![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অধ্যাপক, কোবে গাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়
১️⃣ প্রাসঙ্গিক সংক্ষিপ্ত ভূমিকা
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এবং ৭ নভেম্বরের পর থেকে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে রাজনৈতিক বিভাজন, মতাদর্শিক বিভক্তি এবং “অফিসার-জওয়ান” বিভাজনের ইতিহাস রয়েছে।
বর্তমানে এই বিভাজন আনুষ্ঠানিকভাবে দৃশ্যমান না হলেও অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত সেনা কর্মকর্তাদের নীরব নেটওয়ার্ক, আঞ্চলিক লবি এবং নানাবিধ বেনামী উদ্যোগ হিসেবে তা টিকে আছে।
কেন এগুলো গুরুত্বপূর্ণ:
• দেশে রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থার উপর প্রভাব বিস্তার
• নির্বাচন বা সরকার পরিবর্তনের সময় সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা
• গোপন অর্থায়ন ও বৈদেশিক সংযোগের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা সৃষ্টির ইঙ্গিত
________________________________________
২️⃣ বিবদমান সেনা-গ্রুপসমূহের তালিকা
(১) জাস্টিস ফর কমরেডস (JFC)
• নেতৃত্ব: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির (পিএনজি, অব
• সংগঠন: অবসরপ্রাপ্ত মধ্যম ও নিম্ন-পর্যায়ের কর্মকর্তা ও তাদের সমর্থিত সিভিল সাপোর্ট গ্রুপ।
• ইতিহাস: ২০১৭ সালে অঘোষিতভাবে গঠিত। মিশন ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হামলার জন্য “অন্যায়ভাবে সাজাপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও জওয়ানদের মুক্তি”।
• কার্যক্রম:
o সামাজিক মাধ্যমে “অবিচারের গল্প” প্রচার
o স্বল্প পরিসরে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের পুনর্গঠন সভা
o মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ
________________________________________
(২) সহযোদ্ধা (Sahojoddha)
• নেতৃত্ব: লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহিদ ইকবাল (অব এবং মেজর কামরুল হাসান (অব
• সংগঠন: অবসরপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের উপর ভিত্তি করে গঠিত।
• ইতিহাস: ২০০৯ সালে সীমিত নেটওয়ার্ক হিসেবে যাত্রা শুরু, ২০১৮ সালে আবার সক্রিয় হয়।
• কার্যক্রম:
o যুদ্ধাহত ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের জন্য ক্ষতিপূরণ ও সরকারি সুবিধা বৃদ্ধির দাবি
o রাজপথে নীরব মানববন্ধন
o সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ “মুক্তিযোদ্ধা কোটার স্বীকৃতি” ইস্যুতে সোচ্চার লবি করা
________________________________________
(৩) পুনর্নির্মাণ ফোরাম (Reconstruction Forum)
• নেতৃত্ব: মেজর জেনারেল (অব.) শওকত মঈন
• সংগঠন: উচ্চপদস্থ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং তাদের বেসামরিক সাপোর্ট গ্রুপ
• ইতিহাস: ২০১৫ সালে গোপন মিটিং দিয়ে শুরু, সরকার ব্যবস্থার সমালোচনামূলক পলিসি পেপার তৈরি করে।
• কার্যক্রম:
o মিডিয়া ও পলিসি লবিয়িং
o বিদেশি দূতাবাসগুলোর সঙ্গে নেটওয়ার্কিং
o সেনা-পুলিশ সম্পর্কের সমালোচনা এবং পুনর্গঠন দাবি
________________________________________
(৪) ন্যাশনাল সলজারস ইউনিটি (NSU)
• নেতৃত্ব: লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) রুহুল আমিন
• সংগঠন: অবসরপ্রাপ্ত নিম্নপদস্থ সেনা সদস্য ও তাদের পরিবার
• ইতিহাস: ২০২০ সালে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তায় গঠিত
• কার্যক্রম:
o চাকরিচ্যুতদের পুনর্বাসনের দাবি
o “সামরিক পেনশন তহবিল দুর্নীতি” নিয়ে সোচ্চার হওয়া
o সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন
________________________________________
(৫) ব্যালেন্স ইন র্যাঙ্কস (BIR)
• নেতৃত্ব: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মেজর ও ক্যাপ্টেন (অব.)
• সংগঠন: “অফিসার-জওয়ান বৈষম্য দূরীকরণ” ইস্যুতে একাত্মতা
• ইতিহাস: ২০২১ সালে করোনা-পিরিয়ডে অনলাইনে গঠিত
• কার্যক্রম:
o পেনশন বৈষম্য ইস্যুতে ক্যাম্পেইন
o অফিশিয়ালি নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে ব্লগ ও ভিডিও বার্তা প্রচার
________________________________________
৩️⃣ এদের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব
মূল দ্বন্দ্বের কারণ:
1️⃣ লিডারশিপ কন্ট্রোল – JFC ও সহযোদ্ধা নেতৃত্ব কে নেবে, তা নিয়ে দ্বন্দ্ব।
2️⃣ অর্থায়ন ও বৈদেশিক সম্পর্ক – কে কোন বিদেশি ফান্ড পাবে, নিয়ে অসন্তোষ।
3️⃣ রাজনৈতিক সংযোগ – ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে পারস্পরিক সন্দেহ।
4️⃣ দর্শনগত বিভক্তি – কেউ “ফিরিয়ে আনা” চায় ৭ নভেম্বরের মতবাদ, কেউ “মুক্তিযোদ্ধা আদি মান” প্রতিষ্ঠার পক্ষে।
________________________________________
৪️⃣ সম্ভাব্য রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঝুঁকি
✅ এ গ্রুপগুলো সাধারণত প্রকাশ্যে সহিংস হয় না, তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচনকালীন সেনা-পুলিশ অস্থিরতা তৈরি হলে:
• ব্যালেন্স ইন র্যাঙ্কস এবং ন্যাশনাল সলজারস ইউনিটি’র সমর্থকরা সশস্ত্র প্রতিবাদে নামতে পারে।
• সহযোদ্ধা এবং জাস্টিস ফর কমরেডস নিজেদের আঞ্চলিক দখল নেয়ার চেষ্টা করতে পারে।
• পুনর্নির্মাণ ফোরাম তাদের বৈদেশিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহকে আন্তর্জাতিক সমর্থন দেয়ার চেষ্টা করতে পারে।
• এগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ ও অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা গোপন সংঘর্ষ, রাজনৈতিক হত্যা, বা নির্বাচনী সহিংসতা আকারে রক্তক্ষয়ী রূপ নিতে পারে।
________________________________________
৫️⃣ উপসংহার
• বাংলাদেশে সেনাবাহিনী অভ্যন্তরীণভাবে অভিন্ন থাকলেও অবসরপ্রাপ্ত এবং প্রবাসী সেনা কর্মকর্তাদের উদ্যোগে একাধিক অদৃশ্য নেটওয়ার্ক সক্রিয়।
• এদের কার্যক্রম আপাতদৃষ্টিতে ‘অধিকার দাবি’ মনে হলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে হলে সহিংসতার রূপ নিতে পারে।
• বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় সেনা-বেসামরিক সমাজের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রাধান্য রক্ষা করা অপরিহার্য।
________________________________________
©somewhere in net ltd.