নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হতাশাগ্রস্ত মানুষের কদর্যতাই একমাত্র অস্ত্র।

ইসিয়াক

যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ সম্পর্ক

২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৩

টাকাগুলো ঠিক ঠাক গোনা হয়ে গেছে। চকচকে টাকাগুলো আর অপেক্ষাকৃত ময়লা টাকাগুলো আলাদা আলাদা বান্ডিল করা হয়েছে। থরে থরে সাজানো টাকাগুলো এখন শুধু সিন্দুকে তোলা বাকি।বৃদ্ধ জামাল হোসেন সামনে বসা ছেলের দিকে ঘোলা চোখে এক ঝলক তাকিয়ে কি যেন ভাবলেন। তারপর বললেন
-ঠিক আছে এখন যা। পরে ডাকলে আসিস।
রাকিব অবশ্য তার বাপের কথা তেমন একটা পাত্তা দিল না।তার মাথায় অন্য একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা দিনকাল এখন মারাত্মক খারাপ। দিনে দুপুরের অহরহই ডাকাতি হচ্ছে।শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে প্রায় ।
এদিকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে সমস্যা হচ্ছে সোস্যাল মিডিয়ায় এমন কিছু খবরে জামাল হোসেন আজকাল ব্যংকে টাকা রাখতে সাহস পাচ্ছেন না। জমানো টাকাগুলো তুলে আনবেন কিনা এই নিয়ে অবশ্য তার মধ্যে দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করছে।পদে পদে বিলকিসের অভাব অনুভব করছেন। বিলকিস থাকলে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেত।এই বয়সে এসে দুটো সুখ দুঃখের গল্প করার লোক না থাকলে হয় না।।বদমাশ মেয়ে ছেলেটা ঠিকই উড়ে গেল সন্তানদের কাছে।দুনিয়াই স্বার্থপর। সব শালা স্বার্থপর।
রাকিব জামাল হোসেনের প্রথম পক্ষের ছেলে।প্রথম পক্ষের ছেলে বা বউ কাউকে তিনি কখনোই বিশ্বাস করে উঠতে পারেননি।কেন পারেননি সেও এক রহস্য তবে তার যথাযথ কারণ তিনি কখনও দেখাতেও পারেননি।
অনেক দিন বাদে রাকিবকে তিনি নিজের স্বার্থে কাছে ডেকে নিয়েছেন ।আজকাল বিশ্বাসী লোক পাওয়া মুশকিল। এই শহরে তিনটা বাড়ি, দুটো মাঝারি মাপের মার্কেট দেখাশোনার জন্য সার্বক্ষণিক একটা লোক প্রয়োজন।তার উপর জামাল হোসেনের নিজের বয়স হয়েছে। বুদ্ধি ও চলৎশক্তি মোটামুটি ঠিক থাকলেও অনন্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পঁচাশি বছর বয়স একেবারে কমই বা কিসের।
বর্তমানে জামাল হোসেনের দ্বিতীয় পক্ষের সব ছেলে মেয়েরা ইউরোপে সেটেল্ড। গত বছর প্রায় বিনা নোটিশে বিলকিসও দুম করে ছেলেমেয়েদের কাছে চলে গেল। জামাল হেসেন অবশ্য ঢাকা শহর ছেড়ে কোথাও থেকে এক বিন্দু শান্তি পান না। নিজের হাতে গড়া সাম্রাজ্যর প্রতি তার গভীর মায়া।ঘুরে ঘুরে বাড়ি মার্কেটে তত্বাবধানে তার যত আনন্দ। যে ক:দিন বাঁচেন এ শহরেই তিনি থাকবেন। এটাই তার শেষ সিদ্ধান্ত। আর তাই পছন্দ না হলেও রাকিবই এখন তার একমাত্র ভরসার পাত্র।তবে ছেলে তার কাছে মানুষ না হলেও সে জেনেছে ছেলেটি বেশ সৎ। স্বভাবে অবশ্য তার মতই।একরোখা আর ঘাড় তেড়াও।
