নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেই রকম পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি যেখানে সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখা হবে। যেখানে থাকবে না কোন পাপ পঙ্কিলতা।

ইসিয়াক

সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই।

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেয়েটি

৩০ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ১১:৩৭



মেয়েটি খুব কিউট ।কী সুন্দর করে যে তাকায় ।মনটা ভালো হয়ে যায়।
-কী নাম তোমার মা?
-জবা কুসুম।
-জবা কুসুম মানে কী বলোতো?
-তোমার কী মনে হয় আমি জানিনা ।
হঠাৎ ওর বাবা ধমকে ওঠে।কী হচ্ছে কী কুসু?
-ওহ সরি আমি জানি বড়দের সম্মান দিতে হয়।সরি টীচার আই এ্যাম এক্সট্রীমলী সরি।
-ওকে।
-আমার নামের মানে বলতে হবে তাইতো।
-হু
-আচ্ছা এটা কী ভর্তি ইন্টারিভউ ?
-না না তোমার মতো কিউট মেয়ের ইন্টারিভউ লাগে নাকি। কত এক্সপার্ট তুমি।আচ্ছা তুমি কোন ক্লাসে এডমিশন নিতে চাও?
-কেন আমার ভতি ফরমে তো লিখেছি।
-তাই তো ।
আমাদের স্কুলে প্লে ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলো মেয়েটি। আর সেই রকম মেধাবী ।
আমার সাথে খুব খাতির । বছর দুই ছিলো মনে হয় ।আমার ও ঠিক মনে নেই।এর পর অনেকদিন চলে গেছে।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু রোডে নতুন এক ছাত্রকে পড়াতে গেছি ।শীতের এক শেষ বিকেল।
ভাবী বেশ আপ্যায়ন করলেন ।দিলখোলা মানুষ।সাধারণত আমি বাসায় পড়াতে গেলে গম্ভীর হয়ে থাকি ।কি দরকার এত আলাপের ।মানুষের সাথে বেশী মিশে গেলে সমস্যা আছে ।আমার অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে, আর আজকাল তো শিক্ষকদের মনে করে ভাড়াটে কাজের লোক।অনেক সময় অনেকের অনেক কমেণ্টে বেশ কষ্ট লাগে।
যাহোক একটু বাদেই একটি ফুটফুটে চেহারার ১৪/১৫বছরের মেয়ে ট্রে ভর্তি খাবার নিয়ে এলো। আমি পড়াচ্ছিলাম।
হঠাৎ সে বলল "আস সালামু আলাইকুম টীচার কেমন আছেন"
কাজের লোকের মুখে স্পষ্ট উচ্চারনে আমি তো বেশ অবাক ।
আমি বললাম ওয়াআলাইকমুস সালাম।
মেয়েটি কিছু একটা বলতে চাইলো মনে হয়।ভাবী ওকে খাবার রাখতে বলে হাতের ইশারায় চলে যেতে বললেন।
সেদিনের মতো পড়িয়ে চলে এলাম।
প্রতিদিন ই পড়াতে যাই । এটা সেটা দিতে হলে মেয়েটি আসে । রায়হান বেশ অগোছালো টাইপের ছেলে । কলম ,পেন্সিল রাবার বই কোনটাই সে গুছিয়ে রাখতে পারোনা।
যখন ই সে রায়হানের প্রয়োজনীয় উপকরণ দিতে আসে ,আমি অনেক খেয়াল করে দেখেছি মেয়েটি আমার দিকে কেমন করে জানি তাকায় । কখনো কখনো মনে হয় কিছু একটা বলতে চায় ।
একদিন রায়হানের কি একটা বই দিতে এসে সে দাড়িয়ে রইলো । মুখে যেন অনেকটা কষ্ট লেগে আছে।
-কিছু বলবে ?
মেয়েটি মাথা নাড়ল ।
- না ।
-তোমার নাম কি ?
-টিচার আমাকে চিনতে পারেননি ?
আমি অবাক হলাম ।
- তোমাকে কি আমি চিনি ?
- আমি জবা কুসুম ।
আমি খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম । জবা কুসুম !!! কদম তলা ।
-হ্যাঁ টিচার । আপনি ভালো আছেন ?
বিষ্ময়ে আমি হতবাক । জবাকুসুম এখানে ! কিভাবে সম্ভব ?
সে চুপ করে গেল । কিন্তু চোখে মুখে ফুটে ঊঠল নির্মল বেদনার ছাপ । চোখ ছল ছল হতে সে হেটে চলে গেল । আমি তাকিয়ে রইলাম ।
