নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ চেহেরায় থাকে না, থাকে বুকের ভিতর। এর কোন বিবর্তন নেই। এ সৃষ্টির সেরা।

রাহাত চৌধুরী(দুঃখ বিলাসী কবি)

লেখক

রাহাত চৌধুরী(দুঃখ বিলাসী কবি) › বিস্তারিত পোস্টঃ

র‍্যাগিং

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১৯


শাকিলের মন খুব খারাপ।রুমে একা শুয়ে আছে।তার আপনজন বলতে একমাত্র আম্মু।বাবা,ভাই বোন কেউ নেই।অনেক কষ্টে তাকে বড় করেছে।একমাত্র আম্মুকে ছেড়ে সে বাসা থেকে অনেকটা দূর বাংলাদেশের নামকরা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসছে।সে নিজের মেধায়,নিজের যোগ্যতায় এত্ত এত্ত স্টুডেন্টকে পিছনে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে।কিন্তু তবুও তার মন খুবই খারাপ,চোখে কয়েক ফোটা জল টলমল করছে।হঠাৎ করেই দরজায় টোকা দেওয়ার শব্দ শুনতে পায়।দরজা খুলে দেখে এক বড় ভাই।
__এই তোর নাম কি রে?
__ভাইয়া শাকিল মাহমুদ।
__ তুই একটু ওই রুমে আয় তো।ভাইয়ারা তোকে ডাকছে।
__জ্বি ভাইয়া আসছি।
__তারাতারি আসবি,দেরি করবি না ।
__আমি এখনি আসছি ভাইয়া।
শাকিল রুমের দরজা লাগিয়ে ভাইয়া যে রুমে যেতে বলে তাঁর কাছে যায়।দরজায় গিয়ে টোকা দেয়।ভিতর থেকে একজন বলে,
__কে?
__ভাইয়া আমি শাকিল।আসব?
___আয়
শাকিল ভিতরে যায়।দেখে চার পাচ জন বড় ভাইয়া বসে আছে।তাদের মধ্যে একজন বলে,
__কে রে তুই?কি চাস এখানে?
__ওই ভাইয়া বললেন,আপনেরা আমায় ডেকেছেন।
__ঐ ভাইয়ার নাম কি?
___জানি না ভাইয়া।
___(সেই ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আরেক ভাইয়া বলে,কি রে তুই কি এই ছেমরারে ডেকেছিস?)
___সেই ভাইয়া অনেকটা অবাক হয়ে বলে,না তো।আমি এরে ডাকতে যাব কেন?কেরে তুই?
শাকিলের মাথায় যেন আকাশ ভেংগে পড়ে।আমতা আমতা করে কি যেন বলতে গিয়ে থেমে যায় ।
এক ভাইয়া বলে আমাদের আড্ডা তো নষ্ট করে দিলি।ওই চেয়ারে বস।
এক ভাইয়া বলে,কি যেন তোর নাম?
__অনেকটা নিচু কন্ঠে ভাইয়া শাকিল।
__একজন পাশ থেকে বলে,আমরা তোর সিনিয়র ভাইয়া।
__আরেক জন বলে,কিরে তোর শার্টের হাতল জড়ানো কেন?
__শাকিল কি বলবে বুঝতে নয়া পেরে বলে,ভাইয়া গরম লাগছিল।শাকিল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সময় শুনেছে বড় ভাইয়ারা নতুনদের র‍্যাগ দেয়।সে বুঝতে পারে তাকে র‍্যাগ দেওয়ার জন্যেই নিয়ে আসা হয়েছে।
__একজন বলে,গরম লাগছে তাই হাত জড়িয়ে রেখেছিস! অকে শার্ট খুলে ফেল।
__না ভাইয়া ঠিক আছে,গরম লাগেনি।
__যা বললাম তাই কর।।বেয়াদবের মত বড় ভাইয়াদের মুখের উপর কথা বলিস।
__শাকিল উপায় না পেয়ে শার্টটা খুলে ফেলে।
__পাশ থেকে একজন বলে,কিরে কখনও চটি পড়েছিস?(চটি গল্পের কথা বুঝাতে চেয়েছেন)

