নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাঙতে নয়, গড়তে চাই। গড়তে চাই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের একটি বিশ্ব সৌধ। আগামী প্রজন্মকে হানাহানিমুক্ত একটি শান্তিময় সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে চাই। সুন্দরকে আরো সুন্দর করে সাজানো এবং পরিশীলিত ব্লগিং চর্চার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনই আমার সাধনা।

সালেহ মতীন

সালেহ মতীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

তেলের নাম পার্লামেন্ট

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:০৬

অলিভ অয়েল তেলের নাম শুনলেও বিয়ের পূর্বে তা ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আমার ছিল না। কোন্ দেশে তৈরি বা কোন্ ব্রান্ডের অলিভ অয়েল সেরা এসব ব্যাপারে আমার জানার পরিধি ছিল একেবারেই জিরো। অজ পাড়া গাঁয়ের ছেলে আমি। গরু টানা এ্যানালগ ঘানিতে ভাঙানো নিখাদ সরিষার তেলই বেশি ব্যবহৃত হয়েছে আমার জীবনে। তাই তো ফুল ফোটা সরিষার হলদে ক্ষেত দেখলেই এত আকর্ষণ বোধ করি। বলা বাহুল্য যে, সরিষার তেলের প্রতি এখনো আমার আকর্ষণ ও দূর্বলতা অন্য মাত্রার। সেই আমি সুদূর স্পেন থেকে আগত অভিজাত ও দামী তেল ‘অলিভ অয়েল সম্পর্কে ধারনাগত দিক থেকে পিছিয়ে থাকব এটাই তো স্বাভাবিক।

গ্রামে থাকতে ছোট কালে দেখতাম আমাদের এলাকায় তিলের ব্যাপক চাষ হতো। শুনেছি তিলের তেল নাকি মাথা ঠাণ্ডা রাখার পক্ষে ভীষণ কার্যকরী। কিন্তু সম্ভবত এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে না পারায় গ্রামে এখনো তিলের চাষ হলেও সেভাবে তিলের তেলের ব্যবহারপ্রথা প্রসিদ্ধি লাভ করেনি। অথচ শহরে বোতল ভরে কত রকম উপকারিতা বর্ণনা করে এ তেল বিক্রি করা হয়। গ্রামের মানুষ হয়তো বোকা, তাই তারা হাতের কাছে উপকারী তেল থাকলেও তা থেকে উপকার নিতে পারছে না। তবে এ কথা ঠিক যে, শহুরে সভ্যতার মতো অতি মাত্রায় চালাক হওয়ার গ্রামের মানুষের কোন দরকার নেই। অত আভিজাত্যের স্বপ্ন দেখাও তাদের জন্য বেমানান। তাই তো আমাদের জোহরা বু ঘানি ভাঙানো নিজেদের নারিকেল তেল দিয়ে দেদারছে তরি-তরকারি রান্না করে জীবন পার করেছেন প্রায়। কেমন লাগে খেতে সে বিবেচনার আগে নিজেদের গাছের নারিকেল তেল ব্যবহার করছি ভাবতেই তো অনুভূতি সুখকর না হয়ে পারে না।

বিয়ের পর অলিভ অয়েল বা এ জাতীয় স্বাস্থ্য ও লাবণ্য রক্ষাকারী তেল-হিমানীর সাথে আমার প্রকাশ্য পরিচয় ঘটে। অবশ্য এ কথা ঠিক যে, আমার স্ত্রী একেবারেই প্রসাধন বিলাসী নয়। শীতের হাত থেকে ত্বক রক্ষার সামান্য ১টি লোশন, গরমের তীব্রতায় দেশি ট্যালকম পাউডার এবং অলিভ অয়েলের মতো ঐতিহ্যবাহী সামান্য তেল ছাড়া তেমন কোন প্রসাধনী ব্যবহারের অভ্যাস তার নেই। বরং এ ক্ষেত্রে লোশন ব্যবহারে আমি তার চেয়ে কয়েক গুণ এগিয়ে। শীত চলে গেলে লোশনের কৌটা অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে ড্রেসিং টেবিলের এক কোনায়। কিন্তু আমি ১২ মাসই লোশন ব্যবহার করি। অফিসে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রার পরিবেশ থাকায় সেখানে সব সময়ই শীতের আমেজ লক্ষণীয়। সুতরাং সারা বছরই অফিসে আমার ড্রয়ারে লোশন বসবাস করে।

