![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সালটা ১৯৯০, দুটি কলেজ পড়ুয়া মেয়ে লখনউ থেকে দিল্লি হয়ে আমেদাবাদ চলেছে দীর্ঘ ট্রেন সফরে। অসম থেকে যে ট্রেনে তারা দিল্লি সফর করছে সেই ট্রেনের একই বগিতে দুজন সাংসদ ও তার কিছু সাঙ্গোপাঙ্গরা ছিলেন৷ সেই সাঙ্গোপাঙ্গদের মদ্যপান ও অভদ্র আচরণে ভয়ে সিঁটিয়ে কোনক্রমে দিল্লি পর্যন্ত আসে মেয়েদুটি। সারা রাতের ওই ট্রমা কাটাতে না পেরে ওই দুটি মেয়ের একজন দিল্লিতেই নেমে যায়৷ অন্য একজন দিল্লি থেকে আমেদাবাদের ট্রেন ধরে৷ ভাগ্য পরীক্ষা নেওয়ার মুডে থাকলে সব জিনিস ঘাঁটে। এই দ্বিতীয় মেয়েটির সঙ্গেও সেরকমই হওয়া শুরু হয়৷ যদিও দিল্লিতে আরএক বান্ধবী তার সঙ্গে যোগ দেয় আমেদাবাদ যাওয়ার জন্য৷ এই দুটি কলেজ পড়ুয়া মেয়ে দিল্লি আমেদাবাদ ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর সংরক্ষিত কামরার জন্য টিকিট কাটে যা ওয়েটিং-এ থেকে যায়৷ টিকিট পরীক্ষককে পরীক্ষার কথা বলে কোনক্রমে প্রথম শ্রেণীতে উঠে একটু দাঁড়ানোর সুযোগ পায় মেয়ে দুটি৷ কিন্তু ভাগ্যের কমেডিতে তারা যে বগিতে ওঠে তাদের সামনের সিটে দু'জন সাদা পাঞ্জাবী ও খদ্দরের কোট পরা লোক আগেই তাদের সংরক্ষিত আসনে বসেছিল। টিটিই জানায় এই দু'জন লোকাল পলিটিসিয়ান, মাঝে মাঝেই যাতায়াত করেন৷ এর আগের ট্রেনের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে মেয়ে দুটি ভয়ে কুঁকড়ে যায়৷ যদিও ততক্ষণে তাদের চমকে দিয়ে ওই দুই ব্যক্তি তাদের সংরক্ষিত আসনের একপ্রান্তে সরে যায় মেয়ে দুটি বসবার জায়গা দিয়ে৷ ইতস্তত করে দু'জনে বসেও পড়ে৷ এরপর কথাবার্তা শুরু হয়, ভারতের ইতিহাস, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির মৃত্যু, হিন্দু মহাসভা থেকে একাধিক বিষয়ে ওরা চারজনে আলোচনা করে৷ ওই দুই পলিটিসিয়ানের একজনের বয়স ছিল ৪০ এর দোরগোড়ায় একজনের বয়স ছিল ৪০ এর উপরে৷ অপেক্ষাকৃত কম বয়সী পলিটিসিয়ানটি মেয়ে দুটিকে বলেন,
আপনারা এত পড়াশুনা করেছেন, দেশের ইতিহাস নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা রয়েছে আপনাদের রাজনীতিতে আসা উচিৎ, এতে দেশের ভালো হবে৷ এরপর তারা চারজন খাওয়াদাওয়া সারে ট্রেনের প্যান্ট্রি থেকে৷ এসময় টিটিই এসে জানায়, ট্রেনে প্রচুর ভিড় কোনভাবেই সে এই মেয়েদুটির জন্য কোনও বার্থের ব্যবস্থা করতে পারেনি৷ তখন অলরেডি অনেকটা রাত, দিল্লি থেকে ট্রেনও অনেকটা বেরিয়ে এসেছে৷ স্বাভাবিকভাবেই মেয়ে দুটি আবার চিন্তায় পড়ে, সিট ছেড়ে উঠে যেতে থাকে কারণ ওই দুই পলিটিসিয়ান তাদের সংরক্ষিত বার্থে ঘুমোবেন৷ ঠিক এখানেই একটা চমৎকার ঘটনা ঘটে। দুই পলিটিসিয়ান নিজেদের ব্যাগ থেকে দুটি চাদর বের করে দুটো বার্থের মাঝের জায়গাতে পেতে ফেলে এবং ঘুমিয়ে পড়ে, নিজেদের সংরক্ষিত আসনগুলি দুটি মেয়েকে দিয়ে।
পরদিন সকাল হয়, আমেদাবাদ ঢোকার আগে মেয়েদুটিকে ওই বেশি বয়স্ক পলিটিসিয়ানটি বলেন,
- তোমরা এখানে নতুন, চাইলে আমার বাড়িতে থাকতে পারো, পরীক্ষা দিয়ে ফিরে যেও।
অপেক্ষাকৃত কম বয়স্ক পলিটিসিয়ানটি বলেন,
- আমার তো নিজের বাড়ি নেই, আমি এখানে ওখানে থাকি, তবে আপনারা চাইলে ওঁর আতিথেয়তা নিতে পারেন, এই শহরে এর চেয়ে সেফ আর কিছুই নেই।
দুই পলিটিসিয়ানের ব্যবহারে মুগ্ধ মেয়ে দুটির প্রথম মেয়েটি যে লখনউ থেকে যাত্রা শুরু করেছিল, সে ডাইরি বের করে দুজন পলিটিসিয়ানের নাম লিখে নেয়,
