নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাশেদ রায়হান

রাশেদ রায়হান › বিস্তারিত পোস্টঃ

চন্দ্রা

২১ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:২৭

চন্দ্রা গ্রামের বাড়িতে থাকে। মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়।
ওকে আমি বলি, “তুমি ভালো আছো?” ও বলে, “আমার জন্য চিন্তা কোরোনা, আমি ভালো আছি।”
ওকে জিজ্ঞাসা করি, “তুমি আর কিছু বলবা না?” ও বলে, “না, পাশে মানুষ আছে।”
আমি আগের মতই বলি, “চন্দ্রা, আমি তোমাকে খুব ভালবাসি।” ও চুপ করে থাকে, কোনো কথা বলে না। আমি বুঝি, অবিরাম একাকিত্বের আগুনে ও সারাক্ষণ দগ্ধ হয়।

ও ছিল আমার পূর্ব পরিচিত। আমার এস.এস.সি পরীক্ষা শেষে আমি ওকে বাসায় পড়ানো শুরু করি। সে ই আমাকে খবর পাঠিয়ে ডেকে এনেছিল পড়ানোর জন্যে। যাইহোক, খুব মন দিয়ে পড়াতাম ওকে। চাইতাম ওর একটা ভালো রেজাল্ট হোক। ইতোমধ্যে আমার রেজাল্ট বের হলো। আমি ষ্টার নিয়ে পাশ করলাম। নিজের পড়াশোনায় আরো বেশি মনোযোগ দিতে চাইলাম। ওকে প্রায়ভেট পড়ানোটাও চালিয়ে যাচ্ছিলাম। পারতপক্ষে কোনদিন মিস করতাম না। তখন কেন জানি মনে হতো ও আমাকে ভালোবাসে।
একদিন বিকালে পড়ানো শেষে ও আমার হাতে স্ট্যাপলার করা একটি কাগজ দিল। বলল, বাড়িতে গিয়ে যেন খুলি। কাগজটা পকেটে নিয়ে আসতে আসতে সারাপথ কত কিযে ভেবেছিলাম তার ঠিক নাই। মনের মধ্যে কেমন যেন একটা রোমাঞ্চ আর সীমাহীন ভালোলাগা কাজ করছিল। আমার হাত, পা সব কাঁপছিল। সেদিন বাড়ি ফেরার পথ যেন ফুরাচ্ছিলই না। যাইহোক বাড়ি ফিরে সাইকেল রেখেই চুপি চুপি ঘরে ঢুকলাম। আস্তে আস্তে দরজা জানালা বন্ধ করে দিলাম। স্ট্যাপলার করা কাগজটা খুলতে কতটা সময় যে লেগেছিল তা বলতে পারবো না। কাঁপা কাঁপা হাতে কাগজটা খুলে আমি তো হতবাক! আমি যা ভেবেছিলাম তার একেবারেই তার উল্টো। কাগজের মধ্যে প্যাঁচানো তিনটা একশত টাকার নোট! আমি রাগ করে টাকাটা ফেরত দিতে চাইলে ও জোরালোভাবে অস্বীকৃতি জানালো। আমি তখন আর কিছু বলতে পারিনি।

একবার, আমি বেশ কিছুদিন পড়াতে আসতে পারি নি। কয়েকদিন পর আমাদের দেখা হল কলেজের মোড়ে। ও কোথায় যেন যাচ্ছিল। আমাকে দেখে ও কতটা খুশি হয়েছিল তা ওর চোখ দেখে বুঝতে পেরেছিলাম। ঐদিন সে আমাকে কথায় কথায় বলেছিল, আমারতো আপনার সাথে বিয়ে হবে, তাই না? এভাবেই আস্তে আস্তে কাছাকাছি আসা।

