নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে একা রাখতেই বেশি পছন্দ করি, তারপরও মাঝে মাঝে এক অদৃশ্য অস্তিতকে উপলদ্ধি করি।

বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, হারিয়েছি আবেগ।

বিবর্ন সভ্যতা

বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ, আমরা প্রতিনিয়ত প্রবেশ করছি এক বিবর্ন সভ্যতায় ।

বিবর্ন সভ্যতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

*** রহস্যময় শৈশব-১

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১১

আমার জিবনের প্রথম রোমান্টিক (পড়ুন প্যাথেটিক) গল্পের শুরু হয়েছিল ক্লাস ৫ (ফাইভ) এ পড়ার সময়। ইতিমধ্যে অনেকে হয়তো আমাকে ইচড়ে পাকা ভাবতে শুরু করেছেন। তবে আপনাদের এই ভাবনা যে কতটা বাড়াবাড়ি তা আশা করি একটু পরেই বুঝতে পারবেন। এবার মূল কাহিনীতে যাওয়া যাক-

ততকালীন সময়ে ক্লাসের ভাল স্টুডেন্ট হিসেবে বরাবরই প্রথম বেঞ্চের একটা সীট আমার জন্য বরাদ্ধ থাকত। ছেলেদের মধ্যে প্রথম সারির স্টুডেন্টদের নিয়ে গঠিত ক্লাবের একজন সম্মানিত সদস্য হিসেবে ভাব নেয়াটা মোটেও অন্যায় কিছু নয়। তবে সেই ভাব নেয়াটা বেশি দিন হালে পানি পেল না। অচিরেই আমার ভাগ্য আমার সাথে প্রতারনা করে U টার্ন নিল। আগেই বলে রাখা ভাল, আমাদের সময় (এনালগ যুগে) ক্লাস থ্রি থেকে ফাইভ পর্যন্ত বই ছিল মোট ৬ টি (ডিজিটাল যুগে কয়টা জানি না)। তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রথম ৩ ক্লাস পরে ১ ঘন্টার লাঞ্চ বিরতি ছিল। সেই বাচ্চা বয়সে ১ ঘন্টা ধরে খাওয়ার মত খাদক তো আর ছিলাম না। তাই ৫/১০ মিনিটেই লাঞ্চ শেষ করে খেলায় ব্যস্ত হয়ে পরতাম। খেলার আইটেমও ছিল সব বিচিত্র রকমের। টেবিলের উপর কলমের সাথে কলমের যুদ্ধ, (যেই কলমের মাধ্যমে শান্তির বানী লিখতাম তাকেই বানিয়েছিলাম যুদ্ধের মূল অস্ত্র)। হাতের পেশীতে শক্তি থাকুক আর না থাকুক নায়ক জসীমের ছবি থেকে অনুপ্রেরনা নিয়ে (আবেগে ভেসে) নিজের থেকে বেশি শক্তিশালী আরেকজনের সাথে পান্জা লড়তে দ্বিধাবোধ করতাম না। অবশ্য প্রথম মিনিটেই গো হারা হেরে আবেগের বেলুন চুপসে মিলিয়ে যেত। ৫০০ স্কয়ারফিটের ছোট ক্লাসটাকেই বানিয়ে নিতাম কানামাছি, গোল্লাছোট খেলার স্টেডিয়াম। সব বলতে গেলে আসল কাহিনীই বলা হবে না-

