নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হতাশাগ্রস্ত মানুষের কদর্যতাই একমাত্র অস্ত্র।

ইসিয়াক

যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক গল্পঃ পরভৃতা ৭

০১ লা এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৮:২৫

অনেকগুলো দীর্ঘ দিবস ও দীর্ঘ রজনী কেটে গেলো , চর্তুদিকে খুঁজে খুঁজে হয়রান তবুও কামরুন্নাহারের কোন খোঁজ পাওয়া গেল না। যেন সে উবে গেছে ভোজবাজির মত।

কত লোকেরই তো খোঁজ পাওয়া গেল কিছুদিন পর কিন্তু কামরুন্নাহার লাপাত্তা।

মেয়ের শোকে, মানুষের হাজার টিকা টিপ্পনীর আঁচড় আর নানা অকথা কুকথায় কামরুন্নাহারের মা দিনে দিনে আরো অসুস্থ হয়ে পড়লেন। মেয়ের শোকে বাদ দিলেন খাওয়া দাওয়া। কারো কথাই শুনলেন না। এ পৃথিবীতে তাঁর বাঁচার একমাত্র অবলম্বনই যে হারিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে যা হয় খুব দ্রুত তিনি অসুস্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন।

তারপর কিছুদিন পরে এক রাতে ঘুমের ঘোরে কামরুন্নাহারের মা এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন পরপারে।

কামরুন্নাহারের মা মারা যাওয়ার ঠিক দুদিন বাদে খবর পাওয়া গেলো কামরুন্নাহারের মত দেখতে একজন পাগল প্রায় মেয়েকে সুজলতলী স্টেশনে ভিক্ষা করতে দেখা গেছে।

দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে দিন পার করছিলেন রওনক সিকদার মেয়ে হারিয়ে, তারপর মেয়ের শোকে প্রাণপ্রিয় স্ত্রী বিয়োগের দরুণ মন খারাপ তখন তুঙ্গে।

কোন বিষয় কাজে মন নেই তার।ব্যাবসা বানিজ্য লাঠে ওঠার দশা। হঠাৎ এ খবরে যেন তাঁর শেরীরে প্রাণ ফিরে এলো।

তবে পাগল হয়ে ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছে তাঁর নিজের আদরের কন্যা, এই খবরে একটু অস্বস্তিতেও পড়লেন।

রবাবর নিজের সম্মান, আভিজাত্য, ঐতিহ্য যে কোন মূল্যে রক্ষা করতে বদ্দ পরিকর রওনক সিকদারের জন্য ব্যপারটা বেশ বিব্রতকরও বটে। তার মেয়ে রাস্তায় রাস্তায় পাগল হয়ে বেড়াচ্ছে এটা তিনি মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না কিছুতেই তার বংশে তো কোন পাগল নেই? এটা কিভাবে সম্ভব?

তিনি বুদ্ধিমান বিচক্ষণ এবং বাস্তববাদীও বটে। নিজের অহংবোধকে সাময়িক চাপা দিয়ে তিনি লোক পাঠালেন খোঁজ নিতে, অবশ্যই সন্তপর্ণে।

তৎক্ষনাৎ রওনক সিকদারের লোক ছুটলো সুজলতলী স্টেশন অভিমুখে। বিস্তারিত যাচাই করে দেখা গেল মেয়েটি সত্যি কামরুন্নাহার।
এতটা পথ ঘুরে সে এখানে কিভাবে এলো সেটাই এক রহস্য। কেউ জানে না এই এলাকায় এই মেয়েটি কিভাবে এসেছে।

মেয়েকে খুঁজে পাওয়ার সুসংবাদের সাথে সাথে দুঃসংবাদও এলো কামরুন্নাহারে অসংলগ্ন আচরণের। সম্ভবত তার মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটেছে, পোষাক শত ছিন্ন । কামরুন্নাহারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে যদিও কিছুটা আগেই জানতে পেয়েছিলেন রওনক সিকদার তবু মনের কোনে কোথায় যেন একটু আশা ছিল যা শুনছেন তা হয়তো সঠিক নয়।

কিন্তু কামরুন্ননাহারকে সচক্ষে দেখে রওনক সিকদারের মাথায় যেন বাজ পড়ল, তার মধ্যে বরাবরই জাত্যাভিমান প্রবল। অহংবোধও সীমাহীন।

এ কোন পাপের ফল কে জানে? জ্ঞানত তিনি তো তেমন কোন বড় ধরনের অন্যায় করেননি তাহলে এ কিসের শাস্তি?

