নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একদা এসেছিলাম তোমাদের সান্নিধ্যে। ভালো মন্দ মিশিয়ে কেটেছে বেলা। বিদায় বেলায় শুধু এটাই জানিয়ে যাওয়া বড় ব্যথা জাগে মনে পেলে অবহেলা।

ইসিয়াক

আমার লেখা কবিতা আপনার পছন্দ হলে হোয়াটসঅ্যাপ এই চ্যানেলটি ফলো করুন প্লিজ Follow the রফিকুল ইসলাম এর কবিতা সমগ্র। channel on WhatsApp: https://whatsapp.com/channel/0029VbBPuTzBA1epLIRBZX1x

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ দেশান্তরি

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ভোর ৬:৫০


রাকিব আজ দেশ ছাড়ছে।কানাডার সাচকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করবার উদ্দেশ্য চলে যাচ্ছে সে। ছেলেটা একটা ভালো স্কলারশিপ পেয়েছে।এজন্য তার বাবা আব্দুল হাই দারুণ খুশি। অন্তত তার চোখ মুখের চাহনি তাই বলছে।যদিও তার বুকের ভিতরটা তুষের আগুনের মত পুড়ছে।ছেলেকে তিনি একলা হাতে বড় করেছেন।সব দুঃখ কষ্ট ঝড় ঝাপটা দুহাতে সামলিয়েছেন।এ্যাডমিশনের যাবতীয় প্রক্রিয়া নিশ্চিত হবার পর থেকে সব কষ্ট পাথর চাপা দিয়ে চমৎকার অভিনয় করে চলেছেন তিনি।এক জীবনে পরিকল্পনা মাফিক কোন কিছু হয় না। মানুষ ভাবে এক হয় আরেক। এটা তার চেয়ে আর কে ই বা বেশি জানে!
এই তো গতকাল কাকে কাকে যেন মোবাইলে খুশির খবর জানালেন।বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেও ভুললেন না।অথচ..
নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ,রাকিব দেশেই একটা চাকরিবাকরি করে থিতু হবে সেই প্রস্তুতিটা ছিল বহুদিনের। কিন্তু হঠাৎ কিছু বিষয় নিয়ে অনিশ্চয়তার তৈরি হলো।সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি বিবেচনায় আব্দুল হাই ছেলের জন্য ক্রমশ উদ্বিগ্ন হচ্ছিলেন।বিশেষ করে বিগত কয়েক মাসের ঘটনাগুলো খুব একটা সুখকর ছিল না। আব্দুল হাইয়ের আপনজন বলতে ওই একজনই।তার জীবন যদি...

