নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাঙতে নয়, গড়তে চাই। গড়তে চাই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের একটি বিশ্ব সৌধ। আগামী প্রজন্মকে হানাহানিমুক্ত একটি শান্তিময় সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে চাই। সুন্দরকে আরো সুন্দর করে সাজানো এবং পরিশীলিত ব্লগিং চর্চার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনই আমার সাধনা।

সালেহ মতীন

সালেহ মতীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জুতা যখন ফ্রিজে

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৩


অফিস থেকে ঘরে ফিরে ফ্রেশ হওয়ার পর স্থির হয়ে বসে ১ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস আমার বহুদিনের। এরপর যে কাজটি করতে আমি অভ্যস্ত তা হলো রান্নাঘরের শেল্ফ থেকে বিস্কিটের ক্যান নামিয়ে ১পিছ বাকরখানি, কয়েক টুকরা ঝাল নিমকি ইত্যাদি বের করে খাওয়া। কখনো কখনো ছেলের জন্য সংরক্ষিত চিপ্সও গোপনে গোপনে সাবাড় করি। আর যদি গোশতের পাতিল চুলার ওপর থাকে তাহলে তো কথাই নেই- ১/২ পিছ গোশত তুলে না খেলে আমার চোখের ক্ষুধা অপূর্ণই রয়ে যায়। এরই মধ্যে অথবা একটু পরে হয়ত আমার মিসেস পিরিচে করে কিছু না কিছু পরিবেশন করবে কিন্তু ততক্ষণে আমার দায়িত্ব আমি পালন করে ফেলি।

ক‘দিন আগে অফিস থেকে বাসায় ফিরে বেশ ক্লান্ত বোধ করছিলাম। বাসায় আর কেউ নেই। ছেলে তার মামনিসহ একমাত্র খালার বাসায় বেড়াতে গেছে। যথারীতি হাত-মুখ ধুয়ে অযু করে ১ গ্লাস পানি পান করে নিলাম। তারপর ঝাল নিমকি ও কিছু আলুর চিপস খেয়ে সোফায় বসে আছি। ভাবছি আজ সমস্ত ঘর জুড়ে আমি একা, সুতরাং এটা ওটা খাওয়ার জন্য আরো কয়েক জায়গায় হানা দিলে মন্দ হয় না। মাথায় এলো ফ্রিজে মিষ্টি কিংবা দই এর পাশাপাশি কোমল পানীয়ও থাকতে পারে। যদিও ফ্রিজে সংরক্ষিত ঠাণ্ডা পানি বা কোক জাতীয় পানীয় আমি স্বাস্থ্য সচেতনতার অংশ হিসেবে সব সময়ই এড়িয়ে চলি তবু ঐদিন মনে হলো দু’ ঢোক খেতে পারলে ভালোই লাগত।

ফ্রিজ খুললাম। প্রথমেই মিষ্টির প্যাকেট থেকে একটি বড় সাইজের মিষ্টি খেয়ে খুব মজা উপভোগ করলাম। কিন্তু দই বা কোক কোনটিরই অস্তিত্ব ফ্রিজে আবিষ্কার করা গেল না। হঠাৎ মাথায় এলো বিট লবণ মিশ্রিত মশলা দিয়ে শশা মাখিয়ে খেলে ভালোই হয়। চৈত্রের এ বিকেলে শশা খাওয়া নিশ্চয়ই উত্তম অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত।

শশা থাকে ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ নিচের সব্জি বক্সে। বক্স টানতেই থমকে গেলাম। আমার স্ত্রীর ১ জোড়া জুতা সেখানে সযতেœ রাখা আছে। তার নিচে অবশ্য পুঁইশাক, কয়েক পিছ গাজর ও শশা, বেগুন ইতাদি শোভা পাচ্ছে। তাড়াতাড়ি ফ্রিজ বন্ধ করে দরজার বাইরে যাই- আমি আসলে এখন কোথায় আছি ? কিংকর্তব্যবিমূঢ়তার রহস্যজনক আবহে অবগাহন করে কিয়দক্ষণ পর আবার ঘরের ভেতর প্রবেশ করি। আমি কিছু ভুল দেখছি না তো ? ভয়ে ভয়ে আবার ফ্রিজ খুলি। কিসের ভুল ? জলজ্যান্ত ১ জোড়া জুতা যার আরেক নাম পাদুকা তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ফরমালিনের বদৌলতে ফল-ফলাদি আজ-কাল আর ফ্রিজে রাখার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছি না যে, কোন্ পচনের হাত থেকে সুরক্ষার জন্য আমার অতি সচেতন ও দায়িত্বশীল স্ত্রী তার জুতা জোড়া ফ্রিজের মধ্যে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেখেছেন।

