নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বোকা_ছেলে_রাজন

বোকা_ছেলে_রাজন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিয়তি

১৭ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:০৮

প্রথম পর্ব

--------

-জান,আজকে প্লিজ শাড়ী পরি? সবাই শাড়ী পরবে?

-কেন?সবাই পরলে তোমাকেও পরতে হবে?এমন কোন কথা কোথায় লেখা আছে?

-ওরা সবাই শাড়ী পরবে।

-ওরা কারা?

-মাধুরি,কেয়া,সাদিয়া...সবাই পরবে।কেয়া খুব রিকুয়েস্ট করতেসে।না পরলে কেমন দেখায়?

-ওদের সবাই কে কি আমি ভালবাসি?আমি যাকে ভালবাসি সে যেন শাড়ী না পরে।

কি ব্যাপার?কথা বলতাস না কেন?কি পরবা শাড়ী?

-না।পরব না।(কান্নার শব্দ)

-হুম।আবার ওদের সাথে পারলার এ যাইও না।ঠিক আছে?

-আচ্ছা।

-আমি ১০ মিনিটস পর আবার ফোন দিব।এখন রাখি।

ফোন কেটে দিলো রাজন।নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল প্রিয়াঙ্কা।এইভাবে বেঁচে থাকা টা প্রিয়াঙ্কার কাছে এখন অসহ্য লাগতেছে।১ বছর এর সম্পর্ক প্রিয়াঙ্কা আর রাজনের।এই একটি বছরই শুধুই না না শুনতে প্রিয়াঙ্কা এখন হাফিয়ে উঠেছে।

প্রিয়াঙ্কার যেইসব ব্যাপারে রাজন এর বাঁধা ছিল-

**শাড়ী পরা যাবে না।

**জিন্স পরা যাবে না। শুধু মাত্র সালওয়ার কামিজ।

**ফেছবুকে শুধুমাত্র মেয়ে বন্ধু থাকবে।

**বন্ধু তো বটেই,বাসার কারো সাথে বাইরে ঘুরতে যাওয়া যাবে না।

**বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ছেলের সাথে কথা বলা যাবে না।

প্রিয়াঙ্কা শুরু শুরুতে মানত সবকিছুই।কিন্তু রাজনের না এর যেন শেষ নাই। একদিন প্রিয়াঙ্কা জিন্স আর ফতুয়া পরে বাসা তে কিছু ছবি তুলে ফেছবুক এ আপলোড দিছিল।রাজন এইটা নিয়া অনেক বড়সড় ঝগড়া করে।প্রিয়াঙ্কাকে থাপ্পর পর্যন্ত মারে রাজন।ঐদিন থেকে প্রিয়াঙ্কা আর সালওয়ার কামিজ ছারা আর কিছুই পরে নাই।আজকের ব্যাপার টা অন্যরকম। প্রিয়াঙ্কার মামাত বোনের বিয়ে।ওর সব বোন আজকে শাড়ী পরবে।খুব ইচ্ছা করতেসে ওর শাড়ী পরতে।কিন্তু রাজন এর বরাবরের মত বাঁধা।ইতিমধ্যেই কেয়া বলে গেছে “আজকে কিন্তু সবাই শাড়ী পরব।তুই কোনটা পরবি ঠিক করে ফেল,এরপর পার্লার এ যাব।”প্রিয়াঙ্কা কি বলবে কেয়াকে?

-কিরে তুই এখনো শাড়ী পরিস নাই।জলদি কর।

-নারে কেয়া পরতে ইচ্ছা করতেসে না।জ্বর জ্বর লাগতেসে।তোরা যা।আমি যাব না।আমি সালওয়ার কামিজ ই পরবো।

-কি বলিস।কোনমতেই না।যা এখনি শাড়ী পর।নিজের বোনের বিয়েতে মানুষ কি সালওয়ার কামিয পরে? আজব তো।

প্রিয়াঙ্কা কি বলবে?মাথা ঘুরতেসে ওর।কি করবে ও?

-কি ব্যাপার কেয়া?

প্রিয়াঙ্কা ঘুরে তাকাল।রবিন।কেয়ার বন্ধু।

-দেখ না রবিন।প্রিয়াঙ্কা শাড়ী পরবে না।

-কেন ?

-কি জানি।ওকেই জিজ্ঞেস কর।

রবিন প্রিয়াঙ্কার দিকে তাকিয়ে

-কেন পরবেন না শাড়ী? পরতে পারেন না?

-পারব না কেন।ভাল লাগতেসে না।

-ভালো লাগতেসে না ??? এইটা কেমন কথা ।আপনার সব বোনরা পরবে।আপনিও পরেন।শাড়ী তে তো মনে হয় আপনাকে খারাপ লাগবে না।নাকি কারো মানা আছে?

-না না মানা থাকবে কেন?

