![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুব সাধারন একজন মানুষ। আমার কোন ইতিহাস নেই, আর ভূগোল দেখতেই পারছেন।
রাত্রি দশটা! নজরুল সাহেব বাসায় ফিরছেন। অনেকদিন পরে, আজ ছোট মেয়েটার বাসায় গিয়েছিলেন। নাতি-নাতনিরা আসতেই দিতে চায়নি? নানা আমাদের সাথে আজ থেকে যাও, কত দিন পরে এলে? নারে আজ নয়, কাল অফিসে বড় সাহেব আসছেন। এক রকম জোড় করেই নজরুল সাহেবকে চলে আসতে হল।
যাত্রাবাড়ী খুব বেশি দূরে নয়। রিস্কায় বসে মনে মনে ভাবছেন। বাসায় ফিরে তারাতারি ঘুমিয়ে পরতে হবে। নচেৎ সকালে উঠতে পারবেন না। সকাল সকাল কাল অফিস যেতে হবে।
ছোট দুরুমের ফ্ল্যাট। আর একটা ছেলের সাথে শেয়ার করে থাকেন, নজরুল সাহেব। ছেলেটি বেশ ভালো, ইঞ্জিনিয়ার। তবে কেমন বিষণ্ণ আর হতাশ, সর্বক্ষণ কি যেন ভাবে? কথা বার্তা বিশেষ বলে না। মাঝে মাঝে ফোনে কার সাথে কথা বলে। চিৎকার করতে শোনা যায়, কাউকে কিছু একাটা বলে, নজরুল সাহেব শুনতে পান, তার অসুবিদা হয়, কিন্তু কিছু বলেন না।
আজ বাসায় ফিরে, কেমন যেন একটা অসঙ্গতি তিনি লক্ষ্য করলেন সচারাচর যা দেখা যায় না, তার ষষ্ঠ ইন্দিয় বলছে কিছু একটা গড়বর হয়েছে। লাইট জলছে না, তিনি লাইট জ্বাললেন। একখানা ছোট ডাইনিং স্পেস পেড়িয়েই বাম পাশে কিচেন ডান পাশে ছেলেটির রুম, সে রুমেও লাইট নেই দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। আরে এই সন্ধ্যা রাত্রিরে ত ছেলেটি ঘুমায় না, কি হল ওর? অসুখ বিসুখ, সকালে অবশ্য দেখা হয় নি! ঘুমাছিল।
নজরুল সাহেব দরজার পাশে দাঁড়ালেন, বার কয়েয় নক করলেন, সারা নেই। আবার নক করলেন সারা নেই,
নজরুল সাহেবঃ রাতুল! রাতুল! রাতুল কোন সারা নেই।
নজরুল সাহেবের জেদ চেপে গেলে, তিনি সজরে বার কয়েক দরজার লাথি ঝারলেন, কোন সারা নেই। অবাঞ্ছিত একটা ভয় ধিরে ধিরে থাকে গ্রাস করেছে, কি হল? মৃত্যু! হার্ড এট্যাঁক! না সুইসাইড!
মনে মনে তিনি স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করছেন এসব কিছু যেন না হয়।
তিনি দ্রুত নিচে নেমে গেলেন, বিল্ডিঙের কেয়ারটেকার দরজার সামনে দাঁড়ালেন।
নজরুল সাহেবঃ শামসুল ভাই! শামসুল ভাই!
শামসুল! আরে নজরুল সাহেব যে! আজ ত ভাড়ার দেবার ডেট না, তা কি মনে করে, এত রাত্রে?
নজরুল সাহেবঃ রাতুলের কিছু একটা হয়েছে, দরজা খুলছে না। আমার সাথে একটু আসুন।
অগত্যায় শামসুল সহ নজরুল সাহেব, পাঁচ তলার সেই ফ্ল্যাটে ফিরে আসলেন। শামসুল বার কয়েক দরজায় ধাক্কা ধাক্কি করার পর বলল, আমার মনে হয় পুলিশে খবর দেওয়া উচিৎ এভাবে দরজা ভাঙ্গা ঠিক হবে না।
নজরুল সাহেবঃ যা হয় করুন আমার মাথায় কিছু আসছে না।
শামসুল পুলিশে খবর দিতে গেল, নজরুল সাহেব পাথরের মূর্তির মত বসে রইল্রন। কি থেকে কি হয়ে গেল? রাতুল কে নজরুল সাহেব পুত্র স্নেহ করতেন, গতকাল রাতেও এক সাথে খাবার খেলেন, গল্প করলেন, আর আজ? চারপাশটা কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে, হাত তুলে তিনি চোখ মুছেন, পানি বহু দিন পর এক সময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পরলেন। নিজের অজান্তে রাতুলকে ভালোবেসে ছিলেন স্নেহ করন, কিন্তু বুজতে পারেন নি। মুত্যু এমন যে অতিবড় পাষাণ হৃদয় কেউ কাপিয়ে দেয় ভয়ে, ভক্তিতে।
ঠক ঠক ঠক শব্দে নজরুল সাহেব বাস্তবে ফিয়ে এলেন, দরজায় নক হচ্ছে, তিনি দ্রুত দরজায় খুললেন, দুজন পুলিশের থাসে শামসুল দাড়িয়ে আছে,
পুলিশঃ আপনার নাম? একরাশ বিরক্তি নিয়ে পুলিশ দুজন রুমের মাঝে এসে দাঁড়াল!
