নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।
#ঈদের_জামা
দুর গায়ে আমাদের বাস ছিল। এতটাই দুর কাছাকাছি কোন শহর আমরা দেখি নি অনেকটা বয়স পর্যন্ত । শহরের গল্প শুনেছি অনেক তবে সেটুকু বাবার কাছ থেকে আর শহরের লোকজন বলতে দেখেছি রেলগাড়ীর জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া রং বেরঙের পোশাক পরা অপরিচিত মানুষ জনকে।
বাবাকে অবশ্য সেভাবে আমরা কাছে পেতাম না খুব একটা। দুই ঈদ ছাড়া কালেভদ্রে বাবা বাড়ি আসতেন।মাসে দুমাসে বাবা মানি অর্ডারে টাকা পাঠাতেন।আমরা কয়েকটা দিন মজা করে ভালো মন্দ খেতাম,তারপর আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতাম।মা অবশ্য যা ই রাধতেন তা সে কচুর লতি হোক বা শাকপাতা সবই খেতে হতো বেশ মজার।মাঝে মাঝে চালের কমতি থাকার কারণে আমরা তিনবেলা না খেয়ে দুই বেলা একবেলাও খেয়ে দিন কাটাতাম।
যে কোন কারণে বাবার বাড়ি আসা মানে আমাদের কাছে অন্য রকম আনন্দের ব্যপার ছিল । আমরা এতটাই খুশি হতাম স্কুল, বন্ধুবান্ধব, খেলাধূলা, নদীতে ঝাঁপাঝাপি,বিলে মাছ ধরা,বনবাদাড় ঘুরে বেড়ানো সব তখন লাটে উঠতো।
বাবা এলে বাবার পিছনে পিছনে আঠার মত লেগে থাকতাম। কারণে অকারণে ঘুরঘুর করতাম।তিনি যেখানে যেতেন আমরাও সেখানে যেতাম অদ্ভুত একটা শান্তি শান্তি লাগতো মনের মধ্যে । মা অবশ্য বকা দিতো বলতো
-বলিহারি ছেলে মেয়ে তোরা।লোকটাকে একটু শান্তি করতে দিবি না?সারাদিন লেজের মত লেপ্টে রয়েছিস যে বড়! যা বাইরে যা।অন্য সময় তো টিকিটির নাগালও পাওয়া যায় না। খুঁজে খুঁজে বাড়ি ধরে আনতে হয়। বদমায়েশের ধাড়ি একেকটা। যা বের হ।
মা যতই বলুক বাবা তখন বাঁধা দিয়ে বলতো
-আহা থাকুক না, বাচ্চা মানুষ বাবার কাছে আসবে না?
মা তবুও জোর করে আমাদের ঘর থেকে বের করে দিতেন।
আমরা ঘর থেকে বের হলেও জানালায় গিয়ে ভীড় করতাম ঠিকই। বাবার সব কিছু খেয়াল করাই যেন আমাদের জরুরি কাজ ছিল ।অন্য যা কিছু সব বাদ।
বাবা প্রশয়ের সুরে ডাকতেন আয়, ভিতরে আয় তোরা,কাছে এসে বোস।আমরা সুড়সুড় করে আবার ভিতরে চলে আসতাম।বাবার গা ঘেঁসে বসতাম।
আমাদের অনেক অভাব ছিল। কিন্তু আমাদের নিজেদের মধ্যে ভাব ছিল খুব।আমরা অল্প হলেও সমস্ত কিছু ভাগ করে খেতাম। অল্পতে সন্তুষ্ট হতাম।অন্যের জিনিস দেখে কোনদিন বায়না করতাম না। মা শিখিয়েছিলেন সব।বলতেন যার চাহিদা যত কম সে তত সুখী।
বাবা প্রত্যেক চাঁদরাতে বাড়ি আসতো তো সে যত রাতই হোক আর আমরা বাবার আসা অবধি অপেক্ষা করতাম,বাবা আসবে বলে কথা!
