![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার লেখা কবিতা আপনার পছন্দ হলে হোয়াটসঅ্যাপ এই চ্যানেলটি ফলো করুন প্লিজ Follow the রফিকুল ইসলাম এর কবিতা সমগ্র। channel on WhatsApp: https://whatsapp.com/channel/0029VbBPuTzBA1epLIRBZX1x
আজ সকালে হাসান সাহেবের সাথে চামেলির বেশ এক চোট ঝগড়া হয়ে গেলো। ঝগড়ার কারণ আর কিছু না উপলক্ষ হলো করোনা , দেশে ক্রমবর্ধমান সাধারণ ছুটি চলছে। হঠাৎ করে স্কুল বন্ধ হয়ে গেলো। প্রাইভেট স্কুল ,ছাত্র ছাত্রীদের বেতনে উপর শিক্ষকদের বেতন নির্ভর করে। যদিও বেতন খুব সামান্য ।তবুও মাস গেলে যা পাওয়া যায় সেটাই বা কে দেয়। আজ প্রায় দু মাস হতে চলল বেতন কড়ি কিছুই দেয়নি স্কুল তবু ও এই দুমাস কোন রকম করে চামেলী সংসারটাকে টেনে নিয়ে গেছে। কিন্তু আজ সকালে সরাসরি জানালো এভাবে চললে তার পক্ষে আর সংসার চালানো সম্ভব না। পাঁচজনের সংসারে সে আর খাদ্যের জোগান দিতে পারবে না।
হাসান সাহেবের যে কয়টা টিউশনি ছিলো তাও এই করোনার দূযোগে বন্ধ হয়ে গেছে। কি করবেন কি বলবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।চিন্তায় চিন্তায় তার মাথা ধরে গেছে। সারা সকাল সে গোজ হয়ে বসে আছে। ছেলেরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া মারামারি করছে অন্য সময় হলে তিনি শাসন করতেন কিন্তু এখন কাউকে ই আর কিছু বলতে ভালো লাগছে না।যে যা পারে করুক। পৃথিবীটাকে মনে হচ্ছে নরক কুন্ড।
অরুন,বরুণ আর কিরণ।তিনজনই বেশ দুরন্তু। কাছাকাছি বয়সের বলে তাদের মারামারি আদর ভালোবাসা দুরন্তপনা সবই সমান্তরাল ভাবে চলে । অনেক সময় তো সামলানোই দায় হয়ে যায়।
ছোট কিরণকে বেশ কিছু ক্ষণ ধরে পাওয়া যাচ্ছে না ।এমনিতে দুপুরে পেটে দানাপানি কিছুই পড়েনি।মনটা বিক্ষিপ্ত, জমানো যা টাকা ছিলো বড় ছেলের টনসিল অপারেশন করতে গিয়ে প্রায় সবটাই শেষ।কার কাছে হাত পাতবে আর কে ই বা দেবে টাকা এই দুঃসময়ে।
চামেলি এতোক্ষণ বাথরুমে ঘরের বিছানার চাদর কাচাকাচি করছিলো । বাথরুম থেকে বেরিয়ে আগে ই সে কিরনের খোঁজ নিলো।
– অরুন বরুণ, কিরণ কই রে?
-জানি না মা বাইরে গেছে মনে হয়।
-তোরা মানা করিস নি।
-করলাম তো শুনলো না।
-আর তোদের হাতির মতো বাপটাই বা কি করছিলো? কোন একটা কাজ যদি লোকটাকে দিয়ে হয়।
হাসান সাহেব প্রতিবাদ করলেন,
-আমি আবার কি করলাম? তোমাকে কি আজ ঝগড়া রোগে পেয়েছে?