নজরুল সাহেবঃ নজরুল ইসলাম।
পুলিশঃ কি করেন? কত দিন এখানে, মানে এই বাসায় আছেন? ছেলেটির সাথে সম্পর্ক?
নজরুল সাহেবঃ চাকুরি! তা প্রায় বছর পাঁচেক। সম্পর্ক বলতে আমরা শেয়ার করে এই ফ্ল্যাটে আছি এই। এর বাইরে কোন সম্পর্ক নেই।
শামসুলের দিকে তাকিয়ে, চলুন রুমটা দেখি, হ্যা তাই চলুন।
রাতুলের রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে পুলিস অফিসার হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন, কবির!
ক্যাবলা চেহেরার কবির সামনে দারাতেই, অফিসার দ্রুত বললেন ভেঙ্গে ফেল কুইক।
ঠিক বলতে পারছি না, তবে প্রায় রাত্রেই ফোনে কথা বলতে শুনতাম, কাউকে কিছু একটা বোঝাচ্ছে, মাঝে মাঝে কান্নার শব্দ পেতাম। জিজ্ঞেস করলে কখনো উত্তর পাই নি। হয়ত পারিবারিক কিছু থাকতে পারে?
অফিসারঃ না হতে পারে না এ ধরনের কেস সাধারণত মেয়েলি ব্যাপার স্যাপার থাকে, মানে নারি ঘটিত। মাসক্সিমাম ক্ষেত্রে তাই হয়।
হঠাৎ কনস্টবলের গলা শনা গেল, স্যার আসুন আমার কাজ শেষ। সবাই একযোগে রুমের সামনে এসে দাঁড়াল। দরজায় হাতুরির কয়েটা ঘা পরতেই স্ক্রু গুল মটমট করে উঠল। আরও কয়েকটা ঘা দিতেই দরাম করে ছিটকিনি খুলে গেল, তারপর………………
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সবাই, বাক রুদ্ধ হয়ে গেছে যেন। ফ্যান শুন্য হুকে ঝুলছে রাতুল। চেয়ারটা বা পাশে কাত হয়ে পরে আছে, সার ঘর রক্তের বন্যা বইছে, ফাঁসিতে ঝোলার আগে নিজেকে যতটা সম্ভব ক্ষতবিক্ষত করেছে রাতুল, ভয়াবহ, বিভবশ্য, কোন মানুষ এই রুপ করতে পারে বিশ্বাস হয় না।
ভয়ার্ত কণ্ঠে অফিসার বলল, চলুন এই রুমে বেশি খন থাকলে আমার নিজেরেই হার্ড এট্যাঁক হবে, কবির তারতারি ওটাকে নামিয়ে ব্যাগে ভরে ফেল। পরে এসে সার্চ করছি, দেখি কোন মটিভ পাওয়া যায় কিনা? ও হ্যা বেড উপর থেকে ওই মোবাইল টা আমায় দাও।
অফিসারঃ নজরুল সাহেব এবং শামসুলের দিকে তাকিয়ে ডেড বডির কোন রিলেটিভ সাথে জানা শোনা আছে কি? একটা খবর দিন।
শামসুলঃ চার থালায় ওর বড় ভাই থাকত, এখন কোথায় জানি না। দেখি আমার ছেলের কাছে তার কোন নাম্বার আছে কিনা? শামসুল চলে গেল।।
একটু পরে ফিরে আসলও, হ্যা পেয়েছি এই নিন স্যার।
অফিসারঃ হ্যাল, হ্যাল, নাহারুল বলছেন,
নাহারুলঃ জ্যি
অফিসারঃ আমি ইন্সঃ রহমান, মুগদা থানা। রাতুল আপনার ছোট ভাই ত।
নাহারুলঃ হ্যা, কিন্তু কেন বলুন ত কি হয়েছে ওর?