বিয়ের পর আমার স্ত্রী আমাকে একটি অলিভ অয়েল কিনে দিতে বললেন। তখন আমি রাজধানীর মগবাজারের নয়াটোলা এলাকায় থাকতাম। আমাকে বলা হলো মৌচাক মার্কেটে এ তেলের সন্ধান একেবারে এ্যভেইলেবেল। এই প্রথম অলিভ অয়েল কিনতে যাচ্ছি। সঠিক তেলটা চিনে আনতে পারব কি না প্রশ্নবিদ্ধ সংশয় থাকলেও প্রিয়জনের আকাঙ্ক্ষা পূরণের কথা চিন্তা করে বেশ আনন্দ উপলব্ধি করছিলাম। আমার এ তেল কেনার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় আমাকে বেশ দরদের সাথে বুঝিয়ে দেয়া হলো- স্পেনেরটা আনবে, বোতল পাওয়া না গেলে ২০০ মিলির ক্যান আনলেও তার চলবে তাও আমাকে বলে দেয়া হলো।

ব্র্যান্ড কোনটা হবে সে ব্যাপারে পরিষ্কার করে বলে দেয়া হলো যে, ক্যান বা বোতলেন গায়ে লেখা থাকবে ‘এ্যাম্বাসেডর’। ব্যাস, আমার মাথায় সেট হয়ে গেল স্পেনে তৈরি এ্যাম্বাসেডর ব্রান্ডের ২০০ মিলির একটি অলিভ অয়েল আমি কিনতে যাচ্ছি। গন্তব্য মৌচাক মার্কেট।

মৌচাক মার্কেটের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এখানে মহিলা কাস্টমারের সংখ্যা অধিক। বিশেষ করে পোশাক, জুয়েলারি ও কসমেটিক্স এর দোকানগুলোতে। আর এটা এক বিষ্ময়কর সাধারণ সত্য যে, দোকানে ২/৩জন মহিলা কাস্টমার থাকলে সেখানে একজন অখ্যাত মার্কা পুরুষ কাস্টমারের দিকে নজর দিতে দোকানদারদের তেমন কোন দায় পড়ে না।

দোকানে গিয়ে এক পাশে দাঁড়িয়েছি। দেখলাম অনেক রকম তেল-প্রসাধনী সাজানো আছে থরে থরে। আমি ছাড়াও আরো ২জন মহিলা কাস্টমার সেখানে এলেন। দোকানী কী মনে করে বেশ সম্মানের দৃষ্টিতে আমাকে এ্যটেনশন দিলেন। বললেন, স্যার কী লাগবে ? আমি তখন মৌচাকেই অবস্থিত নামকরা শিক্ষা সহায়ক প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাবস’ এর বাংলা শিক্ষক। দোকানী আমাকে চিনে সেই সূত্রে স্যার বললেন নাকি কাস্টমারদের প্রতি সাধারণ সম্মানের অংশ ও কৌশল হিসাবে স্যার বললেন তা আমার জানা নেই। তবে দোকানী আমার একদম অপরিচিত।

বললাম, অলিভ অয়েল আছে ? বললেন, আছে। আছে বলেই জিজ্ঞাসা করলেন কোনটা ? আমি সাথে সাথে বললাম স্পেনেরটা। দোকানী বললেন, ক্যান হবে না- বোতল হবে। আমি তো মহাখুশি- বোতল না পেলে ক্যান নিলেও আমার স্ত্রীর কোন আপত্তি নেই। এর মধ্যে দোকানী অপর মহিলা কাস্টমারদের দিকেও এ্যাটেনশন দিচ্ছেন। ব্যাপারটা এমন যে, আমার সাথে যখন দোকানী কথা বলছেন তখন মহিলা কাস্টমারদের এ্যাটেনশন সেদিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। আবার যখন তাদের সাথে কথা বলছেন তখন আমার এ্যাটেনশন সেদিকেই আকৃষ্ট হচ্ছে।

