নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির, অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় e-mail: [email protected]

রেজাউল করিম ফকির

অধ্যাপক, কোবে গাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়

রেজাউল করিম ফকির › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবন্ধ-০১: “গোপালগঞ্জ যদি দিল্লি হতে চায় - আমরা তাদের ধানমন্ডি ৩২ বানিয়ে দিব। লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ”

২৪ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ৮:১০

ভূমিকা
"গোপালগঞ্জ যদি দিল্লি হতে চায় - আমরা তাদের ধানমন্ডি ৩২ বানিয়ে দিব। লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ।"—এই বক্তব্যটি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে চরমপন্থী ইসলামপন্থী, বিরোধী-ভারত ও পাকিস্তানপন্থী গোষ্ঠীর আদর্শিক অবস্থান, কর্ম-প্রক্রিয়া এবং শত্রু-দর্শনের একটি নির্যাস। এটি কেবল একটি হুমকি নয়; এর পেছনে রয়েছে গভীর ঐতিহাসিক, সমাজতাত্ত্বিক ও মতাদর্শিক প্রেক্ষাপট, যা রাষ্ট্রের পরিচয়, ধর্ম, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক–সবকিছুর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত।

১. আদর্শ ও দর্শন
গোষ্ঠী মূল আদর্শ দর্শন ধর্মীয় ব্যাখ্যার ধরন
জামায়াতে ইসলামী, শিবির, চরমপন্থী ইসলামপন্থী ইসলামপন্থী জাতীয়তাবাদ ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র, মুসলিম জাতিসত্তা ইসলামকে রাজনৈতিক অস্ত্র, রাজনৈতিক বিরোধীদের “মুমিন/মুনাফিক” ভাগকরণ
সালাফি-ওয়াহাবি ধারা রক্ষণশীল ইসলাম শুদ্ধি ও ইসলামী আইন ধর্মীয় মৌলবাদ, সহিংস জিহাদের পরোক্ষ সমর্থন
পাকিস্তানপন্থী গোষ্ঠী পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ ভারতবিরোধী চেতনা, ঐতিহাসিক পাকিস্তান রাষ্ট্রধারা ইসলামী “হোবাক” রাষ্ট্রকাঠামোর প্রশংসা ও অনুসরণ

২. বক্তব্যের প্রেক্ষাপট ও রাজনীতিক অর্থ
• “গোপালগঞ্জ যদি দিল্লি হতে চায়”: গোপালগঞ্জ শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ঘাঁটি। এ বাক্যে তাকে ভারতের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।
• “ধানমন্ডি ৩২ বানিয়ে দিব”: শেখ মুজিব হত্যার স্মারকস্থল ধানমন্ডি ৩২কে “শাস্তির স্থান” হিসাবে দেখিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি।
• “লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ”: ইসলামী ও পাকিস্তানপন্থী ধারায় রাজনৈতিক কর্মসূচি, সাধারণত অরাজনৈতিক চাপের কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত।

৩. মুল সামাজিক গোষ্ঠী ও কাজের ধরন
গোষ্ঠী উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড টার্গেট/শত্রু পাকিস্তানপ্রীতি
জামায়াতে ইসলামী লং মার্চ, হরতাল, সহিংস সমাবেশ, পুলিশ ও প্রতিপক্ষের উপর হামলা আওয়ামী লীগ, ধর্মনিরপেক্ষ, ভারতপন্থী শক্তি হ্যাঁ; ১৯৭১-পরবর্তী পাকিস্তানি রাষ্ট্রীয় ধারণা
ছাত্রশিবির/চরমপন্থী সহিংস মিছিল, সামাজিক মাধ্যমে প্রচার প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন, সংখ্যালঘু, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান স্পষ্ট পাকিস্তানি জাতিসত্তার স্মৃতি ও সমর্থন
সালাফি-ওয়াহাবি গোষ্ঠী ইসলামি রাষ্ট্রের দাবিতে জনমত গঠন ও প্রচার ধর্মনিরপেক্ষ শাসক, বিশেষত শেখ হাসিনা ও ভারতের ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠী মিনিমাল, কিন্তু ধর্মীয় রাষ্ট্রীয় ধারণায় উৎসাহিত