অফিসারঃ না তেমন কিছু না। আপনি কি এখন একটু আসতে পারেন?
নাহারুলঃ কোথায়?
অফিসারঃ এই বাসায়, মানে রাতুলের বাসায়।
নাহারুলঃ আমি আসছি।
হটাৎ রিং টোনের শব্দে চমকে উঠলেন ইন্সঃ রহমান সাহেব, দেখলেন একটু আগে যে নাম্বারে কথা বলেছেন, সেই নাম্বার থেকে ফোন এসছে, তিনি ফোন রিসিভ করে বললেন হ্যা বলুন নাহারুল সাহেব, আমি সৈকত বলছি, আপনার ভাইয়ের মোবাইল টা আমার কাছে রাখা আপনি কি রওনা করেছেন?
নাহারুলঃ হ্যা আমি পথে। আসছি এই পাঁচ মিনিট।
অফিসারঃ ঠিক আছে আসুন।
কি মনে করে অফিসার মোবাইলের ডায়াল নাম্বার গুলো দেখলেন, দেখলেন সেখানে আখতার নামের কেউ একজন কে অনেক বার কল করা হয়েছে, কথা হয়নি? কেন? লাস্ট কল দুপুর ২.৩০ টায়, তার মানে মৃত্যুটা তিনটা সারে তিনটা নাগাদ হবে। পোস্ট মোট্রেম রিপোর্ট না আসলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে না।
কিন্তু এই আখতার টা কে? নজরুল সাহেব কিছু বলতে পারে কিনা দেখি? নজরুল একেবারে ভেঙ্গে পরেছেন, তার দিকে তাকানো যায় না। মনে বৃদ্ধ নিজের ছেলেকে হারিয়েছেন। কেমন বিদ্ধস্ত দেখাছে!
অফিসারঃ নজরুল সাহেব।
নজরুল সাহেবঃ জী বলুন?
অফিসারঃ আচ্ছা নজরুল সাহেব এই আখতার নামে কাউকে চেনেন কি না? মানে বলতে চাইছি ডেড বডির সাথে এই বাসায় কখন এসেছে কিনা? বা ডেড বডির কাছে কখনো শুছেন কিনা?
নজরুল সাহেবঃ না! রাতুলের কাছে বিশেষ কেউই আসত না, একমাত্র পাশের ফ্লাটের তানভীর ছাড়া। আর ওই নামের কাউকে আমি জানি না।
অফিসারঃ তানভীর কোথায়? ডাকুন।
নজরুল সাহেবঃ গ্রামের বাড়ি গেছে হয়ত আগামি কাল আসবে।
অফিসারঃ কাল ফিরলে আমার সাথে দেখা করতে বলবেন, কেমন? নাহারুল এসে গেছে কি, ডেড বডি বুঝিয়ে দিয়ে আমরা চলে যাব। নরমাল সুইসাইড টানাটানি করতে চাই না। হ্যা এই যে নাহারুল সাহেব এসে গেছেন।
নাহারুলঃ এযে দেখি মার্ডার।
অফিসারঃ না, ওর নিজের প্রতি প্রচণ্ড বিতৃষ্ণায় এরকম তা হয়েছে। কারও প্রতি প্রচণ্ড পরিমানে ক্ষোভ, তার বহিঃপ্রকাশ নিজের বডিতে। ও হ্যা রাতুল সাহেব কি করতেন?
নাহারুলঃ চাকুরি করত। একটা ফার্মে। পরে নিজে একটা ফার্ম খুলেছিলও, সুবিধে করতে পারে নি। প্রচণ্ড হতাশ থাকত কারও সাথে বিশেষ মিশত না। নিজের প্রতি ত্যাক্ত বিরক্ত, সরাব ছোট ছিল।
অফিসারঃ আচ্ছা আখতার নামের কাউকে চেনেন?
