নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।
#মাংসভূক
______________
কাশেম মোল্লার ছোট ছেলে ফরহাদ মোল্লার মর্মান্তিক মোটরসাইকেল দূর্ঘটনার খবরে সবাই ব্যথিত হলেও মাইমুনার তেমন কোন আক্ষেপ ছিল না বরং মনে মনে সে বেশ খুশিই হয়েছিল।মৃত মানুষটার থেতলে যাওয়া মুখটা মারাত্মক রকমে বীভৎস দেখাচ্ছিল।
সেই মুখ দর্শনে মাইমুনা একটু ভয় না পেয়ে।প্রায় নিঃশব্দ ঘরে এসে খিল তুলতে তুলতে বলেছিল আল্লাহর মাল আল্লায় নিছে এতে আর আফসোসের কি!
সদ্য কিশোরী মাইমুনার মা পারভীনা বানু ফরিদ মোল্লার বাড়ি কাজ করে আজ প্রায় দশ বছর।মাইমুনা মায়ের সাথে এই বাড়ির আশ্রিতা সেই ছোটকাল থেকে।গ্যারেজের কোনায় ছোট খুপরিতে মা মেয়ের সংসার।
মাইমুনা জানে বড়লোকের বাড়ি কেউ মরলে কয়েক তরফায় খাওয়া দাওয়াটা বেশ ভালোই জমে।অদ্ভুত কোন কারণে সে শোকের মুহুর্তে অন্য হিসেব করছিল।.. মৃত্যুর দিনের দিন খাওয়া, তিনদিনের দিন মিলাদের খানা তারপর চল্লিশা..।এছাড়া আত্নীয় স্বজন থাকাকালীন খানা।খানা আর খানা।
সবশেষে শেষ মিছিলে চল্লিশার খাওয়াটাও অফুরান ছিল। মাইমুনা গোটা পাঁচেক মাংস বেশ আয়েশ করেই খেয়েছিল।
মাইমুনা কি খাদ্য লোভী? স্বার্থপর? হৃদয়হীনা?
ফরহাদের মৃত্যুতে মাইমুনার খুশি হওয়া।তার মনোজগতের চলাচল আপাতদৃষ্টিতে অদ্ভুত এবং রহস্যময় মনে হলেও মাইমুনার সমস্যাটা অন্য জায়গায়। ফরহাদকে লোকজন ভালো ছেলে সোনার ছেলে সহ নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করলেও মাইমুনার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার কারণে মাইমুনা তাকে ভালো সার্টিফিকেট কোন দিনই দিতে পারবে না। নোংরা অসভ্য ইতর লোক পৃথিবী থেকে যত তাড়াতাড়ি দুর হয় ততই মঙ্গল ।
#সবজি
--------------
দুপুর অবধি সারা বাজার ঘুরে দুটো করলা আর একটা পোকা লাগা কাঁকরোল ছাড়া আর কিছুই মিলল না।বাজারে আজকাল অনেকেই কাঁচা মালের ব্যবসা গুটিয়েও নিয়েছে।
আর যাই হোক খুদের ভাতে একটু সালুন না হলে শুধু লবন দিয়ে ভাত গেলা যায় না কিছুতেই।
অথর্ব জয়নবের মেজাজ সকাল থেকে খিঁচড়ে আছে।চারিদিকে শুধু অভাব আর অভাব। আজকাল আর এ জীবনের বোঝা টানতে ভালো লাগে না।সে মরিয়মকে তার অক্ষমতার কারণে বিশ্রী কয়েকটা গালি দিল।
আভাগীর ঘরের আভাগীর খাওয়া ছাড়া আর কোন গুন নাই। সারা বাজার ঘুরে একটা দুইটা তরকারি চাইলে কেউ দেয় না। এইটা কোন কথা? সেও তো...
মার খাওয়ার ভয়ে মরিয়ম দুর থেকে মাকে দেখে আর ভাবে তার সাথীরা সবাই স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। সে কবে স্কুলে যাবে? তার যে ভিক্ষা করতে একটুও মন চায় না। সবজির দাম বাড়ন্ত বলে এখন সবজিওয়ালা বড় বেশি ত্যাড়া কথা কয়। বাতিল সবজি টুকুও নিজের ঝোলায় ভরে রাখে।এতে তার দোষ কোথায়? তবে কি সে চুরি করবে? মা কি তাই চায়?
