নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একদা এসেছিলাম তোমাদের সান্নিধ্যে। ভালো মন্দ মিশিয়ে কেটেছে বেলা। বিদায় বেলায় শুধু এটাই জানিয়ে যাওয়া বড় ব্যথা জাগে মনে পেলে অবহেলা।

ইসিয়াক

আমার লেখা কবিতা আপনার পছন্দ হলে হোয়াটসঅ্যাপ এই চ্যানেলটি ফলো করুন প্লিজ Follow the রফিকুল ইসলাম এর কবিতা সমগ্র। channel on WhatsApp: https://whatsapp.com/channel/0029VbBPuTzBA1epLIRBZX1x

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ রক্ত জল

১৫ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৮:৫৮




তীব্র জ্বরে সমস্ত শরীরটা পুড়ে যাচ্ছে। মাথাটা মনে হচ্ছে শত মন ভারি।

বরুণ তবুও হেঁটে চলেছে। মাথায় তার এক বোঝা পাতো ।কাঁদা জল মেখে কচি ধানের চারাগুলোর ওজন বেড়ে হয়েছে আরও বেশি।

এই বোঝা নিয়ে যেতে হবে দূরের মাঠে। সেখানে গুছিয়ে পাতো রুয়ে তবেই মিলবে টাকা। পুরো টাকাটা অবশ্য আগেই নেওয়া হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে কাজে আসতেই হলো,উপায় নেই।

গতকাল যখন কাজের চুক্তি হলো তখন জ্বর ছিল না, দিব্যি সুস্থ বলা যায়। শরীরে একটু একটু ব্যথা ছিল অবশ্য। সেটাকে আমলে নেয়নি বরুণ।

রাতে এলো ধুম জ্বর।তৃণার মা কাজে আসতে বারণ করছিল। যেহেতু টাকা এ্যাডভান্স নেয়া হয়ে গেছে। কাজ না করলে টাকা ফেরত দিতে হবে।টাকা ফেরত দেবার সামর্থ্য নেই যে বরুণের।

খরচ হয়ে গেছে। গরীবের ঘরে কেন জানি পয়সা কড়ি একটু স্থির হয়ে দু দন্ড দাড়াতে চায় না।পাওনাদারেরা ঠিকই টাকার গন্ধে একে একে এসে ভীড় জমায়।

তৃণার মা এ সময় একটু গজ গজ করলেও শেষ অবধি দেনা মিটিয়ে দেয়। কঞ্জুস হলেও কারো বাড়তি কথা সে একটুও সইতে পারে না।আর তাই অশান্তির ভয়ে বরুণ যেখান থেকে হোক একটা না একটা ব্যবস্থা করেই ছাড়ে।

জ্বর গায়ে কাজে বেরুতে বেরুতে দুপুর গড়িয়ে যায়।নাকে মুখে কিছু খাবার গুজে ছুটে আসে মাঠে,বীজতলায়।

গুছিয়ে একটা একটা করে ধানের চারা তুলে আনে হাতের আলগোছে।বিচালি দিয়ে ছোট ছোট আঁটি বেঁধে তারপর পুকুরে নিয়ে জোরে জোরে পানিতে বাড়ি দিয়ে কাঁদা পরিষ্কার করে। যদিও আজ কাজটা মনের মত করতে পারলো না সে। জ্বরের ঘোরে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সব।

এই যে বরুণ এখন তীব্র জ্বর নিয়ে আলপথ ধরে হাঁটছে তার কষ্ট হলেও কাজটা শেষ করার তাগিদ আছে।আর তাই এলোমেলো নানা ভাবনায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে সে।মনে পড়ছে কত এলোমেলো স্মৃতি।

এমনিতে সে খুব আমুদে প্রকৃতির মানুষ। অন্য সময় হলে সে এই ফাঁকা মাঠে গান জুড়তো। ফারুক কবরীর সেই বিখ্যাত গান,

সব সখিরে পার করিতে নিবো আনা আনা...........কিন্তু এখন তার গান গাইবার শক্তি নেই। শরীর দূর্বল লাগছে।

এই স্থানটিকে মাঠ বললে ভুল হবে আসলে জায়গাটা তলা বিল নামে পরিচিত । লোকে বলে ডাইনের বিল,সেই ডাইনের বিলের সবচেয়ে নিচের অংশ।এখানে ইরিধান খুব ভালো হয়।

এখন শুকনো সময়।শুকনো সময় আল পথ ধরে চলে গেলেও বরষার ভরা মৌসুমে যেতে হয় মাজা সমান কাঁদা জল ভেঙে। তখন সে চলায় থাকে যেমন পরিশ্রম তেমনি জোঁকের ভয়।

বরুণ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।গত তিন মাস আগে হঠাৎ করে বরুনের ছোট ভাই তরুণ ভিটের জমি বেচার সুর দেয়। কত বুঝিয়েছে বরুণ৷ ভাই তুই শ্বশুর বাড়ি জমি কিনিস না বাপ দাদার ভিটে ছাড়িস না।মেয়ে মানুষের সব কথা শুনতে হয় না রে বোকা। কে শোনে কার কথা অগত্যা যা হবার তাই হলো।ভাই তো ভিটে ছাড়া হলো,তার অবস্থাও তথৈবচ।