__শাকিল আগে শুনেছে চটি গল্প গুলো খুব বাজে হয়।সে বলে,জ্বি না ভাইয়া?
__একজন অবাক হয়ে বলে,কি রে তুই কখনও চটি জুতা পড়িস নি?
__শাকিল বলে,জ্বি ভাইয়া আমি চটি জুতাই তো পড়ি।
___তাহলে যে বললি,পরিস না?
__শাকিল ইতস্ত হয়ে বলে,ভাইয়া আমি ভেবে ছিলাম আপনি চটি গল্পের কথা বলতে চেয়েছেন।
__পাশ থেকে একজন বলে,কি শয়তান ছোকরা রে তুই?কিরে কত গুলো প্রেম করেছিস?
(সে যদি বলত চটি পড়ে,জুতার কথা মনে করেও তবেও অন্যরকম ভাবে একে নিচে নামাইত)
__ শাকিল অনেক নিচু স্বরে বলে,একটাও না।
__একটাও না?মিথ্যে বলিস কেন?সত্যি করে বল তো কতবার ডেটিং এ গেছিস?
__শাকিলের মন খুব খারাপ হয়ে যায়।মাথা নিচু করে বলে,সত্যিই বললাম ভাইয়া।
__চুপ কর বেয়াদপ,বড় ভাইদের সাথে মুখে মুখে তর্ক করিস?সত্যি করে বল তো তোরটা কত বার গার্ল ফ্রেন্ডের ওইটাতে লাগিয়েছিস?
___শাকিল বুঝতে পারে,ভাইয়া কি জিজ্ঞেস করেছে।শাকিলের চোখে যেন পানি চলে আসে।নিজেকে সামলে মাথা নিচু করে বলে,ভাইয়া একবারো না।
__পাশ থেকে একজন হাসতে হাসতে বলে,কিরে তোর নাই নাকি?না তোরটাতে কোন প্রব্লেম আছে?
__শাকিল কি বলবে বুঝতে পারেনা।মাথা নিচু করে থাকে।
__পাশ থেকে একজন বলে,আচ্ছা প্রথমে F শেষে K দিয়ে একটা word বল?(আসলে ভাইয়ারা FUCK কথাটি শুনতে চেয়েছেন,FUCK বললেও বিপদ,না বললেও বিপদ)
__শাকিল বুঝতে পারে ভাইয়ারা কি শুনতে চাইছেন।সে অনেক ভাবতে থাকে।
__পাশ থেকে এক ভাইয়া বলে কি রে সামান্য একটা word বলতে পারছিস না?চুরি করে চান্স পাইছিস নাকি?
___শাকিল ভয়ে বলে ফেলে,ভাইয়া frank.
___এর মানে কি?
___শাকিল এর মানে বলতে পারে না।অনেকদিন আগে পড়েছিল এই রকম শব্দ,মুখে এসছিল তাই বলে ফেলেছে।
___সামান্য এটাই পারলি না?আচ্ছা বল FUCK মানে কি?
___শাকিল কিছু বলে না,মাথা নিচু করে থাকে।ওর চোখের কোনে জল টলমল করছে।
___পাশ থেকে একজন চেয়ারে গামছা গোল করে পেচিয়ে দিয়ে বলে,মনে কর এইটা স্যানিলিওনের.........তুই এখন কি করবি?
___শাকিল লজ্জায় মাথা উপরে তুলতে পারেনা।মাথা নিচু করে বলে,ভাইয়া কিছুনা।
__পাশ থেকে একজন বলে,কি রে তোর সত্যিই কি নাই??তুই হিজড়া নাকি?পান্ট খোল দেখি তো।
__শাকিল মাথা নিচু করে থাকে।চোখ থেকে এবার এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।
__আচ্ছা এবার বোটানি কে ব্যাস বাক্য কর তো?
__শাকিল পাড়ে না।ভাইয়া শিখায় দেয় এর ব্যাস বাক্য কি।(কি শিখিয়ে দেয় নাইবা বললাম)।এর পর অনেক প্রকার নামাতা শিখিয়ে দেয়,এর পর তার মুখে শুনে।অনেক লজ্জা আর কষ্ট করে নামতা গুলো ওকে বলে শাকিল।(কি নামতা তা নাইবা বললাম,বুঝে নিয়েন)।তাকে দিয়ে সাপের নাচ নাচিয়ে নেয়।আরও অনেক অনেক বিশ্রি কথা তাকে শিখানো হয় যেগুলো শাকিল আগে কোন দিন শুনেনি।
লজ্জায় শাকিলের চোখ থেকে পানি ঝরতে শুরু করে।সেদিন অনেক মানষিক টর্চারের পর তার মুক্তি মেলে।ভাইয়ারা অবশ্য অনেক কিছু খাওয়ায় অকে,পড়ে আবার বলে কিছু মনে করিস না।মজা করলাম একটু।
এ ভাবে প্রায় ১৫-২০ দিন বড় ভাইয়াদের এই রকম বিভিন্ন মজার সন্মুক্ষিন হতে হয়।কখনো বড় আপুকে প্রপোজ করতে বাধ্য করে,প্রপোজ করার পর অনেক বাজে বাজে কথাও শুনতে হয়।আরও বিভিন্ন ভাবে বড় ভাইয়ারা অশ্লিলতা করে তাকে মজা হিসাবে চালিয়ে দেয়।অনেক ভাইয়া তাদের মেধাবি মাথায় এক্সেপশনাল উপায়ে অশ্লিল ভাবে র‍্যাগ দেয় এরপর অবশ্য খুব ভাল ভাবে তাদের খাওয়ায়।বলে মজা করলাম।
অনেকটা এ রকম, “একটা মেয়েকে জোড় করে রেপ করে তাকে নতুন ড্রেস পড়িয়ে দিয়ে মিষ্টি করে,ভালবাসা নিয়ে বলা হচ্ছে আপু কিছু মনে করিস না কেমন,তুই তো আমার ছোট বোনের মত।তোর সাথে জাষ্ট একটু মজা করলাম।কিছু খাবি?আচ্ছা বার্গার খাবি,না কাচ্চি বিরিয়ানী খাবি?এখানকার কাচ্চি বিরিয়ানী কিন্তু অনেক ভাল”।হাহাহাহাহাহাহাহা.........কি ভাইয়া আপনারও হাসি পাচ্ছে নাকি?


সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ বলে দেয় ক্যাম্পাসে র‍্যাগিং নিষিদ্ধ।কেউ করলে তার বিরুদ্ধে লিগাল একশন নেওয়া হবে।এই কথাটি সবচেয়ে মজার কথায় হয়ে থেকে যায়,কেউ মানেনা এটা।বড় ভাইয়ারা কিন্তু এটাকে র‍্যাগিং বলে না,এটাকে মজা করা বলে।এই র‍্যাগিংকে তারা ফরজ কাজের মত ফরজ করতে বিভিন্ন যুক্তি দেখায়।কেউ বলে জুনিয়রদের র‍্যাগ দিলে তাদের সাথে সম্পর্ক ভাল হয়,তাদের সাথে ফ্রি হওয়া যায়।আবার কেউ বলে জুনিয়রদের র‍্যাগ না দিলে তারা বেয়াদবি করে।আরো কত যুক্তি তাদের।আমি সেসব ভাইয়াদের কাছে একটা প্রশ্ন করতে চাই আচ্ছা পরিচিত হওয়ার আর কি কোন উপায় নেই?এই র‍্যাগিং এর মাধ্যমেই পরিচিত হতে হবে?সম্পর্ক ভাল হওয়ার কি আর কোন উপায় নেই?এই ভাবেই তাদের সাথে সম্পর্ক ভাল করতে হবে?