৪০ ঊর্ধ্ব ভদ্রলোকটির নাম ছিল- শঙ্কর সিং বাঘেলা। আর চালচুলোহীন হয়েও দেশের এক বোনের জন্য ট্রেনের বগিতে সিটের মাঝে শুয়ে পড়া ভদ্রলোকটির নাম - নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী।
এই পুরো গল্পটি The Hindu পেপারে
A train journey and two names to remember
Of two co-travellers নামে প্রকাশ করেছিলেন এই দুটি মেয়ের একজন, লিনা শর্মা৷
(২)
২০০৫ সাল, একজন ৫৪ বছরের ভারতীয়ের আমেরিকার নিউইয়র্ক যাওয়ার কথা ছিল৷ উদ্দেশ্য? ইন্দো-আমেরিকান একটি সম্মেলনে বক্তব্য রাখা৷ সেই সময় জর্জ ডব্লিউ বুশের সরকার তাঁকে আমেরিকায় প্রবেশের অনুমতিই দেয়নি৷ এরকম তো কতই হয়ে থাকে, তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক ভারতীয়দের সঙ্গে! ভারতীয়দের উপর অত্যাচার, ডিপোর্ট করার গল্পও আকছার পড়ি আমরা খবরে৷ পড়ি, কিছুক্ষণ রাগ দেখাই, হা-হুতাশ করি তারপর ভুলে গিয়ে আবার আমেরিকার রঙ্গিন জীবনের স্বপ্নে মশগুল হই৷
কিন্তু ভারত তো ভারতই, আর কিছু ভারতীয় থাকে যাদের কাজ শিকাগো শহর হোক কিংবা নিউইয়র্কের গেট ঠিক খুলিয়ে নেয় সম্মানের সঙ্গে৷ এই ৫৪ বছরের ভারতপুত্রও সেই ধাতুতে গড়া।
সাল ২০১৪, গল্পটা পাল্টে দিয়েছিলেন সেদিনের সেই ৫৪ বছর বয়সী ভারতপুত্র৷ ২০১৪-তে আমেরিকা জানিয়েছিল 'ভিসা' টিসা বাদ দিন আপনি এলেই আমাদের ভালো লাগবে৷
(৩)
২০০২ গুজরাটে হওয়া সংঘর্ষের পর মোদী বিরোধী সবচেয়ে বড় প্রচারের প্রধান হোতাদের একজন হলেন জাফর সরেশওয়ালা, যিনি মৌলানা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ছিলেন। শুধু দেশে নয় বিদেশেও মোদীবিরোধী প্রচারের পুরোভাগে ছিলেন এই জাফর। বিশ্বে মোদীর ছবি সাম্প্রদায়িক হিসেবে তুলে ধরার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদানটিই সম্ভবত এঁরই ছিল৷ জাফর নিজের মতো মোদী বিরোধী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন, নরেন্দ্র মোদী নিজের মতো কাজ৷ মোদী তখন গুজরাটে সম্পূর্ন শান্তির কথা বলছেন৷ এই জাফর আবার মহেশ ভাট্টের বন্ধু ছিলেন৷ একদিন তাঁরা অনেকে মিলে ঠিক করলেন
জাফর মুসলিমদের প্রতিনিধি হয়ে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন এবং তাঁর চোখে চোখ রেখে বলবেন, ' পিস ক্যাননট কাম উইদ্যাউট জাস্টিস'। যোগাযোগের চেষ্টা হল, মোদী সময়ও দিলেন৷ কিন্তু জাফর গেলেন চাপে পড়ে, কারণ এত বছর ধরে টিভি চ্যানেল, রাস্তা, জনসভায় বিদেশে মোদীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে কড়া ভাষায় সমালোচনাগুলোতো জাফর-ই করে এসেছেন, অতএব বেশ চিন্তায় পড়লেন জাফর! কিন্তু বন্ধুদের আশ্বাস ও নিজের সাহসে ভর করে দেখা করলেন মোদীর সঙ্গে৷
একটি সাক্ষাৎকারে জাফর সরেশওয়ালা জানিয়েছিলেন যে তিনি ভেবেছিলেন মোদীর মতো একজন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে সময় তো দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু বড়জোর দু'পাঁচ মিনিট কথা বলবেন৷ তারপর তাঁরা বেরিয়ে চলে আসবে। তাই মোদীর সঙ্গে দেখা হতেই জাফর প্রথম প্রশ্ন করেন,
- আপনি বলুন আমাদের জন্য কতটা সময় রয়েছে আপনাদের কাছে।
উত্তরে মোদী বলেছিলেন,
- যতক্ষণ না আপনার সব প্রশ্ন শেষ হয় এবং তার উত্তর আমরা কাছ থেকে আপনি পান, ততক্ষণ আমরা কথা বলব।
ভাবুন সামান্য ফেসবুকে আমাদের মতের বিরোধী কমেন্ট করতে দেখলে আমরা চিরদিনের জন্য কোনও মানুষকে ব্লক করে দিতে দু'বার ভাবি না। অথচ যে লোকটা সেই মুহূর্তে দেশে ও বিদেশে মোদীর সবচেয়ে বড় সমালোচক তাঁকে পাশে বসিয়ে তাঁর প্রশ্ন শুনছিলেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী, গুজরাট যাঁকে নরেন্দ্র ভাই মোদী নামেও চেনে৷ ওই ঘটনার পর থেকেই মোদীফ্যানদের তালিকায় জাফর সরেশওয়ালার নামটাও উপরের দিকেই থাকে৷