-তাহলে যান আর কথা না বলে পরে ফেলুন।

প্রিয়াঙ্কা আজকে সিধান্ত নিয়েই নিসে। যা হওয়ার হবে।আজকে সে শাড়ী পরবে।

দ্বিতিয় পর্ব

--------

-প্রিয়াঙ্কা তুমি শাড়ী পরস বিয়াতে?

- হা।

-(রাজন একটু অবাক)।কেন পরসিস?

-কেন পরব না?আমি কি মানুষ না?

-আচ্ছা তুই পরছিস।পরে একটা ছেলের সাথে ছবি ও তুলসিস!এত বড় সাহস তোর।তোর সাথে কোন সম্পর্ক রাখব না আর।

-আচ্ছা রাখিস না।তোর এই কথা শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত। যা রাখিস না। আরে তুই কি রাখবি না । আমিই রাখব না।আমাকে পুতুল পাইসিস নাকি। যেমনে খুশি অমনেই চলবো।

ফোন কেটে দিসে প্রিয়াঙ্কা। রাজন পুরা বোকা হয়ে গেছে।প্রিয়াঙ্কা এইভাবে কথা বলল?ওর বিশ্বাস হচ্ছে না এখনো। রাজন ঠিক করলো ও আর ফোন দিবে না।প্রিয়াঙ্কা ফোন দিয়া মাফ চাবে। এরপর যা করার করবে।ফোন তো দিবেই ১০ মিনিটস পর।ফোন না দিয়ে প্রিয়াঙ্কা থাকতে পারবে না।

ফোন করলো প্রিয়াঙ্কা।কিন্তু ফোন আসছে ১০ মিনিটস পর না।আসছে ৪ মাস পর।

-কেমন আছো রাজন?

-ভালো।

-কি করতেছিলা?

-গান শুনতেছিলাম।

-রাজন আমি সরি।

-সরি কেন?

-সরি কেন তা তো জানি না।

-তোমার বয়ফ্রেন্ড কেমন আছে?রবিন না কি জানি নাম।

-(অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর...)নতুন কেউ আসছে লাইফ এ?

- আর নতুন কেউ।তোমাকে ই তো ধরে রাখতে পারলাম না।

-(কান্না কান্না গলায়)ধরে রাখতে চাইস?একটা ফোন ও তো দিলা না।

-আমি তো দিতে চাইছিলাম।কিন্তু ২ দিন পর যখন এফবি তে তোমার ইন এ রিলেশান উইথ রবিন দেখলাম..তখন আর কি দেয়ার ছিল??

-রাজন আমি সরি।

-সরি বলতেস কেন?

-রাজন আমি তোমার না না তে অসহ্য হয়ে গেছিলাম।কিন্তু...

-কিন্ত কি?

-রাজন আমি সরি।

-বুজতেসি না।

-ঐদিন বিয়েতে এত মজা হইসিল।যে আমার কাছে তখন কেয়া দের লাইফ টাকে ভালো লাগতেসিল।কেয়া একি সাথে বয়ফ্রেন্ড আর একি সাথে ছেলে বন্ধুর সাথে মজা করতেসিল।ওর লাইফ টা দেখে খুব জেলাস ফীল হচ্ছিল।

-এরপর?

-রাজন আমি সরি।

-সরি কেন বলতেস?

-রাজন রবিন এর সাথে এখন কেয়ার সম্পর্ক।

-কি???

-রাজন আমি শেষ।

-কিভাবে সম্ভব?

-কেয়ার সাথে রুবেল এর ব্রেকআপ এর পরপরই রবিন এর সাথে সম্পর্ক আজকে ৪ দিন।

-তুমি রবিন কে কিছু বল নাই? কেয়া কে?

-রাজন রবিন এর সাথে আমার সম্পর্ক শেষ তার আগেই।

-মানে?

-রাজন,রবিন আমার কোন কেয়ার নিত না। আমিই ফোন দিতাম সারাদিন।ও শুধুমাত্র সেক্স এর জন্য আমাকে ঠিক করসে। ও আমাকে অনেক স্বাধীনতা দিসে। স্বাধীনতা কি? আমি কি করতাম না করতাম কোন কিসুতেই ওর কিছু আসত না।

-এরপর।

-ওকে আমি আর ৩ ৪ টা মেয়ের সাথে দেখছিলাম।ওকে জিজ্ঞেস করলে বলত বন্ধু নাকি ওর। আমি রাগ করলে বলত আমাকেও ঘুরতে ছেলেদের সাথে।

-এর মানে কি? কেয়া কেন করলো এমন? ও তো জানত।ওকে কিছু বল নাই??