অন্যান্য সরকারি প্র্রাইমারি স্কুলের মত আমাদের স্কুলেও ছেলেরা একপাশে ও মেয়েদের অন্যপাশে বসতে হত । তখন আমাদের মত পিচ্ছিরা ছেলে-মেয়ের পার্থক্য বুঝতাম না জেনেও কতৃপক্ষ কেন যে একসাথে বসতে দিত না বুঝতাম না। যাই হোক, জিবনের সেই ঐতিহাসিক ঘটনার দিনেও (পড়ুন অপমানিত হওয়ার দিনে) যথারিতি টিফিন টাইমে আমরা ৪/৫ বন্ধু একটা টেনিস বল নিয়ে ক্লাসের ভিতরেই খেলায় ব্যস্ত ছিলাম । খেলার নিয়ম ছিল, একজন দেয়ালে বল ছুড়ে মারবে একজন তারপর সেই বল (নিউটনের গতির তৃতিয় সূত্রানুসারে) রিটার্ণ আসলে অন্যজন সেটা ক্যাচ নিয়ে আবারও পুনরাবৃত্তি করতে থাকবে। যে যত বেশি ক্যাচ নিবে সে তত ভাল পার্ফমার হবে। এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু আমাদের খেলার পদ্ধতিটা যে ক্লাসের অন্যপ্রান্তের গুটিকিছু মেয়ের বিরক্তির কারন হচ্ছিল তা বুঝার বা দেখার কোন আগ্রহ আমাদের ছিল না। সেই অনাগ্রহটার কারনেই আজকে প্রায় ২০ বছর পরেও সেই ঘটনা (দুঘর্টনা) আগ্রহ ভরে লিখতে হচ্ছে।

খেলার একপর্যায়ে বলটা গিয়ে প্রথম সারিতে বসা এক মেয়ের মাথায় আঘাত হানল। মেয়েটা যেমন সুন্দরী (অন্যান্যদের তুলনায়) ছিল তেমনি মেধাবি ছিল। মানুষের মত জড় পদার্থ টেনিস বলও যে মেয়ে চিনতে ভূল করে না তা সেই প্রাইমারিতেই বুঝে গিয়েছিলাম। ললনার মাথায় যতটা না আঘাত লেগেছিল তার থেকে অভিযোগমিশ্রিত চিৎকার এর গতি ছিল প্রায় দ্বিগুন। ওর ওভার এ্যক্টিং এ মেজাজ পুরাই চরমে, আমরা বললাম এটাতে এত কান্নার কি আছে? ওমা সে কি !! এতে তার কান্নার ভলিউম আরো জোরালো হয়েছে। মনে হয় যেন চার্জ শেষ হওয়া ব্যাটারি নতুন করে চার্জ হয়েছে। রমনীর ওভার এ্যাক্টিং কান্নাকাটিতে বিরক্তপ্রায় আমি আমার এক বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলাম রমনীকে যেন ২ টাকা দামের কোন চুইংগাম কিনে এনে দেয়। আমার ধারনা ছিল চুইংগাম চিবাতে চিবাতে তো কান্নার আসল টোন আনা সম্ভব হবে না সুতরাং এইটা একটা সমাধান হলেও হতে পারে। কিন্তু বিধি বাম, সমাধানের আগেই সমস্যাটা বিস্ফোরিত হয়ে গিয়েছিল। কারন ততক্ষনে কান্নার শব্দে FBI খ্যাত ম্যাডামরা ক্লাসে এসে হাজির । মহিলাদের সময়ের ব্যাপারে এত পারফেক্ট টাইমিং ইতির্পূবে আমি কখনো দেখি নাই। এখানে একটা বিষয় বলে নেয়া ভাল আমাদের স্কুলে একমাত্র হেডস্যারই ছিল পুরুষ বাকি সবাই (প্রায় ১০/১২ জন ) ম্যাডাম । সুতরাং তাদের আধিপত্যটাও ছিল দেখার মত । ক্লাসে প্রবেশ করার পরেই ঘটনা জানার জন্য তাদের অতি উৎসাহ আমাদের মনে ভয়ের সঞ্চার করেছিল। আমরা ৪ জন বন্ধু সশ্রম কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামির ন্যায় ক্লাসের এক কোনে দাড়িয়ে ছিলাম। এইদিকে ললনার উপর এত এত (কাল্পনিক ও অতিরন্জিত) নির্যাতনের বর্ননা শুনে ম্যাডামরা তো আমাদের দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছিল যেন আমরা এইমাত্র ধর্ষনকার্য সমাপ্ত করে ধরা পরেছি। তার সাথে সহযোগি হিসেবে বান্ধবিরাও তালে তাল মিলাচ্ছে যেন তারাও মাথায় সমপরিমান আঘাত পেয়েছে। সমস্ত অভিযোগের মধ্যে হাইলাইট করা অভিযোগটি ছিল- আমি নাকি তাকে ২ টাকা দিয়ে বাজার থেকে কিনতে চেয়েছিলাম। এইটা কেন, কোন উদ্দেশ্য নিয়ে বলা হয়েছিল তা আজও অজানা। কিন্তু অজানা হলেও এর প্রভাব ছিল বিশাল। বাজার থেকে কোন মেয়েকে কিনে আনা দ্বারা ঠিক কি বুঝানো হয়, এটা কি পজেটিভ নাকি নেগেটিভ সেটা বুঝার মত ক্ষমতা নিষ্চয় আজ থেকে ২০ বছর আগের কোন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রের বুঝার কথা নয়। আমরা না বুজলেও আমাদের মহামান্য ম্যাডামরা ঠিকই এর সঠিক অনুবাদ করে আমাদের দোষারোপ করেছিলেন।

