![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষগুলোকে ভালোবাসি
একটা এসাইমন্টের কাজে তৃতীয় লিঙ্গের কিছু মানুষের সাথে কথা হয়েছিল। যাদের আমরা 'হিজড়া' হিসেবে জানি তাদের জীবনের চরম তিক্ত কিছু গল্প শোনা হয়েছিল। ঢাকার মগবাজারে একটা গলিতে তাদের বাস। ওই গলির পুরোটাতেই শুধু তারাই থাকে। আগে থেকেই যোগাযোগ করে একদিন সকালে গিয়েছিলাম সেখানে। সাথে আমার একজন বড় আপু ছিল। আমরা যাওয়ার সাথে সাথেই আমাদের একটা রুমে নিয়ে বসতে দিলো~
আমাদের বসতে দিয়ে ওরা কোথায় যেন চলে গেল। খুব বেশি ভয় না হলেও, একটু একটু ভয় হচ্ছিল। আমি রুমটা একনজরে দেখে নিলাম। একটু অগোছালো রুম। একটা খাট আছে। আর একটা আলমারি আছে। খাটের উপরই আমাদের বসতে দিলো~
৫ মিনিট পর একজন ১ লিটারের একটা পেপসি আর এক প্যাকেট বিস্কুট নিয়ে রুমে ঢুকে বললো, "আসলে সবাই আমাদের ঘৃণা করে তো!! কেউই আমাদের এইখানে আসে না। আরো আগে একজন সাংবাদিক এসেছিল। তবে আপনাদের মত মানুষরা আসলে সত্যি আমরা অনেক খুশি হই। বলুন আপনাদের কিভাবে সাহায্য করব?"
আমরা বললাম, "আসলে আমরা আপনাদর সম্পর্কে জানতে এসেছি।" উনি বললেন "ওকে জানবেন, তার আগে এই পেপসি আর একটু বিস্কুট খেয়ে নিন। আপনারা খেলে আমি অনেক খুশি হব।"
খাওয়ার পরই শুরু হলো প্রশ্ন...
-আপনার নাম কি?
--রিংকু... রিংকু হিজড়াও বলতে পারেন।
-আচ্ছা আমরা যতটুকু জানি, হিজড়াদের সাথে যোগ দেওয়ার পূর্বে আপনাদের অন্য একটা নাম থাকে। তখন আপনার নাম কি ছিল?
--তখন আমার নাম ছিল 'রাজু'। আমরা ৩ ভাই, ২ বোন ছিলাম। আমার বাবা বিদ্যুৎ অফিসের একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন।
-আপনার বর্তমান বয়স কত? কত বছর বয়সে আপনি হিজড়াদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন? কেন যোগ দিয়েছিলেন?
--আমার বর্তমান বয়স ৩২ বছর। আমি ১৩ বছর বয়সে হিজড়াদের সাথে যোগ দেই। আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি। ছোট বেলা থেকেই আমি একটু মেয়েলি স্বভাবের ছিলাম। তখন আমার এই স্বভাবের কারনে সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত। আমার বাবা-মা ও আমাকে সমাজ থেকে লুকিয়ে রাখত। তারা কোন বিয়েবাড়ি বা কোন অনুষ্টানে গেলে আমাকে নিত না। লোক লজ্জার ভয়ে তারা আমাকে তাদের ছেলে হিসেবেও দাবি করত না। সমাজ যখন আমাকে দাম দিলো না, আমাকে তুচ্ছ করে দেখতে থাকলো, তখন এই হিজড়ারাই আমাকে বুকে টেনে নিল। তাই আমি হিজড়াদের সাথে যোগ দিয়েছি।
-হিজড়াদের সাথে যোগ দেওয়ার পর, আপনার ফ্যামেলির সাথে আর যোগাযোগ হত? এরপর তাদের সাথে দেখা হয়েছে কখনও? আপনি হিজড়াদের সাথে যোগ দেওয়ার পর আপনার ফ্যামিলির কেউ আপনার সাথে রাগ করে নি?
