![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'রাজীব, কাল আসবে তো পড়াতে?' - ছলনাভরা চোখদুটি নিয়ে জিজ্ঞেস করল রিন্তার মা।
'কালকে তো আমার একটু কাজ আছে আনটি, কালকে আসব না বোধ হয়।' - সাথে সাথেই উত্তর দিল রাজীব।
'কালকে একটু কষ্ট করে অবশ্যই আসো সোনা, তোমার আঙ্কেল তোমার সাথে কি যেন কথা বলবে। ও তো আবার পরশু চায়না যাচ্ছে বিজনেস এর কাজে।' - আশাভরা কণ্ঠে বলল রিন্তার মা।
'আচ্ছা আনটি, ঠিক আছে তাহলে। আমি যেভাবেই হোক কালকে আসব। আজ তাহলে আসি।'
দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসল রিন্তার মা।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে রাজীব। একটি নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বাবা মা গ্রামে থাকেন। পড়ালেখা আর নিজের হাতখরচ যোগানোর জন্য তাই টিউশন করায় রাজীব।
রিন্তা ইংলিশ মিডিয়ামের ক্লাস সেভেন এর ছাত্রী। গত এক বছর ধরে রিন্তাকে পরাচ্ছে রাজীব। আরও ২ টা টিউশন করায় রাজীব। কিন্তু রিন্তার মায়ের মতো এতো আদর তাকে আর কোন গার্জিয়ানই করেনা। রিন্তার মায়ের নাম পরী। বয়স খুব বেশি নয়। অদ্ভুত সুন্দর দেখতে। রাজীব যখন প্রথমদিন পড়াতে যায় সেদিনই রিন্তার মা বলেছিল তাকে নাম ধরে ডাকতে। তাতে তার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু রাজীবের চারপাশের পরিবেশে এটা চরম বেয়াদবিরই নামান্তর। তাই রাজীব এই বিষয়টা নিয়ে কখনো চিন্তাই করেনি। ও প্রথম থেকেই আনটি বলেই সম্বোধন করে রিন্তার মাকে।
পরের দিন যথারীতি সন্ধ্যা ৭ টায় দরজায় বেল বাজাল রাজীব। ভিতর থেকে দরজা খুলতেই রাজীব দেখল পাতলা কালো রঙের শাড়ি পরে দাড়িয়ে আছে রিন্তার মা। রাজীবকে দেখেই দৌড়ে খুব কাছে এসে আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করল- ' এতো দেরী করে কেউ আসে? সেই কখন থেকে রেডি হয়ে বসে আছি তোমার জন্য।' বলেই কেমন যেন একটা হাসি দিয়ে উঠে রিন্তার মা।
সেই হাসির অর্থ বুঝেনা রাজীব। তারপরেও জিজ্ঞেস করে- ' আমার জন্য বসে আছেন মানে? বুঝতে পারলাম না আনটি!'
'কিছু বুঝতে হবেনা। যাও, ড্রইং রুমে যেয়ে একটু বস। আমি আসছি।'- বলেই নিজের বেডরুমের দিকে যেতে থাকল রিন্তার মা। পিছন ঘুরতেই রাজীব খেয়াল করল তার ব্লাউজ টি পুরোটাই বেকলেস।
কি হচ্ছে চিন্তা করতে করতেই রাজীব যেয়ে ড্রইং রুমে বসল। ৫ মিনিট পরে পরী আনটি এসে বসল রাজীবের ঠিক পাশেই। রাজীবের গায়ের সাথে গা লাগিয়ে বসায় রাজীব একটু ইতস্তত বোধ করে যেই একটু সরে বসতে গেল, তখনই পরী আনটি বলে উঠল- 'এতো দূরে সরে বসতে ইচ্ছে হয় কেন তোমার?'