কিছুটা ভাবতেই কিছুটা বিচলিত হয়ে আবার নিজের ভাবনা চিন্তায় স্থিরতা আনলেন তিনি। তাই তে এ কথা না আবার পাঁচ কান হয়ে রাষ্ট্র হয়ে পড়ে।

তিনি তৎক্ষণাৎ বাল্যবন্ধু ও ঘনিষ্ঠ শুভানুধ্যায়ী ডাক্তার অলকের চেম্বারে ছুটলেন তার সাথে পরামর্শ করলেন এ ব্যাপারে বিস্তারিত ।

ডাক্তার অলক সব শুনে কামরুন্নাহারকে দেখে বুঝে জানালেন ভালো ভাবে,

- ঝড়ের সময় হয়তো তার মাথায় জোরে আঘাত লাগার ফলে এমনটা হতে পারে। সারা শরীরে সহ মাথায়ও একটা আঘাতের চিহ্ন আছে। আবার....

রওনক শিকদার উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইলেন,
- আবার কি?

-তোমার মেয়ে কিন্তু সন্তান সম্ভাবা?

লাফিয়ে সোজা হয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন রওনক শিকদার,
-অসম্ভব। এটা হতে পারে না।

-তুমি উত্তেজিত হবেন না সিকদার , বাস্তবতাকে মেনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের পরিচয়। অনেক সময় আমরা যা ভাবি না তার থেকে ভয়ঙ্কর কিছু বাস্তবে হয়ে থাকে। বাস্তব বড় কঠিন। মাথা ঠান্ডা কর উত্তেজিত হইয়ো না দয়া করে।

আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোন,তুমি বুদ্ধিমান মানুষ অন্তত তোমাকে তাই জানি, যেহেতু ঘটনা ঘটে গেছে তো এখন পরবতী করণীয় আমাদের ঠিক করতে হবে। কি ঘটেছিল তা না ভেবে সামনে কি করলে কামরুন্নাহারের ভালো হবে তাই আগে ভাবতে হবে।

- আমি বিশ্বাস করি না, এমন কিছু হয়েছে আমি বিশ্বাস করি না, ডাক্তার তুমি মিথ্যা বলছেন। মিথ্যা বলছো। বিলাপ করতে লাগলেন রওনক শিকদার। তাকে কেউ কোন দিন এমনভাবে ভেঙে পড়তে দেখেনি এর আগে।

-তোমার বিশ্বাস অবিশ্বাসে কিছু যায় আসে না হে। আর আমি মিথ্যা বলবো কেন? আমার কি লাভ এতে ? তুমি আমার অতি আপনজন।কাছের মানুষ। মাথাটা একটু ঠান্ডা কর সিকদার। নিশ্চয় আমরা সব কিছু সামলে নিবো। আমি তো আছি। ভরসা রাখতে পারো।আমি বলবো তুমি শুধু একটু ধৈর্য ধরো। কামরুন্নাহার আমার তত্ত্বাবধানে থাকুক। ওর দেখভালের সব দায়িত্ব আমার।
আমি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অভিজিতের সাথে কথা বলে রাখছি।
আর হ্যাঁ ভরসা রাখতে পারো এ কথা পাঁচ কান হবে না। তোমার সম্মান মানে আমার সম্মান। এটা মনে রেখো বন্ধু।

অনেকক্ষণ পরে রওনক শিকদার ধাতস্থ হয়ে বললেল,
- তুমি কি শিওর আমার মেয়ে সন্তানসম্ভবা?

-আমি যথাযথ পরীক্ষা নীরিক্ষা করেই বলছি। কামরুন্নাহার অন্তত ছয় মাসের সন্তান সম্ভাবা।

-তুমি আরো একবার পরীক্ষা কর। ওহ আমি ভাবতে পারছি না এমন কিছু ঘটতে পারে। আমার কলিজা আমার প্রাণের টুকরার সাথে ওহ...তিনি শিশুর মত কাঁদতে লাগলেন।

রওনক শিকদার প্রদীপে ফু দেওয়ার মতো নিভে গেলেন যেন। তিনি লজ্জায় ঘৃণায় অপমানে মাটির সাথে মিশে যেতে চাইলেন।

আহ! এ যে নিদারুণ কষ্ট। এ যে তার জন্য চরমতম অপমান। এই কি ছিল তার কপালে?

অনেক ক্ষণ থম মেরে বসে থাকার পরে তিনি বললেন,
-ডাক্তার এ থেকে পরিত্রাণের উপায়?