--রাগ করবে মানে? উল্টা সবাই আরো খুশি হয়েছিল। আমি ছিলাম তাদের কাছে একটা বোঝার মত। আমার জন্য তাদেরকে সমাজের মানুষের কাছে হেয় হতে হত। তাই আমি যখন এখানে চলে আসি, তারা সবাই মোটামুটি খুশিই হয়েছিল। আর বাবা-মা যতদিন বেঁচে ছিল, ততদিন মাঝে মধ্যে কথা হত। আর এইখানে চলে আসার পর দুইবার বাসায় গিয়েছিলাম।
-আচ্ছা আমরা দেখে থাকি, হিজড়ারা এখন তাদের পেশা হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেঁচে নিয়েছে। এবং অভিযোগ আছে যে, তারা প্রায় সময়ই জোর করে টাকা আদায় করে। এটা কি ঠিক? এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
--হুম আমরা ভিক্ষাবৃত্তি করেই বেঁচে থাকি। এছাড়া আমাদের যে আর কোন পথ নাই! আচ্ছা ধরুন, আমি একটা দোকান দিলাম। আপনারা ভদ্র সমাজের কজন আমার থেকে পন্য ক্রয় করবেন? নাকি নাক ছিটিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাবেন? আচ্ছা ধরুন আমি আপনার একটা অফিসে চাকুরি করতে গেলাম। আপনি কি আমাকে চাকুরি দিবেন? নাকি তখনও মুখ ব্যাকিয়ে বলবেন, এই লোক আমার অফিসে থাকলে কেউ আমার অফিসে আসবে না। একে চাকুরি দেওয়া যাবে না। তাহলে ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া আমরা কি করে খাব বলুন? এইতো গেল আয়ের হিসাব... আচ্ছা এইবার ধরুন আপনি ৬ তলা একটা বাড়ির মালিক। প্রত্যেক তলায় ২ টি করে ফ্ল্যাট আছে। আপনি একটি ফ্ল্যাট বিক্রয় করবেন। আপনি প্রতিটি ফ্ল্যাটের যা দাম চেয়েছেন, আমি যদি তার চাইতে ৫ লক্ষ টাকা বেশিও দিতে চাই তবুও আপনি আমার কাছে ফ্ল্যাট বিক্রয় করবেন না। কেন জানেন? তখন আপনি ভাববেন, একটা হিজড়া আমার বাসায় থাকলে আমার মান সম্মান নষ্ট হয়ে যাবে। এইবার বলুন আমরা কোথায় যাব? জোর করে ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া এই সমাজে আমাদের জন্য অন্য কোন পেশা নাই।
-আচ্ছা সরকার তো বলেছিল, আপনাদের ট্রাফিকে চাকুরি দিবে, সেটা হলেই তো আপনাদের আর ভিক্ষাবৃত্তি করা লাগবে না। নাকি?
--সরকার আমাদের ট্রাফিকে চাকুরি দিবে, এটা আপনিও জানেন আমরাও জানি। কিন্তু এটার পেছনেও আরো কিছু কথা লুকিয়ে আছে, সেটা আমরা কয়জন জানি? যেসব হিজড়ারা SSC পাশ করেছে, সরকার শুধু তাদেরই চাকুরি দিবে। আমাদের দেশে SSC পাশ করতে নূন্যতম বয়স লাগে ১৬/১৭ বছর। কিন্তু বেশিরভাগ হিজড়াই হিজড়া দলে প্রথম যোগ দেয় তাদের নূন্যতম জ্ঞান হওয়ার পর। মানে ক্লাস ৭/৮ এর দিকে। হিজড়াদের সাথে যোগ দেওয়ার পর কারোই আর পড়াশোনা করা হয়ে উঠে না। সারা বাংলাদেশে হিজড়া আছে ১ লাখের অধিক। কিন্তু SSC পাশ হিজড়া আছে সর্বোচ্চ ১০০ জন। সরকার হিজড়াদের চাকুরি দিবে বলেই অনেক সুনাম অর্জন করে নিচ্ছে। কিন্তু কজন কে চাকুরি দিবে, সেটা আমরা ভালো জানি...
-আচ্ছা প্রথম থেকেই লক্ষ্য করছি, আপনার আমাদের মত মানুষদের উপর ভালোই ক্ষোভ আছে। কেন এ ক্ষোভ? আর আপনি কি আমাদের উদ্দ্যেশ্যে কিছু বলতে চান?
--ক্ষোভ একটু একটু আছে। কারন সুশীল মানুষদের কারনেই আমাকে আজ পরিবার ছেড়ে দূরে দূরে থাকতে হচ্ছে। আর বলার মত একটা কথাই আছে, আমাদের ঘৃনা করবেন না প্লিজ। আমরাও মানুষ... আমাদের একটু সম্মান করুন প্লিজ। আর আমাদের দেখে যখন আপনারা ছোটাছুটি করেন, তখন আমাদের অনেক কষ্ট লাগে। আমরা কোন প্রানী না, আমরাও রক্তে মাংসে গড়া মানুষ।
.
.
.
একজন ৮ম শ্রেনী পাশ মানুষ সত্যিই আমার চোখ খুলে দিয়েছে। আসলেই কি ওরা ভিক্ষাবৃত্তি করে বেঁচে আছে? নাকি আমরা ওদের ভিক্ষাবৃত্তি করতে বাধ্য করছি?
