নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।
আজ শনিবার। ২০ জুলাই ২০২৪ সাল। সময় এখন সকাল নয়টা বেজে দশ।
গতকাল বিকাল থেকে আবিরের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই নির্ঘুম একটা রাত পার হলো।ভোরের দিকে ঝিমুনি এসেছিল সম্ভবত। আধো ঘুম আধো জাগরণ অবস্থা। সকাল আটটার দিকে থেকে মিটারের প্যাঁ প্যোঁ আওয়াজে একরাশ চিন্তা নিয়ে দিনটা শুরু হলো। ইন্টারনেট বন্ধ। মানি সেন্ড হচ্ছে না। শহরের ঘরগুলো এমন ভাবে তৈরি বিদ্যুৎ ছাড়া এক মুহুর্ত টেকা অসম্ভব ।যে করে হোক আজই মিটারে টাকা ঢোকাতে হবে।কে যেন বলছিল বিদ্যুৎ অফিসে না-কি বিদ্যুৎ বিল দেওয়া যায়।এদিকে বাসায় বাজার সদাইও নেই। গতকাল রাত বারোটা থেকে কার্ফু শুরু হয়েছে । বাসায় টিভি নেই। মোবাইলই ভরসা। এদিকে নেট বন্ধ । যখন কার্ফুর কথা জানলাম, ততক্ষণে কার্ফু টাইম শুরুর মুখে।রাত বলে বের হইনি।কিন্তু এখন
বাইরে যেতেই হবে।দোকান পাট খুলেছে কি-না দেখতে হবে।আপাতত কটা ডিম আর আলু হলেও চলবে।বেরুবার মুখে এক ছাত্রীর মা ফোন দিলো।
- আসসালামু আলাইকুম ভাই।
- ওয়ালাইকুম আস সালাম।
- ভাইয়া বলছিলাম কি, আজ তো আমার মেয়ের জন্মদিন। সন্ধ্যাবেলা ও একটু ব্যস্ত থাকবে।আপনি যদি এখন একটু পড়িয়ে যেতেন তো মেয়েটা একটু ফ্রী হতো। বছরের একটা দিন। বাচ্চা মানুষ বোঝেনই তো।
- কার্ফু চলছে তো। বেরোবো কি করে।
-আরে ও তো হালকা পাতলা। আমাদের শহরে ঝামেলানেই । সানজিদার আব্বু তো একটু আগে সিগারেট কিনে আনলো বাইরে গিয়ে।সব স্বাভাবিক । অর্ডারের কেকও একটু আগে ডেলিভারি দিয়ে গেছে। সবাই তো বেরুচ্ছে।
- ও আচ্ছা।
- আসবেন কিন্তু। সামনেই তো ওর গণিত পরীক্ষা। দ্বিতীয় অধ্যায়ে ওর প্রচুর সমস্যা রয়েছে। বুঝছেন।
কলটা কেটে দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ঘর থেকে বেরুলাম। সানজিদাদের বাড়িটা পুলিশ ফাঁড়ির লাগোয়া। আমি হাঁটতে শুরু করলাম। রাস্তা ঘাট আজ বড্ড বেশি ফাঁকা।কুকুরগুলোকেও দেখা যাচ্ছে না।কাকের সরব উপস্থিতিও খুব একটা নেই। পাশ দিয়ে বিকট আওয়াজ তুলে একটা আলমসাধু ভটভটিয়ে চলে গেল।আবার নিস্তব্ধতা। ফোন দিলাম আবিরের নাম্বারে। সুইচড্ অফ। ওর কোন বন্ধুর নাম্বার আমার জানা নেই। এরকম বোকামির জন্য নিজের ওপর রাগ হচ্ছে।
পুলিশ ফাঁড়ির সামনে দুটো পুলিশ। আমি নিজের মত হাঁটছি। কেমন জানি অস্বস্তি হচ্ছে। ছেলেটার খোঁজ পাওয়া দরকার
। বড্ড বোকা আর সহজসরল ছেলেটা।এতবার করে বাড়ি ফিরে আসতে বললাম। তার এক কথা সে বন্ধুদের সাথে বেইমানি করে এ অবস্থায় স্বার্থপরের মত সবাইকে ফেলে বাড়ি আসতে পারবে না।
- আমাদের কোটার দরকার নেই। তুই শুধু লেখাপড়া ভালো করে কর। ছোটখাট একটা চাকরি ঠিক জুটে যাবে। সরকারি চাকরি মানে তো ঘুষ দুর্নীতি। অত টাকা আমাদের দরকার নেই। কি হবে আন্দোলন করে।
- আব্বু তোমার সাথে এ ব্যপার নিয়ে আমি পরে কথা বলবো। তোমাকে সব বুঝিয়ে বলবো।কোথায় কি সমস্যা। এটা আমাদের...