আমার স্ত্রীকে যিনি কিনা জুতা ও ফ্রিজের মালিক মোবাইলে ফোন দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করিনি। কারণ, কী জবাব আসবে এর ? যাই আসুক তাতে আমার ভালো-মন্দ ভাগ্যের কোনটিই জড়িত নয়। তার ফ্রিজে তারই জুতা সে রেখেছে- সেখানে আমার বলার কী থাকতে পারে ? রাধুনীরা অনেক কিছুই বোধ হয় ভুলবশত করে থাকে। আমার এক ফুফু দৃষ্টি ও মেধাশক্তির ক্ষয়জনিত স্বল্পতার কারণে তেলের বোতলের মতো পেয়ে কীটনাশক (সিবা-গেইগীর বাসুডিন) দিয়ে তরকারি রান্না করেছিলেন। পরিবশেন করার পর তরকারির চেহারা দেখে সহজেই অনুমান করা যাচ্ছিল যে, কোথাও বড় ধরনের গোলমাল হয়েছে। রহস্য উদঘাটনে সময় লাগেনি। কোন বোতলের তেল দিয়ে তিনি রান্না করেছেন তা তার মনে আছে। আমাদের উদ্বিগ্ন অনুসন্ধানের কারণে অনেকটা দ্রুতপদে রান্না ঘর থেকে তেলের বোতল এনে আমাকে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এই দ্যাখ, এই সেই তেলের বোতল।’ সর্বনাশ ! এতো বাসুডিন ! সিবা গেইগীর মারাত্মক শক্তিধর কীটনাশক! চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ফুফুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম ফুফু তুমি ভুল করেছ। সে কাহিনী আরো ২৫ বছর পূর্বের।

২০১৫ সালের জুতা ফ্রিজিং-এর রহস্য উদঘাটিত হলো ২/৩ দিন পর। জানা গেল জুতার অধিকর্তা তার জুতা নির্ধারিত র‌্যাকে রাখতে গিয়ে নিজের অজান্তে কখন রেখে দিয়েছিল আলমিরার নিচের তাকে কাঁথা-তোয়ালের সাথে। ১দিন পর তার ভ্রম ধরা পড়ে। জিভ কেটে নিজেই নিজেকে ধিক্কার জানিয়ে আলমিরা থেকে বের করে জুতাকে তার নির্ধারিত জায়গায় রাখতে গিয়ে ফ্রিজ খুলে সেখানেই রেখে চলে আসে। তার ধারণা যে, এবার সে সঠিক জায়গায়ই রেখেছে।

জুতার ভাগ্য ভালো- নারী চরণের স্পর্শ ছাড়াও সৌখিন আলমিরার সংরক্ষিত শুষ্কতা ও রেফ্রিজারেটরের নিয়ন্ত্রিত আর্দ্রতাও তার কপালে জুটেছে। অবশেষে জুতা তার নির্ধারিত জায়গায় ফিরে এসেছে কিন্তু জুতার মালিকের স্মৃতি ভ্রমের মাত্রাটা উদ্বিগ্ন পর্যায়ে পৌঁছাল কিনা তা নিয়ে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৭

আজমান আন্দালিব বলেছেন: হাহাহা...

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৮

সালেহ মতীন বলেছেন: আমার ব্লগ কুটিরে বেড়াতে আসার জন্য অঅপনাকে ধন্যবাদ।

২| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:২৩

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: খুব মজা পেলাম পড়ে। সুন্দর করে লিখেছেন। অনেক সময় ভুলে এমন হতে পারে তবে আপনার ফুপুর ভুলটা মারাত্মক হতে পারতো!
আপনার এতো খাওয়াদাওয়ার কথা শুনে আমারও খিদে লেগে গেছে।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৮

সালেহ মতীন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

৩| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৪

চ্যাং বলেছেন: এইটা মজা করার কিছু না গো ভাইয়া। আমার ফুফুর এইরকম সমস্যায় প্রথমে মজা নিয়েছিলাম। পরে রোগটা মাত্রাধিক হওয়ার পরে আমরা ভুল বুঝতে পারি।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৯

সালেহ মতীন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অাপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৪| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৯

বোকা শিয়াল বলেছেন: দিন কাল যা পড়ছে, কখন যে নিজ স্বামী নামক বেকলা বেচারাকে আধুনিক রমণীরা ডিপ ফ্রিজে নিক্ষেপন করিয়া রাখে তাহাই কেবল দেখার বিষয়. আহা বেচারা ফ্রিজ কালে কালে আর কত কি হজম করিবা, বেচেঁ থাকো দাদা ঠাকুর :)

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:১২

সালেহ মতীন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্তু ভাই আপনি তো ভয় ধরিয়ে দিলেন। আল্লাহ তাকে নিরাপদ করুন, আমাকে রক্ষা করুন।

৫| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১০

সুমন কর বলেছেন: লেখাটি পড়ে মজা পেলাম। কিন্তু বিষয়টি মজার নয়। মনে হয়, মেয়েদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি বেশী হয়।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:১৩

সালেহ মতীন বলেছেন: জী সুমন ভাই, অাপনি ঠিকই বলেছেন। মন্তব্যের জন্য অাপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.