সেবার বাবা অনেক রাত হয়ে গেলেও ফিরলেন না।আমরা নানা চিন্তা ভাবনায় জেগে থাকতে থাকতে কখন যেন ঘুমিয়ে গেলাম। মাকে দেখে মনে হলো কোন অমঙ্গল আশংকায় কাঁদছেন তিনি।পথে কোন বিপদ আপদ হলো কি-না কে জানে? তখন তো খোঁজ খবর নেওয়ার তেমন কোন মাধ্যমও ছিল না।
কত রাত জানি না বাবার গলার আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল আমার।যদিও তিনি কথা বলছিলেন নিচু স্বরে। আমি ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলাম যথারীতি ছোট ভাই বোন দুজন তখনও ঘুমাচ্ছে । শুনলাম বাবাকে কারা যেন বাসের মধ্যে নেশা জাতীয় কিছু খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে সব কেড়ে নিয়ে গেছে। তাতে আমার তিন ভাই বোনের জামা কাপড় সহ অন্যান্য জিনিস ছিল। মা হাজার শোকর আদায় করলেন বাবার অক্ষত ফিরে আসাতে। কিন্তু বাবা বেশ বিব্রত বোঝা যাচ্ছিল।
ঠিক তখনই মা হেসে বলল
- তুমি রানু তনু আর লোপার জন্য ভাবছো তো?
- হ্যাঁ বছরের একটা দিন। বাচ্চাগুলোর মুখের দিকে তাকাতে পারবো না আমি।
কোন চিন্তা নেই বলে মা বাক্স থেকে মায়ের বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া একটা শাড়ি বের করলেন। বেশ চকচকে শাড়িটা তখনও পাট ভাঙা হয় নি।
মা সেলাইয়ের কাজ করতেন। ও হ্যাঁ বলা হয় নি আমাদের একটা সেলাই মেশিন ছিল। গ্রামের অনেকে মায়ের কাছ থেকে জামা কাপড় বানাতো। তো সেই রাতে বাবা ও মা মিলে সারারাত জেগে আমাদের তিন ভাই বোনের জামা বানিয়ে দিলেন। কাজ যখন শেষ হলো তখন ফযরের আজান দিচ্ছে কোন কোন মসজিদে। বাবা ফযরের নামাজ পড়লেন তার একটু পরে মা রান্নাঘরে চলে গেলেন। হাতে কাটা সেমাই পিঠে রাঁধতে আর আমরা গেলাম নদীর ঘাটে গোসল করতে।
সেবার অবশ্য পুরাতন ফুল সাবান দিয়ে কাজ সারতে হয়েছিল। কারণ নতুন সাবান তো দুষ্কৃতকারীরা নিয়ে গেছে কিন্তু সৌভাগ্য যে আমাদের ঈদের আনন্দ নিতে পারে নি।
ঈদ মোবারক
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
০১ লা মে, ২০২২ সকাল ৮:১৫
ইসিয়াক বলেছেন: ঈদ মোবারক প্রিয় ব্লগার।
অনেক দিন পর আপনাকে ব্লগে দেখে ভালো লাগছে। নিশ্চয় ভালো আছেন?
শুভেচ্ছা সহ শুভকামনা রইলো।
২| ০১ লা মে, ২০২২ সকাল ৮:২৫
বিজন রয় বলেছেন: এবছর আপনাকেই সবার প্রথম ঈদমোবরাক বললাম।
আপনাকে দিয়েই শুরু করলাম।
আপনি ভাল থাকুন।
অনেক কবিতা, গল্প লিখুন।
শুভকামনা নিরন্তর।
০১ লা মে, ২০২২ সকাল ৮:২৯
ইসিয়াক বলেছেন: আপনার মন্তব্যে আমি খুবই সম্মানিত বোধ করছি প্রিয় দাদা।
নিয়মিত না হলেও মাঝে মাঝে আপনাকে ব্লগে পাবো আশা করি।
ভালোবাসা রইলো।
শুভ হোক সকল সময়।
৩| ০১ লা মে, ২০২২ সকাল ৮:২৭
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: খুবই সুন্দর লিখেছেন। শৈশবের অপ্রাপ্তির যাতনাময় স্মৃতিকথা।চোর তাহলে আনন্দে ভাগ বসাতে পারেনি কথাটি কী ঠিক? যদি নাইবা বসায় তাহলে আজ এতদিন কেন সেকথা মনে বহন করা মিয়া???? যাইহোক এবার ঈদে আমার আনন্দটাও আপনাকে খরচ করতে হবে বলে রাখলুম
০১ লা মে, ২০২২ সকাল ৮:৩৭
ইসিয়াক বলেছেন: আয় হায় এটা কি হলো?