- শোন স্যেসাল মিডিয়ায় কোন কিছু লাইক কমেন্ট বা পোস্ট শেয়ার করিস না। আর তুই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি চলে আয়।
আবিরের সাথে আমার এটাই শেষ কথা হয়েছিল গতকাল দুপুরে ।
পুলিশ ফাঁড়ি পার হতে এক পুলিশ আমার পথ রোধ করে দাঁড়ালো।
-এদিকে কোথায় যান?
- সামনেই যাবো।
- সামনে কোথায়?
-ছাত্রীর বাসায়।পড়াতে হবে। কিছু কেনাকাটাও করতে হবে।
- এখন যাওয়া যাবে না।
- কেন যাওয়া যাবে না? লোকজন তো যাচ্ছে।
- প্রশ্ন করেন ক্যান? জানেন না কার্ফু চলছে।
- জানি।
- তাহলে বাইরে ক্যান?
-বললাম তো।
- কি বললেন?
- এক কথা বারবার বলতে ভালো লাগে না।
- হাতে কি?
- ব্যাগ।
- কি আছে এতে? বলেই
ইয়াকুব নামে অপর পুলিশকে আমাকে সার্চ করতে নির্দেশ দিল।বিরক্ত লাগলেও চুপ করে রইলাম। সার্চ শেষ হলে আমার মোবাইল আর মানিব্যাগটা কেড়ে নিয়ে পুলিশটি আরেকজনকে নির্দেশ দিল।
ইয়াকুব এরে রুমের ভিতরে নিয়ে বসা।
ইয়াকুব পুলিশ আমাকে মৃদু ঠেলা দিয়ে বলল
- যান ভিতরে যান।
- কোথায়?
ওই যে কোনার বেঞ্চএ দুজন বসে আছেন ওখানে।
ঝামেলা এড়াতে আমি কথা না বাড়িয়ে দুই জনের মাঝখানে চেপে চুপে বসে পড়লাম।ডান পাশের লোকটাকে ভালো করে লক্ষ করতে বুঝলাম ছেলেটা পাক্কা নেশাখোর।আমি তাকাতেই হলুদ দাঁত বের করে মুচকি হাসি দিল।যেন কতদিনের পরিচিত।আর তখনই তীব্র বোটকা গন্ধে আমার দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইলো।
-ভাইজান আমদানি টাইম কয়টায়?
- মানে?
- ধরসে কখন রাতে না সকালে?
হঠাৎ করে ঘামতে শুরু করলাম।অস্বস্তিটা বেড়েছে। ভ্যাপসা গরম।মাথার উপর দিকে তাকিয়ে হতাশ হলাম এই কর্ণারে কোন ফ্যান নেই। নাহ! এরা কখন ছাড়বে কে জানে?বাড়িওয়ালার কাছে ফোন দেওয়া দরকার। এরা তো ফোনটাও নিয়ে নিলো।
এবার ডান পাশের ছেলেটা সশব্দে আওয়াজ তুলে বায়ু বাতাস করলো। অন্য পাশে দুজন মহিলা পুলিশ মোবাইলে ব্যস্ত ছিল। তারা মুখে কাপড় চেপে হাসির আওয়াজ লুকাতে চাইলো। আমার গা গুলিয়ে উঠছে। এই জঘন্য পরিবেশে কতক্ষণ থাকতে হবে কে জানে? বাসা থেকে বের হওয়াটাই বোকামি হয়েছে। চুপচাপ বসে আছি। কিছু সময় পর ছেলেটা কনুই দিয়ে এক খোঁচা মেরে বলল
- ভাইজান গ্যাস লাইট আছে?
বলব না বলবো না করেও মুখ খুললাম।
- আমি বিড়ি খাই না।
- লাইট চাইতাছি। বিড়ি না।
-লাইট নাই।
- কি কেসে ধরলো আপনারে?
- মানে?
- ধরলো ক্যান। এই যে বসায়ে রাখছে না?