(৪)
২০১৬ যেন জ্যৈষ্ঠ রোদের মাস ভদ্রলোকটির জন্য। উরিতে ভারতীয় সৈনিকদের ক্যাম্প আক্রমণ করে হত্যা করল জ ঙ্গি রা৷ সারা দেশ তখন সমালোচনার তীরে বিঁধতে ব্যস্ত ভদ্রলোকটিকে৷
কোথায় তোমার ৫৬ ইঞ্চির ছাতি? কখন দেবে জঙ্গিদের উচিৎ শিক্ষা? হেঁ হেঁ হেঁ, লজ্জা থাকলে গদি ছাড়ো। চুপ করে থাকলেন ভদ্রলোক৷ সমুদ্রের তলদেশের মতো চুপ, ভূমিকম্পের আগমনী বার্তার মতো চুপ, কালবৈশাখীর আসার মতো চুপ!
ঘটনার ঠিক ১১ দিন পর পাকিস্তানের সীমান্তে ঢুকে রাতারাতি স ন্ত্রা স বা দী লঞ্চপ্যাডগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল ভারতীয় সেনার বিশেষ বাহিনী! এবং প্রথমবারের জন্য বিশ্বের তাবড় তাবড় শক্তিশালী দেশগুলো চুপচাপ থাকল এই ইস্যুতে।
বিরোধীরা বলল, মিথ্যে কথা, ওসব কিছুই করেনি। প্রমাণ দাও? ভিডিও ফুটেজ কই?
ভদ্রলোক এবারেও মুচকি হেসে নিজের কাজে মন দিলেন।
সময় গেয়ে উঠল,
কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন|
মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সঙ্গোহস্ত্বকর্মণি||
পুনশ্চঃ
রাজনীতি তো অনেক পরে গুরুদেব। আপনার জীবনটাই তো একটা বই, উপন্যাস, যে বই আমাদের শেখায় গণতন্ত্রে নিম্নমধ্যবিত্ত বাড়ির অনামি ছেলেটিও দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন৷ ভীষণ আগ্নেয়গিরির মাঝে থেকেও আপনি বরফ শীতল, আবার কৈলাশের মাইনাসেও আপনি প্রখর রোদের দাবদাহ৷ প্রতি মুর্হূতে আপনি শিখিয়ে যান কিভাবে ফিরে আসা যায়, কিভাবে ফিরে আসতে হয়। আপনার তুলনা শুধু আপনিই গুরুদেব৷
শুভ জন্মদিন গুরুদেব, প্রণাম নেবেন নরেন্দ্র ভাই দামোদরদাস মোদী।
লিখলেন শেখর দা।
২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৭
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
কলিকাতার মানুষজন এক সময় ভারতের বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবে গণ্য হতো এখন তারা গেছো, হনুমান, হিন্দু মৌলবাদীদের পুজনীয়।
৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০০
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
বিশ্বের বিষাক্ত লোকজন: পুটিন, শি জিনপিং, নেতানিয়াহু , ট্রাম্প, কিম জং, মোদী, আয়াতোল্লাহ, এরদেগান
৪| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০২
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
আমেরিকা মোদীর ভিসা বন্ধ করেছিলো জাফরের কথায় নয়, হনুমানের মগজে কলা ও ময়লা আছে।
৫| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৬
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
গুজরাটের কসাইকে আমেরিকা চিনে, বিশ্ব চেনে; আজকের ভারত ধর্মীয় উন্মাদনায় ভুগছে; আপনি বালছাল পোষ্ট লিখে উহা মুছতে পারবেন না, হনুমান।
৬| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৭
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
৭৫তম জন্মদিনে ট্রাম্পের বড় লাথি রইলো উহার জন্য।
৭| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৭
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এবার রিটায়ার করে ফেলুক।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৭
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: ১ নং পড়েছি।