসে মিশছে শহর থেকে আমদানি করা যানবাহনের ধোয়া। টিনের চালে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ আজ অনুভূতি জাগায় না, গৃহকর্তার মনে শহুরে বাড়ির মত পাকা ছাদ করার বাসনা যোগায়। গৃহিণীরা আর কুটুম এলে বড় মোরগটা জবাই দিতে বলে না, বাজার থেকে ফার্মের মুরগি আনতে বলে। আন্তরিকতাটাও কমে গেছে আগের চেয়ে। তবে জমিজমার কোন্দলটা আগের মতই আছে। আগে তাও মুখে আর লাঠিসোটায় সমাপ্তি হত কিন্তু এখন কোর্টকাচারি ছাড়া যেন খেলাটা জমেই না। অবশ্য এক্ষেত্রে জয়ীপক্ষের কোন পরিবর্তন হয়নি আগের থেকে। শোষিতরা আজীবনই শোষিত। আর আরেকটা জিনিস! এখন নিশুতিরাতেও আগের সেই শুনশান নীরবতাটা পাওয়া যায় না। সবই হিন্দি বাংলা নাটক-সিরিয়ালের কল্যাণ। তাই আমগাছতলায় সেই মামদোভূত আর শাকচুন্নীর গল্প শুনে জড়সড়ো হওয়া ছেলেবূড়োর কথা এখন গল্পের বইতেই শুধু পাওয়া যায়, বাস্তবে না।
কিছু অর্জন করতে হলে কিছু বিসর্জন দিতে হয়। উন্নয়নের অর্জনে না হয় প্রকৃতিকেই বিসর্জন দিলাম। আমরা ভাবি, আরে ও তো অবলা। কিন্তু প্রকৃতি কি আসলেও অবলা নাকি আমাদের অত্যাচারে তার কন্ঠ এতই ক্ষীণ যে হয়তো তার ডাক আমরা শুনি না। অনাহুত আমি হয়ত ওর ডাক শুনতে এসেছিলাম- তাকে তো কোথাও পেলাম না। বোধহয় সে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাতে আমাদের কি? আমরা তো সুখেই আছি!!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি দুবার এসেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.