-কোন কাজাট তোমার দ্বারা হয় শুনি। ছেলেটা বাইরে বেরিয়ে গেলো তুমি আটকাবে না। এখন কি স্বাভাবিক সময়। এমনিতে করোনা ভাইরাসের ভয়ে সবাই অস্থির আর ওনার হুশ নাই। রোগ বাধায়ে আনলে গুষ্টি শুদ্ধ মরতে হবে এই বলে রাখলাম।
হাসান সাহেব অনেক কষ্টে একটা দীর্ঘ শ্বাস চাপলেন। একরকম তো ভালোই চলে যাচ্ছিলো দিন কাল। কি দিন এলো কে জানে ।এর সমাধান ই বা কি।ঘরের পোশাকেই তিনি বাইরে চলে এলেন একটা চটি পায়ে গলিয়ে। গলির ভিতর হয়তো খেলছে ছেলেটা।
এদিক ওদিক খোঁজা খুঁজি করলেন অনেকক্ষণ ধরে।কিরণের কোনই খোঁজ নেই। এই দুরন্ত ছেলেটাকে নিয়ে তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন।এতো অশান্ত আজ বাড়ি এরে আচ্ছা করে বকবেন।খানিক এদিক ওদিক ঘুরে ভাবলেন এবার বাড়ি ফিরে যাবেন কিন্তু মোড়ের মাথায় ঘুরতেই তিনি কিরণকে দেখতে পেলেন। কিরণকে দেখে বুকের ভিতরটা হঠাৎ করে শান্তি শান্তি ভাব এলো।যাক ছেলেটা ফিরেছে। কিন্তু ওর হাতে প্যাকেট দেখে তিনি একটু অস্বস্তি বোধ করলেন।প্যাকেটটা যে কিসের তা তিনি সহজে অনুমান করে ফেললেন।
কিরণ ও বাবাকে দেখে এক ছুটে দৌড়ে এলো।
-বাবা এই দেখো মোড়ের মাথায় গাড়ি থেকে চাল দিচ্ছিলো আমি ও পেয়েছি।
হাসান সাহেব মনে মনে একটু খুশি হলেও সেটা তিনি মুখে প্রকাশ করলেন না।চকিতে অন্য ভাবনায় হঠাৎ করে চরম গ্লানিতে তার মুখটা কালো হয়ে গেলো।
কিরন ছোট হলেও এই পরিবর্তন তার চোখ এড়ালো না।
কি হলে বাবা? আমি কি কিছু ভুল করেছি? তুমি খুশি হও নি?
-আমাদের এসব নিতে নেই বাবা। এগুলো দরিদ্রদের জন্য।
-আমরাও তো দরিদ্র।মা যে বলছিলো ঘরে আর একফোটা চাল নেই। ঘরে চাল না থাকাকে কি বড়লোক বলে।হাসান সাহেব কোন উত্তর দিলেন না।
তারা দুজনেই জোরে হাঁটতে শুরু করলেন যাতে ব্যপারটা কারো চোখে না পড়ে।কিন্তু বিধি বাম। পথের মাঝে দেখা হয়ে গেলো সহকর্মি বিনোদ বাবুর সাথে । তিনিও হাসান সাহেবের সাথে একই স্কুলে শিক্ষকতা করেন।তিনিও আজ দুমাস বেতন পাননি?
হাসান সাহেব হঠাৎ করে মাথা নিচু করে ফেললেন। কিন্তু বিনোদ বাবুও মনে হলো নিরুপায় তিনি দ্রুত এগিয়ে এসে বললেন,
হাসান ভাই চাল কোথায় দিচ্ছে? আমি গেলে কি পাবো?
হাসান সাহেব অসহায় চোখে তাকালেন। চোখে মুখে তার অসহায়ত্ব লজ্জা আর অপমানের জ্বালা। তিনি মাথা নিচু করে কোন রকমে বললেন,
-আমি কিছু জানি না, কিরণ যেনো কোথা থেকে আনলো।
কিরণ হঠাৎ বলল বাবা কাকুকে অর্ধেকটা দেবো। শ্রেয়ান ও মনে হয় আমাদের মতো না খেয়ে আছে তাই না কাকু?
হাসান সাহেব অস্ফুষ্ট স্বরে বললেন
-দাও।দুর্যোগের সময় সবাই মিলে মিশে ভাগ করে খেতে হয়।
বিনোদবাবু চরম কৃতজ্ঞতায় কিরনের মাথায় হাত বুলিয়ে আর্শিবাদ করতে লাগলেন।
১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৩
ইসিয়াক বলেছেন: পাঠে ও মন্তব্যে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা রইলো প্রিয় ব্লগার।
ভালো থাকুন সবসময়।
শুভকামনা।
২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৫
আরোগ্য বলেছেন: ইসিয়াক ভাই,
গল্পটা পড়ে কেমন যেন একটা হাহাকার লাগছে ভিতরে। আসলে না খাওয়ার যন্ত্রণা যে কি জিনিস তা আমরা ঘরে আরামে বসে কখনোই বুঝবো না। আল্লাহ পরিস্থিতি সবার জন্য সহজ করুক।
গল্পে অনেক ভালোলাগা রইলো।
১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:১৬
ইসিয়াক বলেছেন: প্রিয় ছোট ভাইয়া,
পৃথিবীর এই মহা দূর্যোগে আসলেই মনটা সবসময় অস্থির হয়ে আছে। আশা রাখি খুব তাড়াতাড়ি কেটে যাবে আধার রাত, মানুষজাতি আবার নব উদ্যোগে সামলে নেবে সব বিপদ। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
ভালো থেকো।সতর্ক থেকো আপনজন নিয়ে।
শুভকামনা।
৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৮
ক্ষুদ্র খাদেম বলেছেন: লেখাটা চমৎকার, সময়টা খুব খারাপ
এইরকম চিন্তা যখন মাথায় আসে, আর কিছুই ভালো লাগে না
১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:১৯
ইসিয়াক বলেছেন: ক্ষুদ্র খাদেম ভাইয়া,