কি হয়েছিল মেয়েটির ? ওর তো এই অবস্থানে আসার কথা না । আমি হিসাব মেলাতে পারছিলাম না ।
তারপর বেশ কিছুদিন কেটে গেছে । আমিও কাজের ভীড়ে ভুলে গেছি ওর কথা ।আর কেন জানিনা এর পর আর জবাকুসুম আমার সামনে আসতো না ।
একদিন কথায় কথায় ভাবীর সাথে ওর প্রসঙ্গ ঊঠলো।
জানতে পারলাম এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ।
ওর বাবা ছিলো এক সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা আর মা ছিলো সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা । অনেক সুখে আহ্লাদে ওদের জীবন কেটে যাচ্ছিল বহতা নদীর মতো । হঠাৎ মর্মান্তিক এক সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় ওর বাবা আর মা । জবা তাদের একমাত্র মেয়ে । বাপের কূলে তার কেউ নেই মায়ের দিকে নানা নানী বেঁচে আছে ।মেয়েটি পেল নানা বাড়িতে আশ্রয় । অনেক সুখ সাধ কাটছাট হলেও দিন কাটছিল ভালোই । কিন্তু হঠাৎ এক রাক্ষসের নজর পড়ল মেয়েটির দিকে ।সম্পর্কে মামা হয় । সুযোগ বুঝে ভোগ করতে থাকে । কিছুদিন পর মামা এবং তার বন্ধুবান্ধব দ্বারা ধর্ষিতা হয় জবা ।.................।
এরপর ঘটনা সামান্য ।আবারো বাস্তুচুত্য হয় জবা । অনেক ঘাট ঘুরে মেয়েটি আশ্রয় পায় ভাবীর কাছে...।ভাবীর দূর সম্পর্কের আত্মীয় হয় জবা।
আমি ভাবতেই পারছিলাম না কিছু ।এটা কেমন করে হয় ?
পৃথিবীটা এত নিষ্ঠুর কেন ? এর পর জবা আর কোনদিন আমার সামনে আসেনি।
কি কারণে যেন ওই টিউশনিটা ছেড়ে দিয়েছিলাম ।আর যোগাযোগ করা হয়নি ।পৃথিবীর মানুষের নিষ্ঠুর আচরন গুলো মাঝে মাঝে আমাকে খুব কষ্ট দেয় । আমরা নিজের সামান্য আনন্দের জন্য কত না মানুষের জীবন নষ্ট করে ফেলি ।
মেয়েটি এখন কোথায় আছে কে জানে ! হয়তো অনেক কষ্টে আছে । যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক । সৃষ্টিকর্তার কাছে এই টুকু ই প্রার্থনা।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৪

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: মন খারাপ হয়ে গেলো ভাই। জীবনের এমন গল্প আমি সবসময়ই এড়িয়ে চলি, পড়তে চাইনা, শুনতে চাইনা।

৩০ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৩:০৩

ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:০৭

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: মনটাই খারাপ হয়ে যায় :( এমন জবা দেশে কত আছে
অথচ কত মেধাবী থাকে ওরা

৩০ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৩:০৩

ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ৩০ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৪:৪১

নজসু বলেছেন:




মন খারাপের গল্প।
জবা কুসুমেরা এভাবে পূজার অর্ঘ্য হয়ে ওঠে।
তিলে তিলে শেষ হয়ে যায় নরপিশাচ রাক্ষসদের লোলুপতায়।

৩০ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৮:০৬

ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ৩০ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:১১

রাজীব নুর বলেছেন: মেয়েটি নাম কি?

৩০ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৮:০৫

ইসিয়াক বলেছেন: জবা কুসুম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.