![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি। কেউ না। তবে মাঝে মাঝে আমার দুষ্ট মনটা কানে কানে এসে বলে, তুমি মহাকালের উচ্ছল সমুদ্রে ভেসে বেড়ানো এক কচুরিপনা । কালের ঊর্মিমালার সাথে সাথে নাচা ছাড়া তোমার আর কোন কাজই নেই.....
ঘুড়িটা স্বাচ্ছন্দে ঘুরছে আকাশে। অপরুপ নিপুনতায় আকাশের বুকে ইচ্ছে মতো ছুটাচ্ছে ওহা পাশের বাসার খোকা। তৃতীয় শ্রেণীতে সরে পা রেখেছে। অথচ ঘুরি উড়ানোতে তার পারৎগমতা অনেক উঁচুতে। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আমিও অনিমেষ তাকিয়ে আছি। উড়াতে পারবেন ? খোকা হাসি মুখে জানতে চাইল। আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের খবর নিতে সাহস করে না। আমি বললাম।
তাহলে দেখে দেখই তব বেলা পার করুন। হঠাৎ রঙিন ঘুড়িটি এদিকে ওদিকে দু,তিন পাক ছুটে মাঠিতে আচঁড়ে পড়লো। রঙিন ঘুড়ি ধুলি ধুসরিত হলো। তাকিয়ে দেখলাম ঘুড়ির মালিক ফুঁকিয়ে ফুঁকিয়ে কাঁদছে। পেছন থেকে তার মা ঝাঝালো কন্ঠে বকে বলছেন অনবরত। “পড়া-লেখা নেই; সাত-সকালে ঘুড়ি ওড়াতে চলে এসেছো। যাও, পড়তে বসো পাজি ছেলে। বুঝতে আর বাকি রইলো না। তার মা কাচি দিয়ে লাঠাইয়ের সুতা কেটে দিয়েছেন। ছোট্ট খোকার জন্য মনের আকাশে একটুকরো বিষন্নতার ভেলা ভেসে আসলো। এসব মায়েরা এবং আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কোমলমতী শিশুদের আতœার অকাল মৃত্যু নিশ্চিত করে নিজের অজান্তে। প্রমথ চৌধুরীর “বই পড়া” প্রবন্ধের সার কথা ছিলো এটিই।
বাসায় ঢুকে মসল্লায় দাঁড়ালাম। আজ অনেক নফল নামায আদায় করবো। ইচ্ছে করছে তাই। আবার অনেকটা বাধ্য হয়েও। কারণ প্রভুর কাছে কিছু একটা চাইবো। গোল্ডেন অ+। আজ আমার ঝ.ঝ.ঈ পরীক্ষার ফলাফল দিবে। গোল্ডেন অ+ আমার খুবই জরুরী। লোকে বলে, আমি যত ভাল ছাত্রই হই না কেন গোল্ডেন না পেলে সবই ছাই। গোল্ডেন না পেলে এ বিশ্বে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার বাসনা করাটাও মহা পাপ। পৃথিবীর কোন ভাল প্রতিষ্টানে তোমার ঠাই নেই। তোমার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও তোমাকে পাড়া-গাঁয়ের কোন অখ্যাত প্রতিষ্টানে ছন্নছাড়া হয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে। সেখানে তোমার মেধার কোন মূল্যায়ন হবে না। মোদ্দাকথা তোমার ইচ্ছার জলাঞ্জলি দিতে হবে অবশ্যি। ২.৩০ পর্যন্ত জায়নামাজে বসে ফলাফলের অপেক্ষা করব। যাতে আল্লাহ দয়া করেন। ভাল করে পড়েছি। পরীক্ষাও দিয়েছি ভাল করে। তবু কেন জানি ভয় মনে বাসা বাঁধছে। মাঝে কয়েক মুহুর্ত জায়নামাজ থেকে উঠে বাজে কাজ করে ফেলছি। তাই সঙ্কাটা আরো বেড়েছে। আমার রুমের কপাট বন্ধ করেছি। অনেকেই খাওয়ার জন্যে বাহির থেকে চেচামেচি করে গেল। কোন ফল পায়নি।
২.৩০ পেরিয়ে গেছে। বাইরে বড় আপুর চেচামেচী শুনছি। কান পেতে শুনতে চেষ্টা করলাম। আপু মাকে কোনে বলেছেন “এ” ছেলেকে ডাক্তার বানাবেন। ঐ ছেলে গোল্ডেন তো দূরের কথা অ+ এর দোর গোড়ায়ও পৌছতে পারেনি। পেয়েছে ৪.৬৯।