রাকিব জানালার দিকে তাকিয়ে গলা খাঁকারি দিলো।জামাল হোসেন বিরক্ত হয়ে খেঁকিয়ে উঠলো
- কি? কিছু বলবি না-কি ? যেতে বলছি না।
- না মানে..
- এখন যা পরে শুনবো। আমি এখন গোসলে যাবো।তোর কথা শোনার সময় নাই । বেল বাজালে মজিদ মিয়ারে খাবার দিতে বলবি।তার আগে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। কাজ সেরে খেয়ে দেয়েই গোসল করবো। বেলা বাড়ছে। শেষের টুকু স্বগোতক্তি করে সে।
রাকিব জানে তার বাপ কি কাজের জন্য তাকে এই মুহুর্তে তাড়াতে চাইছেন।
এখন সে দরজায় খিল দিয়ে বুকসেলফের পিছনে থাকা গোপন কুঠুরিতে ঢুকবে।সেখানে রয়েছে গোপন সিন্দুক! সেই সিন্দুকে....
রাকিব এবার সরাসরি বলল
- গত ক'মাস ধরে লক্ষ্য করছি তুমি দোকান ভাড়া বাড়ি ভাড়ার সব টাকা বাসায় রাখছো। এত টাকা বাসায় রাখা তো রিস্কি। দেশের যে পরিস্থিতি!
- তোরে এত সব খবর দেয় কে? এতো খবরে তোর কি দরকার। না-কি অন্য হিসাব করো।
- আপনার সন্দেহ বাতিক আর যাবে না।টাকা পয়সা ব্যাংকে রাখলে তো দোষ দেখি না।
জামাল হোসেন ছেলের দিকে সরু চোখে শীতল দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ জরিপ করলেন। তারপর সাপের মত হিসহিসিয়ে বললেন
- তোর মনে এইসব ধান্দা কে ঢোকাইছে?
- মানে?
- তোর মা?
- মারে টানেন ক্যান। সে তো মরেছে পনের বছর হয়। এখনও তার প্রতি আপনার রাগ ক্ষোভ যায় নাই? এত বিশ ক্যান আপনার কথায়?
- তোর মা ছিল.. যাকগে সেতো দুর হয়েছে। তোর কথায় আসি।তোর ভাবসাব তো আমার ভালো ঠেকছে না।তুই কি আমারে মারবার প্লান করতাছোস?টাকার লোভ বড় লোভ। সত্যি করে বলবি ।তুই বলছিস আমার সন্দেহবাতিক হ্যাঁ আমার সন্দেহ হয়। আজই আমি থানায় যাবো। জিডি করবো। তোর মনে কি আছে আমার জানতে হবে।
- আব্বা এসব কি বলেন? আপনার মাথা তো পুরাই গেছে
- আমার বাড়ি থেকে সোজা বাহির হবি। যা বলছি,ল এখনই বেরো।লাগবে তোকে যা। আর যেন তোর মুখ না দেখি, বুঝেছিস? কুলাঙ্গারের পোলা কুলাঙ্গার হয়েছে । আমার টাকা আমি কি করি না করি সেটা আমি বুঝবো।উনি আসছে মাতব্বরি ফলাতে।
কি বললো আর কি হয়ে গেল!
রাকিবের মুখটা অপমানে কালো হয়ে গেল।এতকাল যা হয়েছে হয়েছে এখন এই বয়সে এসে আর অপমান অপদস্ত হতে তার ভালো লাগে না।এখন সে যথেষ্ট সাবলম্বী।এর আগে বাপ তাদের মা ছেলের প্রতি যে সব অন্যায় করেছে তাতে বাপের প্রতি তার দায় নেই তেমন একটা তবু সে মানবতার খাতিরে....
সারা জীবন জামাল হোসেন প্রথম পক্ষের ছেলে আর বৌকেই বঞ্চিত করেছে।পদে পদে অপমান অপদস্ত করেছে বিনা কারণে । এই নিয়ে রাকিবের অনেক ক্ষোভ থাকা স্বত্বেও যখন বৃদ্ধ অসুস্থ বাবাকে দেখার আর কেউ নেই জানলো।তখন ঠিকই সে এককথায় চলে এসেছে পিতার দায়িত্ব নিতে।
লোকটা সারাজীবন যাদের জন্য এত করলো কই কেউ তো এই শেষ বেলায় তার পাশে নেই।আর এখন আবার শুরু করেছে।
