নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির, অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ \nআধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় e-mail: [email protected]

রেজাউল করিম ফকির

অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রেজাউল করিম ফকির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের অযথার্থতা

২০ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:১১



ইসলামী শাসনতন্ত্র হলো ইসলাম ধর্মীয় আদর্শ থেকে উৎসরিত রাজনৈতিক চিন্তাধারার ভিত্তিতে পরিচালিত রাষ্ট্রব্যবস্থা। বর্তমানকালে ইসলামী শাসনতন্ত্রের ভিত্তিতে পরিচালিত রাষ্ট্রব্যবস্থা বিশ্বের কোথাও নেই। কিন্তু বাংলাদেশে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে, অনেকগুলো রাজনৈতিক দল সচেষ্ট রয়েছে। এই সারিতে যে সব রাজনৈতিক দল রয়েছে, সেগুলো হলো- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। যাঁরা এই দলগুলোর নেতৃত্বে রয়েছেন, তাঁরা হলেন ইসলামী ভাবাধারায় উজ্জীবিত মূলধারার শিক্ষায় শিক্ষিতজন থেকে শুরু করে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ওলামা ও মাশায়েখগণ।

তাঁরা যে রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা চিন্তা করেন, তা কোনো দলের গঠনতন্ত্র বা ইশতেহারে সবিস্তারে বিধৃত নয়। তবে তাঁদের রাষ্ট্রচিন্তার উৎস হলো আল-কুরআন ও সুন্নাহ। কিন্তু আল-কুরআন বা সুন্নাহতে ইসলামী আদর্শের শুধু মূলনীতিগুলো বিধৃত রয়েছে। সে কারণে দলভেদে এই সমস্ত দলের নেতৃত্বের রাষ্ট্রচিন্তা অভিন্ন নয়।

আমরা ইসলামী শাসনতন্ত্রের অতীত সম্পর্কে জানি। ইসলামী শাসনতন্ত্র সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো খুলাফায়ে রাশিদীনের যুগে। সেই খুলাফায়ে রাশেদীন যুগের অবসান হয়েছিলো রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে। এমনকি খুলাফায়ে রাশেদীন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো একটি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে। হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর ইন্তেকাল পর্বে তাঁর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় শাসনতন্ত্র পরিচালক খলিফা নির্বাচন নিয়ে এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়, যা খুলাফায়ে রাশেদীনের পরবর্তী যুগ পর্যন্ত প্রলম্বিত হয়। এই দ্বন্দ্বে নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামী শাসনতন্ত্রে আবু বকর (রা.) খলীফা হিসাবে অধিষ্ঠিত হন বটে, কিন্তু সে সময় খলিফা পদে অধিষ্ঠিত হতে নির্বাচনী দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ হয়েছিলেন মদীনার আনসারগণের প্রতিনিধি সা'দ ইবনে উবাদাহ আল-আনসারী (রা.) ও বর্তমানে শি’য়া হিসাবে খ্যাত মুসলমানদের প্রতিনিধি হযরত আলী (রা.) । শেষ পর্যন্ত উমর ইবনুল খাত্তাব আবু বকর (রা.) ও আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ (রা.) প্রমুখের হস্তক্ষেপে আবু বকর (রা.) খলীফা হিসাবে নির্বচিত হন। আবু বকর (রা.)-কে খলীফা নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ইসলামী শাসনতন্ত্রের খলীফা নির্বাচন সুসম্পন্ন হয় বটে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে এক ধরণের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব রয়ে যায়। যে কারণে পরবর্তীকালে নির্বাচিত খলীফাদের তিনজনকে প্রাণ দিতে হয়েছিলো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিকট। তাছাড়া প্রত্যেক খলীফার মৃত্যুর আগে ও পরে অনেক রক্তাক্ত ঘটনা ঘটে। উদাহরণ স্বরূপ, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আবু বকর (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর, তাঁর পুত্র উবাইদুল্লাহ ইবনে উমর উত্তেজিত হয়ে সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের হত্যা করতে উদ্যত হন এবং তিনি ঐ প্রয়াসে হরমুজান, জাফিনা ও মূল আততীয় পিরুজ-এর কন্যাকে হত্যা করেন।

উপরের আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট হয়েছে যে, আদর্শ যতোই কল্যাণমূখী হোক না কেনো শাসনতন্ত্রে অধিষ্ঠিত হতে হলে, নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অতিক্রম করতে হয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রতিপক্ষ দল থাকে, তাঁদের আদর্শও থাকে। ইসলামী আদর্শে উদ্দীপিত রাজনৈতিক দল হয়েও, খলীফা হয়েও এবং একই কুরআন-সুন্নাহর অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগে সাহাবীগণ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ব্যপৃত ছিলেন। যে কারণে খিলাফত প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর (প্রতিষ্ঠা ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ-বিলুপ্তি ৬৬১ খ্রিস্টাব্দ) কাল অতিক্রান্ত হতে না হতেই, খিলাফত বিলুপ্ত হয় এবং সে সময়কার সাহাবী, তাবেঈ ও তাবেঈ-তাবেঈনদের হাত ধরে ইসলামী রাজতন্ত্র কায়েম হয়। এই ইসলামী রাজতন্ত্র আরব অঞ্চল থেকে আরও বিস্তৃত হয়ে ভারতবর্ষে পৌঁছায়। এর ধারাবাহিকতায় একসময় (১২০৩ খ্রিস্টাব্দে) বাঙ্গলায় ইসলামী রাজতন্ত্র কায়েম হয়। ততোদিনে আরবের ইসলাম মধ্যএশীয় মুসলমান সমরনায়কদের হাতে ধরে নানা উপাদানে সংশ্লিষ্ট হয়ে, সহজিয়া সূফী ইসলাম ধর্মে রূপান্তরিত হয়। আর ইসলামী রাজতন্ত্রের যারা ধারকবাহক ছিলেন, তাঁদের জীবনাচারেও ছিলো না কোনো ইসলামের ছাপ।

খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগ ও পরবর্তী ইসলামী রাজতন্ত্রের যুগে রাষ্ট্রক্ষমতার পট পরিবর্তনে বা রাজা ও সুলতান পরিবর্তনে সর্বদাই জড়িত ছিলো রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। আর এই রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বহি:প্রকাশ ঘটেছে নানান প্রতারণা, কূটকৌশল, ষড়যন্ত্র, গুপ্তহত্যা ও হত্যায়। আর যাঁরা এসব কাজের সহায়ক ছিলো- তাঁরা ছিলো ইসলামের লেবাসদারী ফাসিক, মুনাফিক ও মুরতাদগণ। কাজেই আজকের দিনে অথবা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েম করতে গেলে, ইসলামের লেবাসদারী এসব ফাসিক, মুনাফিক ও মুরতাদগণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে যে হাওয়া দিবে- এ কথা অনেকটাই স্পষ্ট। ফলশ্রুতিতে, সফল ইসলামী বিপ্লব শেষে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী শাসনতন্ত্রে তাঁরাই তাঁদের মতো করে ইসলামের লেবাসদারী ফাসিক, মুনাফিক ও মুরতাদদেরকে বসাবে। মাঝখান থেকে ব্যর্থ হবে ইসলামী বিপ্লবে আত্মদানকারী মুমিন-মুসলমানদের শহীদের রক্ত। কাজেই এদেশে ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েম হবে- এমনটা আশা করা বাতুলতা মাত্র।

উক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইসলামের লেবাসদারী ফাসিক, মুনাফিক ও মুরতাদগণ এবং ভিন্ন ধর্মী ও ভিন্ন মতাবলম্বী জনগোষ্ঠীকে সামিল রেখে প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেই ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েম করা হলে, সেই রাষ্ট্রব্যবস্থা হবে টেকসই রাষ্ট্রব্যবস্থা।কাজেই, সমস্ত ইসলামী আদর্শে উদ্দীপ্ত দলগুলোর কাজ হবে একটি রক্তক্ষয়ী ইসলামী বিপ্লবের ধারণাকে পরিহার করে একে বাস্তবধর্মী ধারায় প্রবাহিত করা, যেনো জনমানুষ ইসলামী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে কল্যাণমূখী করে গড়ে তোলে এবং ইসলামী বিপ্লবের নামে কোনো ভবিষ্যত রক্তক্ষয়ী পরিণাম থেকে জাতি রক্ষা পায়।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: নিবন্ধটি প্রথম প্রকাশিত হয় জানুয়ারি ২৫, ২০২১ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা অনলাইন পত্রিকায়

https://bangla.dhakatribune.com/opinion/2021/01/25/31259

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:৫৮

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: গনতন্ত্র মধ্যে ইসলামী শাসনতন্ত্র এই দুটি বিষয় পরস্পর বিরোধী।সামরিকতন্ত্রে থাকতে পারে যেটা মিসরে আছে পাকিস্তানে আছে।বাংলাদেশে চেষ্টা করেছিল জিয়া এবং এরশাদ,ফল ভালো হয়নি।ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা রাখতে হবে,রাষ্ট্র হবে গনতান্ত্রিক ধর্ম হবে ব্যক্তিগত পালনিয় বিষয়।

২| ২০ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০১

চাঁদগাজী বলেছেন:



ঢাকা ট্রিবিউনের পাঠকরা কি ফিডব্যাক দিয়েছিলেন?

৩| ২০ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৮

রানার ব্লগ বলেছেন: ইসলাম ধর্মে গনতন্ত্র বলে কিছুই নাই। ইহা সর্ব সম্মতিতে একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাসী। জনগনের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া না দেয়া নিয়ে ইসলামে কোন মাথা ব্যাথা নাই। এখানে অনেকেই এই ব্যাপারটা ভুল প্রমানে অনেক কাহিনির বর্ননা দিবে কিন্তু এর সব থেকে বড় প্রমান হজরত আলী কে আপামর আরব বাসির মতামতের বিপক্ষে গিয়ে উসমান কে খলিফা করা। এর বিপক্ষে অনেক মতামত আছে কিবতু কাহিনি সত্য। আলী মেনে নিয়েছিলেন কারন তিনি কোনরুপ ঝামেলা চান নাই। বস্তুত তিনি অনেক শান্ত স্বভাবের ছিলেন।

৪| ২০ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪০

রানার ব্লগ বলেছেন: হাদিসের দোহাই দিয়ে মামুনুল বিয়ে করেছিলেন তার সৎ মাকেও! (ভিডিও)

৫| ২০ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:২২

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই ধরণের আন্দোলন পরিচালনা করার মত নেতা বর্তমানে পৃথিবীতে নাই। সেই রকম নেতা পাওয়া গেলে আন্দোলনের কথা ভাবা যেতে পারে।

৬| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:০১

রাজীব নুর বলেছেন: এখন সময় বদলেছে। এখন আন্দোলন করতে হবে দূর্নীতি বিরুদ্ধে। দুষ্টলোকের বিরুদ্ধে। বেকারত্বের বিরুদ্ধে।

৭| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৫৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনাকে আপনার পোষ্টের আশেপাশে দেখছি না, পোষ্টে কি করোনা ভাইরাস লেগে গেছে?

৮| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:১৫

পুকু বলেছেন: তফাৎ যও। সব ঝুট হ্যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.