কথাগুলো মনে খঞ্জর হয়ে আঘাত করলো। সবচেয়ে কষ্ট পেলাম এ ভেবে যে, এতো কান্নাকাটি করার পরও আল্লাহ আমাকে অ+ টাও দিতে পারলো না। মসল্লায় বসে আরো কাঁদলাম । খুব খুব কাঁঁদলাম। এছাড়া এ নিঃস্ব কাঙালের আর কিছুই করার নেই।
ঘন্টা-দেড়েক পর। দরজা খুলে বেরুলাম। বাসায় পিন পতন নিরবতা। কোথাও কোন রা-শব্দ নেই। সবার রুমে ওঁকি দিলাম। কেউ নেই। সবাই বেরিয়ে গেছে। আমার সাথে রাগ করে। কম্পিউটার রুমে গিয়ে দেখি স্কিনে আমার রেজাল্টটা ওপেন করা আছে। দিব্যি দেখেও নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। দেখি আমার সামনের জনের কী অবস্থা। ১০২১৯৯ চাপলাম স্কিনে রেজাল্ট চলে এলো ৪.৮৮। আমার চেয়েও ভাল। অথচ ও আমার লেখা উত্তর গুলোকেই কপি করেছিল। হাতের লেখাও আমার চেয়ে ভাল নয়। কিছুই বুঝা আসল না।
আরেকজনের নাম¦ার চাপলাম। আমার সাইডম্যান। আমার উত্তর ছাড়া একটা সারিও নিজ থেকে লেখার হিম্মতটুকুও যার মনে সঞ্চিত ছিল না। আশ্চর্য তো সে ৫.০০ পেয়েছে।
এটা কেমন যোগ্যতার পরিমাপক বুঝতে পারলাম না। আশা করি ওদের হাতে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ নেই। তারা তো আর সহচর-দৈত্য পাঠিয়ে রেজাল্ট পরিবর্তন করাতে পারবে না। তাহলে কীভাবে এমন হলো ? মনের গহীনে আলোড়ন সৃষ্টি করলো ব্যাপারটা। কাল বোশেখী ঝড় উঠেছে বলা যায়। অজান্তে আবার অশ্রু ঝরে পড়ল অঝোরে......
রুম বন্ধ করে বিছানায় হাটু গেড়ে বসলাম্। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। অনেক বন্ধু ফোন করবে ভেবেছিলাম। কিন্তু কেউ করলো না। সবাইকে দুধের মাছি মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে। আতœীয় সজনেরা ফোন করেছে। রিসিভ করা অপ্রিয় সত্যটা বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছি। মা ফোন করেছে ধরার সাহস হলো না। তবু ধরতে হলো। মা ভাঙা গলায় বল্লেন, কি শুনছি হিমেল? আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না। মায়ের আওয়াজ শুনে আবার কান্না পাচ্ছে আমার । অনেক কথা বলছে মা। কোনটার উত্তর করতে পারছি না। শেষ পর্যন্ত কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে লাইন কেটে দিল।
রাতের বেলায় রুম খুলে বেরিয়েছি। কেউ কোন কথা বলছেনা। আমার দিখে তাকাচ্ছেও না। খুব কষ্ট লাগছে। মনে হচ্ছে যেন, কেউ আমার হৃদয়ের উপর নির্মমভাবে খঞ্জর চালাচ্ছে। দুঃখের দিনে কেউ দুঃখী জনের পাশে থাকে না। তার পাশে বসে কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় না।
পৃথিবীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে খুঁজেছি,/পাইনি কেউ এমন।/যে, শত বাধা পেরিয়ে,/নেয় দুখীর খবর।
গভীর রাত। আমার এক বন্ধু ফোন করেছে। রবি। খুব ভালো বন্ধু। রিসিভ করেই শুনলাম,আপসেট হয়ো না। তবে আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা তুমি গোল্ডেন মিস করেছ। আমি আমার সব বন্ধুকে বলে বেড়িয়েছি তুমি মেধাতালিকার টপ-৫-এ থাকবে। তুমি বোর্র্ডে রিভিউ এপলি কেশন করো। আমি নিশ্চিৎ কোথাও একটা ভুল হয়েছে। তোমার রেজাল্ট শুনে আমি নিজের গোল্ডেন পাওয়ার আনন্দ ভুলে গেছি। বিশ্বাস কর, আমি একটুও উপভোগ করতে পারছি না।” ওর কথাগুলো শুনে গেলাম। প্রতি-উত্তর দিতে পারলাম না। আজ প্রথম আমার চোখে কৃতজ্ঞতার অশ্রু ঝরল। অনিচ্ছা সত্যেও নিজ থেকে ফোন কেটে দিলাম।