#ডিম
-----------
স্কুল থেকে ফিরে। বই খাতা একপাশে রেখে সেলিম তার জন্য রাখা খাবারের ওপর থেকে সরপোশ তুলেই চেঁচিয়ে উঠলো
-কি দিয়া খামু? আর কিছু নাই? খিদা লাগছে ভাল লাগে না।
- যা জুটছে ওই দিয়া খা।
- ডিমভাজির মধ্যে এইসব কি দিছো ?
-তেলাকুচা শাক আনছিলাম বাবুলগো ঘরের পিছন তন।ঘরে তো আলুও নাই। এক সাঝ হওনের মতো না।হের লাইগ্যা পাতাগুলা কুচায়ে ডিম দিয়া ভাজছি। খাইয়া দ্যাখ মজা লাগবো।
একটা ডিম চারজন খাওয়া যায় না মা।রোজ রোজ এক খাওন ভালো লাগে না। আর কোন সালুন রান্ধো না ক্যান?
-চালের কেজি কত জানোস?তরকারী কিনবো কি দিয়া? আর কিছু কেনোন লাগে না।ঘর ভাড়া বাকী পড়ছে। তোর বাপের যা ইনকাম হেতে হের বেশি খাওন জুটতো না।লোকটারে কি দোষ দিমু? মহাজনের রিকশার জমাও বাড়াইয়া দিছে।তোর বাপে তো কয় তোরে স্কুল ছাড়াইয়া কামে দিতে।
সেলিম করুন চোখে মায়ের দিকে তাকায়।
জয়নবের বুকটা মুচড়ে ওঠে। ছেলেটা পড়ালেখায় ভালো।তার কিছু স্বপ্ন ছিল সেগুলো একে একে ভেঙে যাচ্ছে ।ছোট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছেলেকে স্বান্তনা দিতেই বুঝি বলে
- গারমেন্ট তো খুলবো না মনে লয়। দ্যাশের যা অবস্থা! দেহি কাল একটা নতুন বাসার কামে ঢুকমু ভাবতাছি।বড়লোকগো কামে গ্যালে যদি কিছু মেলে তো তহন না হয় ভালো মন্দ খাস কেনে।
- গরীব মাইনষের আবার ভালোমন্দ! তোমার ভাত তুমি খাও।
জয়নব উদাস দৃষ্টিতে ছেলের পথের দিকে তাকিয়ে থাকে।আজকাল অনাগত ভবিষ্যতের কথা ভাবলে কেমন যেন একটা ভয় ভয় ভাব হয়। সামনে কি আরও দূর্যোগ আসছে?
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক।
২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৭:৫৭
ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০১
মিরোরডডল বলেছেন:
তিনটা লেখাই কষ্টের কিন্তু এটাই এখন বাস্তবতা।
যেখানে এদের কথা কেউ ভাবে না, সেসময় এই লেখাটার জন্য থ্যাংকস।
অনেকদিন ইসিয়াক ছোট গল্প লেখে না।
অথবা এরকম জীবনের গল্প।
লাস্ট কিছু পোষ্টে কমেন্ট ব্লক দেখলাম।
হোপ ইউ আর ওকে।
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৪৬
ইসিয়াক বলেছেন: আপু,
প্রথমে দুঃখ প্রকাশ করছি দেরিতে প্রতিমন্তব্যে আসার জন্য।
ব্যক্তিগত জীবনে প্রচুর ব্যস্ততার জন্য ব্লগে আর সময় দিতে পারি না। ঠিক সেভাবেই লিখতেও সময় দিতে পারছি না পড়াশোনা তো দুরের কথা। আমি থাকি যশোরে। স্কুলের চাকরি, কোচিং টিউশনি অনেক দায় দায়িত্ব। এদিকে অসুস্থ আব্বা রয়েছেন ঢাকার বাসায়, অন্য ভাই বোনেরা সবাই আমেরিকায়।আব্বার দেখা শোনার জন্য প্রতি সপ্তাহে ঢাকা যশোর করতে গিয়ে, আমার অবস্থা বেশ কাহিল।
সন্মানিত ব্লগারবৃন্দ উনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে মন্তব্য করেন। উত্তর দিতে না পারা ভীষণ লজ্জার এবং কষ্টেরও। সেজন্য মন্তব্য সুবিধা বন্ধ রেখেছি। এজন্য আবারও দুঃখ প্রকাশ করছি।
ভালো থাকুন সবসময়। পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা রইলো।
শুভেচ্ছা।
৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:২৪
শায়মা বলেছেন: গল্পগুলো সবই মন খারাপ করা।
তবে বাস্তব চিত্র। লেখা অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩২
আজব লিংকন বলেছেন: আহা রে জীবন...