![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আওয়ামীলীগ সরকার দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে দেশের সর্বত্র সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠছে। কিন্তু সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নয়নে সরকারের প্রয়াস সর্বত্র সমান নয়। দেশের কিছু কিছু অঞ্চল রয়েছে, যেখানে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের আতিশায্য দেখা যাচ্ছে। আবার অন্য কোনও অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা সরকারের নজরের বাইরে রয়ে গেছে। সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা দশকের পর দশক সরকারের নজরে বাইরে রয়ে গেছে, এমন একটি অঞ্চল হলো ময়মনসিংহ বিভাগের উত্তরাঞ্চল। এই বিভাগে যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনা প্রয়োজন, এমন দু’টি অঞ্চল হলো নেত্রকোণা জেলা ও শেরপুর জেলা। উল্লেখ্য যে, নেত্রকোণা জেলা ও শেরপুর জেলা পরস্পর নিকটবর্তী জেলা। এই দু’টি জেলার মাঝখানে রয়েছে, ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলা, যা এই দুই জেলার মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করেছে। এই একটি মাত্র উপজেলা মাঝখানে থাকার কারণে আপাতদৃষ্টিতে দু’টি জেলা পরস্পর যোজন যোজন দূরে বলে মনে হয়। কিন্তু এই দুই জেলার মধ্য ব্যবধান কেবলমাত্র ২০ কিলোমিটার। এই দুই জেলার মধ্য সরাসরি সড়ক যোগাযোগ না থাকায়, নেত্রকোণার মানুষকে একবার ময়মনসিংহ গিয়ে তারপর ফুলপুর হয়ে শেরপুর পৌঁছাতে হয়। ঠিক একইভাবে শেরপুর জেলার মানুষকে নেত্রকোণা যেতে হলে একবার ফুলপুর হয়ে ময়মনসিংহ গিয়ে তারপর নেত্রকোণা পৌঁছাতে হয়। নেত্রকোণা ও শেরপুরের মানুষকে ময়মনসিংহ হয়ে যাতায়াত করার কারণে অতিরিক্ত ২৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। সে হিসেবে পূর্বধলা ও নকলা উপজেলার দূরত্ব সরাসরি যেখানে প্রায় ৫০ কিলোমিটার, সেখানে ময়মনসিংহ হয়ে যাতায়াত করার জন্য এই দূরত্ব হয়ে দাঁড়ায় ৭৫ কিলোমিটার।
এই অতিরিক্ত দূরত্ব অতিক্রম করার কারণে পূর্বকালে এই জেলার মানুষের মধ্যে তেমন কোনও যোগাযোগ ছিলো না। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এই দুই জেলার মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলশ্রুতিতে এই দুই জেলার মানুষের মধ্যে যাতায়াতের পৌন:পুনিকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কারণে এই দুই জেলার মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি এই দুই জেলায় অনুষ্ঠিত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যোগ দিতে মানুষ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ভ্রমণ করছে। অধিকন্তু উভয় জেলার মধ্যে পণ্য পরিবহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে এই দুই জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এই দুই জেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য বৃহৎ কোনও বাজেটের প্রয়োজন নাই। কারণ নেত্রকোণা জেলার আভ্যন্তরীণ যোগাযোগের অংশ হিসেবে নেত্রকোণা শহর থেকে পূর্বধলা উপজেলা সদর পর্যন্ত সড়ক রয়েছে। অন্যদিকে আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্কের আওতায় শেরপুর থেকে নকলা হয়ে ফুলপুর পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। কাজেই পূর্বধলা থেকে ফুলপুর পর্যন্ত কেবলমাত্র ২৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হলেই, নেত্রকোণা জেলা ও শেরপুর জেলা সড়কের মাধ্যমে পরস্পর স্থায়ীভাবে যুক্ত হবে।
২৫ কিলোমিটারের এই সড়ক নির্মাণ করা হলে শুধু যে নেত্রকোণা জেলা ও শেরপুর জেলা যুক্ত হবে, তা নয়। বরং এই যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে নেত্রকোণার দিক থেকে সুনামগঞ্জ জেলা (যেমন-ধর্মপাশা উপজেলা ও শাল্লা উপজেলা)-এর কয়েকটি উপজেলা যুক্ত হবে; অন্যদিকে শেরপুর জেলার দিক থেকে জামালপুর জেলা (যেমন-বকশীগঞ্জ)-এর কয়েকটি উপজেলা যুক্ত হবে। এভাবে প্রায় ২০০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত একটি অঞ্চল সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। ফলশ্রুতিতে দুটি প্রত্যন্ত জেলার মধ্যে পারস্পরিক অর্থনৈতিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। এভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাথে প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টির ফলে, দেশে সুষম অর্থনৈতিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটবে। প্রত্যন্ত জেলাসমূহের মধ্যে এরূপ পারস্পরিক যোগাযোগ প্রত্যন্ত অঞ্চল কেন্দ্রিক সম্পদের উৎপাদন, পরিবহণ ও বন্টন ব্যবস্থাকে সহজতর করবে। কাজেই যোগাযোগ উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় উক্ত ২৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ এখন সময়ের দাবী।
©somewhere in net ltd.