এমতাবস্থায় দোকানদার আমার চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করলেন ব্রান্ড কোনটা ? এই তো সর্বনাশ করছে এবার ! ব্রান্ড তো আমার মাথা থেকে কয়েক শ গজ দূরে চলে গেছে। আমি তাৎক্ষনিক কোন জবাব দিতে পারলাম না। কিন্তু আমার স্মৃতির উপগ্রহ কক্ষপথে বেসামাল গতিতে সার্চ দিতে শুরু করল। ইয়েস, একটু একটু মনে আসতে শুরু করেছে। মুহূর্তের মধ্যেই মাথায় এলো, নামটা অনেকটা রাষ্ট্রীয় লেভেল, রাজকীয় কিংবা গণতন্ত্রের সাথে শব্দটির বেশ মিল। ব্যাস, মাথায় এসে গেল, নিশ্চিত হয়ে গেলাম। বেশ খুশির সাথে বলেই ফেললাম। ভাইজান ব্রান্ডটা হলো পার্লামেন্ট। দোকানী পেশাদার, সম্ভবত তাই তিনি হাসলেন না, কিন্তু হো হো করে হাসতে দোকানে দাঁড়ানো অপর মহিলা কাস্টমাররা ভুল করলেন না। দোকানী বিনয়ের সাথে বললেন, স্যার এ ব্যান্ডের অলিভ অয়েল আমার কাছে নেই। বলেই একটি বোতল আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, আমার কাছে এটি আছে। হাতে নিয়ে দেখি তার গায়ে লেখা আছে ‘এ্যাম্বাসেডর’।

উফ্, নিজের অজান্তে নিজেই জিভ কেটে বললাম, এ্যাম্বাসেডর ! এটিই তো আমি খুঁজছি। অচেনা মহিলা কাস্টমারের কাছে নির্বোধ কোন উপহাসের পাত্র হলাম কিনা সে চিন্তা করা অর্থহীন। তবে পেশাদরিত্বের কাছে অভিজ্ঞ-অনভিজ্ঞ সব প্রকার গ্রাহক যে সম্মানের সে অমূল্য ও চিরন্তন শিক্ষা দোকানীর কাছ থেকেই পেলাম। কথা আর না বাড়িয়ে তেলের দাম পরিশোধ করে দোকান ত্যাগ করলাম। কিন্তু কেন সেদিন এ্যাম্বাসেডরকে পার্লামেন্ট বলেছিলাম তার সঠিক কারণ আজ ১২ বছরেও খুঁজে বের করতে পারিনি।

খিলগাঁও, ঢাকা
১৪ মার্চ, ২০১৫

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:১৮

জাহিদ মজুমদার বলেছেন: আর এটা এক বিষ্ময়কর সাধারণ সত্য যে, দোকানে ২/৩জন মহিলা কাস্টমার থাকলে সেখানে একজন অখ্যাত মার্কা পুরুষ কাস্টমারের দিকে নজর দিতে দোকানদারদের তেমন কোন দায় পড়ে না

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪০

সালেহ মতীন বলেছেন: জাহিদ ভাই আপনাকে মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০৪

আবু শাকিল বলেছেন: আপনার লেখায় যাপিত জীবনের রস ব্যাপক :)
একদিনেই অনেক গুলা পোষ্ট দিছেন
একটা করে দিলে।পড়তে সুবিধা হত।
আলোচনায় রস পাওয়া যেত।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৩

সালেহ মতীন বলেছেন: সুপ্রিয় আবু শাকিল ভাই মন্তব্যের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনার কথা আমি বুঝতে পেরেছি, আসলে হয় কি হিমসিম খাওয়া পেশাগত ব্যস্ততায় সময় পাওয়া যায় যায় খুব কম, তাই যখন একটু সময় মিলে তখন এদিকে একটু বেশি দেয়া পড়ে যায় আরকি। আপনার আবেদনমিশ্রিত পরামর্শের কথার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে একই দিনে একাধিক লেখা পোস্ট দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সচেতন থাকব ইনশাআল্লাহ। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.