৪. ভূমিকা ও আদর্শগত ট্রিগার
• ইসলামপন্থী জাতীয়তাবাদ: ধর্মনিরপেক্ষতা ও ভারতের সঙ্গে সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া।
• বিরোধী-ভারত মনোভাব: ভারতকে “শত্রু”, “আগ্রাসী” হিসেবে চিত্রণ; গোপালগঞ্জ-দিল্লি রূপকের উৎপত্তি।
• মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর অসন্তোষ: ১৯৭১-পরবর্তী ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের বিরুদ্ধে পশ্চাদ্ধাবন।
• পাকিস্তানপ্রীতি: অনেক গোষ্ঠীর ভাষ্য ও কর্মকাণ্ডে “পরাজিত পাকিস্তানি চেতনার” পুনঃজাগরণ ও ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন।

৫. রাজনৈতিক ইসলামের ব্যবহার ও ধর্মীয় ব্যাখ্যার অপপ্রয়োগ
• ইসলামের আধ্যাত্মিক-নৈতিক দিককে চাপা দিয়ে ইসলামী ধারণাকে রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহার।
• রাষ্ট্রীয় বা রাজনৈতিক বিরোধীদের “ইসলামের শত্রু” বা “মুনাফিক” আখ্যা ও তাদের ওপরে সহিংসতা বৈধ করা।
• এ প্রবণতা সামাজিক-ধর্মীয় মেরুকরণ বাড়িয়ে দেয় এবং রাষ্ট্রে সংঘাত উসকে দেয়।

৬. ঐতিহাসিক ও সমাজতাত্ত্বিক গুরুত্ব
• ইতিহাসগতভাবে ১৯৪৭-৭১ পর্যায়ে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন বাংলার এক অংশে গভীরভাবে পথ তৈরি করে। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ পথে যাত্রা অনেক গোষ্ঠীকে মনস্তাত্ত্বিক-রাজনৈতিকভাবে বহির্ভূত করে।
• ১৯৯০-এর দশকের পরপরই সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় পরিচয়ের রাজনৈতিক ব্যবহার চরমপন্থী দলগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে, যার প্রকাশ ঘটে এই ধরনের স্লোগান, কর্মসূচি ও হুমকিতে।

৭. প্রতিপক্ষ, শত্রু ও নিশানা
• মূল শত্রু: আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার, ভারত ও ভারতপন্থী শক্তি, সকল ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল দল, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
• কার্যক্রম: সহিংস লং মার্চ, ধর্মান্ধতার মাধ্যমে জনমত গঠন, আইনি ও সামাজিক আন্দোলনের নামে সহিংসতা, প্রচারণা।
• লক্ষ্য: রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধ্বংস করে পাকিস্তানীয় বা মধ্যপ্রাচ্য ঘরানার ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েম করা।

৮। উপসংহার
এই ধরণের বক্তব্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক শত্রুতার রূপ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপরিচয়, ধর্মনিরপেক্ষতা ও প্রতিবেশী সম্পর্কের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এক প্রবণতা। রাষ্ট্রকে পাকিস্তানি চেতনা ও ধর্মীয় কর্তৃত্ববাদের দিকে ঠেলে দেওয়া এবং ইসলামকে রাজনৈতিক হাতিয়ার ও প্রতিপক্ষ নিধনের যুক্তি হিসেবে ব্যবহার এই আদর্শিক ধারার কেন্দ্রবিন্দু।
এটি সমাজের অগ্রযাত্রা, বহুত্ববাদ ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য এক সুস্পষ্ট হুমকি – যার মূলে রয়েছে ইতিহাসবিচ্ছিন্ন পাকিস্তান-প্রীতি, ধর্মীয় মেরুকরণ এবং রাজনৈতিক ইসলামের অপব্যবহার।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.