ওর সাথে আমার প্রেম চলতে লাগলো। প্রেমের জীবনে চড়াই উৎরাই স্বাভাবিক। কখনো ওর অবহেলা আমাকে কালবৈশাখীর মত লন্ড-ভন্ড করে দিয়েছে। আবার কখনো ওর ভালোবাসায় আমি দোল খেয়েছি স্বর্গের স্বর্ণদোলায়। কিন্তু সব বাঁধা পেরিয়ে ওকে ভালোবেসেছি আরো বেশি করে।

দুজনেই সমবয়স্ক হলেও ও তখন বিয়ের উপযুক্ত। স্বাভাবিক ভাবেই ওর অনেক সম্বন্ধ আসতো। তখন অন্যকারো সাথে ওকে কল্পনা করলেই আমার রক্ত হিম হয়ে যেত। একসময় সিদ্ধান্ত নিলাম বিয়ে করে ফেলার। কোন এক সালের ৯ মে আমাদের একরকম পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়ে গেল।

নিয়তির খেলায় আমি তখন একজন পরাজিত সৈনিক। যখন ক্রমে ক্রমে আমার সব এম্বিশন ধ্বংশ হবার উপক্রম। তখন চন্দ্রাই ছিল আমার একমাত্র অনুপ্রেরণা। তার ভালোবাসার আঁচল পেতে আমার চলার সকল বন্ধুর পথ মসৃণ করে দিয়েছে। আমার সকল দুর্দিনে সে আমার পাশে ছিল এবং এখনো আছে।

বলা বাহুল্য, আর সব ভাল ছাত্রদের মতই আমিও একজন ভালো পেশাজীবী (ডাক্তার) হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। স্বপ্ন হারিয়ে গছে সেই কবে! কিন্তু এখন আমি আমার স্বপ্ন হারিয়ে আর কষ্ট পাইনা। আমাদের ছোট্ট সংসার আলো করে এসেছে আমাদের ভালোবাসার ধন, আমাদের ভালাবাসার সেতুবন্ধন, আমার কন্যা শিশির, আর বৃষ্টি (আসল নাম নয়)।

এই ব্যস্ত শহরে পড়াশোনা আর শত ব্যস্ততার মাঝে ওর সাথে ফোনে অল্পই কথা হয়। কোন কোন সময় ফোন করতে দেরি হলে ও আকুল হয়ে পড়ে। সংসারের নানান হিসাব, আমাকে পাশে না পাবার কষ্ট আর নানান সমস্যার পরেও কখনো সে আমার ওপর বিরক্ত প্রকাশ করেনি।

আগামী ৯ মে আমাদের ১৫ তম বিবাহ বার্ষিকী। এতো দিনে ওর প্রতি একটি বারেও আমার বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়নি। যতবার ওকে ভালোবসি; নতুন করে ভালোবসি। ওর প্রতি আমার ভালোবাসা দেখে স্বজনেরা বলতো, সেটা নাকি আমার যৌনতার বহিঃপ্রকাশ। আচ্ছা, এই এতোগুলো বছরে ওর সাথে কি আমার শুধু যৌনতার সম্পর্ক?

যাক সেসব কথা। আমি জানি লোকালয়ের গন্ডিতে এমন অনেক চন্দ্রাই আছে যারা এখনো আমাদের পথ চেয়ে বসে থাকে। তিনবেলা খেতে বসার আগে একবার হলেও ভাবে, “ও ভাত খেয়েছে তো?” সব সময় চাই, ওর আর আমার চলার পথ যেন সাবলীল হয়, এপথ যেন আর বন্ধুর না থাকে। আর চাই, ওর মত চন্দ্রারা যেন আমৃত্যু সুখে থাকে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:১৮

রিকতা মুখাজীর্র্ বলেছেন: ভালো লাগল,আপনাদের বৈবাহিক জীবন আরো ভালো হোক।

২| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:৫২

রাশেদ রায়হান বলেছেন: ধন্যবাদ, রিকতা মুখাজী.......

৩| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:২৮

সিনবাদ জাহাজি বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো।
দোয়া করি আমৃত্যু যেন আপনাদের সম্পর্ক সেই ১৫ বছর আগের দিনটির মতই থাকে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.