-এরকম ই নাকি হয়।আমাকে সরে যেতে বলসে কেয়া।

-পাগল নাকি? (রাজন এর খুব কারাপ কারাপ লাগতে লাগল)।

-রাজন (প্রিয়াঙ্কা জোরেজোরে করে কাঁদতে লাগল।)

রাজন ফোন কেটে দিলো। প্রিয়াঙ্কার কান্না ও কখনি সহ্য করতে পারত না।আজকেও পারতেসে না। ওর চোখ দিয়ে জল পরতেসে। কেন হল প্রিয়াঙ্কার সাথে এমন ? ও তো অনেক ভালো মেয়ে ছিল। ওকে যা না করবে ও তাই করবে। খুব ভালো মেয়ে ।যখন দেখল রবিনের সাথে ওর সম্পর্ক রাজন সবার আগে ছুটে গেছিল শোভন এর কাছে।

-শোভন এইটা কি হল দোস্ত।আমি তো শেষ।

-আমি আগেই বলছিলাম।মাইয়ারে এমনে চাপ দিস না।থাকব না।ভাই ও তো মানুষ।

-আমি ভুল করে ফেলছি শোভন।আমি ওকে চাই।

-ভুলে যা দোস্ত।(শোভনের চোখেও জল)।

-কেমনে ভুলব?

-দেখ রাজন।মেয়ে তো একরকম বেঈমানি করসে।

-নাহ রে দোস্ত।প্রিয়াঙ্কা বেইমান হইতেই পারে না। ও কেমন আমি জানি।আমার ই ভুল।আমি যে সব হারাইয়া ফেললাম।

শোভন কি বলব বুজতেছে না।এমন করবে প্রিয়াঙ্কা রাজন এর সাথে... শোভনের ও বিশ্বাস হচ্ছে না। রাজন মনে হয় পাগল ই হয়ে যাবে।প্রিয়াঙ্কা এর সাথে কথা বলার জন্য,ওর সাথে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার জন্য যেই ছেলেটা ওদের সাথে কোথায় ঘুরতে যেত না,সারাজীবন একসাথে থাকার জন্য এখন থেকেই ব্যাংক এ টাকা জমানো শুরু করেছিল,যেই ছেলের স্বপ্ন অনেক বড় ছিল,সেই ছেলেটি কে শোভন কি বলে সান্ত্বনা দিবে?কাদুক ও।কাদলে হাল্কা লাগবে।

তৃতীয় পর্ব

---------

-কি করবি এখন?ফিরে যাবি প্রিয়াঙ্কার কাছে আবার?

-না শোভন । আর ফিরে যাব না। ওকে বিশ্বাস তো আর কখনি করতে পারব না।কিন্তু খুব কষ্ট লাগতেসে। ওর কষ্টগুলো আমাকেও কষ্ট দেয়।

-বাদ দেরে ভাই।যেই মেয়ে ১ বছর আর স্বপ্ন গুলকে পিছনে ফেলে ১ রাতের মোহে আরেকজনের কাসে চলে যায়,ওর কষ্ট তোকে কেন টাচ করবে?

- করে রে শোভন।করে।

-নাম্বার কেন বদলাইলি?

-ও ফোন দিলে আমার কেমন যে লাগে।ফোন না ধরলেও ঘুম আসে না।সারারাত ওর ফোন এর জন্য তখন অপেক্ষা করি। মনে হয় কেন যে ধরলাম না। ও তো কাদতেসে নিশ্চয়ই।

-আর ধরলে?

-দুইজন একসাথে কাদি।গত ১ মাস ঘুমাই নাই রে।

-ফিরে যা ওর কাছে।

-তা আর হবে না।দরকার হয় সারাজীবন কেদে যাব।তাও আর যাব না।

-ভালবাসা তো কাঁদাবেই। কাঁদ। তবে যদি আর কেউ আসে,তাকে এমন সবকিছুতেই বাঁধা দিস না। প্রত্যেকের একটা আলাদা জীবন আছে।

-আসবে না কেউ আর। আমার মত ছেলে প্রিয়াঙ্কা কেই ধরে রাখতে পারল না। আর কেউ।

শোভনের আর কিছুই বলার ছিল না।যার কাছে এখনো প্রিয়াঙ্কার মত মেয়েরা ভালো,তাকে আর কিছুই বলার নাই। তবে শোভন বুজতেসে রাজন ওর ভুল বুজছে।সম্পর্ক মানে বিশ্বাস । আরেকজন কে নিজের মত করে চালানো না।নিজেকে আরেকজনের মত করে চালানো।রাজন তা করতে পারে নাই। তাই প্রিয়াঙ্কা আজকে চলে গেছে।একি সাথে সাময়িক মোহের জন্য প্রিয়াঙ্কা ও রাজন কেও হারাল।কারো কিছুই হল না। শুধু এই দুটি মানুষ একে অপরের জন্য দুইপ্রান্তে বসে কেদে যাবে।

কিন্তু কেউ কারো কাছে আর আসতে পারবে না।এইটাই হয়ত ওদের নিয়তি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.