নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হতাশাগ্রস্ত মানুষের কদর্যতাই একমাত্র অস্ত্র।

ইসিয়াক

যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

যাপিত জীবন -৩

২৮ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:২৩

আমার প্রথম গল্পের বই পড়া

আমার ছেলেবেলার বন্ধুদের মধ্যে চঞ্চল ছিল আমার খুব কাছের আর ঘনিষ্ঠ ।ওর সাথে ই আমার বেশির ভাগ সময় গান গল্প আড্ডা ওঠা বসা,শুধু গান গল্প আড্ডা ওঠা বসাই নয় খেলাধূলা মারামারি দুষ্টুমি সবই চলতো সমানতালে। ওর সব ভালো ছিল শুধু একটাই দোষে দুষ্ট ছিল সে।সেটা হলো হিংসা। ভীষণ হিংসুটে ছিল ও। আমার সাথে অবশ্য তেমন একটা হিংসা না করলেও কখনও কখনও করতো বৈকি ।

চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি তখন। সেদিন কি একটা উৎসবের জন্য স্কুল ছুটি ছিল। আমি পড়াশোনা শেষ করে সকাল দশটার দিকে গেলাম চঞ্চলদের বাসায় উদ্দেশ্য ওর সাথে ক্যারাম খেলবো।
আমাকে উঠানে দেখে চঞ্চলের মা যাকে আমি খালাম্মা বলে ডাকতাম উনি বললেন,
- ও এখন বাইরে যাবে না একটু ব্যস্ত আছে ।জরুরি একটা কাজ করছে।ওকে এখন বিরক্ত করা যাবে না। তার চেয়ে বরং তুমি ওবেলা এসো। এখন যাও।

আমি কৌতুহলঃবশত চঞ্চলের ঘরে উঁকি দিলাম। কি এমন রাজকার্য যে খেলতে যেতে পারবে না সে। তাকাতে ই দেখি ওর হাতে একটা বই,সম্ভবত গল্পের বই। ও সেই বইটা পড়ছে আর খিলখিল করে হাসছে দম ফাটিয়ে। কি পড়ছে কে জানে।আমার খুব কৌতুহল হলো। আমি চুপিচুপি ওর ঘরে গেলাম। এই কিছু দিন আগে ও রিডিং পড়তে পারতো না,এখন বেশ উন্নতি করছে। খালাম্মা আমাকে প্রায় বলতো তুমি এসে মাঝে মাঝে ওর সাথে পড়বে।তাহলে ও রিডিংটা তাড়াতাড়ি শিখবে। সেই হিসাবে আমি কিন্তু চঞ্চলের গুরু মশাই। তো সেই গুরু মশাইয়ের এমন অমর্যাদা!
স্বাভাবিক ভাবে ই আমার আঁতে বেশ একটু ঘা লাগলো। তারপর ও যখন আমায় দেখে বইটাকে লুকাতে চাইলো তখন আমার জেদ আরও বেশি চড়ে গেল।
আমি বললাম,
-দেখ চঞ্চল আজকাল তোর দেখি খুব দেমাগ হয়েছে।তারপর গলা নামিয়ে মধুর স্বরে একটু খাতির করে কি বই পড়ছে জানতে চাইলাম।
আমাকে পাত্তা না দিয়ে বরং চঞ্চল বেশ বিরক্ত হয়ে তাকালো। আমি সে সব উপেক্ষা করে বইটার দিকে হাত বাড়ালাম।
-দেখি দেখি কি এমন ঘোড়ার মাথা বই যা পড়লে শুধু হাসি পায়। দেখি তো....
আমি হাত বাড়িয়ে বই নিতে যেতেই চঞ্চল তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো,
- মা অপু আমাকে মারছে।
সাথে সাথে খালাম্মা বলে উঠলো,
অপু তোমাকে না বললাম ওকে বিরক্ত করা যাবে না কেন ওকে বিরক্ত করছো। এখন তুমি যাও তো যাও। পরে এসো।
ভীষণ অপমানিত বোধ করলাম আবারও । তবে মনে মনে ঠিক করলাম আমাকে জানতেই হবে ওই বইতে কি আছে যা পড়লে হাসি আর থামানো যায় না।
কথায় আছে সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল একটু বাঁকাতেই হয়।
আমি বিকালে আবার গেলাম ওদের বাসায়।গিয়ে দেখি দরজা খোলাই আছে। চঞ্চল ঘুমোচ্ছে। আমি যখনকার কথা বলছি তখন ঢাকাতে আমাদের এলাকা অমন ই ছিল।চোরের তেমন উপদ্রব ছিল না বললেই চলে। যে কোন বাড়িতে সোজা ঢুকে পড়া যেত।
যাহোক ঘরে ঢুকে দেখি চঞ্চলের মাথার কাছে সেই বইটা রাখা। আর চঞ্চল তখন তুমুল ঘুমে।বইয়ের নামটা এক দেখাতে পড়ে নিলাম। "বাছাই করা হাসির গল্প সংকলন।"
আমি সুযোগ মত আস্তে করে বইটা নিজের আয়ত্বে নিলাম।তারপর সোয়েটারের নীচে লুকিয়ে ফেললাম।একছুটে বাসায় এসে গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম আর হো হো করে হাঁসতে লাগলাম।সত্যি বেশ মজার ছিল বইটি। আর গল্পের বই পড়া এত মজার সেটাও জানা ছিল না আগে। সর্বোপরি নতুন একটা দিকও সহসা উন্মোচিত হলো আমার সামনে।
পরদিন দেখি চঞ্চল মনমরা হয়ে খেলতে এলো।আমি তো জানি ওর সমস্যাটা কি হয়েছে।ভাবখানা যেন কিছু ই জানি না। ওকে স্বান্তনা দিলাম। চোরের গুষ্টির শাপ শাপান্তর করতেও কম করলাম না।পরে অবশ্য কৌশলে বইটা ওর ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলাম ঠিক ই। সেও আরেক মজার ঘটনা। আজ থাক অন্য দিন করা যাবে আজ এ পর্যন্ত ই...

© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:৪২

শামছুল ইসলাম বলেছেন: বাহ। বেশ চমৎকার অভিজ্ঞতা প্রথম গল্পের বই পড়ার।

২৮ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:৫৫

ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।
মন্তব্যে ভালো লাগা জানবেন।
শুভকামনা।

২| ২৮ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:৩১

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ঠাকুরমার ঝুলি, গোপাল ভার টাইপ ছোট ছোট চটি বইগুলি পড়ার পরে যখন প্রথম উপন্যাস পড়েছি সুনীলের গভির গোপন। যেনো অন্য দুনিয়ার দেখা মিললো।

২৮ শে মার্চ, ২০২২ রাত ৯:৪৯

ইসিয়াক বলেছেন: একসময় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস পড়লে অন্য রকম ফিলিংস হতো। জানা অজানা কল্পনা মিশ্রিত মন আনচান করা সময়। এমন হতে পারে এমন হয়! কত অজানা রে. …সে এক দারুণ সময়।

৩| ২৮ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:৪৬

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: ছোট বেলার কথাগুলু বেশ সাবলীল ভাবেই লিখেছেন, ভালো লেগেছে, শুভকামনা।

২৮ শে মার্চ, ২০২২ রাত ৯:৫০

ইসিয়াক বলেছেন: ভালো লেগেছে জেনে সত্যি ভীষণ অনুপ্রেরণা পেলাম।
ভালো থাকুন সবসময়।
শুভকামনা রইলো।

৪| ২৮ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:৪৬

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: হাহাহা
ছোটো ছোটো হাসির বই আমিও পড়েছি। ইশ তখন গল্পের বই পড়তে কী যে মজা লাগতো।
কখন শেষ হবে তার অপেক্ষায় রাত শেষ হয়ে যেত।

২৮ শে মার্চ, ২০২২ রাত ৯:৫২

ইসিয়াক বলেছেন: গল্পের বই পড়ার জন্য কম বকা আর মার খেতে হয় নি।সে সব একেকটা দিন ছিল। চোখের পলকে কেটে গেছে। এখন মাঝে মাঝে মনে হয় এসব স্বপ্ন নয়তো?

৫| ২৮ শে মার্চ, ২০২২ রাত ৯:১৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ৪র্থ শ্রেণিতে উঠে আমিও গল্পের বই পড়ি। তবে সেটা হাসির ছিল না। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ এর কাহিনি।

২৮ শে মার্চ, ২০২২ রাত ৯:৫৯

ইসিয়াক বলেছেন: বাহ! খুব ভালো শুরু বলা যায়।
আমি ছোট বেলাতে যা সামনে পেতাম তাই পড়তাম। অনেক গুলো দৈনিক ও সাপ্তাহিক রাখা হতো আমাদের বাসায় সে সব তো পড়তাম ই এমন কি লুকিয়ে লুকিয়ে মায়ের দস্যু বনহুরও পড়তাম।স্বপন কুমার নীহা রঞ্জন গুপ্তের বই সে সবও বাদ যেত না।সাথে সেবা প্রকাশনীর বই। আহ! সেই দিনগুলো কি ভোলা যায়! যাবে না কখনও।