জনাব হাইয়ের সংসারটা ভেঙেছিল অনেক আগেই। অস্থির সময়ে আজকাল কেউ তেমনভাবে সুস্থির নয়। সব্বাই কেবল ছুটছে আর ছুটছে।একদিন রাকিবের মা তুলিকাও সেই দলে নাম লিখিয়েছিলো। অথচ তাদের বিয়েটা প্রেমের ছিল। এখন সে হাজার মাইল দুরে প্রবাস জীবন যাপন করছে।শোনা যায় সে ভালো আছে।সবাই এক সময় যার যার মত করে ভালো থাকে।এটাই জগতের নিয়ম।
সকাল থেকে অনেক কথাই মনে আসছে।বুকের ভিতরটা উথাল পাথাল করছে।আব্দুল হাই বারান্দায় রাখা চেয়ারটা টেনে বসে একটা সিগারেট ধরালেন।ছেলে দেখলে রাগ করবে কিন্তু অভ্যাসটা তিনি ছাড়তে পারেন নি শত চেষ্টা স্বত্ত্বেও।
রাকিব ছোটবেলা থেকে বাবার কষ্টটা বুঝতো।এখন পর্যন্ত বোঝে।তারপর এই হঠাৎ সিদ্ধান্তের পর সে দোদুল্যমান ছিল, সে জানে বাবা কখনও দেশ ছাড়বে না। তাকেই ফিরে আসতে হবে।আর তাই বার বার বাবাকে বুঝিয়েছে। আমি ফিরবো বাবা, আমি অবশ্যই তোমার কাছে ফিরবো।মাত্র তো ক'টা দিন।ও দেখতে দেখতে চলে যাবে।তুমি ভেবো না।
এদিকে সেদিন আবেগের বশে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার জন্য আজও আব্দুল হাইয়ের ভীষণ আপসোস হয়।বাইরে যাবার প্রসেসিং এর সময়কার ঘটনা।কথার পিঠে ফট করে মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলেন ছেলের মুখের উপর
- এই যে বলছিস কটা দিন,ততদিন যদি না বাঁচি?
জানে কথাটা বলা উচিত হয় নি।ছেলের মন খারাপ হয়েছিল। সিদ্ধান্ত বদলাবে বলে জেদ ধরেছিল।
আব্দুল হাইয়ের ও মাথায় হঠাৎ ই রক্ত উঠে গেছিলো। নাছোড় বান্দা ছেলেকে কষে এক চড় মেরে বলেছিলেন
- হারামজাদা! শুধু আমার কথা ভাবলে চলবে? নিজের কথাও ভাব।কি ভবিষ্যৎ আছে এ দেশে?জীবন্মৃত থাকতে চাস, না-কি লাশ হতে চাস? আমি বেঁচে থাকতে ওসব দেখতে পারবো না।এদেশ এখন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে, জঙ্গল।
আব্দুল হাই ভালো মত জানে ছেলেটা তাকে প্রচন্ড রকম ভালেবাসে তা না হলে সেই সময়ই সে মায়ের সাথেই ছুটতো।এদিকে আজ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় নানাবিধ জটিল পরিস্থিতির কারণে ছেলেকে ছুটতে হচ্ছে অন্য দেশে।এটা কি পলায়ণ নয়? হ্যাঁ পালাচ্ছে তার ছেলে।এখান থেকে গেলে কেউ সহজে ফেরে না।
অনেকেই তো পালাচ্ছে।অন্য বিকল্প নেই বলেই দেশ ছাড়ছে।
এদিকে গত রাত থেকে আব্দুল হাইয়ের বারবার মনে হচ্ছে সেই তো ছেলেও ছুটলো।এক জীবনে সত্যি কি কাউকে চিরদিন ধরে রাখা যায়। সবারই তো নিজস্ব জগত আছে! সময়ে তাকে ছেড়ে দিতে হতোই। এসব ভেবে নিজেকে নিজে স্বান্তনা দেওয়া আর কি!
রাকিব বারবার বলে চলেছে বাবা আমি খুব দ্রুত ফিরে আসবো, দেখো। আর এখনকার যুগে মোবাইল, ইন্টারনেট কত আয়োজন।আমাকে ছুঁতে তোমার একটুও সময় লাগবে না।
এসব কথার পিঠে আব্দুল হাই কিছু বলতে পারেন না। তার গলা ধরে আসে।ছেলের মুখের দিকে তাকাতে কষ্ট হয়।চোখ জ্বালা করে। তিনি বহু কষ্টে নিজেকে সামলে চলছেন।ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আবেগ দমন করে রেখেছেন।
এইবার সত্যি তার ব্যস্ততা ফুরালো। তিনি সত্যি সত্যি বেকার হয়ে পড়লেন। তুলিকা চলে যাবার পর জয়া অনেক দিন তার পিছনে ঘুর ঘুর করেছে। আব্দুল হাই ছেলের মুখ চেয়ে সংসারে অন্য কাউকে আনেন নি। রাকিব চলে গেলে তিনি নিঃসঙ্গ জীবন কি করে কাটাবেন?অথচ ছেলের ভালোর পথে তিনি কখনও বাধা হবেন না এটাই তার শেষ সিদ্ধান্ত। তাছাড়া দেশটা ক্রমশ বদলে যাচ্ছে,ছেলেটার চলে যাওয়াই উচিত।ও ওর মতো করে বাঁচুক। ভালো থাকুক। কিছু বছর আগেও এদেশের মানুষের মধ্যে এতটা নৈতিক অবক্ষয়,সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়,ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, নিজ স্বার্থে ব্যক্তি পুজার বাড়াবাড়ি ছিল না,ছিল না সীমাহীন লোভ লালসা।অসুস্থ প্রতিযোগিতাও ছিল না।কত দ্রুত সব বদলে যাচ্ছে,বদলে যায়।সব কিছুতেই লাগাম ছাড়া অসুস্থ প্রতিযোগিতা।
রাকিব ছোটবেলা থেকে টপার। ব্যবহার আচার আচরণ লেখা পড়ায় সবক্ষেত্রেই সেরা।বাবার মতো দেশ ভক্তিও প্রবল ।তবুও...
সন্তান ভালো হলেও জ্বালা। উচ্ছন্নে গেলেও জ্বালা।ছেলে বিদায় জানাতে জানাতে মনে মনে কথাটা আওড়ালেন জনাব হাই। বাসায় ফিরে দরজা লক করতেই খামচি মারা বুকে ব্যথা শুরু হলো।তীব্রতা বাড়লো ক্রমশ। রাকিব তখন উড়ে চলেছে নতুন সম্ভাবনার খোঁজে। এদিকে ৪/বি ফ্ল্যাটটাতে তখন যমে মানুষে টানাটানি৷ চলছে।
আব্দুল হাই আরও কিছু কাল বাঁচতে চান। এই মুহুর্তে দেশান্তরি হওয়ার কোন ইচ্ছে তার নেই তবুও.....
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:২১

