নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেই রকম পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি যেখানে সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখা হবে। যেখানে থাকবে না কোন পাপ পঙ্কিলতা।

ইসিয়াক

সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই।

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্য পৃথিবী

২৬ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:০০


জামিলাবিবির খুব ক্ষুধা পেয়েছে।ক্ষুধার জ্বালায় তার চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে আসছে।আগে অনেকটা সময় সে ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে পারতো ইদানিং ক্ষুধা লাগলেই তার চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে আসে।মাথার মধ্যে ঝিমঝিম করে।আরো বেশি সময় গেলে কখনো কখনো গা হাত পা থরথরিয়ে কাঁপে। দিনে দিনে শরীরটা আরো বেশি ভেঙে পড়ছে সেটা সে নিজেই বুঝতে পারে। কিন্তু কিছুই করার নেই। এটাই হয়তো নিয়তি।
সেই কবে কবে স্বামীটা মারা গেল। রিকশা চালাতো লোকটা। একটা একসিডেন্টের পর এক রকম ভুগে ভুগে ই মারা গেলো।সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।দু একটা ওষুধ সেখান থেকেই দিয়েছে ঠিকই কিন্তু বাকী গুলো খুব একটা জোগাড় করতে পারেনি তারা। তো রোগ সারবে কি করে।
তখন থেকেই জামিলা বাসায় কাজ নিয়ে নিয়েছিলো।খাওয়াটা কোন রকম জুটতো, ওষুধ জোটেনি ঠিক মতো।সন্তান ছিলো না তাদের।লোকে বলতো আটকুড়ে।স্বামীর মৃত্যুর পর আস্তে আস্তে জামিলা বিবি ও অসুস্থ হয়ে পড়ে।ডাক্তার দেখায়নি কোনদিন। সে সুযোগই হয়নি।
দিন গড়িয়ে এক সময় ঝুপড়ি ছেড়ে রাস্তায় আশ্রয় নেয় সে বাধ্য হয়ে।কবে কবে যে এতো সব ঘটনা ঘটে গেলো জামিলা বিবি আর মনে করতে পারে না ইদানিং । আজকাল প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই মনে করতে পারে না।

বয়সের ভারে নুজ্য তার দেহ। আজকাল তার প্রায়ই মনে হয় মৃত্যু হলে বুঝি মুক্তি মিলবে।
সত্যি কি মুক্তি মিলবে?
কে জানে ?
গতকাল থেকে পথে লোকজন নেই বলতে গেলেই চলে।এই শহরে পিঁপড়ার চেয়ে লোক বেশি।কিন্তু অবাক কান্ড লোকজন হঠাৎ সব কোথায় গেলো? যুদ্ধ বাধলো নাকি ? লোকজন কি সব পালাইছে? সে কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারলো না।কোথাও তো কোন গুলি পটকার আওয়াজ নাই।কে জানে কি হয়েছে।কেউ জিজ্ঞেস করলে কোন উত্তর পায় না।যাকগে যাক তার অত দরকার নাই। একটু পেট ভরলে ভালো একটা ঘুম দিতো সে। গতরাতে ক্ষিদার জ্বালায় ঠিক মতো ঘুম আসেনি।

টুকটুক করে সে একটা গলির মধ্যে ঢুকলো,খাবারে সন্ধান করতে হবে। এত কষ্টের জীবন তবু তার আরো অনেক বছর বাঁচার শখ! বাঁচতে হলে খাদ্য চাই,এইটুকু জামিলাবিবি ভালো বোঝে। সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যেতে মন চায় না কিছুতেই। এই সুন্দর পৃথিবীতে যে কত কিছু দেখার আছে!
বাড়িটা চারতলা। কলিংবেল গুলো সব নিচে গেটের কাছে সাজানো আছে।তবে একটু উঁচুতে,ঠেই নিতে একটু কষ্ট হলো তার।
জামিলাবিবি অনেকবারের চেষ্টায় কলিংবেলের বাটনে চাপ দিলো।একবার দুইবার তিনবার.....
দোতলার ব্যলকনি দিয়ে মহা বিরক্ত হয়ে কেউ একজন ঝাঁঝালো গলায় জানতে চাইলো, এই কে?
-আমি গো মা ?
-কি চাও ?
-মাগো খুব ক্ষিদা পাইছে?
ওপাশ থেকে আরেকটি মুখ দেখা গেলো, এই লোকটি মনেহয় এই বাড়ির কর্তা।জামিলা বিবি বড্ড কাতর হয়ে বলল,
-আম্মাগো, বাপজান কিছু যদি খাইতে দিতা। খুব ক্ষিদা পাইছে।
-তোমার বাড়ি ঘর নেই? লক ডাউন চলছে তুমি জানো না।
-লক ডাউন? সেইটা আবার কি?
-যাও এখন বাসায় যাও না হলে কিন্তু পুলিশে ধরে নিয়ে যাবে।লোকটি বলল।
-বাসা থাকলে কি আর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম গো বাবা।
মেয়েটি তার স্বামীর উপরে একটু রেগে উঠলো,
-এই তুমি ভেতরে যাও তো,খামাখা ভয় দেখাচ্ছো,গরীব মানুষ আহারে। বয়স্ক তো,কাজ করতে পারে না।
লোকটি বলল,
-খাবার তো দেয়া যাবে না।কিসে দেবে?
জামিলা বিবি সব শুনে বলল,
-আমি খাওন শেষে গেলাস পেলেট সব মাইজা দিমু মা।
-না না অতটা রিস্ক নেয়া যাবেনা ,তুমি টাকা নাও।খাবার কিনে খাও।এমনিতে করোনা ভাইরাসের চিন্তায় অস্থির হয়ে আছি।
এবার মেয়েটি বলল ,এক কাজ করি,জরির মা তো আসবে না আজকে,গতকালের খাবার গুলো শুধু নষ্ট হবে,ফ্রিজে তো আর জায়গা নেই যে ঢুকাবো, পলিথিনে করে ওকে কিছু খাবার দিয়ে দেই। জরির মা তো কোন কোন সময় এভাবেই খাবার নিয়ে যায়।