বিশ্ববিদ্যালয় মানে তো শিক্ষার সর্বোচ্চ পর্যায়।এই শিক্ষা শুধু তো পাঠ্য বইয়ের শিক্ষা না।নিজের ক্যারেক্টার গঠন,নীতি শিক্ষারও সর্বোচ্চ পর্যায়।সব জুনিয়ররা মনে করে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যারা পড়ে তাদের ব্যবহার,নীতি শিক্ষ্যাও সর্বোচ।কিন্তু একটা জুনিয়র এসে যখন এ রকম ব্যবহারের সন্মুখিন হয় তখন তাদের এই বিশ্বাস কিন্তু একদম ভেঙ্গে যায়।নতুন যারা আসে তারা এমনিতেই মেন্টালি ভাবে অনেক আপসেট থাকে,নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে তাদের এমনিতেই অনেক কষ্ট হয়।আচ্ছা র‍্যাগিং যদি সত্যিই এত্ত ভাল হত সব জুনিয়ররা কেন এটাকে ভয় পায়?বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন এটাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে ঘোষনা করল?কেন প্রথম প্রথম সিনিয়রদের দেখে ভয়ে পালিয়ে বেড়ায়?আমরা কি এই র‍্যাগিং টাকে এমন করতে পারিনা,যে র‍্যাগ জুনিয়ররা নিজে খুজে খেতে আসবে?তথাকথিত সেই র‍্যাগিং এর প্রচলন বাদ দিয়ে এমন এক প্রকার র‍্যাগিং এর প্রচলন করি,যে র‍্যাগিং এর জন্যে সব জুনিয়ররা অধির আগ্রহে থাকবে।আমি জানি ইমিডিয়েট সিনিওররা সব চেয়ে বেশি র‍্যাগ দেয়,কারন তারা এই র‍্যাগিং রিসেন্টলি সয্য করেছে।কিন্তু এই তথাকথিত র‍্যাগিং এক মাত্র এই ইমিডিয়েট সিনিওররাই পরিবর্তন করতে পারে।কারন আপনেরা যে ভাবে জুনিওরদের র‍্যাগ দেওয়া শিখাবেন তারা সে ভাবেই শিখবে,তারাও তাদের জুনিওরদের এই ভাবেই শিখাবে।কাউকে না কাউকে তো সাকরিফাইস করতেই হবে,এই সাকরিফাইসটা না হয় আপনেরাই করলেন।আমি প্রতিশোধ নিতে পারি,কিন্তু আমি নেই নি,আসলে গৌরব এখানেই আছে,কিন্তু আমি আমি প্রতিশোধ নিয়েছি এতে শুধু লজ্জায় আছে,কোন গৌরব,কোন স্বার্থকতা নেই।সো প্লীজ প্লীজ এই তথাকথিত র‍্যাগিং এর পরিবর্তন করুন........

যারা জুনিয়র তাদেরও একটা কথা বলি,এই ধরনের বিশ্রি র‍্যাগ ১০০ জনের মধ্যে ১ জন দেয়।বাকিরা সবাই ভদ্র ভাবেই মজা করে,কখনই লিমিট ক্রস করেনা,লিমিট তখনই ক্রস করে যখন তোমরা বেশি বেয়াদবি কর,ক্যাম্পাসে নতুন এসে মুই কি হনুরে হয়ে যাও।আর কিছু কিছু জুনিয়রদের জন্যে সুস্থ্য,ভদ্র র‍্যাগিং সত্যিই দরকার,এক যারা অভদ্র,বেপোওরা তাদের,আর যারা গ্রাম থেকে এসে সেই গ্রামের মতয় চলাফেরা করে তাদের জন্যে।এই ভদ্র,লিমিটের মধ্যে র‍্যাগিং তাদের সত্যিই অনেক উপকার করে।সিনিওরদের সব সময় রেসপেক্ট দিবে,রেসপেক্ট দিতে কষ্ট হলেও কখনই অসন্মান কর না।আর যেখানে দেখছ তোমার জন্যে র‍্যাগ নিশ্চিত সেখানে ভয় পেওনা।কারন “র‍্যাগ যেখানে নিশ্চিত,সেখানে তা উপভোগ করায় শ্রেয়”।ভাইয়ারা মজা নিতে চাচ্ছে তুমি মজা দাও,ভদ্রতা বজায় রেখে মজা দাও,নিজেও মজা দাও।বিশ্ববিদ্যালয় লাইফটাকে উপভোগ কর।সবার জন্যে শুভ কামনা রইল,স্বার্থক হোক,আনন্দময় হোক তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয় লাইফ।ভাল থেকো সবাই।ধন্যবাদ।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.