খাঁজা বাবা বলেছেন: সত্যিই দেশ বদলে যাচ্ছে, গেছে।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৬

ইসিয়াক বলেছেন: বদলে যাওয়ার ধরণ দেখে উদ্বিগ্ন হওয়া ছাড়া উপায় নেই। পরিবর্তন অবশ্যই কাম্য কিন্তু এ কেমন পরিবর্তন?
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:২৪

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: কষ্টকর! হায়রে জীবন। মানুষ ভাবে এক ঈশ্বর করেন আরেক।++

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৮

ইসিয়াক বলেছেন: সেটাই। সব কিছু ভাবনা অনুযায়ী কখনওই হয় না। কত কিছু বদলে যায়। পরিবেশ, পরিস্থিতি, দেশ। চেনা সব আজ বড় অচেনা লাগে। হায়রে! স্বাধীনতা।
অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো প্রিয় ব্লগার।
শুভেচ্ছা সতত।

৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৮

শেরজা তপন বলেছেন: ইদানিক ব্লগের পথে ভুলে যাচ্ছেন। এভাবে চলতে চলতে একদিন বিস্মৃত হয়ে যাবেন।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৪

ইসিয়াক বলেছেন: না আমি সম্ভবত হারাবো না। আপাতত কবিতা আবৃত্তি আর নাটকের রিহার্সেল নিয়ে ব্যস্ত আছি। সম্ভবত সামনের মাসে ঢাকায় শো। তার আগে যশোর শিল্প কলায় দুই তিনটি শো হবে। বুড়ো বয়সে ডায়লগ মুখস্থ করা বিশাল ঝক্কিঝামেলার ব্যপার। তাছাড়া একটা ছোট গল্প লিখতে লিখতে উপন্যাস হয়ে গেছে। কাটছাট করেও দশ হাজার শব্দে দাড়িয়েছে।আরও কিছু কাজ বাকি আছে। তথ্যগত ক্রুটিও সারাই করতে হবে।তার উপর স্কুল, টিউশনি । এসব নিয়ে ব্যস্ততার কারণে ব্লগ পড়া ও কমেন্ট করা কমে গেছে। শুভেচ্ছা রইলো প্রিয় ব্লগার।

৪| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:০৪

করুণাধারা বলেছেন: আমাদের মত অনেক মা বাবার গল্প তুলে এনেছেন ইসিয়াক। গল্পে পরিমিতি বোধ ভালো লেগেছে, ঘটনার ঘনঘটা এর চেয়ে বেশি হলে গল্পে আকর্ষণ থাকতো না!

সন্তানের কল্যাণের জন্যই তাদের দূরে যেতে বলা। নিজের জীবনে অনিশ্চয়তা নেমে আসে, তবু নিজের চাইতে সন্তানকে প্রায়োরিটি দিলে মনে হয় এটাই ঠিক আছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.