১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৪৮
রাকিব উদ্দিন নওশাদ বলেছেন: খারাপ কেন হয় এবং কিভাবে হয়, সেটাই বলতে চেয়েছি
২| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:০১
arman babu বলেছেন: গরিব হওয়াটা কি দোষ বন্ধুরা?আমি এমন এক পরিবারে জন্ম গ্রহন করেছি যে সেখানে ছোট থেকেই শুধু অভাব অনোটন লেগেই আছে। এমন ও দিন গেছে টানা দুই তিন দিন খেয়ে কেটে গেছে। আমাদের এলাকার সবাই একটু ভালো প্রজিশনে তাই তাদের ছেলে মেয়েরা আমাদের সাথে মিশতো না। কষ্ট পেতাম যখন এ গুলো বুঝতাম এখনও কষ্ট পাই। আমরাতো গরিব তাই আমাদের খেলায়ও নেয় না। যারা আমাদের মত ঐ রকম কয়জনের সাথে বসে থাকতাম কারন আমাদের তো আর বল কিনার টাকা নাই। পড়ালেখা করতাম এখনও করি। এখন দুইটা প্রাইভেট পড়াই আর কাজ টাজ করে পড়ালেখার খরচ টা কোনো রকম চলে, কিন্তু আমার যে আরো দুটি ভাই বোন পড়ে তাদের খরচ কে চালাবে কারন তারাও উপরের ক্লাসের বোন inter 1st year final exam দিছে আর ভাই নবম শ্রেনিতে।আমরা ভাত খেতেই কষ্ট গয় তার উপর তিনজনের পড়া। তাই আজ ১৯ এপ্রিল সিন্ধান্ত নিলাম পড়ালেখা ছেড়ে দিবো,,, কাজ করবো ভাই বোনের পড়াটা চালাবো,,,কারন আমাদের মত গরিব কে সাহায্যে করবে????আমরা গরিব এটা আমাদের দোষ না তাই আমাদের ঘৃনা করার আগে একটু ভেবো আমরাও মানুষ। পরে অন্যে পোষ্ট করবো কিন্তু প্রথমেই আমার অবস্থান বুঝালাম।তবে আমার একটা ভালো বন্ধু আছে সে যতটুকু পেরেছে সাহায্যে করেছে,,, এই মোবাইল টা ও তার দেওয়া, ওরা এখন ঢাকাতে। আল্লাহ ওর ভালো করুক
২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৩২
রাকিব উদ্দিন নওশাদ বলেছেন: !!!!!!
৩| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:০৯
মানবী বলেছেন: কোন পুরুষ মেয়েলী স্বভাবের হলে বা কোন নারী পুরুষা স্বভাবের হলে তা সেক্চুয়্যাল আইডেনটিটি প্রবলেম হতে পারে, অপর লিঙ্গের পোষাক আচরন চর্চা করে ত্রান্সভেসটিজম হতে পারে তবে তাঁরা প্রকৃত হিজড়া নন!
হিজড়ারা আর দশজনের মতোই স্বাভাবিক মানুষ। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছেয় তাঁদের সৃষ্টি আর দশজন নারী পুরুষের মতো নয় বলেই তাঁদের কিছু জন্মগত শারিরিক ত্রুটি থেকে যায়। এই ত্রুটি কোন পান বা লজ্জার বিষয় নয়, যেসব মা বাবা হিজড়া সন্তান জন্ম নিলে বিব্রতবোধ করে তাঁদের মাঝে অণিধাবন জরুরী। জরুরী হিজড়াদের পক্ষে সচেতনতা সৃষ্টি ও তার ব্যোক প্রচার, হাত সন্তান পা বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মালে কোন মা বাবা লজ্জিতবোধ করেননা, যৌন বিকলাঙ্গতায় লজ্জার কিছু নেই। সমাজ এউ সত্যটি অনুধাবন করলে তাঁদের আলাদা করে গোত্র সৃষ্টির প্রয়োজন হবেনা, আর দশজনের মতো মা বাবা ভাইবোন আত্মীয় পরিজনের সাথে স্বাভাবিক জীবন যাপনের সক্ষম হবেন।
হয়তো অভাব আর অসহায়ত্বের কারনেই হিজড়াদের মাঝে এ্যাগ্রেসিভ আচরন বেশি, অনেকে অ্ররকে হেনস্থা আর শারিরিক লান্ছনা করে থাকে এমন অভিযোগও শোনা যায়। আমাদের মানসিকতার উন্নয়ন আর হিজড়াদের সমাজে সাদরে গ্রহন করে তাঁদের সুস্থ পথে জীবিকার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে হয়তো এধরনের হেনস্থার অবসান সম্ভব।
সমাজের উচ্ছিষ্টর চেয়েও অবহেলিত মানুষদের পাশে যাবার জন্য আপনাকে আর আপনার সেই আপুকে স্যালুট। অনেক বছর আগের একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা ।
চমৎকার পোস্টের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ রাকিব উদ্দিন নওশাদ।
২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৩৪
রাকিব উদ্দিন নওশাদ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৪৩
রিফাত হোসেন বলেছেন: হিজড়া রা কি রকম পেইন, আপনি ঝামেলায় পরেন নাই। ৩৬০ডিগ্রী অনুষ্ঠান এ এ নিয়ে হার্ডকোর প্রতিবেদন আছে।
আর ভাল ও ভদ্রও আছে একজন কে দেখেছি সেলুনের কাজ করতে, তার নিজের দোকান! খুব ভাল লেগেছে।
এটাও দেখেছি অনেক মানুষ শুধুই খোটা দেয় যে তাকে মানে যে নিজের জীবন যুধে ব্যস্ত(হিজড়া)
একপেশে পোস্ট ভাল লাগে না।