![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সমাজ জীবনে ইসলাম কায়েমে জিহাদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এই জিহাদের অর্থ ব্যাপক। অথচ আমাদের দেশের ওলামা ও মাশায়েগগণ জিহাদকে তাদের মতো ব্যবহার করে থাকেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সংঘটিত জিহাদের কিছু প্রত্যক্ষ তৎপরতা থেকে আলেম-ওলামাদের জিহাদের লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। লক্ষ্যবস্তু ও তৎপরতা থেকে দেখা যায় যে, বাংলদেশের আলেম-ওলামাগণ জিহাদ বলতে যা বুঝায় তা হলো— আরকান ও আফগান ফ্রন্টে কাফের বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ, দেশের বিচরালায় ও পুলিশ বাহিনীর প্রতি চোরগুপ্তা হামলা, দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে ইসলাম ধর্ম বিরোধী উপাদান সংযোগে যুক্ত ব্যক্তিদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, নাস্তিক ও মুরতাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হত্যা এবং ইসলাম ধর্মীয় চিন্তাচেতনা বিরোধী মতবাদ ও মতবাদ প্রচারকারীগণকে নিবৃত্তকরণ প্রভৃতি।
অথচ হযরত মোহাম্মদ (সা এর ইসলাম ধর্ম কায়েমে জিহাদের লক্ষ্য ছিলো তাওহিদ প্রতিষ্ঠা এবং সমাজে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। একটি দেশ মুসলিম দেশে পরিণত হয় তাওহিদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। বাংলাদেশ একটি মুলসিম দেশ হিসেবে এ দেশে তাওহিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কাজেই এখন এই দেশে জিহাদের উদ্দেশ্য হবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। এই সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকে লক্ষ্য হিসেবে নিয়ে বাংলাদেশ জামাআতে ইসলাম ও ইসলামিক শাসনতন্ত্র প্রভৃতি ইসলামিক রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ সব দল মনে করে যে, বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে তারা সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। এখানেই ইসলামিক দলগুলোর জিহাদ সম্পর্কে চিন্তধারা ও কৌশলের ভ্রান্তি ধরা পড়ে। কারণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিপক্ষ হলো মূলত এ দেশের ফাসিক (অধার্মিক, লঘু পাপী, দুশ্চরিত্র), ফাজির (পাপাচারী, অনিষ্টকারী) ও মুনাফিক (কপট, ধর্মধ্বজী) গণ। কাজেই জিহাদের লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত এই তিন শ্রেণীর মুসলমানগণ। অর্থ্যাৎ জিহাদের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার চেয়ে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত জিহাদে লিপ্ত হওয়া প্রয়োজন। কারণ তারা সমাজের প্রতিটি স্তরে অধিষ্ঠিত থেকে ক্ষমতার অপব্যহারের মাধ্যমে রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। তারা অবিচার, অনাচার ও অর্থনৈতিক দুর্নীতি ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমাজে মানুষের হক নষ্ট করে চলেছে। অথচ আলেমগণ এই শ্রেণীটির নিকট থেকে ছদকা, দান ও হাদিয়া গ্রহণের মাধ্যমে তাঁদের জীবন ধারণ করে থাকে এবং মসজিদ, মাদ্রাসা ও ইসলামিক কেন্দ্রগুলো পরিচালনা করে। এর বিনিময়ে উক্ত তিন শ্রেণীর মুসলমানগণ মসজিদ ও মাদ্রাসায় প্রতিনিধিত্ব লাভ করে, মানুষের নিকট স্বচ্ছ ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি পায় ও সর্বোপরি পাপবোধ থেকে মুক্তি পায়। কাজেই হযরত মুহাম্মদ (সা
প্রবর্তিত ইসলাম ধর্ম কায়েম করতে হলে, এই শ্রেণিটির বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও প্রতিনিয়ত জিহাদে লিপ্ত হতে হবে। এই শ্রেণীর বিরুদ্ধে জিহাদ তিন উপায়ে করা যেতে পারে:
১) এই শ্রেণিটির নিকট থেকে মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় দান, ছদকা ও হাদিয়া গ্রহণ বন্ধ করতে হবে;
২) তাদেরকে ইসলামিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব লাভে বাধাদান করতে হবে;
৩) সর্বোপরি তাদের শ্রেণী চরিত্র জনগণের কাছে খোলাসা করতে হবে।
কাজেই ইসলাম ধর্ম কায়েমের ক্ষেত্রে জিহাদের অর্থ শুধু তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা নয়, বরং সমাজের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আসল প্রতিবন্ধকতাকারীদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা। আলেমগণ যদি সত্যিই ইসলাম ধর্ম বিরোধী শক্তিকে চিহ্নিত করে, তাদের বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত হয়, তাহলে তারা বুঝতে পারবে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠা করা কতো কঠিন। তখন তারা নবিজীর জিহাদের মর্মটা নিজেরা উপলব্ধি করতে পারবে। অথচ বর্তমানে ওলামা-মাশায়েখগণ ইসলাম কায়েমকে সীমিত অর্থে বুঝে থাকে, তারা ইবাদত ও ওয়াজ মাহফিল করার নিরিবিচ্ছিন্ন সুযোগ প্রয়োজনীয় কার্যক্রমকে জিহাদ বলে মনে করে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম কায়েম না হয়ে, বাহ্যিক ইবাদত নির্ভর ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আর প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে মুসলমান নামধারী ফাসিক (অধার্মিক, লঘু পাপী, দুশ্চরিত্র), ফাজির (পাপাচারী, অনিষ্টকারী) ও মুনাফিক (কপট, ধর্মধ্বজী) নিয়ন্ত্রিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। কাজেই আলেম-ওলামাগণকে ইসলাম ধর্মে বিবৃত জিহাদের মর্মবাণীকে ধারণ করে উক্ত শ্রেণীর মুসলমানদের বিরুদ্ধে সদা জিহাদে ব্যপৃত থাকা উচিত। তা না করা হলে তাদের নিয়ন্ত্রিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মানুষ যুগ যুগ ধরে শোষিত হতে থাকবে।
