নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছবি

রায়হান মোহাম্মাদ খান

নিজের সম্পর্কে জানাতে চাই।দেশ সম্পর্কে জানতে চাই।

রায়হান মোহাম্মাদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

৩৬৪ দিন মুনাফা নেয় আর বাকি ১ দিন বিনোদন!!!

০১ লা মে, ২০১৭ সকাল ১১:৪৯

মানুষ হিসেবে অঘোষিতভাবে আমাদের সবচেয়ে বড় একটি পরিচয় হচ্ছে আমরা শ্রমিক অর্থাৎ শ্রম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করি । সেই অর্থে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থেকে কমলাপুরের কুলি সবাই শ্রমিক। শুধু তফাৎ যে সবাই শ্রমিক হওয়া সত্ত্বেও কেউ শ্রমের মূল্যায়ন পায় আর কেউ পায় না কিংবা কেউ শ্রমের মূল্যায়ন দেয় আর কেউ দেয় না। তবুও আমাদের বেচে থাকার জন্য কর্ম করে যেতেই হয়। স্বয়ং স্রষ্টা আমাদের শ্রম করার মাধ্যমে বাঁচতে বলেছেন সূরা নাবা-তে আল্লাহ বলেন-“আমি রাতকে বিশ্রামের জন্য এবং দিনকে কর্মের জন্য বা কর্মের মাধ্যমে উপার্জনের জন্য বানিয়েছি।” অবশ্যই এখানে সৎকর্ম সম্পর্কে বলা হয়েছে। ওল্ড টেস্টামেন্ট এর উপদেশক অধ্যায় তে বলা হয়েছে “ঈশ্বর মানুষকে সূর্যের নিচে শ্রম করতে যতদিন পরমায়ু দেন , তাবত দিন ভোজন ও পান করা ও সেই সকল শ্রমের ফল ভোগ করা উত্তম ও উপযুক্ত” হজরত দাউদ (আঃ) বলেছেন “নিজের হাতে কাজ করে জীবিকা অর্জন করে খাদ্য গ্রহণের চেয়ে উত্তম কোনো খাবার হতে পারে না”। তার মর্মার্থ দাড়ায় যে বেঁচে থাকতে হলে কর্ম করতে হবে। প্রাচীনকাল হতে শ্রম ছিল ব্যক্তিকেন্দ্রিক। নিজের সংসার চালানোর জন্য শ্রম দিত এবং নিজেই সমাজ থেকে এর মূল্যায়ন নিয়ে নিত। জমিদার শ্রেণীর সাথে হয়তো একটা দূরত্ব থাকলেও সমাজের আর সবাই কিন্তু এক ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে শিল্পায়নের যুগে এসে আমরা ধর্ম কিংবা সমাজ দুটো থেকেই অনেক দূরে সরে এসে এক নতুন সমাজ তৈরি করেছি যেখানে শোষণের বীজ সমাজের স্তরে স্তরে আর মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে । আর সেটা হল নোংরা শ্রম বিভাজন (যদিও এই বিভাজন আগেও ছিল তবে সেটা সভ্য বিভাজন)। এই নোংরা বিভাজনে আমরা সম্মানকে করেছি শ্রেণীবদ্ধ, ভালবাসাকে করেছি ব্যক্তিবিশেষে বিভিন্ন, আর মানবতা নয় মুনাফাকে করেছি বড়। অ্যাডাম স্মিথ তার the Weath of Nation এ এই শ্রম বিভাজন নিয়ে বলেন it can lead to "the almost entire corruption and degeneracy of the great body of the people. … unless government takes some pains to prevent it." কিন্তু বিড়ালের গলায় এই ঘণ্টাটা লাগাবে কে? সব্বাই যে এই পুজিবাদ সমাজ ব্যবস্থার গোলাম। শ্রমিকের রক্ত চুষেই যে সভ্যতা এগুচ্ছে। শ্রমিকের শ্রম দিয়েই সভ্যতা শিখরে যাবে স্বাভাবিক। কিন্তু সেই শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন যখন না হয় তখনি