আসলে আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোই তো গল্প কবিতা।এরকম অনেক পরিবার আছে যারা এই বিপদের দিনে না পারবে বলতে না পারবে সইতে।আমাদের সকলের উচিত আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই ধরনের মানুষের খোঁজ খবর করা।
শুভকামনা
৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:১৯
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: ভালো লিখেছেন। বেশ আবেগময় লাগলো।
"দুর্যোগের সময় সবাই মিলেমিশে ভাগ করে খেতে হয়।"
পোস্টে লাইক।
করোনার আতঙ্ক কবে যে যাবে কে জানে।
শুভকামনা প্রিয় ইসিয়াকভাইকে।
১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:২৩
ইসিয়াক বলেছেন: প্রিয় দাদা গল্প ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।
আসুন আমরা আমাদের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আত্নীয় পরিজন, পাড়া প্রতিবেশির খোঁজ নেই । পারলে নিজের খাবারটা তাদের সাথে ভাগ করে নেই। এতে সকলের মঙ্গল হবে। নিশ্চয় সামনে ভোরের আলোর দেখা মিলবে।অমানিশার ঘন আঁধার কাটবে খুব শিঘ্রি এই প্রত্যাশা রইলো।
শুভকামনা।
৫| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:১৯
বিজন রয় বলেছেন: গল্প লেখাতেও আপনি মন দিন।
পারবেন।
১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:২৭
ইসিয়াক বলেছেন: প্রিয় দাদা ,আপনার প্রতিটা মন্তব্যে আমি অনুপ্রেরণা পাই। ভালো লাগা সহ শুভেচ্ছা রই্লো।
শুভনববর্ষ।
৬| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: মোটামোটি।
১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:২৮
ইসিয়াক বলেছেন: জনাব গল্পটি আপনার কাছে মোটামুটি লেগেছে জেনে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
আপনার মন্তব্য পাওয়া মানে অন্য রকম অনুভূতি
৭| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:০১
আনমোনা বলেছেন: ভালোই গল্প। তবে শেষে বিনোদ বাবু কিরনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, এটা ঠিক হলনা।
১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৩২
ইসিয়াক বলেছেন: এতো সহজে কি মানুষ তার স্বভাব বা আচার আচরণ বদলাতে পারে আপু। আবেগের বশেই তো ভুল করে মানুষ।বিনোদ বাবু তার স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে কিরণের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।সেটাই বাস্তবতা।
অনেকদিন পরে আপনাকে মন্তব্যে পেয়ে খুব ভালো লাগলো আপু। ভালো আছেন নিশ্চয়? ভালো থাকুন।
শুভকামনা।
৮| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৩৩
নেওয়াজ আলি বলেছেন: চমৎকার একটি লেখা উপহার দিলেন
১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৩৩
ইসিয়াক বলেছেন: ভালো থাকুন ভাইয়া
শুভ নববর্ষ।
৯| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৩৭
আমি তুমি আমরা বলেছেন: গল্পে অনেক ভালোলাগা রইলো।
১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৮:২১
ইসিয়াক বলেছেন: আমি তুমি আমরা ভাইয়া আপনাকে আমার ব্লগে স্বাগতম।
গল্প ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। শুভ নববর্ষ।
১০| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২৬
মা.হাসান বলেছেন: বাচ্চাদের যে সহানুভূতিবোধ আছে বড়দের তা থাকলে ভালো হতো।
মধ্যবিত্ত কোথায় যাবে।
আপণই ন্যাড়া হয়েছেন? যশোরে নাকি সব পুরুষই ন্যাড়া হয়ে গেছে? আমাদের এদিকে সেলুন বন্ধ। ভাবছি 'এসো নিজে করি' করে ফেলবো।
গল্প খুব ভালো লেগেছে।
১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৮:২৫
ইসিয়াক বলেছেন: হাসান ভাই কেমন আছেন?
এখনো যশোরে সবাই ন্যাড়া করেনি কিন্তু গত দুদিন থেকে দেখছি কেউ কেউ ন্যাড়া করছে। আমার মাথাটা বড্ড বেখাপ্পা তাই চিরকাল ন্যাড়া করার থেকে দূরে থেকেছি। কিন্তু এবার মনে হয় নিস্তার নাই। চুল বড় হয়ে মাথা চুলকাচ্ছে। করোনা যে আরো কি কি করবে?
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪১
কাওসার চৌধুরী বলেছেন:
মহামারির এই সময়ে চমৎকার লিখেছেন। ভালো থাকুন প্রিয় ভাই।