বাবার কথায় রাকিবের ভীষণ অভিমান হলো।
সে একসময় হাঁটতে হাঁটতে চন্দ্রিমা উদ্যানের সামনে চলে এলো। এমন সময় লন্ডন থেকে জামাল হোসেনের দ্বিতীয় পক্ষের বড় ছেলে সাইদ ফোন দিলো। ফোনালাপের সারাংশ হলো। সে কি আব্বাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করছে? আব্বার টাকায় হাত দিলে.. ইত্যাদি ইত্যাদি।
রাকিব হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।
এবার সে উল্টো পথ ধরলো। এই পৃথিবীটা এত নোংরা কেন? মনটা আজ বড় বিক্ষিপ্ত।
খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে মন ভালো করবার চেষ্টা করলো। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলতে না ফেলতে..
আবার একটা ফোনকল এবার ফোন দিয়েছে রায়হান। নিশ্চয় একই অভিযোগ.. তাছাড়া আবার কি। আব্বার না হয় বয়স হয়েছে ভায়েরা...
কিছুক্ষণের মধ্যেই রাকিব মালিবাগের উদ্দেশ্য রওনা দিলো
অনেক হয়েছে আর না সে এবার ফিরে যাবে। এই সব ঝুট ঝামেলা তার পোষাবে না।এই বয়সে মানসিক শান্তিটা তার কাছে সবচেয়ে বড়।
জামাল হোসেনকে যে দেখাশোনা করে করুক।তার কোন দায় নেই।
পরিশিষ্ট
ঘন্টা দুয়েক পর
বাস চলছে তীব্র গতিতে। ঠিক দুপুরে পদ্ম সেতু থেকে পদ্মা নদীর সৌন্দর্য সত্যি অদ্ভুত। রাকিবের বাস পদ্মা সেতুর উপরে।হঠাৎ আবার ফোন বেজে উঠলো। এবার জামাল হোসেন ফোন দিয়েছে। একবার দুবার.. ধরবে না ধরবে না মনে করেও রাকিব ফোন ধরলো। বয়স্ক মানুষটার কোন অসুবিধা হলো কি-না কে জানে? তার একটু চিন্তা হলো।
-হ্যালো
-কোথায় রে তুই?
- কি সমস্যা বলো।
- ফোন ধরিস না কেন? বড্ড লায়েক হয়ে গেছো না। কি মনে করিস নিজেকে?
- কি বলবে বলো।
- কোন ওষুধ কখন খাবো বুঝতে পারছি না তো। দেখিয়ে দিয়ে যা। আর আমার পান ফুরিয়ে গেছে..
রাকিব লাইনটা কেটে দিলো।পদ্মা নদী সেতুর উপর থেকে সত্যি মনোরম। রাকিব সেই দৃশ্য উপভোগ করছে। হঠাৎ বুকটা কেন জানি মুচড়ে উঠলো। নাহ তার মনে হয় ফেরা উচিত।বয়স্ক মানুষ।তাঁর অবর্তমানে আব্বার যদি বড় কোন অসুবিধা হয়ে যায়।কিন্তু..
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৪০

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: বাস্তবতা তুলে ধরেছেন।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩১

ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: গল্পঃ সম্পর্ক

শিরোনাম লিখেছেন। শিরোনামে ''গল্প'' কেন লিখলেন? না লিখলে কি আমরা বুঝতে পারতাম না যে আপনি গল্প লিখেছেন?
কবিতা লিখলেও আপনি লিখে দেন কবিতা। কেন কেন কেন??
আরেহ ভাই আমরা তো পড়লেই তো বুঝতে পারবো আপনি কি লিখেছেন গল্প না কবিতা।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

ইসিয়াক বলেছেন: এটা এক ধরনের প্রেজেন্টেশন। অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.