৬| ২৯ শে মার্চ, ২০২২ ভোর ৪:২০

অধীতি বলেছেন: তিন রসিকের আড্ডা নামে একটা বই ছিল, গোপাল ভাঁড়, বীরবল ও মোল্লা নাসিরুদ্দিন হোজ্জার। কি যে হাসি পাইত।

৩০ শে মার্চ, ২০২২ সকাল ১১:৩৩

ইসিয়াক বলেছেন: ছোটবেলার দিনগুলো আসলে ভীষণ মজার।
মন্তব্যে ভালো লাগা জানবেন।
শুভকামনা সবসময়।

৭| ২৯ শে মার্চ, ২০২২ সকাল ১০:৪৩

জুল ভার্ন বলেছেন: খুব সুন্দর করে লিখেছেন!
ধন্যবাদ।

৩০ শে মার্চ, ২০২২ সকাল ১১:৩৩

ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।
শুভকামনা সতত।

৮| ২৯ শে মার্চ, ২০২২ রাত ৮:৫৩

জটিল ভাই বলেছেন:
অতীতের স্মৃতিচারণ করতে করতে বর্তমানটাওতো অতীত হয়ে যাচ্ছে প্রিয় ভাই।
দুটোর সমন্বয় করে আগালে ভালো হতো না?

৩০ শে মার্চ, ২০২২ সকাল ১১:৩৬

ইসিয়াক বলেছেন: হা হা হা.... যাপিত জীবন আমার খেরোখাতা প্রিয় ভাই । যা মনে আসে তাই লিখি।

শুভকামনা রইলো।
ভালো থাকুন সবসময়।

৯| ২৭ শে মে, ২০২২ সকাল ১১:৩৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমি ক্লাস ওয়ানে প্রথম গল্পের বই পড়ি। বন্দে আলী মিয়ার একটা ছোটদের উপযোগী গল্পের বই ছিল এটা। অনেক ক্ষেত্রে বড়দের সাহায্য লাগতো। ঐ সময় আমার মা আমাকে ঠাকুর মার ঝুলি পড়ে শুনাতেন। আমি নিজেও অনেক সময় পড়ার চেষ্টা করতাম। ক্লাস টুতে যখন পড়ি তখন সেবা প্রকাশনীর কুয়াশা সিরিজ পড়া শুরু করি। এছাড়া তখন সাপ্তাহিক বিচিত্রা এবং বেগম পড়তাম। আমার বোনের টেক্সট বই থেকে গালিভারস ট্রাভেলস পড়ে শুনাতো আমার মা। ক্লাস থ্রিতে যখন পড়ি তখন বিখ্যাত কিছু বিদেশী গল্প/উপন্যাসের অতি সংক্ষিপ্ত বাংলা অনুবাদ পড়েছি ( যেমন লা মিসারেবল, ওডিসি, ইলিয়াড, আইভান হো, দা হাঞ্চ ব্যাক অব নটরডেম, দা প্রিন্স এন্ড দা পপার, দা ফ্রাঙ্কেন্সটাইন ইত্যাদি)। ঐ সময় রবিন হুড পড়েছি বাংলাতে। কিছু রাশিয়ান এবং আরও অনেক দেশের রুপকথার বাংলা অনুবাদ পড়েছি। ক্লাস টু থেকে আমাকে একজন বই পড়ুয়া বলা যেতে পারে। বাসার মোটা মোটা ধর্মীয় বই থেকে শুরু করে প্রায় সব বই পড়া শুরু করি। ক্লাস টেনে ওঠার পর বই পড়ার সময় কমে যায়। তবে বই পড়াকে আমি ভালোবাসি এখনও।

২৭ শে মে, ২০২২ বিকাল ৪:৫১

ইসিয়াক বলেছেন: এই লেখাটা ভারতীয় একটা পাবলিশার্স এর আয়োজিত প্রতিযোগিতার জন্য লেখা। বিষয় " প্রথম বই পড়ার অভিজ্ঞতা " উপর প্রবন্ধ হিসাবে লেখা। লেখাটা প্রথম পুরষ্কার পেয়েছিল। কেন জানি না কাউকে বলি নি।
শুভকামনা সতত।

আপনার অভিজ্ঞতা জেনে ভালো লাগলো। ভালো থাকুন সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.