আমি শিরোনামে গল্প লিখে দিয়েছি তো।এটা মোটেও স্মৃতিকথা নয়। আমার যাপিত জীবন সিরিজটি স্মৃতি কথা। প্লিজ ভুল বুঝবেন না।
অঃ টঃ গত রাতে কি মনে হতে থ্রিলার উপন্যাসটি লিখতে লিখতে লেখা বাদ দিয়ে এক পাশে রেখে, এই গল্পটি লিখলাম। সাথে সাথে ফেসবুকে কয়েকটি গ্রুপে পোস্ট করলাম। সকালে দেখি অনেকে এটাকে স্মৃতি কথা ভেবেছে। হা হা হা। আমার জন্ম যশোহর শহরে আর বেড়ে ওঠা ঢাকায়। আঠারো বছর পর্যন্ত আমি ঢাকাতেই ছিলাম আর সবগুলো ঈদ এখানেই করা হা হা হা।
শুভকামনা রইলো প্রিয় ব্লগার।
ঈদ মোবারক।
৪| ০১ লা মে, ২০২২ সকাল ৮:৪৫
বিজন রয় বলেছেন: নিয়মিত না হলেও মাঝে মাঝে আপনাকে ব্লগে পাবো আশা করি।
ব্লগে কিছুটা সময় দেওয়ার চেষ্টা করবো।
দেখা যাক কতটুকু পারি।
ধন্যবাদ।
০১ লা মে, ২০২২ সকাল ৮:৫৪
ইসিয়াক বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার।
আবারও শুভেচ্ছা।
ভালো থাকুন সবসময়।
৫| ০১ লা মে, ২০২২ সকাল ১০:২১
সোনাগাজী বলেছেন:
অজ্ঞান পার্টি এখনো আছে?
০১ লা মে, ২০২২ সকাল ১১:০১
ইসিয়াক বলেছেন: অজ্ঞান পার্টি এখনও আছে। তবে অপরাধের ধরণ বদলেছে। যা ভয়াবহ আশংকার ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে কারণ খুব সহজে শিকারকে এরা আয়ত্তে আনতে পারে স্কোপোলামিন ( মন নিয়ন্ত্রণের ঔষধ) প্রয়োগের মাধ্যমে।
৬| ০১ লা মে, ২০২২ দুপুর ১২:২৭
শায়মা বলেছেন: খুব সুন্দর একটা গল্প ভাইয়া।
তবুও ভালো বাবার কোনো ক্ষতি হয়নি সেদিন।
০২ রা মে, ২০২২ সকাল ১০:৫৫
ইসিয়াক বলেছেন:
ভালো লেগেছে জেনে ভীষণ ভালো লাগলো।
ভালো থেকো আপু।ঈদে জমিয়ে আনন্দ করো। আর ঈদের পোস্টটা তাড়াতাড়ি দিও।
ঈদ মোবারক।
শুভ হোক সকল সময়।
৭| ০১ লা মে, ২০২২ দুপুর ১:৪১
অপু তানভীর বলেছেন: গত বছর করোনার লকডাইন ছাড়লে ঠিক এমন ঘটা ঘটেছিল আমার বোনজামাইয়ের সাথে । তাকে ডাব খাইয়ে সব কিছু নিয়ে গিয়েছিলো । বেশ কয়েকদিন হাসপাতালেও থাকতে হয়েছিলো । আমার কেবল মনে হয় এই মানুষ অন্যের জিনিস পত্র ছিনিয়ে নেয় এদের মানসিক শান্তি আসে কিভাবে? রাতে এরা ঘুমাতে পারে তো ?
