নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ, আমরা প্রতিনিয়ত প্রবেশ করছি এক বিবর্ন সভ্যতায় ।
২০১৫ সালের একদিন।
আজকে ট্রাফিক জ্যামে থমকে আছে সারা ঢাকা শহর। অবশ্য ঢাকাতে প্রায়ই এমনটা হয় তবে আজকেরটা একটু বেশিই বাড়াবাড়ি রকমের। টঙ্গিতে সব মুসল্লিরা জড় হয়েছে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেবে বলে। ঢাকা শহরের অনেক রাস্তাই সকাল থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অন্যদিন যারা ২০০ গজ রাস্তাও বাসে রিসকায় করে যান উনারাও আজকে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পায়ে হাটছেন। যেন এতদিনের কৃত্রিমতার খোলস ছেড়ে আজকে সবাই নিজেদের শারিরিক সক্ষমতার পরিক্ষা দিচ্ছেন। ব্যাপারটা একদিক থেকে মন্দ না।
ঢাকাতে যারা অফিস করেন তারা জানেন আখেরি মোনাজাতের দিন অফিসগুলোতে অনেকটাই অঘোষিত ছুটি থাকে অথবা ম্যানেজমেন্ট থেকে কিছুটা সেক্রিফাইস করা হয়। ছোটবেলায় বাসায় মেহমান আসলে যেমন পড়ালেখা ও অন্যান্য কাজের আইন শীথিল হয়ে যেত অনেকটাই সেরকম। সেদিন বিকেলে একটু আগেই অফিস থেকে বের হয়েছিলাম বাসায় ফিরব বলে। অফিস থেকে বের হয়ে কুড়িল বিশ্বরোড মেইন রাস্তার মোড়ে এসে রাস্তায় জনতার ঢল দেখে বাসায় ফেরার দুঃসাহস করাটা নিতান্তই বোকামি বলে মনে হল। কেউ অফিসের ব্যাগ কাধে, কেউ মাথায় টুপি পরানো পিচ্চিরে কাধে করে, কয়েকজন আবার গ্রুপ করে বাদাম চিবুতে চিবুতে যার যার গন্তব্যে হাটছেন তো হাটছেন। এতসব দেখতে দেখতে ভাবলাম ৮১০ কিলোমিটার নিজের বাসার দিকে না হেটে উল্টোদিকে ১ কিলোমিটার দুরে ক্যান্টমেন্টে ভাইয়ের বাসায় রাতটা কাটানোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। "শুভ কাজে দেরি করতে নেই" প্রবাদবাক্যটা মনে পরতেই উল্টো দিকে ফুটপাথ ধরে হাটা দিলাম। কেউ কেউ গায়ে থাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, কেউবা অনেকটা উদ্মিগ্ন, কেউ মোবাইলে তার পরিবারেকে নিজের অবস্থানের আপডেট দিচ্ছিল । আমি সবাইকে দেখতে দেখতে অনেকটা আনমনে হাটছিলাম আর মানুষের জিবনের বৈচিত্র উপভোগ করছিলাম।
হঠাৎ পিছনে ফিরে একটা দৃশ্য দেখে থমকে দাড়ালাম।
আমার থেকে প্রায় ৫০ গজ পিছনেই একটা ভদ্রমহিলা তার দুই হাতে দুইটা বাচ্চাকে নিয়ে এই ভিড়ের মাঝে হেটে অাসছেন । স্বাভাবিক অবস্থায় এই ৪/৫ বছরের বাচ্চাদের এত ভিড়ের মধ্যে কোলে করেই নেয়ার কথা। কিন্তুু মহিলা সম্ভবত ইতিমধ্যই অনেকটা দুর হেটে এসেছেন, তাই ক্লান্ত অবস্থায় তিনি তার দুটি বাচ্চাকে দুই হাতে ধরে আস্তে আস্তে ভিড় ঠেলে হেটে আসছেন। আমি কেন যেন ভাবছিলাম যে আমার বোধহয় কিছু একটা করা দরকার কিন্তুু সেটা কি এবং কিভাবে, ঠিক করতে পারছিলাম না। একবার ভাবলাম চলে যাই কিছুদুর সামনে এসে নিজেকে কেমন জানি অপরাধি মনে হতে থাকল, আবার পিছনে তাকালাম মহিলা তখনো বাচ্চাদের নিয়ে হাটছিল। আর যাই হোক অন্তত বাচ্চাগুলোর কষ্টটা আমার অপরাধবোধটাকে বাড়িয়ে দিচ্ছিল। একবার ভাবলাম গিয়ে বলি "যদি কিছু মনে না করেন আমি ওদেরকে কোলে নিতে চাই" আবার ভাবলাম ঢাকা শহরে কে কি ভাবে বলা যায় না, কারন এসব অপরিচিতদের সাহায্য নেয়া ঢাকাতে এখন ভয়াবহ রকমের বিপদজনক। পরে নিজেই সন্দেহের তালিকায় পরে যাই কিনা।
কিন্তুু কিছুতেই নিজেকে মুক্ত ভাবতে পারছিলাম না শুধুই মনে হচ্ছিল কোথায় যেন একটা দ্বায়বদ্ধতা রয়ে যাচ্ছে। আমি কিছুক্ষনের জন্য চোখ বন্ধ করলাম তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম আমাকে তাদের সাহায্য করা উচিত অন্তত নিজের দ্বায়মুক্তির জন্য হলেও।
সকল দ্বিধা কাটিয়ে আমি কিছুটা পিছনে হেটে এসে উনাকে বললাম " বাচ্চাদের বোধহয় কষ্ট হচ্ছে কিছু মনে না করলে আমি কি আপনাকে সাহায্য করতে পারি" উনি অনেকটা নিরব রইলেন। মনে হয় এই অপ্রত্যাশিত অনুরোধে কিছুটা বিব্রতবোধ করছিলেন। আমি সময় নষ্ট না করে ওদের একজনকে কোলে নিয়ে পাশাপাশি হাটা দিলাম। মহিলা অনেকটাই নিরবভাবে পাশাপাশি হাটছেন। কিছুদুর পর শেওড়া বাসষ্ট্যান্ডের ফুটওভার ব্রিজ পার হয়ে বাড়িধারা ডিওএসএইচ রেল ক্রসিং পর্যন্ত এসে উনাদের রিসকায় তুলে দেই।
উনি রিসকায় বসে কৃতজ্ঞতা ভরা যেই ধন্যবাদ দিলেন তাতে তখন আমার ভিতরে প্রশান্তিটা প্রকাশ করার মত উপযোক্ত শব্দ এখনো পাইনি।
অামি আনমনে হাটছিলাম হোটেল রেডিসনের সামনের ফুটপাথ ধরে, আর উনাদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করার জন্য নিজের প্রতি অনুশোচনা হচ্ছিল।
সবকিছুর পরেও ঐ পাচতারকা রেডিসন হোটেলের দিকে তাকিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে থাকা মানুষগুলোর থেকে ঐ মুহূর্তে নিজেকে একটু বেশিই সুখি মনে হচ্ছিল।।
২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:১৫
বিবর্ন সভ্যতা বলেছেন: ধন্যবাদ। হুম তা ঠিক। তবে সহজাত প্রবৃত্তি হিসেবে কারো বিপদে এগিয়ে যাওয়াই উচিত।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৪
একাত্তরের দামাল ছেলে বলেছেন: আপনাকে সাধুবাদ ... যদিও এই উপকার করতে গিয়ে বিপদে পড়বার আশংকা থেকেই যায়।