- অ্যাবরসন করার সময় পার হয়ে গেছে। বাচ্চাটিকে পৃথিবীর মুখ দেখতে দিতে হবে। তারপরে অন্য ব্যবস্থা করা যাবে।
-কিন্তু লোক জানাজানি হয়ে যাবে যে। আমার সম্মান হানি হবে। আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না। আমার কুমারী মেয়ের গায়ে কলঙ্ক লেগে যাবে। আমাকে নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করবে। আমি হাস্যাস্পদে পরিণত হব। উফ আমি ভাবতে পারছি না আমার মেয়ে ছোট্ট মেয়ে।

ডাক্তার অলক আবার শুরু করলেন, তুমি একটু মাথা ঠান্ডা করো তো, কি শুরু করলে? আশা করি আমি সব সামলে নিতে পারবো। তুমি আমাকে একটু সার্পোট দাও।সব ঠিক হয়ে যাবে, সম্ভবত কামরুন্নাহারকে রেপ করা হয়েছে। আচ্ছা শিকদার ঘটনাটি ঠিক কি ঘটেছিল খুলে বলো তো?

- ঘূর্ণিঝড়ের সময় ও আর ওর মা কমলগঞ্জে ছিল,নানাবাড়ি গিয়েছিল বিয়ের অনুষ্ঠানে, সেখান থেকে ঝড়ের তান্ডবে হারিয়ে গিয়েছিল।
-তারপর?
-তারপর তো আমিও জানি না। ঠিক কি হয়েছে।

-ওহ মাই গড। যাক তবুও মেয়েকে ফিরে পেয়েছো তাতেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো।
-কিন্তু আমার সম্মান?
-আমাকে একটু ভাবতে দেবে তো নাকি? এতো ভেঙে পড়ছো কেন? তুমি আগামীকাল আবার এসো। দেখি কিনকরা যায়। কামরুন্নাহার মা মনিকে আমি নার্স চন্দ্রাবতরে হাতে দিচ্ছি। তোমার চিন্তা করবার কিছু নেই। সব দায়িত্ব আমার।
- তুমি শুধু খেয়াল রেখো যেন কথাটা পাঁচ কান না হয়।
রওনক ক্লান্ত বিধ্বস্ত ভাঙা মন নিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন তবে এ ঘটনার কথা তিনি সযতনে চেপে গেলেন। আসতে আসতে পরবতী করণীয় কিছুটা ভেবে রাখলেন।
ডাক্তারের সহায়তায় দম বন্ধ দীর্ঘ কয়েকমাস পরে কামরুন্নাহারের কোল জুড়ে এলো একটি ফুটফুটে মেয়ে। এত সুন্দর মেয়ে যে প্রথম দৃষ্টিতে মায়া কেড়ে নেয় যে কারো।
কিন্তু সব সুন্দরের আগমনে জয়ধ্বনি হয় না।
তবে রওনক সিকদার শিশুটিকে দেখে মুগ্ধ হলেন। কিন্তু এই শিশুর পরিচয় কি?
পরিচয়হীন এই শিশুটির শরীরের তিনি না চাইলে তার রক্ত বইছে।
যত সুন্দরই হোক যত মায়াবতীই হোক এ কন্যা শিশুটি তো সমাজে অবাঞ্ছিত একে নিজের কাজে রাখা মানে সমাজচ্যুত হওয়া।মান সম্মান খোয়ানো। কামরুন্নাহারের জীবনকে বিষিয়ে তোলা। এত এত বছরের প্রভাব প্রতিপত্তি সন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে এই ঘটনা জানাজানি হলে।
হ্যাঁ একে এক্ষুনি এইমাত্র ত্যাগ করতে হবে। কঠোর হলেন রওনক সিকদার। তিনি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে চন্দাবতী নামে এক স্বামী পরিত্যক্তা নার্সের কাছে শিশুটির দেখভালের দ্বায়িত্ব দিলেন।বিনিময়ে নানা উপহার সামগ্রী নগদ টাকা আর জমি জায়গাও দান করলেন। শুধু তাই না তিনি নিয়নিত যোগাযোগ রাখতে লাগলেন। তবে তা খুব গোপনে।
এবং একটু একটু করে মেয়েটির মায়ায় জড়িয়ে পড়তে লাগলেন।
চন্দ্রাবতীর কাছে মানুষ হতে লাগলো মেয়েটি। নাম রাখা হলো স্নেহলতা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.