![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অধ্যাপক, কোবে গাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী রাজনৈতিক ভূদৃশ্য ও সংস্কৃতির দীর্ঘমেয়াদী রূপান্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রকাশ্য ও গোপন ষড়যন্ত্র একটি প্রণালীবদ্ধ ও সুপরিকল্পিত অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে। এই প্রক্রিয়াটি কেবল সামরিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং রাষ্ট্রের আদর্শিক কাঠামো, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও সমাজের মূল্যবোধে গভীর বিভাজনের বীজ বপনে কাজ করেছে। নিম্নলিখিত পর্যায়ে বিষয়টির বিশ্লেষণ প্রাসঙ্গিক:
________________________________________
১. ষড়যন্ত্রের ঐতিহাসিক প্রমাণ ও পদ্ধতি
১. পাকিস্তান ফেরত সেনা অফিসারদের মানসিকতা ও পাকিস্তানি ষড়যন্ত্র
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সাল থেকে পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত ও পাকিস্তানি ঘরাণার অফিসারদের সেনাবাহিনীতে আত্তীকরণ করা হয়।
•এই অফিসাররা মানসিকতায় পাকিস্তানপন্থী, ভারতবিরোধী, এবং ইসলামী (বিশেষত ওয়াহাবি প্রভাবিত) মতাদর্শে অনুগত ছিলেন।
•পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে তাদের প্রকাশ্য ও গোপন যোগাযোগ বজায় ছিল, যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা দুর্বল করার ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল।
•একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার মতে: “এটি ছিল একটি ভুল। তারা কখনোই সেনাবাহিনীতে একীভূত হতে পারেনি। এখান থেকেই বিভাজন শুরু হয়। ১৯৭৩ সালে প্রত্যাবর্তনকারীদের পাকিস্তানি অফিসারদের সাথে খুব শক্ত যোগাযোগ ছিল। আমি মনে করি মুজিব হত্যাকাণ্ড এই সিদ্ধান্তের কারণেই ঘটেছিল।”
________________________________________
২. জাতীয়তাবাদবিরোধিতা, আওয়ামী লীগবিরোধিতা ও ষড়যন্ত্রমূলক প্রক্রিয়া
এই সেনা অফিসাররা মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি।
•তাদের কাছে বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানের অংশের একটি “হারানো প্রদেশ,” যার পুনঃসংযোগ বা ভারতের প্রভাবমুক্ত করা প্রয়োজন।
•তারা আওয়ামী লীগকে ভারত-সমর্থিত দল এবং বঙ্গবন্ধুকে ভারতীয় ক্রীড়নক হিসেবে দেখতেন।
•পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের সহায়তায় এই মানসিকতা সেনা অভ্যন্তরে ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমে রূপ নেয়, যা ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ভূমি প্রস্তুত করে।
________________________________________
৩. ইসলাম প্রতিষ্ঠা, পাকিস্তানি প্রভাব ও রাজনৈতিক ভূদৃশ্যের পরিবর্তন
পাকিস্তানি ঘরাণার এই অফিসারদের মানসিকতা সেনাবাহিনীর মধ্যে রাজনৈতিক ইসলামের প্রবেশদ্বার খুলে দেয় এবং পাকিস্তানি মতাদর্শে প্রভাবিত রাজনীতিকে উত্সাহিত করে।
•সেনাবাহিনীর ভেতরে ওয়াহাবি প্রভাব বিস্তার পায় এবং ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী প্রবণতা শক্তিশালী হয়।
•পাকিস্তানের গোপন সমর্থনে ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ত্বরান্বিত হয়।
•১৯৭৫-এর পরবর্তী সামরিক শাসনামল (জিয়া ও এরশাদের আমলে) এই ধারাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়, যেখানে সেনাবাহিনী ইসলামী দলসমূহের সাথে সমঝোতায় যায় এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলামের ভূমিকাকে জোরদার করা হয়।
________________________________________
৪. রাজনৈতিক ভূদৃশ্যের দীর্ঘমেয়াদি রূপান্তর
এই আত্তীকরণ ও ষড়যন্ত্রমূলক প্রক্রিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে:
•জাতীয়তাবাদী রাজনীতি দুর্বল হয় এবং তার পরিবর্তে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থান ঘটে।
•আওয়ামী লীগবিরোধী সামরিক-রাজনৈতিক জোট তৈরি হয়, যা ১৯৭৫–৯০ পর্যন্ত বাংলাদেশে ক্ষমতার গতিপথ নির্ধারণ করে।
•দীর্ঘমেয়াদে, এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিকে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ বনাম ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের দ্বন্দ্বে বিভক্ত করে দেয়।
________________________________________
উপসংহার
পাকিস্তান ফেরত সেনা অফিসারদের জাতীয়তাবাদবিরোধী মনোভাব এবং পাকিস্তানি ষড়যন্ত্রমূলক যোগাযোগ বাংলাদেশের স্বাধীনতাপরবর্তী রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তনের অনুঘটক হয়ে ওঠে।
•এটি শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তৈরি করেনি, বরং পরবর্তী সময়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির শক্তি বৃদ্ধির পথও প্রশস্ত করেছে।
•ফলস্বরূপ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভূদৃশ্য জাতীয়তাবাদ বনাম ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের দ্বিমুখী টানাপোড়েনে আবদ্ধ হয়, যা আজও রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করছে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:২৯
রেজাউল করিম ফকির বলেছেন: Click This Link