তারপর আমাদের অভিবাকদের ডাকা হল। তাদের এবং পুরো ক্লাসের স্টুডেন্টের সামনে আমাদের মেয়ে মানুষ কেনার (!!) অভিযোগে অভিযুক্ত করে ১০০ বার কান ধরে উঠাবসা সহ অসংখ্য বেত্রাঘাত করা হয়েছিল। তখন ক্লাসের কোন মেয়ের ঠোটের কোনায় হাসির রেখা ফুটে উঠেছিল, কারো বা করুনামিশ্রিত দৃস্টি, কারো বিমষৃ চোখগুলি আমাদের অবলোকন করছিল। কোন মেয়েকে বাজার থেকে কেনাটা (যদিও ২ টাকার চুইংগাম কিনার কথা ছিল) যে কি কারনে এত গুরুতর অন্যায় হতে পারে তা আমার কাছে পরের ১০ বছর রহস্যই থেকে গিয়েছিল। শাস্তির কথা প্রায় ভূলতেই বসেছিলাম কিন্তু এবারও বিধি বাধ সাধল।

ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময় এক স্যারের কাছে হিসাববিজ্ঞান প্রাইভেট পরার জন্য নতুন ব্যাচ এ জয়েন্ট করলাম। প্রথমদিনে ব্যাচের এক মেয়ের দিক থেকে চোখ সরাতেই পারলাম না। কেমন যেন মনে হতে লাগল সে তো আমার জনম জনমের পরিচিত (অনেকটা বাংলা ফিল্মের মত)। কিন্তু ঠিক কিভাবে পরিচিত সেটা বুজতে পারলাম না । দ্বিতীয় দিনে প্রাইভেটে তাকে নিয়ে অনেক গবেষনা করার পর বুজতে পারলাম তিনিই সেই রমনী যার কারনে আমার ২ টাকার হিসেব মিলাতে ১০ বছর সাধনা করতে হয়েছিল। সেই চেহারা, সেই মেয়ে এখন পরিপূর্ন এক যুবতিতে পরিনত হয়েছে চিনতে তো একটু কষ্ট হওয়ারই কথা । তবে সে আমাকে চিনতে পেরেছিল কিনা তা আজও জানতে পারি নি। কিংবা তাকে জানাতে সুযোগ দেইনি কারন তৃতিয় দিন থেকে আমি আর সেই প্রাইভেটে যাইনি। যেখানে হিসাববিজ্ঞান শিখতে গিয়েছিলাম জিবনকে গড়ার জন্য সেখানে জিবন ভাঙ্গার হিসাবটাই যে মিলিয়ে নিয়েছিলাম। সেই সাথে দশটি বছর ধরে রহস্য হয়ে থাকা সেই ২ টাকার হিসাবও…!!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.