গভীর রজনী। চারপাশে নিস্তব্ধতার একচেটিয়া রাজত্ব। জানালা খুলে দিলাম। আমার র্দুদিনেও পূর্ণিমার চাঁদ গালভরে হাসছে। তার এই মায়াবী হাসির ঝলকে অভিভুত কতো কবি অথচ আমি হচ্ছিনা। ঝির ঝির ঝরে পড়া জোছনারা জড়িয়ে ধরলো আমায়। তারদিকে অপলক তাকিয়ে উচ্ছারিলাম সুখ, তব মাঝে মাঝে দেখা মেলে। খুব সকালে ঘুমকে বাই বাই দিলাম। ওযু করে নামায আদায় করি। প্রভুর কাছে দু’হাত উঠিয়ে নিরবে বসে আছি। আমার পাওয়ার মতো কিছুই পেলাম না। অল্পক্ষন পর মোনাজাতের ইতি টেনে দিলাম।
আয়নার সামনে নিজেকে দাঁড় করালাম। কেমন বিচ্ছিরি দেখাচ্ছে মুখটা। সেই ঘুড়ি হারানো খোকার মুখের মতো রক্তীম হয়ে উঠেছে। চোখ দু’টো ফুলে গেছে।
সবাইকে রিভিউ এপ্লিক্যাশনের কথা জানালাম। কেউ কোন কথা বলছে না। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত সবাই। আমার কথা কানেই নিচ্ছে না। এই অভাগাকে নিয়ে ভাবার কোন সময়ই তাদের আর নেই। বিকল হয়ে রুমে ফিরে আসলাম। আজকের মতো আমি জীবনে কখনও কাঁদিনি। র্দুদিনে একে অপরকে সান্তনা দেয়; অথচ আমার পরিবারের সদস্যরা আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। আমাকে তাদের সুখ-মহল হতে বিদায় করতে পারলেই বুঝি তাদের মহা-মুক্তি। তাদের ভাব খানা তাই ইঙ্গিত করছে। এসব ভাবতে ভাবতে দ’নয়নে আবারও নেমে আসল শ্রাবন ধারা ...
সন্ধায় বড় ভাইকে ফোন করলাম। তিনি ফোন রিসিভ করে বললেন, কী বলবি তাড়াতাড়ি বল সময় নেই। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম রিভিউ এপ্লিকেশন করতে চাই। তিরি বিরক্ত গলায় বল্লেন, শুধু শুধু আরো ৭০০ টাকা জলে ফেলে দিয়ে লাভ আছে। তুই যদি গোল্ডেনের নিশ্চয়তা দিতে পারিস তাহলে আমি দেখতে পারি। হ্যাঁ না কিছুই বললাম না। ফোনটা রেখে দিলাম। এক মহান প্রভু ছাড়া পৃথিবীর কারো নিশ্চয়তা প্রদানের ক্ষমতা নেই। এমন কি রাসূলেরও ছিলনা। আমি কাঙাল তো বহুত দূর কী বাদ।
এশার নামায পড়ে বাসায় ঢুকব। এমন সময় মেঝ ভাইয়ের ঝাঁঝালো কন্ঠ কানে আসল। আঁড়ি পাতলাম। তিনি বড় ভাইকে বলছেন, “অযথা খরচ আর করিবেন না তো। ওকি আরো তিনটি বিষয়ে রিভিউ করে অ+ নিশ্চিত করতে পারবে । আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি সম্পূর্ণ ঢুকলাম। আমাকে দেখে সবাই নিজের কাজে ধ্যান দিল। নিরবতা নেমে এলো পরিবেশে।
রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিলাম। শুয়ে শুয়ে অনেক্ষন ভাবলাম। নিজের উপর ভিষন রাগ হলো। পৃথিবীতে আরেক মুহুর্তও বেচেঁ থাকতে ইচ্ছে হলো না। নিরবে হৃদয়ে রক্তক্ষরন চলছে। নিজের অজান্তে মুখে পুরে দিলাম কয়েকটা ট্যাবলেট। কয়েক মুহুর্ত এদিক ওদিক পাশ ফিরে হৃদয় পা বাড়াল অসীম পথে........
©somewhere in net ltd.