ওলামা-মাশায়েখ শ্রেণীর সাথে ধান্দাবাজ, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা শ্রেণীর সম্পর্ক
ওলামা-মাশায়েখ শ্রেণীর সাথে দেশের ধান্দাবাজ, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা শ্রেণীর একটি অচ্ছেদ্য ও অলিখিত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সম্পর্কই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধক হিসেবে অবির্ভূত হয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো ওলামা-মাশায়েখগণ কর্তৃক ইসলাম বিষয়টি সম্পর্কে সংকীর্ণতম ব্যাখ্যা। এই ওলামা-মাশায়েগণ ইসলাম বলতে বুঝায় শুধুমাত্র কোরআন-হাদীস চর্চা এবং নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাত আদায়। ইসলাম সম্পর্কে তাদের এই ব্যাখ্যা ও উপলব্ধি দ্বীন থেকে মুসলমানদেরকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তাদের প্রতিষ্ঠিত এই ইসলাম শুধুমাত্র একটি ধর্ম, যার নাম ইসলাম ধর্ম। এই ধর্মে দ্বীন নাই। আছে শুধু ইসলাম ধর্ম। এই ইসলাম ধর্ম দেশের ধান্দাবাজ, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা শ্রেণীকে নৈতিক আদর্শগত সমর্থন দিয়ে চলেছে। কেনোনা, ওলামা-মাশায়েখদের প্রতিষ্ঠিত এই ইসলাম ধর্মের প্রসারের ফলে দেশের সর্বত্র এখন মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের মুসলমানগণের প্রায় সবাই নিয়মিত নামাজ, রোজা ও হজ আদায় করে থাকে। তার অর্থ হলো দেশে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। কিন্তু যে ধান্দাবাজ, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা শ্রেণীর নিকট থেকে ইসলাম ধর্ম পরিচালনার বৃহৎ পুঁজি আসে, সেই শ্রেণীর রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক শক্তি আমরা জানি। এই শ্রেণীর আদর্শ, চরিত্র ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও আমরা জানি। এ প্রসঙ্গে আমরা ধান্দাবাজ, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা শ্রেণীর আদর্শ, চরিত্র ও কর্মকাণ্ডকে বিশ্লেষণ করতে পারি। আমরা জানি যে একটি উপজেলায় যারা প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের মধ্যে রয়েছে মেম্বার, চেয়ারম্যান, কমিশনার, ঠিকাদার, মজুতদার, আড়ৎদার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ক্যাডার ও নেতাগণ। আমরা জানি যে, দেশের ওলামা-মাশায়েখ শ্রেণীর সাথে এই শ্রেণীর রয়েছে নিবিড় সখ্যতা। কারণ ওলামা-মাশায়েখ তাদের প্রতিষ্ঠিত ইসলাম ধর্ম পরিচালনার অর্থের যোগান আসে এই ধান্দাবাজ, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা শ্রেণীর নিকট থেকে। অথচ ধান্দাবাজ, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা এই শ্রেণী কৃত কর্মকাণ্ডের জন্য প্রতিনিয়ত সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ হচ্ছে।
কিন্ত ইসলামের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার। এখন যদি ওলামা-মাশায়েখগণ ইসলামের আসল অর্থ বুঝতো তাহলে তারা ধান্দাবাজ, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা এই শ্রেণীর নিকট থেকে ইসলাম ধর্ম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় অর্থ দান হিসেবে গ্রহণ করতো না। অথচ সমাজে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এই শ্রেণির নিকট থেকে ওলামা-মাশায়েখগণ দান, ছদকা ও হাদীয়া গ্রহণ করে তাদেরকে এক ধরণের সামাজিক স্বীকৃতি দিয়ে চলেছে। এর মাধ্যমে ওলামা-মাশায়েখ শ্রেণী ইসলাম বিরোধী ধান্দাবাজ, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা শ্রেণীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর নৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।
সেই শ্রেণীর রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক শক্তি আমরা জানি। এই শ্রেণীর আদর্শ, চরিত্র ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও ন্যায়বিচার , কায়েমে গ্রাম থেকে উপজেলা, উপজেলা থেকে জেলা এবং জেলা থেকে রাজধানী পর্যন্ত এই অভিজাত শ্রেণীর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। কাজেই সরকারের পতন ঘটাবো বলে জিহাদ ঘোষণা করে সরকারের পতন ঘটালেও, অন্তিমে গ্রাম থেকে রাজধানী পর্যন্ত অভিজাতদের শক্তি বলয়ের সাধে লড়াই কররে জিততে না পারলে, দেশে ইসলাম কায়েম করা যাবে না। অর্থ্যাৎ দেশে ইসলাম ধর্ম কায়েম হয়েছে, আরও হবে; কিন্তু দেশে যে ইসলাম কায়েম হবে এমন কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। য
©somewhere in net ltd.