গল্পে বাস্তবতা ফুটে উঠেছে একদম ।
০৪ ঠা মে, ২০২২ বিকাল ৩:০৩
ইসিয়াক বলেছেন: কিছু কিছু মানুষের বিবেক বোধ বলে কিছু থাকে না। এরা বিকারগ্রস্ত। আমি এমন কিছু মানুষকে দেখেছি জেল খেটে এসে আবারও একই অপরাধে জড়ায়। কিভাবে পারে কে জানে? এদের এনার্জি লেভেল দেখলে অবাক হতে হয়।
৮| ০১ লা মে, ২০২২ বিকাল ৪:১৯
এম ডি মুসা বলেছেন: সমাজে এমন ঘটনা অনেক আছে ভাই,,
০৪ ঠা মে, ২০২২ বিকাল ৩:০৪
ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকুন সবসময়।
৯| ০২ রা মে, ২০২২ সকাল ১০:৫৮
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে ইসিয়াক ভাই! শুভকামনা। : )
০৪ ঠা মে, ২০২২ বিকাল ৩:০৫
ইসিয়াক বলেছেন: মন্তব্যে প্রীত হলাম প্রিয় আবির ভাই।
শুভকামনা সতত।
ভালো থাকুন সবসময়।
১০| ০২ রা মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৩
নীল আকাশ বলেছেন: এইরকম কত ঘটনা শোনা যায়!
ঈদ মোবারক।
০৪ ঠা মে, ২০২২ বিকাল ৩:০৬
ইসিয়াক বলেছেন: অনেক দিন পর আবার আপনার মন্তব্য পেয়ে ভীষণ ভালো লাগলো প্রিয় ব্লগার।
ভালো থাকুন।
ঈদের শুভেচ্ছা রইলো।
১১| ১৩ ই মে, ২০২২ সকাল ৯:৪০
খায়রুল আহসান বলেছেন: "কিন্তু সৌভাগ্য যে আমাদের ঈদের আনন্দ নিতে পারেনি" - সাবাশ! এই যে ছোটবেলা থেকে মার কাছে একটা শিক্ষা পেয়েছিলেন, "যার চাহিদা যত কম, সে তত সুখী" - এটাই জীবনের অমূল্য এক শিক্ষা! সে শিক্ষার কারণেই "অজ্ঞান পার্টি" আপনাদের কাছ থেকে ঈদ আনন্দটা ছিনিয়ে নিতে পারেনি।
তখন আমি কুমিল্লায় থাকি। কোন এক শবে-বরাতের রাতে আমার এক খালাতো ভাই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবার পথে কুমিল্লায় নেমে কিছুক্ষণ আমাদের বাসায় অবস্থান করে গিয়েছিল। আমি তাকে রাতে বাসে তুলে দিয়ে আসি। পরের দিন খবর পাই, সে চট্টগ্রামে পৌঁছে নাই। চৌদ্দগ্রামের কাছে কোন এক জায়গায় এরকম এক "অজ্ঞান পার্টি" বা "মলম পার্টি" তাকে অজ্ঞান করে তার সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়েছিল। পরিণামে সে বেশ ক'দিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে!
পোস্টে ষষ্ঠ প্লাস। + +
১৪ ই জুলাই, ২০২২ ভোর ৬:৪৯
ইসিয়াক বলেছেন: চমৎকার মন্তব্যে ভালো লাগা স্পর্শ করে গেল প্রিয় ব্লগার।
আপনার স্মৃতি কথা টুকু জানা হলো, কখনও কখনও ভাবি এই যে দুষ্টু লোকগুলো যদি আমাদের আশেপাশে না থাকতো তবে কত আনন্দময় হতো আমাদের এই পৃথিবী। সকলে ভালোত্বকে নিজের বিবেক বিবেচনায় জাগ্রত করুক। জগতের সকল প্রাণির ভালো হোক। সবার জীবন নির্মলানন্দে কাটুক এই প্রত্যাশা।
শুভ সকাল।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা মে, ২০২২ সকাল ৮:০৮
বিজন রয় বলেছেন: শুভসকাল।
ঈদ মোবারক।