সভ্যতার কলকাঠি নাড়করা হয় প্রশ্নবিদ্ধ। মুসলিম শরিফে আছে হজরত মোহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, “কেয়ামতের দিন ওই উম্মতের বিরুদ্ধে আমি নবী নিজে আল্লাহর দরবারে জাহান্নামের শাস্তি চেয়ে মামলা দেব, যে শ্রমিককে খাটিয়ে তার সঠিক দাম দেয় না”। এখন প্রশ্ন আসে যে সঠিক দাম কি? শ্রম তো অদৃশ্য বস্তু, দাম উঠবে কিভাবে? এবার অতি সাধারন কিছু কথায় আসি। এটা চিরন্তন সত্য যে আমরা জীবনধারণের জন্যই মুলত শ্রম বিক্রি করে থাকি। তিনবেলা পরিবারকে নিয়ে পেট ভরে খাওয়া, শরীর ঢাকার মতো কয়েক টুকরা কাপড় , থাকার জন্য কিছুটা ইট, কাঠে আবদ্ধ একটু জায়গা এই সামান্য জিনিসটুকুর জন্যই তো শ্রম বিক্রির এতো আয়োজন। মানুষ মানুষের কটুকথা, বাপমা ধরে গালি, অমানুষিক অত্যাচার (শারীরিক ও মানসিক), সাধ্যের অতিরিক্ত পরিশ্রম, সবকিছুই নীরবে চোখের পানি ফেলে সহ্য করে শুধু ঐ মৌলিক চাহিদাগুলো পুরনের জন্য। কিন্তু এতকিছুর পরেও যদি সেই কষ্টের বিনিময়ে নুন্যতম বিনিময় না মেলে তখন শ্রমিকের শোষণ আর অধিকারের প্রশ্ন সামনে চলে আসে। যে মানুষ এসব আয়োজন করার জন্য পরিবারকে ঠিকভাবে সময় দিতে পারে না, পরিবারের সাথে হাসিখুশি, উৎসবের সময়গুলো সঠিকভাবে উপভোগ করতে পারে না, পরিবারের বিপদে কাজের কারনে ছুটে আসতে পারে না, ১০৪ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে বিছানায় থাকতে পারে না, সেই মানুষটা যদি এতো ত্যাগের মাধ্যমেও তার ন্যায্য প্রতিদান না পায় তাহলে কি লাভ বেচে থাকার? কি লাভ পৃথিবীটাকে সুন্দর করে সাজানোর, কি দরকার সমাজের শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করার, কি দরকার শ্রমের সদ্ব্যবহার করার, কি দরকার শ্রমের সর্বস্ব ও সর্বচ্চ ব্যবহারের। শ্রমিকের এই ঘামঝরা পরিশ্রমের দ্বারা লব্ধ পণ্য, সেবা দিয়ে শ্রেণী বিভাজনের উচুস্তরের মানুষগুলো মুনাফা জমিয়ে আয়েশ করছে আর একদিনের জন্য এই শোষিত মানুষগুলোকে নামেমাত্র সম্মান করে মজা লুটছে। ৩৬৪ দিন মুনাফা নেয় আর বাকি ১ দিন বিনোদন নেয়। আমরা শুধুমাত্র একদিনের জন্য শোষণ থেকে বাঁচতে চাইনা আর একদিনের জন্য অধিকার চাইনা। আমরা আজীবনের জন্য চাই শোষণমুক্ত পরিবেশে ঘেরা আর ন্যায্য অধিকারে ভরপুর একটা কাজের পৃথিবী
............ মোহাম্মাদ রায়হান খান......

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মে, ২০১৭ দুপুর ১২:২৮

গাজী ইলিয়াছ বলেছেন: আজ আইন তৈয়ার কারক ও আমলার কাছে শ্রমিকরা জিম্মী। তাঁদের কোন পেনশন ও অবসর ভাতার চিন্তা ঊনারা করেন না। কাজ করতে না পারলে বুড়ো বয়সে উপুষ থাকা ও রোগ যন্ত্রনা ভোগ শেষে কবরে যেতে হয়। এ হল শ্রমিকের পরিনতি।

০২ রা মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২০

রায়হান মোহাম্মাদ খান বলেছেন: সহমত ভাই। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.