রাজীব নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে সাথে সাথেই জিজ্ঞেস করল- ' রিন্তাকে দেখছি না আনটি? আমার তো আজকে সময় একটু কম। ওকে বেশীক্ষণ পড়াতেও পারবোনা ।'
'রিন্তা একটু বাইরে গেছে। আর বলনা! তোমার আঙ্কেল কাল চলে যাচ্ছে তাই ওর বন্ধুরা ওকে দাওয়াত দিয়েছে। সেখানেই গেছে তোমার আঙ্কেল রিন্তাকে নিয়ে।'- বলতে থাকে পরী আনটি। 'আমার ও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তুমি এসে ঘুরে যাবে চিন্তা করে আমি আর যাইনি। তোমার কথা চিন্তা করেই থেকে গেলাম।'
'ওহ! আনটি, আপনি কি তাহলে এখন যাবেন? আমি তাহলে উঠি? আপনিও যান দাওয়াতে?'
'আরে নাহ সোনা। তোমার জন্যই তো থাকলাম। তোমাকে সময় দিব বলে। হি হি হি হি!'- অদ্ভুত শব্দ করে হাসতে থাকে পরী আনটি।
'আচ্ছা এই প্যাকেট টা নাও'- বলেই রাজীবের কাছে একটা প্যাকেট এগিয়ে দেয় পরী আনটি।
প্যাকেট এর ভিতরে কি আছে বাইরে থেকে বোঝা কঠিন। এমন চিন্তা করতে করতেই পরী আনটি বলে উঠে- ' নিচে মেডিসিন শপে যেয়ে এই কাগজ টা দিবে। বলবে ওষুধ টা দিতে। আর এই প্যাকেট এর জিনিসটা চেঞ্জ করে আনবে সিক্রেট লুক্স থেকে। ওদের প্যাকেট টা দিলেই হবে। আমি বলে দিয়েছি।'
'আচ্ছা আনটি ঠিক আছে। আমি এনে দিচ্ছি।'
'তাড়াতাড়ি এসো কিন্তু। আমি তোমার জন্য ওয়েট করছি। আর এই নাও টাকা।' - বলেই রাজীবের হাতে ১০০০ টাকার একটা নোট দিয়ে দেয় পরী আনটি।
নিচে নেমে আসে রাজীব। সিক্রেট লুক্স মেয়েদের প্রসাধনীর দোকান। সেখানে যেতে ২০ টাকা রিকশা ভাড়া লাগবে। এমন চিন্তা করে হাঁটতে হাঁটতেই এক ফার্মেসির সামনে এসে থামে রাজীব। সেখানে যেয়ে কাগজ টা দিয়ে বলে- ' এটা দেন তো ভাই।'
দোকানদার কাগজটা দেখে রাজীবের দিকে একবার তাকায়। তারপর কি যেন একটা প্যাকেট করে দিয়ে বলে- ' এই নেন। ১২০ টাকা দেন।'
টাকা দেয় রাজীব। ছোট একটা প্যাকেট। কাগজের ঠোঙায় মোড়ানো দেখে ভিতরে কি আছে বোঝাটা কঠিন। চিন্তা ভাবনা না করে পকেটে প্যাকেটটা ঢুকিয়েই রিকশা ডাকে- ' এই মামা যাবা ১৭ নাম্বার রোড?'
' ২০ টাকা লাগব'
'আচ্ছা চল। ২০ টাকাই দিব।'- বলে রিকশাতে উঠে বসে রাজীব।
রিকশা চলছে। পরী আনটি যেই প্যাকেট টা দিয়েছিল রাজীবকে হথাত সেটাতে চোখ পরে রাজীবের। ভিতরে কি আছে দেখবে কি দেখবে না এমন চিন্তা করতে করতেই প্যাকেটটা মনের অজান্তেই খুলে ফেলে রাজীব।
কি করবে বুঝতে পারেনা রাজীব। প্যাকেট এ একটা ইন্নার ওয়্যার রাখা। এটা চেঞ্জ করতে আনটি আমাকে কেন?
কিছুই চিন্তা করতে পারছেনা রাজীব। রিকশা থেকে নেমে কখন যে দৌড়ানো শুরু করেছে আর কোথায় যে যাচ্ছে কিছুই জানেনা ও।
পিছন থেকে রিকশাওয়ালা চিৎকার করছে- ' মামা, আপনার প্যাকেট ফালায় জাইতাসেন। নিয়া যান। ও মামা '
গত কয়েকদিনের সব কিছু পানির মতো পরিষ্কার মনে হতে থাকে রাজীবের কাছে। আর চিন্তা করতেই করতেই দৌড়াতে থাকে রাতের ঢাকায়...
©somewhere in net ltd.