- জানি না।
-দৌড় দিছিলেন?
- চুপ।
- ভাইজান চেতেন ক্যান। বিপদে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। দোয়া কালাম পড়েন। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু..
আমার বা পাশের লোকটা,এবার ধমকে উঠলো
- এই চুপ থাক এত কথা বলিস ক্যান শালা টোকাই পো টোকাই।
ম্যাজিকের মত ছেলেটার অকারণ বক বক বন্ধ হলো।
এর মধ্যে মুখে গাঢ় রং চং মাখা এক মেয়ে উপস্থিত হলো। এ টেবিলে ও টেবিলে ঘুরে ঘুরে গল্প করতে লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যে বুঝলাম এ মেয়েটি পুলিশ ক্যান্টিনের রান্নার লোক। আজকের মেনু মুরগীর মাংস সাদা ভাত আর পাতলা ডাল। মেয়েটা খুশি মনে চলে যেতে আড়চোখে দেখলাম নেশাখোর ছেলে ঝিমাচ্ছে। এর মধ্যে কে একজন হাঁক ছাড়লো।
-ইদ্রিস এই ইদ্রিস। ....
ছেলেটা ফোন দিলো কি-না কে জানে। প্রতিবাদ জানাবো কি-না ভাবছি।
বা পাশের লোকটা মৃদু স্বরে জানতে চাইলো
- এরা ছাড়বে কখন?
- জানি না।
- ছোট মেয়েটা অসুস্থ মায়ের পেশারের ওষুধ নিতে হবে। কি ঝামেলায় পড়লাম।
কথা বলতে ভালো লাগছে না। সামনে তাকালাম। একজন দারোগা টেবিলে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছে আর মুড়ি বাতাসা খাচ্ছে। আমাদের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে হঠাৎ হুঙ্কার দিলো
- এই কথা বলে কে? কথা কম..
এমন সময় সেই পুলিশ ভিতরে ঢুকলো। আমার দিকে তাকিয়ে বলল
- এখনও যান নি।
- বসতে বললেন তো
- বাসা কোথায়?
- এই তো
-এই তো কোথায়। ঠিক ঠাক ঠিকানা বলেন।কত নম্বর হোল্ডিং
- ৬৮ ××××× রোড।..
- কি করেন?
- স্কুলে আছি।
-কোন স্কুলে
আমি নাম বললাম। পুলিশটা খানিক কি যেন ভাবলো। ঠিক আছে যান আজকের মত ছেড়ে দিলাম।বাসায় যান। কার্ফুর মধ্যে বাইরে বের হবেন না।আইন মেনে চলবেন, না হলে ঝামেলায় পড়বেন।
- আমার ফোনটা?
- শুধু ফোন? মানি ব্যাগ নিবেন না?
আমি হাত বাড়িয়ে ফোন আর মানিব্যাগ নিলাম। ফোনে বিশটা মিস কল। ছেলের কল না। ছাত্রীর মায়ের।থু করে এক দলা থুথু ফেললাম। বেলা বেড়ে যাচ্ছে। কোথাও যাওয়ার নেই। যা হয় হোক ছেলেটার খোঁজ আগে নিতে হবে। অস্বস্তি বাড়ছে.... আননোন নাম্বারে একটা কল এসেছে।
হাত কাঁপছে। ফোনটা রিসিভ করলাম।
হ্যালো......
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক।
২৭ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫
ইসিয়াক বলেছেন: স্টুডেন্ট পড়াতে বের হয়ে শনিবার আমাকে টানা ছয় ঘন্টা পুলিশ ফাঁড়িতে বসে থাকতে হয়েছে। কি যে অসহ্য অবস্থা। তার উপর পরদিন সেই স্টুডেন্ট এর মায়ের সেকী বিশ্রী ব্যবহার। কেন পড়াতে এলাম না।শুনতেই চাইলো না কি হয়েছিল।ভালো বেতন দেয় তাই বেশি কিছু বললাম না, শেষে বললাম শুক্রবার ওই দিনের পড়া পুষিয়ে দিবো। তারপর শান্ত হলো। এখনকার মানুষ শুধু নিজেরটাই বোঝে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কিছু অভিভাবক আছে এমন বিবেকহীন। আমার পরিচিত এক নারী টিচারকে কার্ফুর মধ্যেও যেতে বলছিল। বেচারি অর্ধেক রাস্তায় গিয়ে ভয়ে চলে আসছে।