শরীকের জমি কিনতে গিয়ে সর্ব সান্ত হতে হলো বরুণ কে। জড়াতে হলো ঋণের জালে ।

এখন রাত পোহালেই কিস্তি।গ্রামীন ব্যাংকের সাপ্তাহিক এই কিস্তি তার প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত করে ছাড়ছে।বাঁচো মরো কিস্তি তোমাকে টানতেই হবে।কাজ কামাই হতেই ঘরের হাঁস মুরগীগুলো গেল। ছাগল ছিল তাও গেল এক এক করে।

ছোট্ট মেয়ে তৃণা বড্ড বাবার ন্যাওটা।তার জন্য গত দুমাস তেমন কিছু কিনে দিতে পারেনি এই হাজার পঞ্চাশ হাজার টাকার কিস্তির জ্বালায়।কিস্তি আদায়কারী লোকগুলো কাবুলিওয়ালাদের চাইতেও খারাপ হয়। মহা নাছোড়বান্দা। কিন্তু টাকা পেয়ে তখন উপকারই হয়েছিল মানতে হবে।

বরুণ অবশ্যই বারবার বলেছিল আমি রোগে ভোগা অসুখে মানুষ আমি ওসব ঋণের জালে জড়াবো না। তৃণার মা তা শুনবে কেন তার শ্বশুরের ভিটে ভাগের অর্ধেক বেঁচে
দিচ্ছে তার দেওর।খেয়ে না খেয়ে কিনতেই হবে। তা না হলে যে সাড়ে সর্বনাশ হয়ে যাবে।আশ্রয়হীন হতে হবে আজ অথবা কাল।

বরুণ আলপথের উপর খানিক বসে বিশ্রাম নিয়ে আবার চলতে শুরু করেছে।জ্বরও একটু কমে এসেছে মনে হয়।শরীর একটু ভালো বোধ হওয়ায় একটা বিড়ি ধরায় সে। ধান রোয়া শেষ করে বাড়ি ফিরতে হবে। তৃণা মা মণি তার জন্য অপেক্ষা করছে। বরুণ আল পথ ধরে দ্রুত পা চালায়।কাজটা তাকে শেষ করতে হবে.....

এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। বাড়ি ফেরেনি বরুণ। তৃণার মা আর তৃণা উদ্ধিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করে। বরুণ ফিরলে চা আর মুড়ি মাখা খাবে।....

© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৯:৫২

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: সবসময়ই অভাগা অভাগা করে গল্প লেখেন কেন? জীবনে ঐ পথ দিয়ে হেঁটে বড্ড ক্লান্ত। ভালো লাগেনা।বরুনদের জন্য শুভেচ্ছা রইলো।কি আর করার...রক্ত জল হলেও বেঁচে যে থাকতে হবে..

শুভকামনা প্রিয় গল্পকারকে।

১৬ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৯

ইসিয়াক বলেছেন: আচ্ছা এবার আপনার জন্য একটা পুতুপুতু প্রেমকাহিনী লিখবো। তখন কিন্তু গার্বেজ বলতে পারবেন না। B-))

ইদের/ঈদের নেমন্তন্ন রইলো।
শুভ কামনা সতত।

২| ১৫ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৯:৫৩

আল-ইকরাম বলেছেন: ইসিয়াক ভাই! ভাল লিখেছেন। সুস্থ থাকুন। নিরাপদে থাকুন। আমার ব্লগে ঘুরে আসার অনুরোধ রইল।

১৬ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২০

ইসিয়াক বলেছেন: আপনার ব্লগে ঘুরে এলাম ভাই।
শুভ কামনা রইলো।

৩| ১৫ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১১:১৭

শেরজা তপন বলেছেন: ছোট্ট তৃনার জন্য বরনের জন্য আর ওর বউ এর জন্য খারাপ লাগল। এইসব কিস্তি-ফিস্তি বড় ভয়ানক!!

১৬ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৩

ইসিয়াক বলেছেন: কিস্তির জালে যারা একবার জড়িয়ে যায় এ জাল ভেদ করে খুব কম মানুষই বেরিয়ে আসতে পারে।

পাঠে মন্তব্যে ও লাইকে অনুপ্রেরণা পেলাম প্রিয় ব্লগার।

শুভেচ্ছা রইলো।

৪| ১৬ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১২:১০

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সংসার জীবনের টানপোড়েনের গল্প এমনই হয় । সাবলিল বর্ননায় প্রানবন্ত হয়ে ওঠেছে আপনার গল্প।

১৬ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৩

ইসিয়াক বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় কবি।
শুভেচ্ছা রইলো।

৫| ১৬ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:৩৯

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: এইযে মিয়া ভাই,

ভুইলা গেছেন যে ব্লগে একটা পোষ্ট দিয়া ফেলেছেন? একসপ্তাহ হয়ে গেছে এখনও এ পাড়ায় আসছেন না। বিষয়টি ভালো লাগতেছে না।

১৬ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৫

ইসিয়াক বলেছেন: আপনের মত আমিও সবুজ বাটন খুঁইজ্যা পাইতাছিলাম না |-)

৬| ১৬ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০০

হাবিব বলেছেন: দূর মিয়া মন্তব্যই করমু না

১৬ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৬

ইসিয়াক বলেছেন: হায় হায়! কি হলো আবার :-<

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.