![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অধ্যাপক, কোবে গাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়
১. মৌলিক সংজ্ঞার বিভাজন:
• ইসলাম (শাশ্বত আদর্শ):
এটি মানবিক মূল্যবোধ, ন্যায়পরায়ণতা, আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ এবং আদম (আ.) থেকে শুরু হওয়া সার্বজনীন নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা। কুরআনে বর্ণিত "দ্বীন" বা জীবনব্যবস্থার মৌলিক নীতিমালাই এর কেন্দ্র।
• ইসলাম ধর্ম (ঐতিহাসিক-প্রাতিষ্ঠানিক রূপ):
নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওফাতের পর থেকে বিকশিত ধর্মীয় প্রথা, আইনশাস্ত্র (ফিকহ), মতবাদ (মাযহাব) ও রাজনৈতিক-সামাজিক কাঠামোর সমষ্টি। এটি সময় ও প্রেক্ষাপটভেদে রূপান্তরিত হয়েছে।
২. রূপান্তরের প্রক্রিয়া ও কারণসমূহ:
• (ক) হাদীস সংকলন ও মতপার্থক্য:
হাদীসের লিপিবদ্ধকরণ (৮ম-৯ম শতাব্দী) ও ব্যাখ্যাজনিত মতবিভেদ (যেমন: আহলে হাদীস বনাম আহলে রায়) ইসলাম ধর্মের বহুমুখী ব্যাখ্যার সূত্রপাত করে।
• (খ) রাজনৈতিক প্রভাব:
খুলাফায়ে রাশেদীন (৬৩২-৬৬১ খ্রি.)-পরবর্তী উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসকগোষ্ঠী নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় কুরআন-হাদীসের নির্বাচিত ব্যাখ্যাকে ব্যবহার করে। ফলে ধর্মীয় নেতৃত্ব ও আইন প্রণয়নে রাজনৈতিক স্বার্থ প্রাধান্য পায়।
• (গ) ভৌগোলিক বিকাশ:
পারস্য, তুরস্ক, ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে স্থানীয় সংস্কৃতি ও প্রথার সাথে ইসলাম ধর্মের সমন্বয় ঘটে (যেমন: সুফিবাদ, স্থাপত্য, উৎসব)। এভাবে "আরবীয় ইসলাম" একটি সর্বজনীন "বহু-সাংস্কৃতিক ধর্মে" রূপান্তরিত হয়।
৩. প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ধাপ:
• ফিকহশাস্ত্রের বিকাশ (৯ম শতাব্দী):
ইমাম আবু হানিফা, মালিক, শাফিঈ ও হাম্বল প্রমুখের মাধ্যমে স্থায়ী মাযহাব গঠন।
• ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রসার:
মাদ্রাসা, খানকাহ, ওয়াকফ বোর্ডের মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষা ও অনুশীলনের কাঠামো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়।
• সাম্রাজ্যিক ব্যবহার:
উসমানীয়, মুঘল ও সাফাভীয় শাসকরা শরিয়া আইনকে রাজকীয় ফরমানের সাথে সমন্বিত করে "রাষ্ট্রীয় ইসলাম" তৈরি করে।
৪. ফলাফল: বহুরূপী ইসলাম ধর্ম
• একই মূলবাণী, ভিন্ন অভিব্যক্তি:
ইন্দোনেশিয়ার "পাঞ্চশীলা ইসলাম", ইরানের "শিয়া রাষ্ট্রব্যবস্থা", মরক্কোর "মালিকি ফিকহ" বা দক্ষিণ এশিয়ার "বারেলভী-দেওবন্দি" মতাদর্শ—প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মের প্রকাশভঙ্গি ভিন্ন।
• শাশ্বত ইসলাম বনাম পরিবর্তনশীল ধর্ম:
কুরআনের নীতিমালা (সততা, দয়া, ন্যায়) অপরিবর্তনীয়; অন্যদিকে ইসলাম ধর্মের রীতিনীতি (পোশাক, বিবাহ আইন, শাসনব্যবস্থা) যুগ ও সংস্কৃতির সাথে অভিযোজিত হয়।
৫. তাৎপর্য:
ইসলাম হলো আল্লাহ প্রদত্ত চিরন্তন জীবনব্যবস্থা; ইসলাম ধর্ম হলো মানুষের হাতে গড়া এর ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি। প্রথমটি অপরিবর্তনীয় সত্য, দ্বিতীয়টি পরিবর্তন ও বিবেচনার অধীন। "ইসলাম ত্যাগ করা" বলতে শাশ্বত নৈতিকতা (তাওহিদ, ইনসাফ) প্রত্যাখ্যান করাকে বোঝায়, যা সর্বযুগে অগ্রহণযোগ্য। পক্ষান্তরে "ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করা" অর্থ একটি নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক-প্রাতিষ্ঠানিক রূপ (যেমন: সালাফিবাদ, তরিকত) অস্বীকার করা—যা ব্যক্তি বা সমাজের পছন্দের বিষয়।
©somewhere in net ltd.