মেয়েটি অল্প সময়ের মধ্যে বেশ কিছু খাবার নামিয়ে দিলো দড়ির মাধ্যমে , ঝুলন্ত প্যাকেটের ভিতরে।জামিলা বিবি আস্তে আস্তে খাবারটা বের করে নিলো। তারপর অনেক অনেক শুকরিয়া জানালো ,মন ভরে আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া করলো্ কিন্তু পরক্ষনে কিছু কথায় তার মনটা বেশ ভারী হয়ে গেলো।এই দুনিয়ার মানুষগুলো খুব একটা ভালো না।যাক সে যাক তার পেট ভরলেই হলো।কে কি বলে অত কি দরকার।
লোকটি মনে হয় বেশি সতর্ক সে বলল,
- এবার কি করবে প্যাকেটে তো হাত দিয়ে স্পর্শ করেছে। যদি ওর শরীরে করোনা ভাইরাস থেকে থাকে। মানা করে দিলেই তো হতো ।তুমি না সব সময় বেশিবেশি। এই সব কি আমাদের দায়িত্ব? দেশে সরকার আছে তারা দেখুক,আমাদের এতো কি?
তারপর কিছু একটা দিয়ে লোকটা দড়িটা কেটে দিলো প্যাকেট সহ ,যেনো ওটা এখন করোনা ভাইরাসে পরিপূর্ন।
জামিলা বিবি ওখানে বসেই দু পা ছড়িয়ে খাওয়া শুরু করলো। তার না আছে ভয় না আছে ডর। আসলে সে তো জানেই না করোনা ভাইরাস কি?

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:২৮

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: তিক্ত বাস্তবতা। যারা সেবা করার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছিল ওরা এখন রাজা উজির এবং বহু রাজ্যের অধিকারিণী।

২৬ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৩৪

ইসিয়াক বলেছেন: সবচেয়ে খারাপ লাগে এই ধরনের মানুষগুলোর জীবনে নেমে আসবে সীমাহীন দূর্ভোগ।
সেই সাথে আমাদের কপালে কি আছে তা আল্লাহ ই ভালো জানেন।
আল্লাহ সবার সহায় হোন।

২| ২৬ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৩৬

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আমিন।

২৬ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৩৯

ইসিয়াক বলেছেন: ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন ।
আপনজন নিয়ে সতর্ক থাকুন সবসময়।
ধন্যবাদ

৩| ২৬ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: নেতার ভাসান শুনে মনে সরকার দিবে। আমরা খাবো আর বার্থরুম করবো।

২৬ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৫

ইসিয়াক বলেছেন: ভালো থাকুন ভাইয়া।
শুভকামনা।

৪| ২৬ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৭

অগ্নি সারথি বলেছেন: করোনা নয়, জমিলা বিবিদের বড় শত্রুর নাম ক্ষুধা! এই লকডাউনে আল্লাহ জানে, জমিলা বিবিদের কি হবে।

২৬ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২১

ইসিয়াক বলেছেন: ঠিক বলেছেন ভাইয়া্, জমিলা বিবিদের বড় শত্রুর নাম ক্ষুধা!
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে সামনে।
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
সতর্ক থাকুন আপনজন নিয়ে।
শুভকামনা।

৫| ২৬ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সম সাময়িক ইস্যু নিয়ে মানবিক ভাবনার গল্পে ভাল লাগা।

হাটকুড়ে নয় আটকুড়ে বলে বোধহয়...

জরিনাদের কথা কেউ ভাবে না। আফসোস।

২৬ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৫

ইসিয়াক বলেছেন: পাঠে ও মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা রইলো ভাইয়া।
আমাদের যশোরের দিকে অবশ্য হাটকুড়ে বলে। অভিধানে আটকুড়ে লেখা আছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ রইলো । ঠিক করে দিচ্ছি।
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
সতর্ক থাকুন আপনজন নিয়ে।
শুভকামনা।

৬| ২৭ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৩২

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: গরিব মানুষগুলো করোনা ভাইরাসের চেয়ে ক্ষুধাকে বেশি ভয় পায়, সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখা গল্প ভাল লেগেছে ।

২৭ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৫৯

ইসিয়াক বলেছেন: পাঠে ও মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন ভাইয়া।
লাইকে অনুপ্রাণিত হলাম।
ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
সতর্ক থাকুন আপনজন নিয়ে।
শুভকামনা

৭| ২৮ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: মুগ্ধ হয়ে পড়লাম।

২৯ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:৫৫

ইসিয়াক বলেছেন: হয়তো কিছুই নাহি পাব ,
তবুও তোমায় আমি
দূর হতে ভালবেসে যাব,
যদি ওগো কাঁদে মোর ভীরু ভালবাসা,
জানি তুমি বুঝবানা কভু তার এ ভাষা,
তোমারই আশাতে তবু ওগো পথ চেয়ে রব--------------
হয়তো কিছুই নাহি পাব ।

মোমবাতি চিরদিন নিরবে জ্বলে য়ায় ,
প্রতিদান সে কি পায়,
ক্ষতি নাই অনাদরে যদি কভু কাঁদি,
আলো ভেবে যদি ছায়া বুকে বাঁ
চোখের কাঁটা আমি, কেন মিছে ভাব-------------
হয়তো কিছুই নাহি পাব,
তবুও তোমায় আমি, দূর হতে ভালোবেসে যাব.......!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.