নাহারুল সাহেবঃ হ্যা শুনেছি একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক তারি নাম “আসমা আখতার”।
অফিসারঃ হ্যা মৃত্যুর কারন ওটাই ব্যর্থ প্রেম।
পরিশিষ্ট
১৮ই ফ্রেব্রুয়ারি, ইন্সঃ রহমান সাহেব সদ্য পাওয়া একটা রিপোর্ট হাতে নিয়ে হতবম্ম হয়ে বসে আছেন। রাতুলের রুম থেকে পাওয়া মোবাইলে আখতার নামের রহস্য আজ তার কাছে প্রকাশিত, হঠাত করে পরম স্নেহ বোধ জেগে উঠল সে মরে যাওয়া ছেলেটির প্রতি। চোখের পাতা ঝাপসা হয়ে আসছে। নিজের মনকে শক্ত করেলেন, আজ তার মেয়ের বিয়ে।
মিরপুর-২ এর ৪ নাম্বার রোডের এই বাড়িটি ঘিরে আজ আনন্দের ফোয়ারা ছুটছে, এলাকার গাইয়ে ছেলেরা বেসুরে গান গাইছে, আত্মিয় স্বজনরা সবাই এসেছে, হই হুল্ল, হাসি তামাসা। বাচ্ছাদের কান্না। কেবল আনন্দ নেই রহমান সাহেবর মনে তার মেয়ে,তার মেয়ে একটা খুনি? ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড ক্ষোভ জেগে উঠল, না সে আমার মেয়ে হতে পারে না সে একটা খুনি।
হঠাত তীক্ষ্ণ চ্যাঁচামেচি তার চিন্তার রেখাকে ছিন্ন করল, রহমান সাহেব উঠলেন। পাশের রুমে তার মেয়ে নব বধুর সাজে সজ্জিত, দুচোখে নতুন স্বপ্নের ঝিলিক। আসেপাশে অনেক মেয়েরা হাসি তামাসায় মশগুল। তিনি সবাই কে রুম থেকে বের করে দিলেন। দুচখে তার ঘৃণা ঝরে পরছে এই তার মেয়ে, যাকে বুকে আগলে এতটা বড় করেছেন। রহমান সাহেব মেয়ের পাশে বসলেন।
রহমান সাহেবঃ আসমা।
আসমাঃ জী বাবা।
রহমান সাহেবঃ তুমি রাতুল নামের কাউকে চিনতে?
আসমার চোখ মুখ ধিরে ধিরে পাল্টে যেতে লাগলো, অজানা ভয় তাকে গ্রাস করছে, বাবা কি সব জেনে ফেলল। কিন্তু তা কি করে? আমি ত কাউকে কিছু বলনি? এ অসম্ভব।
নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে আসমা বলল……
আসমাঃ না বাবা এ নাম এই প্রথম শুনছি।
রহমান সাহেবঃ আমার কাছে লুকাসনি সব খুলে বল, আর না বলেও ক্ষতি নেই যা হবার তা ত হয়েই গেছে।
আসমাঃ তুমি কি বলছ বাবা, আমি ত কিছু বুঝতে পারছি না।
রহমান সাহেব পকেট থেকে রাতুলের ডেড বডির ছবি বের করে আসমার দিকে ছুরে মারলেন, দেখ ভালো করে চেয়ে দেখ, চিনতে পারছিস। কি দোষ করেছিল ছেলেটি, ভালোবেসে ছিল তাই এই হাল করেছিস তার। তুই একটা খুনি!!
বাবা হিসাবে আমার কর্তব্য আমি করেছি, পুলিশ অফিসার আমার কর্তব্য আমি করব না! আজকের পর আর কোনদিন তুই আমার সামনে আসবি না। কোন খুনি আমার মেয়ে হতে পারে না।
২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:৪৪
মেরুদণ্ড হীন বলেছেন: জনাব আরো কিছু থ্রিলার ছোট গল্প কি লিখবেন ?
০৮ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:৫৬
আহমেদ রাতুল বলেছেন: ধন্যবাদ। চেষ্টা করব।
৩| ১২ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৫২
মোঃহাদী বলেছেন: অসাধারন
০৮ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:৫৭
আহমেদ রাতুল বলেছেন: শুকরিয়া
৪| ০৮ ই মে, ২০১৬ রাত ১:০০
আহমেদ রাতুল বলেছেন: কোনো মানুষ কেবল তখনই আত্মহত্যা করতে উদ্যোত হতে পারে যখন তার নিরাশা অত্যন্ত চরমে পৌঁছে; যখন আশার কোনো আলো তার হৃদয়ে অনুভূত হয় না; যখন তার অস্তিত্ব ও সত্তার কোন মূল্যবোধ অবশিষ্ট রয়েছে বলে অনুভূত হয়না; অর্থাৎ যেসব 'মূল্যের' ভিত্তিতে সে এতদিন অস্তিত্বে ছিল এবং যেসব 'মূল্য-বোধের'সাথে তার সত্তার পরিচিতি ছিল।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা মার্চ, ২০১৬ রাত ১:৩৩
মেরুদণ্ড হীন বলেছেন: জনাব গল্প ভালো লেগেছে উত্তম লেখনি